সোনারগাঁয়ে ১০টি ইউপি নির্বাচনে ব্যাপক রদবদলের সম্ভাবনা

সান নারায়ণগঞ্জ টুয়েন্টিফোর ডটকম:

নারায়ণগঞ্জের সোনারগাঁও উপজেলায় একটি পৌরসভা ও দশটি ইউনিয়ন পরিষদ রয়েছে। যেখানে দুটি ইউনিয়নে জাতীয়পার্টি ও বাকি ৮টি ইউনিয়নে আওয়ামীলীগের চেয়ারম্যান রয়েছেন। তবে চলতি বছরে দশটি ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে ব্যাপক পরিবর্তনের সম্ভাবনা সৃষ্টি হয়েছে। দশটি ইউনিয়নে তরুণ প্রজন্মের অনেক জনপ্রিয় চেয়ারম্যান প্রার্থীরা বেশ জোরালোভাবে নির্বাচনী মাঠে নেমেছেন। কেউ কেউ নির্বাচনী মাঠে না আসলেও আলোচনাতেই চায়ের দোকানগুলো গরম করে রেখেছেন। একই সঙ্গে প্রতিটি ইউনিয়নে রয়েছে আবার জাতীয়পার্টি থেকে সম্ভাব্য চেয়ারম্যান প্রার্থীরা।

স্থানীয়রা জানিয়েছেন, প্রতিটি ইউনিয়ন এলাকায় সম্ভাব্য চেয়ারম্যান প্রার্থীরা নির্বাচনী মাঠে নামতে শুরু করেছেন। কেউ কেউ বছর খানিক আগে থেকেই নির্বাচনী মাঠে। আবার কেউ কেউ সম্প্রতি নির্বাচনী মাঠে নেমেছেন। কেউ কেউ নির্বাচনের আগাম ঘোষণা দিয়েছেন। মুুলত স্থানীয় আওয়ামীলীগ ও জাতীয়পার্টি থেকে একাধিক সম্ভাব্য প্রার্থী রয়েছেন নির্বাচনী মাঠে। যেখানে বিএনপি থেকে বেশকজন আলোচনায় থাকলেও তাদের কেউ নির্বাচনী মাঠে নেই। তবে এবার জাতীয়পাটির প্রার্থীর সংখ্যা বাড়তে পারে।

আবার অনেকেই জানিয়েছেন, বিগত নির্বাচনী যারা পরাজিত হয়েছিলেন এবং যারা বর্তমান চেয়ারম্যান রয়েছেন তারাও রয়েছেন নির্বাচনমুখী। ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনেও আওয়ামীলীগ ও জাতীয়পার্টির মধ্যে লড়াইয়ের সম্ভাবনাও তৈরি হয়েছে। পৌরসভা নির্বাচন নিয়ে যেভাবে আওয়ামীলীগ ও জাতীয়পার্টির মধ্যে জোরালো রাজনীতি ছিল চোখে পরার মতই। যদিও পৌরসভা নির্বাচনী স্থগিত রয়েছে সীমানা জটিলতায়। এরি মধ্যে ১০টি ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে প্রায় ২৫ জনের মত সম্ভাব্য চেয়ারম্যান প্রার্থীর নাম শোনা গেল।

স্থানীয়রা আরও জানান, উপজেলার সবচেয়ে বড় ইউনিয়ন সনমান্দি। এই পরিষদে চেয়ারম্যান পদে রয়েছেন জাহিদ হাসান জিন্নাহ। তিনি গত নির্বাচনে নৌকা প্রতীক নিয়ে চেয়ারম্যান নির্বাচিত হোন। তার বড় ভাই এসএম জাহাঙ্গীর হোসেন জেলা আওয়ামীলীগের শিল্প বিষয়ক সম্পাদক রয়েছেন। এখানে নির্বাচনী মাঠে রয়েছেন সাবেক চেয়ারম্যান সাহাবুদ্দীন সাবু। তিনি মুলত বর্তমানে সাবেক এমপি আব্দুল্লাহ আল কায়সার হাসনাত ও জেলা আওয়ামীলীগের সদস্য মাহফুজুর রহমান কালামের সঙ্গে পুরোদমে রাজনীতি করছেন।

