এক নজরে দেখুন এমপি খোকার হাতে সোনারগাঁয়ে যেসব উন্নয়ন

সান নারায়ণগঞ্জ টুয়েন্টিফোর ডটকম:

জাতীয় পার্টির প্রেসিডিয়াম সদস্য লিয়াকত হোসেন খোকা এমপি সোনারগাঁও জনপদের এক আলোচিত নাম। রাজনৈতিক জীবনে সাফল্যের সঙ্গে মহাজোট থেকে লাঙ্গল প্রতীক মনোনয়ন নিয়ে নির্বাচিত হয়ে নারায়ণগঞ্জ-৩ (সোনারগাঁ) আসনে আপামর জনসাধারণের সার্বিক উন্নয়নে তিনি নিজেকে নিয়োজিত করেছেন।

সামাজিক কর্মকান্ড ও রাজনীতিতে ইতিবাচক ভুমিকা তার চরিত্রের বিশেষ বৈশিষ্ট্য। প্রগতিশীল এই রাজনীবিদ নিজ নির্বাচনী এলাকায় ব্যাপক জনপ্রিয়তা অর্জনের পাশাপাশি খ্যাতির শীর্ষে অবস্থান করছেন। তিনি নিরলসভাবে কাজ করছেন সাধারণ মানুষের জীবনমান উন্নয়নের জন্য। উন্নয়নের রূপকল্প ২০১৯-২০২৩ বাস্তবায়নের মাধ্যমে স্বপ্নের সমৃদ্ধ সুন্দর সোনারগাঁ গড়ে তোলার লক্ষ্যে কাজ করে যাচ্ছেন।

এক নজরে সোনারগাঁয়ের উন্নয়ন:

বিগত ২০১৪-১৮ অর্থ বছরে নারায়ণগঞ্জ-৩ (সোনারগাঁ) আসনে রাস্তাঘাট নির্মাণ উন্নয়ন ও সংস্কার, কালভার্ট-সেতু নির্মাণ, শিক্ষা ব্যবস্থার উন্নয়ন ও স্বাস্থ্য সেবা কার্যক্রম, মসজিদ, মাদ্রাসা এতিমখানা, কবরস্থান, ঈদগা, মন্দির ও ধর্মীয় উপশনালয়ের উন্নয়ন কার্যক্রমে যেসব উন্নয়ন কার্যক্রম সম্পাদিত হয়েছে তার একটি সংক্ষিপ্ত বিবরণ তুলে ধরা হলো।

শিক্ষা ব্যবস্থার উন্নয়ন:

লিয়াকত হোসেন খোকা বলেন, জ্ঞানার্জনের মাধ্যমে প্রকৃত মানুষ এবং দারিদ্র্য বিমোচনের লক্ষ্য পূরণে শিক্ষাই হচ্ছে প্রধান অবলম্বন। বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনার নেতৃত্বে স্বাধীনতা ও মুক্তিযুদ্ধ চেতনার মহাজোট সরকারের শিক্ষা বিষয়ে কর্মকৌশল বাস্তবায়ন, আধুনিক ও প্রযুক্তিনির্ভর শিক্ষাব্যবস্থা গড়ে তোলার উদ্যোগসহ সোনারগাঁয়ের ১১৩টি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের মধ্যে ৭০টি ভবন উন্নয়ন ও সংস্কার এবং নির্মাণ কাজ চলমান, ১৭টি ভবন নির্মাণ টেন্ডার প্রক্রিয়াধীন, ১০টি ভবন নির্মাণ অনুমোদন প্রক্রিয়াধীন রয়েছে। এছাড়াও ৩২টি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শ্রেণিকক্ষ বৃদ্ধি ও ১৯টি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের উন্নয়ন কাজ সমাপ্ত, ৪৮টি ওয়াশবøক কাজ সম্পন্ন এবং ২১টি ওয়াশব্লক কাজ টেন্ডারসম্পন্ন, ৮৫টি গভীর নলকূপসহ সামারসিবল পাম্প স্থাপনসহ প্রাথমিক শিক্ষা খাতে নানাবিধ উন্নয়ন কাজ সম্পন্ন হয়েছে। উচ্চ বিদ্যালয়সমূহে ২৫টি ভবন, মাদ্রাসাসমূহে ৬টি ভবন, কলেজসমূহে ৪টি ভবন নির্মাণ ও উন্নয়ন কাজ চলমান রয়েছে। শিক্ষা প্রতিষ্ঠানসমূহে শতভাগ বিদ্যুৎসংযোগ ও নিরাপদ পানির ব্যবস্থা, বাউন্ডারি ওয়াল নির্মাণ, ৩০টি শহীদ মিনার নির্মাণ, ৩০০টি গভীর নলকূপ, ৬টি শেখ রাসেল ডিজিটাল কম্পিউটার ল্যাব স্থাপন করা হয়েছে। সোনারগাঁও ডিগ্রি কলেজ, মোগরাপাড়া উচ্চ বিদ্যালয় জাতীয়করণ ছাড়াও বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠান জাতীয়করণ ও এমপিওভুক্তির উদ্যোগ চলমান রয়েছে। প্রায় ৭১০ বছর পূর্বে সোনারগাঁয়ে প্রতিষ্ঠিত উপমহাদেশের প্রথম ইসলামিক শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের স্থানে) ইসলামিক বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপন ও একটি কারিগরি বিদ্যালয় স্থাপন প্রক্রিয়াধীন রয়েছে। প্রতিটি ইউনিয়নে একটিকরে উচ্চ বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা করা হবে। এতিমখানা ও কওমি মাদ্রাসাগুলোর উন্নয়নে সর্বাত্মক প্রচেষ্টা অব্যাহত থাকবে।

