সান নারায়ণগঞ্জ টুয়েন্টিফোর ডটকম:
নারায়ণগঞ্জের নবাগত জেলা প্রশাসক (ডিসি) মোস্তাইন বিল্লাহ বলেছেন, আমি এখন নারায়ণগঞ্জে কাজ করি, এখানকারটা খাই ও পড়ি। সুতরাং আমি এখন এই জেলার মানুষ। তাই নারায়ণগঞ্জকে নিয়ে আমরা একগুচ্ছ স্বপ্ন দেখতে চাই এবং বাস্তবে যতগুলো সম্ভব সেই স্বপ্ন আমরা বাস্তবায়ন করতে চাই। নারায়ণগঞ্জের ইতিহাস অনেক বেশি সমৃদ্ধ। নারায়ণগঞ্জে যারা কাজ করে তারা ‘টেস্টেড এন্ড ট্রাস্টেড’। এখানে জনপ্রতিনিধি, ইউএনও, ওসি যারা আছেন সবাই ‘টেস্টেড অ্যান্ড ট্রাস্টেড’। এবং সেজন্যই তারা নারায়ণগঞ্জে কাজ করার সুযোগ পেয়েছেন।
১৯ জানুয়ারি মঙ্গলবার সকালে সদর উপজেলা অডিটোরিয়ামে জনপ্রতিনিধি, সরকারি কর্মকর্তা ও জনসাধারণের সাথে মতবিনিময় সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি একথা বলেন। দিনব্যাপী তিনি সেখানে নানা কর্মসূচি পালন করেন। প্রতিবন্ধিদের মাঝে হুইল চেয়ার বিতরণও করেছেন তিনি।
জেলা প্রশাসক বলেন, আমাদের সোনারগাঁ, পানাম নগর, পীরের মাজার এইগুলো কিন্তু আমাদের ইতিহাস ঐতিহ্য। সেই জায়গাগুলোকে তুলে ধরার জন্যে নারায়ণগঞ্জ থেকে আমরা একটি আলোকচিত্র প্রতিযোগিতার আয়োজন করতে যাচ্ছি। যেখানে সারা পৃথিবী থেকে নারায়ণগঞ্জের যেকোনো ছবি দিয়ে এই প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণ করতে পারবে। সেখান থেকে শ্রেষ্ঠ ২শ’ ছবি নিয়ে আমরা একটি টুরিস্ট এ্যালবাম করতে চাই। যাতে করে নারায়ণগঞ্জের ইকো টুরিজমট এবং নারায়ণগঞ্জের সমৃদ্ধ ইতিহাস সারা বিশ্বে ছড়িয়ে যায়।
জেলা প্রশাসক আরও বলেন, ঢাকা ও চট্টগ্রাম মহাসড়কের সাথে নারায়ণগঞ্জকে যুক্ত করে আধুনিক ত্রিমুখী ফ্লাইওভার নির্মাণের পরিকল্পনা করছে সরকার। ইতিমধ্যে জেলা প্রশাসন থেকে সরকারের সংশ্লিষ্ট দপ্তরে এ ব্যাপারে চূড়ান্ত প্রস্তাবনা পাঠানোর প্রক্রিয়া প্রায় শেষের দিকে। প্রধানমন্ত্রীর নেতৃত্বে একনেকে সভায় প্রস্তাবিত ঢাকা-নারায়ণগঞ্জ লিংক রোডের সাইনবোর্ড থেকে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কে রাজধানীর যাত্রাবাড়ি ও বিপরীত দিকে চট্টগ্রাম পর্যন্ত মহাসড়কটি ৩০০ ফুটে উন্নীত ও প্রশস্ত করার কাজ চলছে।
তিনি আরও বলেন, বর্তমানে নারায়ণগঞ্জে আমার অর্জন শূন্য। তবে আমরা যাত্রা শুরু করেছি এবং সেটি ইতিবাচকভাবে শুরু করতে চাই। যেখান থেকে একটি ইতিবাচক এবং স্বপ্নময় নারায়ণগঞ্জ গড়ে উঠবে। আমরা এই দুটি শব্দ দিয়ে আমাদের যাত্রা শুরু করেছি। আমি এখানে কাজ করতে চাই। এখানে কাজ করতে এসেছি আমি। আপনারা আমাকে সহযোগিতা করবেন এবং আমিও আপনাদের সহযোগিতা করবো। আমরা প্রশাসন পরিবার, জনপ্রতিনিধি, বীর মুক্তিযোদ্ধা, মিডিয়া কর্মী সবাই মিলে যেন ভালো একটি টিম গঠন করতে পারি, সেই প্রত্যাশা আমি রাখছি। সব মিলিয়ে আমরা একটি সুন্দর নারায়ণগঞ্জ গড়তে চাই সেক্ষেত্রে সদর উপজেলা অগ্রণী ভূমিকা রাখবে।
দিনব্যাপী কর্মসূচির মধ্যে ছিল:
সকাল সাড়ে ১০টায় নবাগত জেলা প্রশাসক মোস্তাইন বিল্লাহকে নারায়ণগঞ্জ সদর উপজেলা পরিষদ ও প্রশাসন কর্তৃক উপজেলা পরিষদ প্রাঙ্গণে সাদর সম্ভাষণ জানানো হয় এবং উপজেলায় ডিসির প্রথমবার আগমন উপলক্ষ্যে ফুলেল অভ্যর্থনা জানানো হয়।
