সান নারায়ণগঞ্জ টুয়েন্টিফোর ডটকম:
গত দুইদিন যাবত নারায়ণগঞ্জের প্রভাবশালী এমপি একেএম শামীম ওসমান প্রশাসনকে নিয়ে বক্তব্য রাখছেন। তাতে নানা প্রশ্ন তৈরি হয়েছে আসলে শামীম ওসমানের সঙ্গে স্থানীয় প্রশাসনের কি তাহলে দূরত্ব সৃষ্টি হয়েছে কিনা। শনিবার শামীম ওসমান বলছেন যদি কেউ মনে করেন আওয়ামীলীগকে তারা ক্ষমতায় এনেছে তাহলে নারায়ণগঞ্জে অন্তত ভুল সেটা। আবার রবিবার বলেছেন প্রশাসনের কেউ কেউ জনপ্রতিনিধিদের চেয়েও বেশি পাওয়ারফুল মনে করে। তিনি বলেন, বর্তমানে প্রশাসনের অনেকেই এখন নিজেদেরকে জনপ্রতিনিধিদের চেয়েও অনেক বেশি পাওয়ারফুল পার্সন মনে করছেন। শামীম ওসমানের এমন বক্তব্যে নানা প্রশ্ন তৈরি হয়েছে। তাহলে প্রশাসন জনপ্রতিনিধিদের চেয়েও কি কোন কারনে বেশি পাওয়ার দেখিয়েছে কিনা। আবার শামীম ওসমানের এসব বক্তব্যের কারন কি হতে পারে।
১৭ ফেব্রুয়ারি রবিবার দুপুরে নারায়ণগঞ্জ সরকারি তোলারাম কলেজে এইচএসসি পরীক্ষার্থীদের বিদায় ও বার্ষিক ক্রীড়া প্রতিযোগিতার পুরস্কার বিতরণ অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে শামীম ওসমান এমন একটি মন্তব্য করেন।
এখানে উল্লেখ্যযে, নারায়ণগঞ্জ পুলিশ সুপার হারুন উর রশিদ যোগদানের পর নারায়ণগঞ্জ শহরের হকার উচ্ছেদ করে দেন। এই হকার উচ্ছেদের পক্ষে ছিলেন মেয়র সেলিনা হায়াত আইভী এবং হকারদের পক্ষে ছিলেন শামীম ওসমান। এছাড়াও ফতুল্লায় কুতুবপুর ইউনিয়ন সেচ্ছাসেবক লীগের সভাপতি মীর হোসেন মীরুকেও গ্রেপ্তার করে পুলিশ। এই মীরু শামীম ওসমানের কর্মী হিসেবে পরিচিত। এদিকে নারায়ণগঞ্জে ৪১ জুয়ারীকে একটি জুয়ার স্পট থেকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। এই জুয়ার আসরটি স্থানীয় এমপিদের নাম ভাঙ্গিয়ে চলছেও বলে অভিযোগ রয়েছে।
আগের দিন শনিবার ফতুল্লায় নেতাকর্মীদের সঙ্গে নির্বাচন পরবর্তী শুভেচ্ছা সভায় শামীম ওসমান বলেছিলেন, ‘যদি কেউ মনে করেন, শেখ হাসিনার সরকারকে আমরা ক্ষমতায় বসিয়ে দিয়েছি, তাহলে তাদের বলবো, আপনারা এই কথা মনে কইরেন না। অন্তত নারায়ণগঞ্জে যেন এই কথা কেউ মনে না করেন। নারায়ণগঞ্জের নেতাকর্মীদের রাজপথে দখলে রাখার ক্ষমতা পূর্বেও ছিল, এখনও আছে, ভবিষ্যতেও থাকবে। আমরা কারোর উপর ভরসা করে আওয়ামীলীগ করিনা। আমরা কেবল শেখ হাসিনার নির্দেশেই চলি।’ অনেকেই বলছেন বর্তমান পুলিশ সুপারের সঙ্গে শামীম ওসমানের হৃদ্যতাপূর্ন সম্পর্ক নেই।
