সান নারায়ণগঞ্জ টুয়েন্টিফোর ডটকম:
নদীর ওপার চরাঞ্চল বলে বক্তাবলী ছিলো সব সময়ই শান্ত ও নিরিবিলি সামাজিক ও নিরাপদ এলাকা। এখানকার মানুষ বরাবরই সহযোগিতা ও অতিথি পরায়ণ। ১৯৭১ সালের মহান মুক্তিযুদ্ধের সময় দেশ মাতৃকার নিবেদিত প্রাণ মহান মুক্তিযোদ্ধাদের তাই নিরাপদ আশ্রয়স্থল ছিলো বক্তাবলী পরগণা। এসময়ে বক্তাবলী পরগনা বাসী মুক্তিযোদ্ধাদের নানানভাবে সহযোগিতা করতে থাকে।থাকা খাওয়া সহ নিরাপদ আশ্রয়ের জন্য বক্তাবলী পরগণা ছিলো বিশ্বস্ততার আরেক নাম।
ইতিমধ্যে পাক হানাদার বাহিনীর কানে পৌছে যায় বক্তাবলী মুক্তিযোদ্ধার ঘাটি ও মুক্তিযোদ্ধাদের নিরাপদ আশ্রয়স্থল। বক্তাবলী বাসীর নিবিড় খাতির যত্নে মুক্তিযোদ্ধারা সেখানে থেকে ভয়ঙ্কর হয়ে উঠেছে।
এরই পরিপ্রেক্ষিতে ২৯ নভেম্বর সেদিন ছিলো রোববার, ঘণ কুয়াশার চাঁদরে ঢাকা, কাক ঢাকা ভোরে পাক হানাদার বাহিনী অতর্কিত নির্মম হামলা চালিয়ে ধ্বংসযজ্ঞে মেতে উঠে। শত শত ঘরবাড়ী জ্বালিয়ে পুড়িয়ে ধ্বংসলীলায় মেতে উঠে।
তরুণ, যুবক ও বৃদ্ধ মিলিয়ে আওয়াল, অহিদুর, মুনছুর, শাহ আলম ও হাফিজুর সহ ১৩৯টি তাজা প্রাণ কেড়ে নেয় তাদের বুলেটের আঘাতে। নদীর পাড়ে সারিবদ্ধভাবে দাড় করিয়ে ব্রাশ ফায়ার করে তারা রক্তের হোলিখেলায় মেতে উঠে। শহীদদের রক্তে রঞ্জিত হয়ে যায় গোটা বক্তাবলীর আকাশ বাতাস। স্তম্ভিত হয়ে যায় বক্তাবলী পরগণার ২২ টি গ্রামে হাজারো মানুষ।ক্রন্দন দেখার যেনো কেউ নাই।সবাই যার যার প্রাণ বাচানোর জন্য পাগলের মতো ছুটে চলে।
বাংলাদেশের স্বাধীনতার পিছনে তাই বক্তাবলী পরগণার এই অবদান কোনোভাবেই খাটো করে দেখার অবকাশ নাই। দুঃখের বিষয় স্বাধীনতার ৪৯ বছরেও আজও রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতি মিলেনি বক্তাবলী বাসীর। ধলেশ্বরী নদী বেষ্টিত চরাঞ্চল বলে বক্তাবলী আজও সুনজরের অভাবে অবহেলিত। শহীদদের স্মরণে একটি স্মৃতিস্তম্ভ করে দিয়েই ক্ষান্ত। শহীদদের বধ্যভূমিটা রাষ্ট্রীয়ভাবে রক্ষণাবেক্ষণ প্রয়োজন।
আধুনিক সুযোগ সুবিধার ছিটেফোঁটা থেকে আজও বক্তাবলীবাসী বঞ্চিত। শহরের এতো কাছে থেকেও সবধরনের সুযোগসুবিধা বঞ্চিত।
শহীদ পরিবারগুলোর জন্য আজও মিলেনি রাষ্ট্রীয় কোনো সুযোগসুবিধা। অসহায় অনেক শহীদ পরিবার আজও অনাহারে দিন কাটায়। স্থানীয় বিভিন্ন সামাজিক সংগঠনগুলো ২৯ শে নভেম্বর আসলে হয়তো তাদের কথা মনে করে। কোনো সম্মাননা পেয়েই হয় তাদের শান্তনা।
রাষ্ট্রীয়ভাবে যদি তাদের আর্থিক কোনো সুযোগসুবিধা দেওয়া হইতো তাহলে হয়তো স্বজন হারানোর শোক কিছুটা হলেও লাঘব হতো। তাই কর্তৃপক্ষের সুদৃষ্টি কামনা করছি।
লেখক: এফএম আতাউর রহমান