এ ছাড়াও উপজেলা পরিষদ প্রাঙ্গণে স্থাপিত বঙ্গবন্ধু ম্যুরালে পুষ্পস্তবক অর্পণ করেন। অতঃপর উপজেলার ৭টি ইউনিয়নের গ্রাম পুলিশদের সালাম গ্রহণ করেন এবং তাদের উদ্দেশ্যে বক্তব্য প্রদান করেন।
নারায়ণগঞ্জ সদর উপজেলার জনপ্রতিনিধি, সরকারি কর্মকর্তা এবং বিভিন্ন শ্রেণী-পেশার ব্যক্তিবর্গের সাথে উপজেলা পরিষদ মিলনায়তনে মতবিনিময় সভায় অংশগ্রহণ করেন এবং বিভিন্ন দিকনির্দেশনা প্রদান করেন।
মতবিনিময় সভা শেষে উপজেলা পরিষদে আগত সেবা প্রার্থীদের বসার স্থান “ক্ষণিকালয়” উদ্বোধন করেন। এই স্থানে বসে অপেক্ষমাণ সেবা প্রার্থীরা ইন্টারকম সেবা ব্যবহার করে সংশ্লিষ্ট দপ্তরে যোগাযোগ করতে পারবেন। নারায়ণগঞ্জ সদর উপজেলার জনসংখ্যা প্রায় ১৪ লক্ষ কিন্তু বাস্তবে জনসংখ্যা আরও বেশি। এই বিপুল সংখ্যক জনগণকে কাঙ্ক্ষিত সেবা প্রদান করার জন্য উপজেলা প্রশাসন ও পরিষদ বদ্ধপরিকর।
অতঃপর উপজেলার বিশেষ চাহিদাসম্পন্ন শিশুদের মাঝে ১৫টি হুইল চেয়ার, মাস্ক ও পুষ্টিবার্তা পুস্তক বিতরণ করেন এবং বিশেষ চাহিদাসম্পন্ন শিশুদের খেলাধুলা এবং বিনোদনের উদ্দেশ্যে উপজেলা পরিষদ প্রাঙ্গণস্থিত “আমরা করব জয়” কর্ণার পরিদর্শন করেন।
“আমরা করব জয়” কর্ণার পরিদর্শন শেষে উপজেলা প্রশাসনিক ভবন প্রাঙ্গণে গাছের চারা রোপণ করেন।
অতঃপর উপজেলা পরিষদ সম্মেলন কক্ষে নারায়ণগঞ্জ সদর উপজেলার ৭টি ইউনিয়ন পরিষদ এর জন্য এলজিএসপি-৩ প্রকল্প হতে বরাদ্দকৃত কম্পিউটার, মনিটর, স্ক্যানার, প্রিন্টার এবং ইউপিএস বিতরণ করেন।
সবশেষে উপজেলা নির্বাহী অফিসারের কার্যালয় পরিদর্শন করেন এবং বিভিন্ন দিকনির্দেশনা প্রদান করেন।
অতঃপর উপজেলা পরিষদ ও প্রশাসন, নারায়ণগঞ্জ সদর কর্তৃক জেলা প্রশাসক, নারায়ণগঞ্জ ডিসি সুন্দর আগামী পথচলা কামনা করা হয় এবং জেলা প্রশাসক মহোদয়ের বিভিন্ন দিকনির্দেশনার যথাযথ বাস্তবায়নের প্রতিশ্রুতি প্রদান করা হয়।
এ সময় সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা নাহিদা বারিকের সভাপতিত্বে আরো উপস্থিত ছিলেন- সদর উপজেলা চেয়ারম্যান অ্যাডভোকেট আবুল কালাম আজাদ বিশ্বাস, ভাইস চেয়ারম্যান নাজিম উদ্দীন ভুঁইয়া, বক্তাবলী ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান শওকত আলী, কুতুবপুর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান মো. মনিরুল আলম সেন্টু, ফতুল্লা ইউনিয়নের চেয়ারম্যান লুৎফর রহমান স্বপন, এনায়েতনগর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান মো. আসাদুজ্জামান, গোগনগর ইউনিয়নের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান নুর হোসেন, সদর উপজেলার সহকারী কমিশনার (ভূমি) হাসান বিন মোহাম্মদ আলী, সিদ্ধিরগঞ্জের সহকারী কমিশনার (ভূমি) রেজা মো. গোলাম মাসুম প্রধান, ফতুল্লার সহকারী কমিশনার (ভূমি) আজিজুর রহমান, সদর মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) শাহজামান, ফতুল্লা মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আসলাম হোসেন, সিদ্ধিরগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মশিউর রহমান প্রমুখ।