প্রাথমিক বিদ্যালয়ের উন্নয়ন:

লিয়াকত হোসেন খোকা বলেন, শিক্ষা প্রতিষ্ঠানসমূহের উন্নয়নে আমি ব্যাপক কাজ করার চেষ্টা করেছি। সংসদ সদস্য হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণের সূচনাতেই প্রাথমিক শিক্ষা ব্যবস্থাকে অধিক গুরুত্বারোপ করে আমি এলাকার প্রাথমিক বিদ্যালয়গুলো সরাসরি পরিদর্শণে যাই। আমি দেখতে পাই অধিকাংশ প্রাথমিক বিদ্যালয় ভবন সংকটে জর্জরিত, প্রয়োজনীয় শ্রেণীকক্ষ না থাকায় ছাত্র-ছাত্রীরা বাধ্য হয়ে ঝুঁকিপূর্ণ পুরাতন ভবনেই শ্রেণী কার্যক্রমে অংশগ্রহণ করে আসছে। তাই শিক্ষার্থীদের প্রাণহানির আশঙ্কা থেকে রক্ষার্থে এবং সুষ্ঠু ও সুন্দরভাবে শিক্ষা কার্যক্রম পরিচালনার সুবিধা নিশ্চিত করার লক্ষ্যে আমি প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের তৎকালীন মাননীয় মন্ত্রীর শরণাপন্ন হই। মাননীয় মন্ত্রী মহোদয়কে সোনারগাঁ এলাকার প্রাথমিক বিদ্যালয় সমূহের সার্বিক বিষয়ে অবগত করি এবং স্বচক্ষে পরিদর্শণের সুবিধার্থে সোনারগাঁয়ে আসার আমন্ত্রণ জানাই। তিনি আমার আমন্ত্রণ গ্রহণ পূর্বক সোনারগাঁয়ে আগমন করেন। যেহেতু সময় স্বল্পতার কারণে সোনারগাঁ এলাকার প্রতিটি প্রাথমিক বিদ্যালয় একদিনে পরিদর্শন সম্ভব নয়, তাই আমি সোনারগাঁয়ের সকল জরাজীর্ণ ও ঝুঁকিপূর্ণ প্রাথমিক বিদ্যালয় সমূহের বাস্তব ভিডিওচিত্র তৈরি করে মন্ত্রী মহোদয়সহ আমন্ত্রিত সকল অতিথিদেরকে বড় পর্দায় দেখানো হয়। সেদিন মন্ত্রী মহোদয় জরাজীর্ণ ও ঝুঁকিপূর্ণ প্রাথমিক বিদ্যালয় সমূহের বাস্তব ভিডিওচিত্র স্বচক্ষে পর্যবেক্ষণ করে অশ্রæসিক্ত নয়নে জরুরিভিত্তিতে সকল সমস্যা সমাধানের আশ্বাস দেন। তারই ফলশ্রুতিতে প্রাথমিক বিদ্যালয়গুলোতে নতুন ভবন নির্মাণ, সংস্কার, ব্যাপক উন্নয়ন ও আসবাবপত্র সরবরাহের কাজ করা হয়েছে।

যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নয়ন:

লিয়াকত হোসেন খোকা বলেন, যোগাযোগ ব্যবস্থাকে উন্নয়নের মৌলিক শর্ত বিবেচনা পূর্বক রাস্তা পাকাকরণ, সংস্কার, মেরামত ও সিসি ঢালাইসহ ২৫২ কিলোমিটার রাস্তা উন্নয়ন ১৯.৫ কিলোমিটার রাস্তা এইচ.বি.বিকরণ উন্নয়ন, ১২১ কিলোমিটার ইটের সলিং রাস্তা নির্মাণ, ১৮০ কিলোমিটার কাঁচা রাস্তা নির্মাণ ও উন্নয়ন এবং ভাটিবন্দর ব্রিজসহ ৩৬টি ব্রিজ-কালভার্ট নির্মাণ সম্পন্ন ২০টি কালভার্ট নির্মাণ প্রক্রিয়াধীন রয়েছে। (সোনারগাঁ উপজেলার) হরিহরদী, চৌরপাড়া, মান্দারপাড়া ব্রিজনির্মাণ কাজ চলমান রয়েছে। নবীনগর-সাবদী, রতনপুর, হামছাদী, কাজিপাড়া, প্রেমেরবাজার, বাংলাবাজার ব্রিজ টেন্ডার প্রক্রিয়াধীন। মহজমপুর, মোগরাপাড়া কলেজ সংলগ্ন ব্রিজ, তালতলা-বৈদ্যর বাজার বঙ্গবন্ধু সড়ক ফোর লেনে উন্নিতকরণ প্রকল্প অনুমোদন হয়েছে।

নূনেরটেক ব্রিজ এবং ওয়ার্ড ভিত্তিক রাস্তা প্রশস্ত ও নতুন রাস্তা নির্মাণ প্রক্রিয়াধীন রয়েছে। এছাড়াও সড়ক ও জনপথ বিভাগের আওতায় ৭৩ কিলোমিটার রাস্তা উন্নয়ন ও সংস্কার করা হয়েছে। কাঁচপুর হতে মেঘনাঘাট পর্যন্ত মহাসড়কে বাইলেন নির্মাণ প্রক্রিয়াধীন রয়েছে। নারায়ণগঞ্জ-৩ আসনের অন্তর্গত ১০টি ইউনিয়ন এবং একটি পৌরসভা। এই ১১টি এলাকাকে আমি সমান চোখে দেখার চেষ্টা করেছি। উন্নয়নে সমবন্টন করে কাজ করার চেষ্টা করেছি এই ১১টি এলাকাই আমার সন্তান সমতুল্য। বারদী, বৈদ্যর বাজার, জামপুর, কাঁচপুর, মোগরাপাড়া, নোয়াগাঁও, পিরোজপুর, সাদিপুর,শম্ভুপুরা, সনমান্দি এবং সোনারগাঁওপৌর সভার রাস্তার-উন্নয়ন, নতুন নির্মাণ, পুরাতন রাস্তা মেরামত, পুনঃ মেরামত, সংস্কার মাটি ভরাটসহ গ্রামীণ যোগাযোগের ক্ষেত্রে আমি রেকর্ড পরিমাণ কাজ করেছি। স্থানীয় পৌর মেয়র, জেলা পরিষদ সদস্য, ইউপি চেয়ারম্যান, পৌর কাউন্সিলর ও ইউপি সদস্যদের পরামর্শক্রমে এবং তাদের চিহ্নিত সমস্যাগুলোকে সামনে রেখে পরিকল্পনামাফিক গ্রামীণ জনগোষ্ঠীর জীবন জীবিকার উন্নয়নে সড়ক ও যোগাযোগ ব্যবস্থায় ব্যাপক উন্নয়ন করা হয়েছে বলে জানান তিনি।

স্বাস্থ্য ব্যবস্থার উন্নয়ন:

স্বাস্থ্যসেবা বিষয়ে মহাজোট সরকারের বিভিন্ন কর্মকৌশল বাস্তবায়নের মাধ্যমে উন্নয়ন প্রক্রিয়ায় স্বাস্থ্য সেবাকে একটি অবিচ্ছেদ্য অংশ হিসেবে বিবেচনা করে স্বাস্থ্য সেবা আধুনিকায়নের উদ্যোগ নিয়েছেন জানিয়ে লিয়াকত হোসেন খোকা বলেন, সকলের জন্য সাশ্রয়ী ও মানসম্মত চিকিৎসা সেবা ও শিশু স্বাস্থ্যসেবার ওপর অধিক গুরূত্বারোপ করে উপজেলা হাসপাতালের উন্নয়নসহ প্রতিটি ইউনিয়নে কমিউনিটি ক্লিনিক ও হেলথ সেন্টার স্থাপন করা হয়েছে। ইউনিয়ন পর্যায়ে স্বাস্থ্য কর্মীরা বাড়ি বাড়ি স্যাটেলাইট ক্লিনিক আয়োজনের মাধ্যমে স্বাস্থ্য সেবা প্রদান করে আসছে। কমিউনিটি ক্লিনিকবিহীন ওয়ার্ডে জরুরি ভিত্তিতে কমিউনিটি ক্লিনিক স্থাপন প্রক্রিয়াধীন রয়েছে। সোনারগাঁয়ের মানুষের জন্য স্বাস্থ্য খাতে অনেক কাজ করা হয়েছে। অসহায় দুস্থ, রোগে আক্রান্তদের মতো দুঃখের মানুষ আর এই সংসারে হয়না। আমার সময়ে স্বাস্থ্যখাতে ৪৩ কোটি টাকা ব্যয় করা হয়েছে। তবুও মনে হয়েছে সত্যিকার কাজটি এখনো বাকি রয়েছে। নারায়ণগঞ্জ, নরসিংদী, দাউদকান্দিসহ এর আশপাশে কোন উন্নত ও বড় মাপের হাসপাতাল নেই। আমার দীর্ঘদিনের একটি স্বপ্ন রয়েছে, সোনারগাঁয়ে অত্যাধুনিক উন্নতমানের একটি ৫০০ শয্যা বিশিষ্ট জেনারেল হাসপাতাল নির্মাণ করার। সকলের আন্তরিক সহযোগিতা পেলে শিক্ষা এবং স্বাস্থ্য নিয়ে আমার ব্যাপক পরিকল্পনা রয়েছে।

উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা ভবন ও বিজয়স্তম্ভ উন্নয়ন প্রসঙ্গে:

লিয়াকত হোসেন খোকা বলেন, জাতির জনক বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বে ১৯৭১ সালের ১৬ ডিসেম্বর ত্রিশ লাখ শহীদ তিন লাখ মা-বোনের ইজ্জতের বিনিময়ে আসে আমাদের বিজয়। বাঙালি জাতি (মুক্ত) হয় পরাধীনতার শৃঙ্খল থেকে। বীর মুক্তিযোদ্ধাদের ত্যাগ ও কল্যাণে আমরা হই বীরের জাতি। আমি সংসদ সদস্য হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণের পর সোনারগাঁ জাদুঘরে স্থাপিত জাতির জনক বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতি ও সোনারগাঁ বিজয়স্তম্ভে পুষ্পস্তবক অর্পণের মাধ্যমে শ্রদ্ধাজ্ঞাপন শেষে উপজেলা মুক্তিযোদ্ধাদের অনুরোধে সোনারগাঁ উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা সংসদের কার্যালয়ে যাই। সোনারগাঁ উপজেলা কেন্দ্রীয় মুক্তিযোদ্ধা কার্যালয়ের ভঙ্গুর করুণ অবস্থা দেখে আমি জরুরি ভিত্তিতে তা সংস্কারের উদ্যোগ গ্রহণের জন্য মনস্থির করি। তারই ফলশ্রুতিতে সোনারগাঁ উপজেলা কেন্দ্রীয় মুক্তিযোদ্ধা ভবন, বিজয়স্তম্ভ উন্নয়ন করা হয়েছে বলে জানান তিনি। এছাড়াও উপজেলার ১০টি ইউনিয়ন ও একটি পৌরসভায় পর্যায়ক্রমে মুক্তিযোদ্ধা ভবন নির্মাণ চলমান রয়ছে।

সৌর প্যানেল স্থাপন:

আর্থ-সামাজিক উন্নয়ন এবং দারিদ্র বিমোচনের অন্যতম প্রয়োজনীয় উপকরণ বা শক্তি হচ্ছে বিদ্যুৎ। একটি সবুজ বাংলাদেশ গড়ে তোলার ক্ষেত্রে অনবায়ণ যোগ্য সব শক্তির ভিড়ে নবায়ণযোগ্য বিদ্যুতের অন্যতম উৎস হিসেবে সৌর বিদ্যুতের কথা এখন সবার মুখে মুখে। ভবিষ্যৎকে সুন্দর ভাবে গড়ে তুলতে বর্তমান মহাজোট সরকার উন্নয়নের অন্যান্য দিকের সাথে মনোযোগ দিয়েছে সৌর বিদ্যুৎ ব্যবহারের দিকে। ভিন্নধারার শক্তির উৎস হিসেবে সৌরশক্তি ব্যবহার এবং সৌর বিদ্যুতের ওপর আরো বেশি পরিমানে নির্ভর হতে হবে আমাদের। আর তাহলেই উন্নয়নশীল বাংলাদেশ বিশ্বে উন্নয়নের দৌড়ে এগিয়ে যাবে অনেক দূর। উন্নয়নের ধারাবাহিকতায় আলোকিত সোনারগাঁ গড়ার লক্ষ্যে নিরবচ্ছিন্ন সৌর বিদ্যুতের ব্যবহারের সুবিধা প্রাপ্তির জন্য সোনারগাঁ উপজেলার জনগুরুত্বপূর্ণ স্থান, কবরস্থান, জনগণের চলাচলের রাস্তা, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, মসজিদ ও মন্দিরসহ বিভিন্ন স্থানে পর্যাপ্ত সৌর প্যানেল স্থাপন অব্যাহত রয়েছে। বিদ্যুতের যোগান পুরোপুরি পেতে বাসা-বাড়িসহ সোনারাগাঁয়ের জনগুরুত্বপূর্ণ স্থানে আগামীতে আরো সৌরপ্যানেল স্থাপন বৃদ্ধি করা হবে বলে আশাবাদ ব্যক্ত করেন লিয়াকত হোসেন খোকা।