এ ছাড়াও চেয়ারম্যান পদে নির্বাচনী প্রচারণায় রয়েছেন উপজেলা যুবলীগের সহ-সভাপতি নজরুল ইসলাম ও নারী নেত্রী শ্যামলী চৌধুরী। সনমান্দি ইউনিয়ন আওয়ামীলীগের শীর্ষ নেতা জসিম উদ্দীন চৌধুরীর পুত্রবধু এই শ্যামলী চৌধুরী দীর্ঘদিন যাবত নির্বাচনী মাঠে। একইভাবে স্থানীয় ইউনিয়ন সক্রিয় থাকার পাশাপাশি জেলা পর্যায়ে আওয়ামীলীগের শীর্ষ নেতাদের সঙ্গে সখ্যতা গড়ে তুলেছেন নজরুল ইসলামও। এখানে গত নির্বাচনে বিএনপি ও জাতীয়পার্টির কোন প্রার্থী ছিল না। এখন পর্যন্ত দুটি দলের কোন সম্ভাব্য প্রার্থীকে নির্বাচনী মাঠে দেখা যায়নি।

মোগড়াপাড়া ইউনিয়ন পরিষদে চেয়ারম্যান পদে রয়েছেন আওয়ামীলীগের হাসনাত পরিবারের সদস্য আওয়ামীলীগের আরিফ মাসুদ বাবু। আওয়ামীলীগের রাজনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ মোগরাপাড়া ইউনিয়ন এলাকাটি। এবার নতুন করে চেয়ারম্যান পদে নির্বাচনের ঘোষণা দিয়েছেন জেলা ছাত্রলীগের সাবেক সহ-সভাপতি সোহাগ রনি। এখানে গত নির্বাচনে বিএনপির প্রার্থী ছিলেন জেলা যুবদলের সহ-সাধারণ সম্পাদক পারভেজ সাজ্জাদ চপল। তিনি এবার নির্বাচনে নেই। তবে জাতীয়পার্টি থেকে নির্বাচনের দিকে রয়েছেন জেলা জাতীয় স্বেচ্ছাসেবক পার্টির নেতা কাজী নাজমুল হাসান লিটু।

সাদিপুর ইউনিয়ন পরিষদে আওয়ামীলীগের চেয়ারম্যান রয়েছেন আওয়ামীলীগ নেতা আব্দুর রশিদ মোল্লা। তবে এখানে পুরোদমে নির্বাচনী প্রচারণায় রয়েছেন কেন্দ্রীয় স্বেচ্ছাসেবকলীগ নেতা জাকির হোসাইন। সোনারগাঁও আওয়ামীলীগের একটি অংশের সঙ্গে তার বেশ সখ্যতা তৈরি হয়েছে। মুলত গত নির্বাচন থেকেই তিনি এখানে নির্বাচনের প্রস্তুতি নিয়ে কাজ করছেন।

উপজেলার বৈদ্যেরবাজার ইউনিয়ন পরিষদে রয়েছেন জাতীয়পার্টি থেকে ড. আব্দুর রব। এখানে গত নির্বাচনে নৌকা প্রতীকে নির্বাচন করে পরাজিত হয়েছিলেন আল আমিন সরকার। তিনিও রয়েছেন নির্বাচনী মাঠে। আলোচনায় রয়েছেন কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগ নেতা রুবায়েত হোসেন শান্ত।

