মেয়র আইভীকে প্রমাণ দেখালেন খোকন সাহা

সান নারায়ণগঞ্জ টুয়েন্টিফোর ডটকম:

গত ৫ ফেব্রুয়ারি শুক্রবার জেলা হেফাজতের আমীর মাওলানা আব্দুল আউয়াল মেয়র সেলিনা হায়াত আইভীর বিরুদ্ধে একাধিক মসজিদ ও মাদ্রাসার জায়গা দখলের অভিযোগ তোলার মাত্র একদিনের মাথায় শহরের দেওভোগ এলাকার জিউস পুকুর নামের শতকোটি টাকা মূল্যের একটি দেবোত্তর সম্পত্তি আত্মসাতের অভিযোগে সমা‌বেশ ক‌রে‌ছে হিন্দু সম্প্রদায়ের লোকজন।

আর এ‌তে সাম‌নে থে‌কে নেতৃত্ব দি‌য়েছেন নারায়ণগ‌ঞ্জ জেলা পূজা উদযাপন প‌রিষ‌দের সাধারণ সম্পাদক শিখন সরকার শিপন। তার সাংগঠ‌নিক দক্ষতায় এ‌দিন সনাতন ধর্মাবলম্বী প্রায় কয়েক হাজার নারী-পুরুষ জিউস পুকুর উদ্ধা‌রের বিষ‌য়ে একাত্মতা পোষন ক‌রে মেয়র আইভীর বিরুদ্ধে সমাবেশ অংশগ্রহণ ক‌রে।

৬ ফেব্রুয়ারি শ‌নিবার বি‌কে‌লে নারায়ণগঞ্জ জেলা হিন্দু সম্প্রদা‌য়ের ব্যানারে অনু‌ষ্ঠিত এ সমাবেশে হিন্দু সম্প্রদায়ের লোকজন ছাড়াও একাত্মতা প্রকাশ করেছেন জেলার বিভিন্ন শ্রেণিপেশার প্রতিনিধিরাও।

মহানগর আওয়ামীলীগের সাধারণ সম্পাদক খোকন সাহার বিরুদ্ধে মামলা করেছিলেন মেয়র আইভী। এবার খোকন সাহা হাতে ৬টি দলিল দেখিয়ে বক্তব্য রেখে জমি দখলের প্রমাণ দেখিয়েছেন ওই সভায়।

দেওভোগ জিউস পুকুর সংলগ্ন রাস্তায় অনুষ্ঠিত এ সমাবেশে সভাপতিত্ব করেন নারায়ণগঞ্জ পূজা উদযাপন পরিষদের সভাপতি দীপক কুমার সাহা। প্রধান অতিথি ছিলেন বাংলাদেশ হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদের কেন্দ্রীয় সভাপতি নিম চন্দ্র ভৌমিক। প্রধান বক্তা ছিলেন সংগঠনের কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক ও সাবেক সচিব নির্মল চ্যাটার্জি।

প্রধান অতিথির বক্তব্যে ড. নিমচন্দ্র ভৌমিক বলেন, ‘এড. খোকন সাহা এই দেবোত্তর সম্পত্তি রক্ষায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছেন। তাছাড়া বিগত কয়েকদিনে আপনারা এলাকাবাসী এর প্রতিবাদ করেছেন। তাই আজ বিভিন্ন ক্ষেত্রে এটা প্রভাবিত করেছে। এর আগে আমরা জেলা প্রশাসকের কাছে স্মারকলিপি দিয়েছিলাম এবং সুস্পষ্টভাবে বলেছিলাম যে, এটা দেবোত্তর সম্পত্তি। খোকন সাহা আপনাদের সামনে ৬ টি দলিল দেখিয়েছে। এটা প্রকৃতপক্ষে দেবোত্তর সম্পত্তি, মন্দিরের সেবায়েত নিজে বলেছেন, এই পুকুর সাড়ে ৩শ’ বছর আগের এবং ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানের সম্পত্তি’।

তিনি বলেন, এই সম্পাত্তির যে দলিলই হোক না কেনো, সেটি অবৈধ। কাজেই আমি বলবো, আজ এখনে যারা আন্দোলন করছে, এটা ন্যায় সংগত আন্দোলন। আপনাদের আন্দোলন-সংগ্রাম এর কারণে আজ রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দ, সামাজিক নেতৃবৃন্দ সকলে সংহতি প্রকাশ করেছেন। আজ যারা এই সম্পত্তিকে নিজের সম্পত্তি দাবি করছেস এটা খুবই নিন্দনীয়। মেয়র সেলিনা হায়াৎ আইভীকে বলবো, আপনার যদি আইনের প্রতি শ্রদ্ধা থাকে, তাহলে এই দেবোত্তর সম্পত্তি ছেড়ে দিবেন। কারণ আমরা দীর্ঘ সময় নিয়ে মুক্তিযুদ্ধ করেছি এবং লাখ লাখ মানুষ এই মুক্তিযুদ্ধে প্রাণ দিয়েছে। এর লক্ষ্য ছিলো বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্ব একটি আধুনিক রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা করা। যেখানে ধর্ম নিরপেক্ষ, শোষন মুক্ত গণতান্ত্রিক একটি দেশ কায়েম হবে। গনতন্ত্রের প্রধান লক্ষ্য হলো আইনের শাসন, যেখানে ধর্ম নির্বিশেষে সবার সমান অধিকার থাকবে।