সোনারগাঁ মডেল মসজিদ কমপ্লেক্স ও ইসলামিক সাংস্কৃতিক কেন্দ্র:

বঙ্গবন্ধুর সুযোগ্য কন্যা বর্তমান মহাজোট সরকারের মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার উন্নয়ন পরিকল্পনা, সুদূও প্রসারী কার্যক্রম ও গঠনমূলক পদক্ষেপের অংশ হিসেবে দেশব্যাপী প্রতিটি জেলা ও উপজেলায় একটি করে ৫৬০টি মডেল মসজিদ ইসলামিক সাংস্কৃতিক কেন্দ্র নির্মাণ কার্যক্রম চলমান রয়েছে জানিয়ে লিয়াকত হোসেন খোকা বলেন, লাইব্রেরি স্থাপন, গবেষণা কক্ষ, ইসলামিক সাংস্কৃতিক কার্যক্রম, শিশু শিক্ষা কার্যক্রম এবং পুরুষ ও মহিলাদের পৃথক নামাজ কক্ষ, মেহমানদের আবাসন ব্যবস্থা, বিদেশি পর্যটকদের পরিদর্শনের ব্যবস্থা, হজ্জ্ব যাত্রীদের প্রশিক্ষণ কার্যক্রম ইত্যাদি সুবিধাসহ মডেল মসজিদ কমপ্লেক্স নির্মাণ করাহবে। সোনারগাঁ উপজেলার প্রাণকেন্দ্রে অবস্থিত উপজেলা জামে মসজিদ কমপ্লেক্স ও ইসলামিক সাংস্কৃতিক কেন্দ্রে রূপান্তরের জন্য ইতোমধ্যে প্রস্তাব প্রেরণ করা হয়েছে। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী সদয় অনুমোদন সাপেক্ষে সোনারগাঁ উপজেলা মডেল মসজিদ কমপ্লেক্স ও ইসলামিক সাংস্কৃতিক কেন্দ্রের নির্মাণ কাজ শিগগিরই শুরু হবে।

সামাজিক অবকাঠামো উন্নয়ন:

গণমানুষের অধিকার প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে উন্নয়নমূলক সুনির্দিষ্ট কর্মসূচি বাস্তবায়নে মসজিদ-মাদ্রাসা, এতিমখানা, বারদী লোকনাথ ব্রহ্মচারীর আশ্রমসহ মন্দির ও উপাশনলয়ের উন্নয়ন, ২৫টি ঈদগাহ মাঠের উন্নয়ন, ৩টি ওয়াটার সাপ্লাইয়ার, ৫০টি ঘাটলা ও ২টি আশ্রয় কেন্দ্র, উপজেলা প্রশাসনিক ভবন, ফায়ার সার্ভিস স্টেশন নির্মাণ, সবুজ লেখা বাদ সোনারগাঁ পৌর সভার উন্নয়নে ২৮ কোটি টাকার প্রকল্প সম্পন্ন হয়েছে, আধুনিক পানি ব্যবস্থাপনাসহ ৮৫ কোটি টাকার উন্নয়ন কাজ চলমান রয়েছে। সোনারগাঁ শেখ রাসেল মিনি স্টেডিয়াম নির্মাণ চেষ্টা অব্যাহত আছে। বাংলাদেশ লোক ও কারুশিল্প ফাউন্ডেশনের উন্নয়নে ১১৮ কোটি টাকার প্রকল্প অনুমোদিত হয়েছে। দুস্থদের জন্য ১৮০টি সেমি পাকা ঘর নির্মাণ সম্পন্ন, প্রতিটি ইউনিয়নে ডিজিটাল তথ্যসেবা কেন্দ্র স্থাপন, অনলাইন সেবা প্রদান, একটি বাড়ি একটি খামার প্রকল্প চলমান রয়েছে। এছাড়াও দরিদ্রদের জন্য সেলাই মেশিন বিতরণ, কৃষি উন্নয়নের জন্য কৃষি ঋণ ও উপকরণ বিতরণ এবং খাল খনন প্রকল্প বাস্তবায়ন করা হয়েছে। বিধবা ভাতা প্রদান, প্রতিবন্ধী ভাতা প্রদান, বয়স্ক ভাতা প্রদান, মাতৃত্বকালীন ভাতা প্রদান, জেলেদের খাদ্য সহায়তা প্রদান এবং বিভিন্ন ইউনিয়ন পরিষদ ভবনের উন্নয়ন এবং সাংবাদিকদের সার্বিক কল্যাণে সোনারগাঁ প্রেসক্লাবের উন্নয়ন করা হয়েছে।

