আদালতপাড়ার রাজনীতিতে যাদের হাতে ওসমান পরিবারের ঝান্ডা!

সান নারায়ণগঞ্জ টুয়েন্টিফোর ডটকম:

নারায়ণগঞ্জ জেলার সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ একটি রাজনৈতিক সেক্টর হয়ে ওঠেছে জেলা আইনজীবী সমিতির রাজনীতি অর্থাৎ আদালতপাড়ার রাজনীতি। গত কয়েক বছর ধরে জেলা আইনজীবী সমিতির নেতৃত্বে রয়েছেন আওয়ামীলীগের আইনজীবীরা। আদালতপাড়ায় এক সময় ওসমান পরিবারের ঝান্ডা ধরে এখানকার রাজনীতির নিয়ন্ত্রক ছিলেন অ্যাডভোকেট আনিসুর রহমান দিপু ও অ্যাডভোকেট খোকন সাহা। বর্তমানে সেই নিয়ন্ত্রন ও নেতৃত্বের পরিবর্তন ওঠেছে তরুণ প্রজন্মের বেশকজন আইনজীবীর হাতে। যাদের হাতে এখন ওসমান পরিবারের ঝান্ডা।

গত ২৮ জানুয়ারি নারায়ণগঞ্জ জেলা আইনজীবী সমিতির নির্বাচনে আওয়ামীলীগের পূর্ণ প্যানেল বিজয়ী হয়েছে। যেখানে দ্বিতীয় বারের মত সমিতির সভাপতি হলেন অ্যাডভোকেট মুহাম্মদ মোহসীন মিয়া ও দ্বিতীয়বারের মত সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট মাহবুবুর রহমান। এর আগের নির্বাচনেও তারা একই পদে নির্বাচিত হয়ে দায়িত্ব পালন করেছেন।

এর আগে আইনজীবী সমিতিতে টানা দুইবার সাধারণ সম্পাদক ও দুইবার যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক হিসেবেও দায়িত্ব পালন করেছিলেন অ্যাডভোকেট মুহাম্মদ মোহসীন মিয়া। একইভাবে আইনজীবী সমিতিতে এর আগে দুইবার যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন সমিতির বর্তমান সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট মাহবুবুর রহমান।

২০১৬ সালে জেলা আইনজীবী সমিতির সভাপতি নির্বাচিত হন ওসমান পরিবারের বিশ্বস্থ হাতিয়ার অ্যাডভোকেট হাসান ফেরদৌস জুয়েল। এরপর তিনি টানা দুইবার আইনজীবী সমিতিতে সভাপতি হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন। মুলত তার হাতেই আদালতপাড়ায় আওয়ামীলীগের রাজনীতিতে নতুন যাত্রা শুরু হয়। জটিল সমীকরণ ও চতুর্মুখী বাধা পেড়িয়ে জুয়েল মোহসীন নেতৃত্বে আসেন। যে কারনে তরুণ প্রজন্মের রাজনীতির যাত্রায় ওই বিজয়কে আইনজীবীরা রাজনীতির পরিবর্তনে ঐতিহাসিক বিজয় মনে করেন। এর আগে জুয়েলও সমিতিতে দুইবার সাধারণ সম্পাদক ছিলেন এবং যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ছাড়াও বিভিন্ন পদে তিনি নির্বাচিত হয়ে দায়িত্ব পালন করেছিলেন।

মুলত আইনজীবী সমিতিতে আইনজীবীদের জন্য সবচেয়ে কার্যকরী যে বেনাভোলেন্ড ফান্ড তৈরি হয়েছে হাসান ফেরদৌস জুয়েল সেক্রেটারি থাকাকালীন সময়ে। ওই সময় এই কাজটি সম্পন্ন করতে তিনি অনেক বাধার সুম্মুখীন হয়েছিলেন। এছাড়াও সর্বপ্রথম আইনজীবী সমিতিতে তিনিই ওয়াইফাই জোন করে ডিজিটালাইজেশনের ছোয়া দেন। আইনজীবীদের ডাইরেক্টরি তৈরি, ওয়েবসাইট তৈরি, আইডি কার্ড সহ বিভিন্ন কার্যকর পদক্ষেপগুলো হাসান ফেরদৌস জুয়েলের আমলে তৈরি হয়েছে। যেখানে মোহসীন মিয়া ও মাহবুবুর রহমানও তার সঙ্গে এসব উন্নয়নে অবদান রেখেছেন।

তবে সবচেয়ে আলোচিত ডিজিটাল বার ভবন নির্মাণ শুরু হয় জুয়েল ও মোহসীন পরিষদের আমলেই। যেখানে যুগ্ম সম্পাদক ছিলেন মাহবুবুর রহমানও। ডিজিটাল বার ভবনের ইতিমধ্যে দ্বিতীয় তলার কাজ শেষ। এই ভবনের স্থলে পুরাতন ভবন ছিল যা ভাঙ্গতে বাধার মুখোমুখী হয়েছিলেন জুয়েল মোহসীন। তবে এই ভবনের দিকে তাকিয়েই আওয়ামীলীগের আইনজীবীদের ভোট বাড়ছে। একই সঙ্গে তরুণ প্রজন্মের এসব আইনজীবী নেতারা সাধারণ আইনজীবীদের সঙ্গে বন্ধুত্বসুলভ আচরণ ও সকলের প্রয়োজনে এগিয়ে যাওয়ায় সকলের মাঝে জনপ্রিয় হয়ে ওঠেছেন।

যে কারনে এমপি সেলিম ওসমান ও এমপি শামীম ওসমানের প্রতি আইনজীবীরা কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করছেন নিয়মিত। এই তিন আইনজীবীর সঙ্গে উন্নয়নযাত্রায় যোগ হয়েছেন আদালতপাড়ায় ক্লিন ইমেজধারী ও ওসমান পরিবারের আরেক বিশ্বস্থজন অ্যাডভোকেট রবিউল আমিন রনি। তিনি আইনজীবী সমিতির এবারের নির্বাচনে যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক পদে নির্বাচিত হয়েছেন।

আইনজীবীরা বলছেন, কয়েক বছর ধরে অ্যাডভোকেট হাসান ফেরদৌস জুয়েল, অ্যাডভোকেট মুহাম্মদ মোহসীন মিয়া ও অ্যাডভোকেট মাহবুবুর রহমান আইনজীবী সমিতির উন্নয়নে কাজ করছেন। এদের আমলে কখনই আইনজীবী সমিতির তহবিল নিয়ে কোন ধরণের প্রশ্ন ওঠেনি। এমনকি তাদের বিরোধীতাকারী ও বিরোধী দলীয় আইনজীবীরাও তাদের বার্ষিক আর্থিক কোটি কোটি টাকার হিসেব নিয়ে সন্দেহ পোষণও করেনি। তাদের বিরোধীরাও অকপটে স্বীকার করেন তাদের সততা নিয়ে কোন সন্দেহ নেই। এদের মতই একজন অ্যাডভোকেট রবিউল আমিন রনি। তরুন প্রজন্মের এই চার আইনজীবী নেতাই এখন ঘুরেফিরে নেতৃত্ব দিচ্ছেন যারা ওসমান পরিবারের বিশ্বস্থ হাতিয়ার। ধরেছেন আদালতপাড়ার রাজনীতির ঝান্ডা।