সান নারায়ণগঞ্জ টুয়েন্টিফোর ডটকম:
নারায়ণগঞ্জের সোনারগাঁও জি.আর ইনস্টিটিউশন স্কুল এন্ড কলেজের গেইটে লাগানো জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ও মহানগর আওয়ামীলীগের সভাপতি আনোয়ার হোসেনের নামফলক ভাঙ্গার বিষয়ে মিডিয়াতে বিদ্যালয়ের অধ্যক্ষ সুলতান মিয়ার বরাদ দিয়ে যে বক্তব্য ছাপানো হয়েছে সেই বিষয়টি অস্বীকার করেছেন অধ্যক্ষ সুলতান মিয়া।
এই বিষয়টি পরিষ্কার হয়েছে অধ্যক্ষ সুলতান মিয়া ও বিদ্যালয়ের গভর্র্নিং বডির সদস্য পৌর কাউন্সিলর দুলাল মিয়ার কথাপোকথনের একটি অডিও ফাঁস হওয়ার পর। যেখানে অধ্যক্ষ সুলতান মিয়া নামফলক ভাঙ্গার সময় এমপি ঘটনাস্থলে ছিলেন না এবং সেদিন তিনি নামফলক ভাঙ্গতে আসেননি, তিনি এসেছেন প্রতিষ্ঠানের সমস্যা সমাধান করতে।
২২ নভেম্বর রবিবার রাত থেকে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুক ও ইউটিউবে কাউন্সিলর দুলাল মিয়া ও অধ্যক্ষ সুলতান মিয়ার কথাপোকথন ৪ মিনিট ২২ সেকেন্ডের একটি অডিও ফাঁস হয়। অডিও ফাঁস হওয়ার পর সোনারগাঁও উপজেলা জাতীয়পার্টির নেতাকর্মীদের মাঝে স্বস্থি ফিরে এসেছে। কারন সম্প্রতি ওই নামফলক ভাঙ্গার বিষয়ে নানা ধরণের কর্মকান্ডে রাজনীতিতে উত্তাপ ছড়িয়েছে। সেই উত্তাপ সোনারগাঁও ছাড়িয়ে ছড়িয়ে পড়েছে পুরো জেলায়।
ওই অডিওতে শোনা যায় সোনারগাঁও পৌরসভার কাউন্সিলর ও বিদ্যালয়ের গভর্নিং বডির সদস্য দুলাল মিয়াকে ফোন করেন অধ্যক্ষ সুলতান মিয়া। ফোন করেই তিনি সালাম দেন এবং সালাম গ্রহণ শেষে সুলতান মিয়া বলেন, ভাই কি আসছেন? আছি ভাই কলেজেই আপনি আসেন।
কাউন্সিলর দুলাল মিয়া: জাদুঘরে আছি, আসতাছি। আর শুনেন, প্রিন্সিপাল সাব।
অধ্যক্ষ সুলতান মিয়া: জী. জী।
কাউন্সিলর দুলাল: এখন ঘটনা হইলো, জামান ভাইয়েরে ফোন দিলাম ধরেনা, জামান ভাইয়েরা কি আসতাছে?
অধ্যক্ষ: হেগো তো বলছি আসতে।
কাউন্সিলর: ওনায় যদি না আয়ে পরে যদি আমারে আবার, আমি যদি ওইখানে যাই…
অধ্যক্ষ: না,না। আসবো আসবো। না, আসেন আপনি অসুবিধা নাই।
কাউন্সিলর: প্রিন্সিপাল সাব কথাডা বুইজেন, ওর দুঃখডা অইলো কোন জাগায়…
অধ্যক্ষ: আমি বললাম না, হেরা আসুক হের পরে আমারে দোইষেন।
কাউন্সিলর: একটু বলি, আমি তো অবশ্যই যামু। কডাটা শুইনেন, ঘটনা হইলো এমপি সাব এখানে আসছেন, আসার পরে লোকজন এখানে ছিল আপনার সাথে বইসা। আমি পরে গেছি। আপনার সাথে বইসা যে আলোচনা করলো, ফরম টরম দেইখা আপনারা দুইজনে কথা বললেন। উনায় বললো শিক্ষক যাতে এখানে পরিপূর্ণভাবে তাদের সেলারি পায়, শিক্ষক যাতে ভাল থাকে, ছাত্র-ছাত্রীর লেখাপড়া যাতে ভাল হয়। সরকার শিক্ষার মান উন্নয়ন করার জন্য একটা অনুদান আসে সরকারের, আমরা সরকারের বিরুদ্ধে কথা বলতে পারি না। তাই?