রূপকল্প ২০১৯-২৩:

সোনারগাঁয়ের উন্নয়নে আগামী দিনের ২৬ দফা প্রতিশ্রুতি : সোনারগাঁয়ের মানুষের উন্নয়নে কাজ করতে চাই। রাজনীতির শুরু থেকেই নিজেকে জনসেবায় নিয়োজিত করে মানুষের পক্ষে কিংবা কোনো সরকারের পক্ষেই শতভাগ উন্নয়নকরা সম্ভব নয়। এ জন্য দীর্ঘমেয়াদি সময়ের প্রয়োজন। ইতিমধ্যে সোনারগাঁয়ের গুরূত্বপূর্ণ জন সমস্যাগুলোর সমাধান হয়েছে। উন্নয়ন কর্মকান্ড পরিচালনায় বিভিন্ন পেশার ও শ্রেণীর মানুষ, ব্যক্তি এবং মহল থেকে নানান পরামর্শ ও সহযোগিতা নেওয়া হয়েছে। প্রাচীন বাংলার রাজধানী সোনারগাঁ উন্নয়নে আপনাদের পরামর্শ ও সার্বিক সহযোগিতায় পরিকল্পনা করে স্বপ্নের সুন্দর সোনারগাঁ গড়ে তোলার লক্ষ্যে উন্নয়ন মূলক অসমাপ্ত কাজগুলো শেষ করবেন, ইনশাল্লাহ।

সমৃদ্ধ ও উন্নত আগামীর বিনির্মানে প্রাথমিক শিক্ষার মানোন্নয়ন ও আধুনিকায়ন আবশ্যক কেননা প্রাথমিক শিক্ষাই হচ্ছে সব শিক্ষার মূল ভিত্তি। ছাত্র ও ছাত্রীদের জন্য আরও দুটি পৃথক সরকারি উচ্চ বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার উদ্যোগ গ্রহণ করা হবে এবং এর পাশাপাশি এতিমখানা ও কওমি মাদ্রাসাগুলোর উন্নয়ন ও আধুনিকায়নে আমি দৃঢ় প্রতিজ্ঞাবদ্ধ।

তিনি বলেন, আমার স্বপ্ন সোনারগাঁয়ে সরকারিভাবে একটি ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠাকরা। আল্লামা হযরত শাহ্ মাখদুম শাইখ শরফউদ্দিন আবু তাওয়ামা (র.) কর্তৃক ১২৭৮ খ্রিস্টাব্দে সোনারগাঁয়ে প্রতিষ্ঠিত উপমহাদেশের অন্যতম ও তৎকালীন বাংলার সর্ববৃহৎ ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের স্মৃতিচারণে উক্ত ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার উদ্যোগ গ্রহণ করা হবে।

সোনারগাঁয়ে সরকারিভাবে একটি কারিগরি বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা করা হবে। বিশ্ববিস্তৃত যোগাযোগ ব্যবস্থার এক যুগান্তকারী মাধ্যম ইন্টারনেট। ইন্টারনেট ও আধুনিক জীবনযাত্রার এক অবিচ্ছেদ্য সম্পর্কেসূত্রে গ্রথিত। তাই পরিকল্পিতভাবে নিরবিচ্ছিন্ন ইন্টারনেট সংযোগ প্রদানের মাধ্যমে আইটির স্তরে বাস্তবায়ন করা হবে। আমার সোনারগাঁর প্রতিটি কলেজ এবং বিশ্ববিদ্যালয়ে কম্পিউটার শিক্ষা সম্প্রসারণ, ভাষাগত দক্ষতা তরান্বিত করার লক্ষ্যে সকল শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে বিশেষায়িত কম্পিউটার ল্যাব স্থাপন করা হবে।