শম্ভুপুুরা ইউনিয়ন পরিষদে জাতীয়পার্টির চেয়ারম্যান রয়েছেন আব্দুুর রউফ। এখানে গত নির্বাচনে নৌকা প্রতীকে নির্বাচন করেছিলেন অ্যাডভোকেট নূর জাহান। তিনি এবারও নৌকা প্রতীকে নির্বাচনের লক্ষ্যে কাজ করছেন। তিনি জেলা মহিলা লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ও সোনারগাঁও উপজেলা মহিলা লীগের সভাপতি পদে রয়েছেন। তিনি জেলা পরিষদেরও সদস্য। এখানে আলোচনায় রয়েছেন উপজেলা ছাত্রলীগের সাবেক সহ-সভাপতি মাহাবুব সরকার ও আব্দুল কাদির নামে আরেকজন। এখানে শক্ত অবস্থানে অ্যাডভোকেট নূর জাহান।

পিরোজপুর ইউনিয়ন পরিষদে আওয়ামীলীগের চেয়ারম্যান রয়েছেন উপজেলা আওয়ামীলীগের যুগ্ম আহ্বায়ক ইঞ্জিনিয়ার মাসুদুর রহমান মাসুম। এখানে তিনি বেশ জনপ্রিয়তা অর্জন করেছেন। তবে এখানে জাতীয়পার্টি থেকে নির্বাচনে অংশগ্রহণ করতে পারে এমন আলোচনায় রয়েছেন উপজেলা জাতীয়পার্টির সিনিয়র সহ-সভাপতি রফিকুল ইসলাম বিডিআর ও বিএনপি থেকে আলোচনায় রয়েছেন উপজেলা যুবদলের যুগ্ম আহ্বায়ক আশরাফ প্রধান।

উপজেলার জামপুর ইউনিয়ন পরিষদে আওয়ামীলীগের চেয়ারম্যান পদে রয়েছেন আওয়ামীলীগের কেন্দ্রীয় উপ-কমিটির সদস্য হা-মীম সিকদার শিপলু। তবে এখানে জাতীয়পার্টি থেকে নির্বাচনী আলোচনায় মাঠ গরম করেছেন ইউনিয়ন জাতীয়পার্টির সভাপতি আশরাফুল ইসমাঈল মাকসুদ। আওয়ামীলীগ থেকে নৌকা প্রতীকে নির্বাচনের প্রত্যাশা নিয়ে নির্বাচনী মাঠে উপজেলা যুবলীগের সহ-সভাপতি দেওয়ান শরীফুল ইসলাম। তবে সাবেক চেয়ারম্যান আবু হানিফ ভুঁইয়া এখানে নির্বাচন করবেন কিনা সেটা এখনও নিশ্চিত হওয়া যায়নি।

বারদী ইউনিয়ন পরিষদে বর্তমান চেয়ারম্যান পদে রয়েছেন আওয়ামীলীগ নেতা জহিরুল হক। এখানে নির্বাচনী আলোচনায় রয়েছেন উপজেলা যুবলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক কামাল হোসেন। তিনি নির্বাচনী প্র্রচারণায় না থাকলেও এখানে নির্বাচনের লক্ষ্যে পুরোদমে কাজ করছেন আওয়ামীলীগ নেতা লায়ন মাহাবুবুর রহমান বাবুল। করোনাকালে তিনি জনগণের পাশে ছিলেন বেশ।

নোয়াগাঁও ইউনিয়নে চেয়ারম্যান রয়েছেন আওয়ামীলীগ নেতা ইউসুফ দেওয়ান। এখানে নির্বাচনী আলোচনায় রয়েছেন সাবেক চেয়ারম্যান দেওয়ান উদ্দীন চুন্নু। এ ছাড়াও বিএনপি থেকে আলোচনায় রয়েছেন ড. মিজানুর রহমান।

কাঁচপুর ইউনিয়ন পরিষদে চেয়ারম্যান রয়েছেন আওয়ামীলীগ নেতা মোশারফ ওমর। এখানে আলোচনায় রয়েছেন শ্রমিকলীগ নেতা আব্দুল মান্নান। বিএনপি থেকে আলোচনায় রয়েছেন জেলা বিএনপি নেতা সেলিম হক রুমী। তবে এখানে নির্বাচনী প্রচারণায় তেমন একটা কাউকে জোরালো দেখা যাচ্ছেনা এখনো।