রবিবার প্রশাসনের সমালোচনা করে এমপি শামীম ওসমান বলেন, প্রশাসন এখন মনে করছে তারা জনপ্রতিনিধিদের চেয়ে অনেক উপরে উঠে গেছেন। তাই ছাত্র সমাজ চুপ থাকার কারনে আজ দেশে শিক্ষকদের উপর নির্যাতন হচ্ছে, ছাত্রীরা ধর্ষণের শিকার হচ্ছে এবং স্বাধীনতাবিরোধী শক্তি রাজাকার আল বদররা দেশকে ধমক দেয়।
শিক্ষার্থীদের উদ্দেশ্যে শামীম ওসমান বলেন, প্রশাসনের দায়িত্ব আছে। তবে প্রশাসন তোমাদের মালিক না। তোমার ট্যাক্সের টাকায় প্রশাসন লালিত পালিত হয়। তবে সমস্যা হয়ে গেছে, প্রশাসনের অনেকেই এখন মনে করে তারা জনপ্রতিনিধিদের চেয়ে অনেক পাওয়ারফুল পার্সন। তাই আমি চাই দেশের পক্ষে কথা বলার জন্য কিছু যোগ্য নাগরিক সৃষ্টি হোক। তোমরা নিজেদেরকে যোগ্য ও সুনাগরিক হিসেবে গড়ে তুলে দেশের দায়িত্ব নাও। এছাড়াও তিনি নারায়ণগঞ্জে মাদক, সন্ত্রাস ও ইভটিজিংয়ের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তুলতে ছাত্রসমাজের প্রতি জোর আহবান রাখেন।
শিক্ষার্থীদের উদ্দেশ্যে শামীম ওসমান আরও বলেন, আমার সময় শেষ হয়ে আসছে। প্রতিবাদ করার লোক আমি নারায়ণগঞ্জে পাচ্ছিনা। তাই সকল অন্যায়, অত্যাচার ও অবিচারের বিরুদ্ধে তোমাদের প্রতিবাদ করতে হবে। তোমাদের অধিকার তোমাদেরকেই আদায় করতে হবে। প্রয়োজনে রাস্তায় নামতে হবে।
শিক্ষার্থীদের লেখাপড়ার পাশাপাশি দেশের প্রতি দায়িত্ব পালনেরও আহ্বান জানিয়ে শামীম ওসমান বলেন, আমি বিশ্বাস করি সরকারি তোলারাম কলেজের ছাত্ররা যদি রাস্তায় নামে তাহলে নারায়ণগঞ্জে মাদক, ইভটিজিং, ধর্ষণ, চাঁদাবাদি কোন কিছুই থাকবেনা। তোমরা যদি চাও নারায়ণগঞ্জে কোন অন্যায়, অবিচার, ধর্ষণ, চাঁদাবাজি হবেনা, তাহলে হবেনা। তবে তোমাদেরকে সব অন্যায়ের বিরুদ্ধে ঐক্যবদ্ধভাবে এগিয়ে আসতে হবে। তিনি বলেন, আমার ছাত্রসমাজ কোথায়? তোমরা ঘুমিয়ে গেছো? তোমরা ফার্মের মুরগির মতো হয়ে যাচ্ছ? আমার লজ্জা লাগে। তোমরা বেরিয়ে আসো। প্রতিবাদ করতে শেখো।
সরকারি তোলারাম কলেজের অধ্যক্ষ বেলা রাণী সিংহ এর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন-উপাধ্যাক্ষ আমিনুল ইসলাম, শিক্ষক পরিষদ সম্পাদক জীবন কৃষ্ণ মোদক। অনুষ্ঠানে শেষে সংসদ সদস্য শামীম ওসমান কলেজের বার্ষিক ক্রীড়া প্রতিযোগিতার বিজয়ীদের হাতে ক্রেস্ট তুলে দেন।