অর্থের অভবে শিক্ষার সুযোগ বঞ্চিত দারিদ্র্য, মেধাবী ছাত্রছাত্রীদের শিক্ষা নিশ্চিত করার নিমিত্তে বিশেষ অনুদান বা স্কলারশিপের ব্যবস্থা করা বহুদিনের লালিত স্বপ্ন।

যোগাযোগব্যবস্থার উন্নয়নে মৌলিক শর্ত বিবেচনাপূর্বক রাস্তা পাকাকরণ,সংস্কার, মেরামত ও সিসি ঢালাইসহ নতুন নতুন কাচাঁ ও পাকা রাস্তা নির্মাণ উন্নয়ন এবং পল্লী অঞ্চলের যোগাযোগব্যবস্থার উন্নয়নে গুরুত্বরোপ করা হবে।

প্রাথমিক স্বাস্থ্য, নবজাতক ও শিশু স্বাস্থ্য এবং মাতৃ মৃত্যুহার কমানো, টিকাদান কর্মসূচীর উন্নয়ন এবং সংক্রামক ব্যাধির প্রকোপ কমানোর ক্ষেত্রে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।কমিউনিটি ক্লিনিকবিহীন ওয়ার্ডে কমিউনিটি ক্লিনিক স্থাপন করা হবে। জনসংখ্যা নিয়ন্ত্রণ ও পুষ্টি উন্নয়নে বেসরকারি সংস্থা,ব্যক্তিখাত এবং ব্যক্তিগত সামাজিক উদ্যোগগুলোর সঙ্গে সমন্বয় করে কাজ করা হবে। এছাড়াও রয়েছে মোগড়াপাড়ায় ৫০০ শয্যা বিশিষ্ট আধুনিক জেনারেল হাসপাতাল নির্মাণের পরিকল্পনা।
প্রত্যেক প্রতিবন্ধীই এই সমাজের অন্তর্ভুক্ত। বন্ধত্বের হাত বাড়িয়ে দিয়ে উন্নত চিকিৎসা বিদ্যার সাহায্যে বিভিন্ন ধরণের চিকিৎসা করে তাদের প্রতিবন্ধকতা দূর করে পূনর্বাসনের ব্যবস্থা করা হবে।

অটিজমে আক্রান্তদের জীবনযাত্রার সার্বিক প্রতিবন্ধকতা কাটিয়ে উঠে তাদের বিকশিত জীবনের দিকে এগিয়ে নেয়ার লক্ষ্যে সোনারগাঁয়ে একটি অটিজম পরিচর্যা কেন্দ্র স্থাপনের ইচ্ছা রয়েছে।

সমাজে অপরাধ প্রবণতা প্রতিরোধ, মাদক,সন্ত্রাস, চাঁদাবাজি, ইভটিজিং ও বাল্যবিবাহ প্রতিরোধ ব্যবস্থা গড়ে তোলা হবে। সমাজের অনেক লোকই আজ সর্বনাশা ড্রাগ তথা মাদকের নেশায় আচ্ছন্ন।মাদক বিক্রেতারা দেশ ও জাতির শত্রু। মাদকমুক্ত সোনারগাঁ গড়ে তোলাই আমার একমাত্র লক্ষ্য।

নতুন প্রজন্মকে স্বাধীনতার ইতিহাস বিষয়ে সচেতন করে তোলার মাধ্যমে এলাকার বীর মুক্তিযোদ্ধাদের সার্বিক কল্যাণে সোনারগাঁয়ের প্রতিটি ইউনিয়ন ও পৌরসভায় একটি করে মুক্তিযোদ্ধা ভবন ও মুক্তিযোদ্ধা প্রজন্ম কার্যালয় নির্মাণ করা হবে।

বছর ব্যাপী ভ্রমণ পিপাষু মানুষে ভরপুর সোনারগাঁ পৌরসভার সার্বিক উন্নয়নে পৌরসভাটি প্রথম শ্রেণীর পৌরসভায় উন্নীত করার উদ্যোগ গ্রহণ করা হবে।

সাধারণ পথচারী ও নাগরিকদের জন্য স্বাস্থ্যসম্মত স্যানিটেশন সুবিধা নিশ্চিত করতে সোনারগাঁয়ের জন গুরুত্বপূর্ণ স্থানে প্রয়োজনীয় সংখ্যক গণশৌচাগর স্থাপন করা হবে।

কৃষি ব্যবস্থার উন্নতির মাঝেই নিহিত রয়েছে আমাদের অর্থনৈতিক মুক্তি।তাই কৃষিভিত্তিক শিল্প গড়ে তোলার বিষয়ে সর্বোচ্চ সহযোগিতা দেবো। পরিবেশের উন্নয়নের স্বার্থে খাস পুকুর সমূহ উদ্ধার ও সংরক্ষণ করা হবে।

