সান নারায়ণগঞ্জ টুয়েন্টিফোর ডটকম:
নারায়ণগঞ্জ সোনারগাঁওয়ের একটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের উন্নয়নমুলক কাজের নামফলকে জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান ও মহানগর আওয়ামীলীগের সভাপতি আনোয়ার হোসেনের নাম থাকায় সেই নামফলক ভেঙ্গে ফেলার অভিযোগ তুলে নারায়ণগঞ্জ-৩(সোনারগাঁ) আসনের জাতীয়পার্টির সংসদ সদস্য লিয়াকত হোসেন খোকাকে কঠোর হুশিয়ারি দিয়েছেন আওয়ামীলীগের সাবেক সংসদ সদস্য আব্দুল্লাহ আল কায়সার হাসনাত।
নারায়ণগঞ্জের সোনারগাঁও পৌর আওয়ামী লীগ ও অঙ্গ সংগঠনের উদ্যোগে আয়োজিত প্রতিবাদ সমাবেশ ও মানববন্ধনে এ হুশিয়ারি দেন কায়সার হাসনাত।
১৯ নভেম্বর বৃহস্পতিবার দুপুরে ওই প্রতিষ্ঠান সোনারগাঁ জি.আর ইনস্টিটিউশন স্কুল এন্ড কলেজের সামনে এ কর্মসুচি পালন করেন আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীরা।
এতে সাবেক এমপি আব্দুল্লাহ আল কায়সার হাসনাত বলেন, আওয়ামীলীগের সুবর্ণ ও স্বর্ণযুগ চলছে অথচ দল ক্ষমতায় থেকেও আমাদের মানববন্ধন সহ নানা কর্মসুচি পালন করতে হচ্ছে। এটা কতটা দুঃখের তা শুধু সোনারগাঁও আওয়ামীলীগের নেতাকর্মীদের জন্য তা আমি জানি। বিএনপি ও জামায়াতের লোকদের জোর করে জাতীয়পার্টিকে নিয়ে মনে করছেন সোনারগাঁয়ে জাতীয় পার্টি শক্তিশালী হয়ে গেছে এটা আপনার ভুল ধারণা। ২০০১ সালে রাজপথে আন্দোলন সংগ্রাম করে জামায়েত বিএনপির দুর্নীতির মুল উৎপাটন করতে আওয়ামীলীগ ক্ষমতায় এসছিলো এবং সোনারগাঁওয়ের মানুষ আমাকে এমপি বানিয়েছিলো। এরপর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশ পালন করতে আমরা আপনাকে এ আসনটি ছেড়ে দিয়েছিলাম। আপনাকে এমপি বানাতে সোনারগাঁও উপজেলা আমওয়ামীলীগের নেতাকর্মীরর যেভাবে কাজ করেছে আপনি তা ভুলে গেছেন। আপনি আওয়ামীলীগের নেতাকর্মীদের নির্যাতন করছেন। আপনার উচিৎ ছিলো উন্নয়নমুলক সকল কর্মসুচির আগে আওয়ামীলীগের নেতাকর্মীদের সাথে পরামর্শ করে তা বাস্তবায়ন করা। আমি একটি কথা আপনাকে বলতে চাই আপনার ক্ষমতা আর মাত্র ৩ বছর। এখন থেকে আওয়ামীলীগের নেতাকর্মীদের উপর কোন প্রকার নির্যাতন ও শেখ হাসিনার উন্নয়নে বাধা সৃষ্টি করবেন না। তা হলে সোনারগাঁও উপজেলা আওয়ামীলীগের নেতাকর্মীরা আর বসে থাকবেনা, তারা আপনাকে দাতভাঙ্গা জবাবদিবে। আপনি কথায় কথায় বলেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আপনার মাতৃতুল্য নেত্রী অথচ স্থানীয় নির্বাচন আসলে আপনি নৌকার বিপক্ষে কাজ করেন। সামনে পৌরসভা নির্বাচন সেই নির্বাচনে আপনার রূপ প্রকাশ পাবে। নির্বাচন আসলেই আপনি বেপরোয়া হয়ে যান। পৌরসভা নির্বাচনে নৌকা প্রতীক বরাদ্দ দেওয়া হবে। আপনি আপনার সহধর্মিনীকে মেয়র বানাতে নৌকার বিপক্ষে গিয়ে নানা পায়তারা করে আসছেন। জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান আনোয়ার হোসেনের নামফলক ভাংচুরের প্রতিবাদে বুধবার সন্ধ্যায় নারায়ণগঞ্জ শহরে এমপি লিয়াকত হোসেন খোকার বিরুদ্ধে নোংরা ভাষা ব্যবহার করে স্লোগান ও বিক্ষোভ মিছিল করেছে।