এ সময় তিনি কাতার ভিত্তিক সংবাদ মাধ্যম আল-জাজিরার প্রতিবেদনের বিষয়ে বলেন, পচাঁত্তরে বঙ্গবন্ধুকে হত্যার পর এই সংবিধানের পরিবর্তন করা হয়েছিলো। কিন্তু শেখ হাসিনার নেতৃত্বে এই দেশে উন্নয়ণ হচ্ছে। আজ এই উন্নয়নের ধারাকে ধ্বংস করার জন্য ষড়যন্ত্র চলছে, আজকে আল জাজিরা সহ বিভিন্ন সাম্প্রাদয়িক শক্তি অপ প্রচার চালাচ্ছে। যারা আজ আল জাজিরার পক্ষে কথা বলছে তারাই দেশের গনতন্ত্রকে বিচ্ছিন্ন করার চেষ্টা করছে। তাই আমি বললো সবাই আমরা এক সাথে ঐক্যবদ্ধ ভাবে কাজ করবো।

প্রধান বক্তার বক্তব্যে বাংলাদেশ পূজা উদযাপন পরিষদ কেন্দ্রীয় কমিটির সাধারণ সম্পাদক নির্মল চ্যাটার্জি বলেছেন, যিনি হিন্দু সম্পত্তি দখলে নিতে চান, তিনি আবার কেমন জনপ্রতিনিধি! মা যেমন সন্তানকে আগলে রাখে, হিন্দুরাও তাদের দেবোত্তর সম্পত্তি আগলে রাখবে। নৌকা নিয়ে জমির ব্যবসা করবেন, সেই কারবারি প্রতিহত করা হবে।

এড. খোকন সাহার বিরুদ্ধে মামলা প্রসঙ্গে তিনি বলেন, এই মামলা দলের ভেতরে দলাদলির ইঙ্গিত। মেয়র সত্যকে বিসর্জন দিয়ে অপরাজনীতি করছেন। স্বার্থের জন্য সব বিসর্জন দিচ্ছেন। শামীম ওসমান কিংবা ওসমান পরিবার কখনোই এমনটা করে নাই। দখল করতে চাইলে অন্য জায়গা করেন, মন্দিরের সম্পত্তির দিকে নজর কেন? আমরা এপ্রিল পর্যন্ত দেখবো, এর মধ্যে এই সমস্যার সমাধান না হলে কঠোর পদক্ষেপ নিবো।

সমাবেশে একাত্মতা প্রকাশ করে বক্তব্য রাখেন জেলা আইনজীবী সমিতির সভাপতি মহসিন মিয়া, সাধারণ সম্পাদক মাহাবুবুর রহমান, জেলা চেম্বার অব কমার্সের সভাপতি খালেদ হায়দার খান কাজল, বাংলাদেশ ইয়ার্ন মার্চেন্ট অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি লিটন সাহা, বাংলাদেশ হোসিয়ারী অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি ও না‌সিক ১৬নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর নাজমুল আলম সজল, ১৪নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর শফিউদ্দিন প্রধান, ১৭নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর আব্দুল করিম বাবু, মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট খোকন সাহা, যুগ্ম সম্পাদক শাহ নিজাম উদ্দিন, জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট আবু হাসনাত বাদল, সাংগঠনিক সম্পাদক মীর সোহেল আলী, জেলা হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদের সাধারণ সম্পাদক প্রদীপ কুমার দাস, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক রঞ্জিত মন্ডল, জেলা পূজা উদযাপন পরিষদের যুগ্ম সম্পাদক সাংবাদিক উত্তম সাহা, মহানগরের সভাপতি অরুণ কুমার দাস, সাধারণ সম্পাদক উত্তম কুমার সাহা, বন্দর কমিটির সভাপতি শংকর দাস, সাধারণ সম্পাদক শ্যামল বিশ্বাস, সিদ্ধিরগঞ্জ পূজা পরিষদের সভাপতি শিশির ঘোষ অমর, সাধারণ সম্পাদক খোকন বর্মন, প্রয়াত কমান্ডার গোপীনাথ দাশের বড় ছেলে সঞ্জয় দাসসহ জেলা ও উপজেলা পর্যায়ের নেতৃবৃন্দসহ বিভিন্ন পেশাজীবী সংগঠনের প্রতিনিধিরা।