সোনারগাঁয়ের ১০টি ইউনিয়ন ও পৌরসভার জরাজীর্ণ এবং সমস্যা কবলিত মসজিদগুলো অগ্রাধিকার ভিত্তিতে সংস্কারসাধন ও উন্নয়ন করা হবে। প্রতিটি ইউনিয়ন ও পৌরসভায় একটি করে কেন্দ্রীয় মডেল মসজিদ ও একটি করে কেন্দ্রীয় ঈদগাহ এবং একটি করে কেন্দ্রীয় কবরস্থান করা হবে।

সমৃদ্ধ গ্রন্থাগার জ্ঞানের নীরব সমুদ্র। বেঁচে থাকার জন্য যেমন খাবার দরকার, তেমনি জীবনকে গতিময় করতে জ্ঞান দরকার। তাই সোনারগাঁয়ের প্রতিটি ইউনিয়ন ও পৌরসভায় একটি করে আধুনিক উন্নতমানের সমৃদ্ধ গ্রন্থাগার প্রতিষ্ঠা করা হবে।

‘গাছ নেই,প্রাণের অস্তিত্ব নেই,গাছহীন পৃথিবী যেন প্রাণহীন মহাশ্মশান’। তাই প্রত্যেক মানুষের মধ্যে ‘একটি গাছ লাগান,প্রাণ বাচান’ এই বোধ জাগিয়ে তোলার মাধ্যমে সবুজে-শ্যামলে ভরা সোনারগাঁ গড়ার লক্ষ্যে বৃক্ষরোপণ কর্মসূচি অব্যাহত রাখা হবে।

নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ ও গ্যাস সুবিধা নিশ্চিত করবো। সোনারগাঁবাসীর প্রাণের দাবি বৈধভাবে শতভাগ গ্যাস সংযোগ প্রাপ্তির উদ্দেশ্যে সর্বোচ্চ গুরত্বারোপ করা হবে।

বাংলাদেশ লোক ও কারু শিল্প ফাউন্ডেশন জাদুঘর, প্রায় চারশত বছর পূর্বে স্থাপিত পানাম নগরীসহ ঐতিহাসিক স্থাপনাগুলো আরও আকর্ষণীয় করার লক্ষ্যে বিশেষ প্রকল্প গ্রহণ ও বাস্তবায়ন।

ঐতিহাসিক সোনারগাঁয়ের ঐতিহ্যবাহী বারদী ইউনিয়নের অন্তর্গত সবুজ প্রান্তর নূনেরটেক মায়াদ্বীপ।মায়াদ্বীপ গ্রামের চতুঃপার্শ্বে প্রতিরক্ষামূলক বেড়িবাঁধ নির্মাণ, মূল ভূখন্ড থেকে টাওয়ার স্থাপনের মাধ্যমে বিদ্যুৎ সংযোগ লাইন স্থাপন এবং
স্থানীয়দের উন্নয়ন ও পর্যটক আকর্ষণের লক্ষ্যে সর্বাত্মক ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

নারীদেরকে আরো বেশি কর্মক্ষম করে গড়ে তোলা এবং অর্থনীতিতে নারীদের ভূমিকা নিশ্চিত করার লক্ষ্যে উন্নয়নমূলক সুনির্দিষ্ট কর্মসূিচ বাস্তবায়ন করা হবে।

ক্রীড়া সংস্কৃতি, ক্রীড়া সংস্থা ও নাগরিক কেন্দ্রের উন্নয়নে গুরুত্বারোপ করা হবে। সোনারগাঁ শেখ রাসেল মিনি স্টেডিয়াম আধুনিকায়ন করা এবং প্রতিটি ইউনিয়নে একটি করে কেন্দ্রীয় খেলার মাঠ নির্মাণ করা।

সোনারগাঁ শিল্পনগরী হিসেবে গড়ে তোলার ব্যাপারে আধুনিক সকল সুযোগ সুবিধা নিশ্চিত করে বিশেষ পরিকল্পনা গ্রহণ ও বাস্তবায়ন করা হবে। বিশেষ অর্থনৈতিক জোন তৈরি করা হবে।

দশটি ইউনিয়ন ও একটি পৌরসভায় মোট ১২টি ‘ফ্রি ফ্রাইডে স্বাস্থ্যসেবা কেন্দ্র’ চালু করা হবে।যেখানে গরীব ও অসহায় রোগীরা বিনা টাকায় স্বাস্থ্যসেবা পাবেন।

-সংগৃহীত