কায়সার হাসনাত জানান, ১৭ নভেম্বর মঙ্গলবার শিক্ষা প্রতিষ্ঠানটি পরিদর্শণে যান সংসদ সদস্য লিয়াকত হোসেন খোকা। প্রতিষ্ঠানটির প্রধান গেইটের সামনে জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ও নারায়ণগঞ্জ মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি আনোয়ার হোসেনের উদ্বোধনী নামফলক দেখতে পেয়ে লিয়াকত হোসেন খোকা তার কর্মীদের সামনে ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, আমি এমপি আমার নাম নেই! জেলা পরিষদের চেয়ারম্যানের নাম এখানে কিভাবে দেওয়া হলো। তার নামফলক এখান থেকে এক ঘন্টার মধ্যে সরিয়ে নেওয়ার জন্য লিয়াকত হোসেন খোকা প্রতিষ্ঠানের অধ্যক্ষ সুলতান মিয়াকে নির্দেশ দেন। এমপির এ নির্দেশ পাওয়ার ২০ মিনিট পর তার অনুগামী ও জাতীয় পার্টির কর্মীরা জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান আনোয়ার হোসেনের নামফলক ভেঙ্গে গুড়িয়ে দেন।
মানববন্ধও বিক্ষোভ মিছিলে উপস্থিত ছিলেন উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান মোশারফ হোসেন, মোগরাপাড়া ইউনিয়ণ পরিষদের চেয়ারম্যান আরিফ মাসুদ বাবু, সোনারগাঁও উপজেলা যুবলীগের সাবেক সভাপতি গাজী মজিবুর রহমান, উপজেলা যুবলীগের সভাপতি রফিকুল ইসলাম নান্নু, সাংগঠনিক সম্পাদক কামাল হোসেন, স্বেচ্ছসেবকলীগের সাধারন সম্পাদক আফিফুর রহমান রবিন প্রমুখ। মানববন্ধন ও বিক্ষোভ মিছিলে নেইমফলক ভাঙ্গার সাথে জড়িতদের গ্রেপ্তার ও দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি নিশ্চিত না করলে কঠোর আন্দোলনের হুসিয়ারি আসবে বলে জানা যায়।
অন্যদিকে স্থানীয় জাতীয়পার্টির নেতাকর্মী ও প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, গত মঙ্গলবার এমপি খোকা বিদ্যালয় ত্যাগ করার পর কে বা কারা কলেজের গেইটে লাগানো আনোয়ার হোসেনের নামফলকটি ভেঙ্গে ফেলে। স্থানীয়দের অনেকেই জানিয়েছেন এই নামফলকটি বেশকজন পৌর ছাত্রলীগের নেতাকর্মী ভেঙ্গেছে। এর কারন হিসেবে জানাগেছে, জেলা পরিষদের বরাদ্ধের এই কাজটির ঠিকাদারী চেয়েছিল পৌর ছাত্রলীগের বেশকজন নেতা। কিন্তু কাজটি জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান আনোয়ার হোসেনের পছন্দের একজন ঠিকাদারকে পাইয়ে দেয়া হয়। যে কারনে ছাত্রলীগের ওইসব নেতাদের মাঝে ক্ষোভ ছিল। আর ক্ষোভের বহিঃপ্রকাশ হিসেবে এই নামফলকটি ভেঙ্গে ফেলা হয়। কিন্তু এই ঘটনার সঙ্গে স্থানীয় এমপি খোকার কোন সম্পৃক্ততা নাই।
মুলত ঠিকাদারী কাজের বিরোধ নিয়ে নামফলকটি ভাঙ্গা হয়েছে বলে জানান প্রত্যক্ষদর্শীরা। এমপি খোকা দাঁড়িয়ে থেকে ভেঙ্গেছেন কিংবা কাউকে নামফলক ভাঙ্গতে নির্দেশ দিয়েছেন এমনটা জানাননি ওই অনুষ্ঠানে উপস্থিতির কেউই। আবার অনেকেই জানিয়েছেন, অধ্যক্ষ সুলতান মিয়ার যে রহস্যজনক বক্তব্য মিডিয়াতে এসেছে সেটার কারন হলো অভিভাবকদের পক্ষেই বক্তব্য রেখেছিলেন এমপি খোকা।