অধ্যক্ষ: না,না।
কাউন্সিলর: বাইরে আবার কি করলো? উনায় গিয়া ঘোষণা দিলো, কি ঘোষণা দিল, অভিভাবকদের যাতে চাপ না হয়, ইচ্ছা কইরা যদি কেউ টেকা দিতে চায়, টেকা দিব, জোরজরদস্তি করে নেয়ার দরকার নাই এবং প্রয়োজন বিধায় যদি শিক্ষকের বেতনের কোন সমস্যা হয় গভর্নিং বডির সাথে আলোচনা কইরা যেটা ডিসিশন..
অধ্যক্ষ: ওইযে হেরা বোধ হয় আইসা পড়ছে। (অন্যান্য সদস্যরা)
কাউন্সিলর: যেটা ডিসিশন, প্রিন্সিপাল সাব আমি বলি, গভর্র্নিং বডির সাথে আলোচনা কইরা ডিসিশন দেয় আমি একটা অর্থের সহযোগীতা করমু।
অধ্যক্ষ: হ, হ, বলছে।
কাউন্সিলর: এই কথা বইলা এমপি গেছে গা, বইলা যাওয়ার পরে ওটা এখানে কে ভাঙ্গছে, কি কথা কইলেন, আমি এখানে প্রেজেন্স (উপস্থিত) ছিলাম, তয় আমরা সরাসরি পৌরসভায় গেলাম গা, এখন যে উনার নামে বিভ্রান্তিডা হইলো যে, এমপি সাব এইডা ভাঙ্গছে এটা কি কোন যুক্তিসংগত? স্যার আপনি এই কথাডা বলছেন।
অধ্যক্ষ: এইডা যেয় মোল্লে হেয় বলেগ গা, প্রিন্সিবালে (প্রিন্সিপাল) বলছে কিনা সেইটা অইলো কথা।
কাউন্সিলর: হ আপনি বলছেন।
অধ্যক্ষ: প্রিন্সিবালে একই কথা বলছে যে, উনারে পৌরসভা পর্যন্ত আগাই দিয়া আসছি, আইসা দেখি আমি এইডা ভাঙ্গা।
কাউন্সিলর: এইডা কি আপনি বলছেন যে পৌরসভা পর্যন্ত আগাই দিয়া আসার পর দেহি এইডা ভাঙ্গা?
অধ্যক্ষ: হ, আমি এইডা বলছি।
কাউন্সিলর: আপনি বলে বলছেন এইডা এমপি সাহেব ভাঙ্গছে?
অধ্যক্ষ: আমি তো কত কতাই বলি, এইটা হেরে লেকলে তো আর অইতো না। আমি বলি আমার বিষয়টা এ রকম, অন্যজনে যদি বলে না, এটা এই রকম না, এই রকম, তো হইবো?
কাউন্সিলর: এমপি সাব কি আপনারে ভিগরাইয়া কোন কথা বলছে বা শিক্ষকরে ভিগরাইয়া কোন কথা বলছে?
অধ্যক্ষ: না, না। উনি সম্মানের সাথেই কথা বলছে এবং বলছে যে শিক্ষকেরা অভিভাবক। স্যারের প্রতি আমাদের বিন্দুমাত্র কোন ইয়া নাই, অনে একটা ভুল বুঝাবুঝি হইছে পাথরডা ভাঙ্গাতে, আর কোন সমস্যা নাই।
কাউন্সিলর: পাথরডা তো আর উনায় ভাঙ্গে নাই। উনি ভাঙ্গছে?
অধ্যক্ষ: না. না। উনি কি পাথর ভাঙ্গতে আসছে? আসছে প্রিন্সিপালের শিক্ষকদের সমস্যা দেখতে, প্রতিষ্ঠানের সমস্যা দেখতে।
কাউন্সিলর: কারো ক্ষতি করার মত মনমানসিকতা নিয়ে কি এখানে এমপি কিছু বলছে?
অধ্যক্ষ: স্যার আমাদের সমস্যার সমাধান কইরা দিছে, করার পরে স্যারেরে আমি আগাই দিয়া আসছি পৌরসভার ভেতরে, সিড়ি দিয়া যখন উনি ওঠবো তখন আমি বলছি যে স্যার আমি বিদায় নেই, আমারে ছুটি দিয়া দেন, স্যারে বলছে যে, যান আপনি কোন চিন্তা কইরেন না, টেনশন কইরেন না। আমি বুঝছি যে এর মানে হলো আমারে স্যারে যত ধরণের সহযোগীতা লাগে স্যারে করবো। এটা লাগবে, তারপরেও আমি স্যারের কাছে যখনি যেই কাজের জন্য যাই প্রথমে দুষ্টমী করে, দুষ্টমী কইরা কাজ করে দেন, একবার তো বলতাছে এই বিএনপি বসেন। আমি বিএনপি স্যারে তো জানে। এই দুষ্টমী মুষ্টমী কইরা যত কাজ আছে, কি কি আছে দেন, এইরা ইচ্ছামত কইরা দিলো।
কাউন্সিলর: আমিও দুইচার কথা যাই বলি প্রিন্সিপাল সাব, প্রতিষ্ঠানে এইযে টেকা পয়সা দেই, আপনি তো বাস্তব প্রমাণ, বলেন।
অধ্যক্ষ: আরে আপনি রাগি মানুষ, আপনি একটু ভুল বুঝলে আপনারে চেতাইলে রাইগগা যান, আর নাইলে আপনের ভেতরে কি জটিলতা আছে নি?
কাউন্সিলর; টেকা পয়সা দেই আমি স্কুলের ক্ষতি চাইনা।
অধ্যক্ষ: আসেন জামান ভাইয়েরা আসতাছে, জামান ভাই, মোহাম্মদ আলী ভাইয়েরা আসতাছে, আইসা পরেন।
কাউন্সিলর: এহন এমপি সাবের যে মান সম্মানির হানি হলো..
অধ্যক্ষ: না.না। আমরা থাকতে এমপি সাবের মান সম্মান নষ্ট হইবো কেন? আসেন।
কাউন্সিলর: আইচ্চা ঠিক আছে আসতাছি।
ঘটনা সূত্রে জানাগেছে, গত ১৭ নভেম্বর সোনারগাঁও জি.আর ইনস্টিটিউশন স্কুল এন্ড কলেজের অভিভাবকদের মাঝে অসন্তোষের বিষয়ে সেখানে অভিভাবকদের সঙ্গে মতবিনিময় করেন এমপি লিয়াকত হোসেন খোকা। অভিভাবকদের শান্ত করে এমপি বলেন, সরকার শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে বরাদ্ধ দিয়েছে। তারপরেও যদি কোন অর্থের প্রয়োজন হয় তাহলে সেটা আমি দেখবো।
এরপর এমপি খোকা চলে যান পৌরসভার ১নং ওয়ার্ডের দরপত ঠোটালিয়া প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সীমানা প্রাচীর উদ্বোধনে। সেখান থেকে তিনি সাদিপুর ইউনিয়নের দবির উদ্দীন ভুঁইয়া উচ্চ বিদ্যালয়ের নতুন ভবন নির্মাণের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপনে। এদিকে সন্ধার পর খবর বের হয় এমপি খোকা সোনারগাঁও জি. আর ইনস্টিটিউশন থেকে চলে যাওয়ার পর বিদ্যালয়ের গেটের সামনে লাগানো জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান আনোয়ার হোসেনের নামফলক ভেঙ্গে ফেলা হয়েছে। ওই ঘটনার জন্য এমপি খোকাকে দায়ী করা হয়।