সান নারায়ণগঞ্জ টুয়েন্টিফোর ডটকম:
ফতুল্লা থানা বিএনপির আহ্বায়ক কমিটি গঠন করেছে নারায়ণগঞ্জ জেলা বিএনপির সভাপতি কাজী মনিরুজ্জামান মনির ও সেক্রেটারি অধ্যাপক মামুন মাহামুদ। অনেকটা জেলা বিএনপির সভাপতি ও সেক্রেটারি বাদে এই কমিটি গঠনের বিষয়ে কেউ জানেন না বলে দাবি করেছেন দায়িত্বশীল নেতারা। একইভাবে কমিটি গঠনের একদিন আগে পত্রিকা মারফত বিএনপি নেতাকর্মীরা জানতে পারেন ফতুল্লা থানা বিএনপির সভাপতি বিএনপি থেকে পদত্যাগ করেছেন। কমিটিতে স্থান পেয়েছেন নারায়ণগঞ্জের প্রভাবশালী এমপি একেএম শামীম ওসমানের গুণকীর্তনে ব্যস্ত একজন বিএনপি নেতা। যিনি সারা বছর সরকারি দলের পক্ষে কাজ করছেন প্রকাশ্যে। দলের নেত্রী কারাগারে থাকলেও তার মুক্তির দাবিতে তিনি সোচ্চার না থাকলেও সরকারি দলের হয়ে কাজ করছেন। এমন নেতাকেই ফতুল্লা থানা বিএনপির আহ্বায়ক করা হয়েছে। এ ফতুল্লা থানা এলাকাটিও শামীম ওসমানের নির্বাচনী আসনের এলাকা। ফলে কেউ কেউ দাবি করছেন এই থানা বিএনপির কমিটি শামীম ওসমানের অনুকুলে করা হয়।
জানাগেছে, ২৬ ফেব্রুয়ারি জেলা বিএনপির অনুমোদিত ফতুল্লা থানা বিএনপির আহ্বায়ক কমিটিতে কমিটিতে অ্যাডভোকেট আবুল কালাম আজাদ বিশ্বাসকে আহ্বায়ক ও নজরুল ইসলাম পান্না মোল্লাকে সদস্য সচিব করে ৭১ সদস্য বিশিষ্ট কমিটি গঠন করা হয়। আজাদ বিশ্বাস বর্তমানে জেলা বিএনপির সহ-সভাপতি ও ফতুল্লা থানা বিএনপির সেক্রেটারি পদে ছিলেন। নজরুল ইসলাম পান্না মোল্লা জেলা বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক পদে রয়েছেন।
অন্যদিকে জানাগেছে, শিল্পপতি মুহাম্মদ শাহআলম ছিলেন নারায়ণগঞ্জ জেলা বিএনপির সিনিয়র সহ-সভাপতি ও ফতুল্লা থানা বিএনপির সভাপতির পদ থেকে পদত্যাগ করেছেন মোহাম্মদ শাহ আলম। একই সঙ্গে তিনি কেন্দ্রীয় বিএনপির সদস্য পদেও ছিলেন। তবে তার পদত্যাগের বিষয়টি একটি জাতীয় দৈনিক পত্রিকায় নিশ্চিত করেছেন নারায়ণগঞ্জ জেলা বিএনপির সভাপতি কাজী মনিরুজ্জামান মনির। পদত্যাগের বিষয়ে মোহাম্মদ শাহ আলম ওই পত্রিকায় বলেছেন, স্বাস্থ্যগত কারণে এই পদে দায়িত্ব পালন করা সম্ভব নয় বলে পদত্যাগ করেছি।
নেতাকর্মীদের সূত্রে, ২০০৮ সালের জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে কল্যাণ পার্টির কেন্দ্রীয় কমিটির কোষাধ্যক্ষ পদ থেকে পদত্যাগ করে বিএনপিতে যোগ দেন শিল্পপতি মুহাম্মদ শাহআলম। জাতীয় সংসদ নির্বাচনে নারায়ণগঞ্জ-৪(ফতুল্লা) আসনে বিএনপির প্রার্থী হিসেবে মোহাম্মদ শাহ আলম আওয়ামী লীগের প্রার্থী সারাহ বেগম কবরীর সঙ্গে নির্বাচনে প্রতিদ্বন্ধিতা করে মাত্র ২ হাজার ১০০ ভোটের ব্যবধানে পরাজিত হন।
তবে নির্বাচনের পর তিনি ফতুল্লা থানা বিএনপির পুরো কমিটি নিজের নিয়ন্ত্রনে নেন। একই সঙ্গে বিএনপির ঘাটি খ্যাত ফতুল্লা থানার রাজনীতি প্রায় ধ্বংসের পথে নিয়ে যান শাহআলম। থানা বিএনপির সেক্রেটারি করেন তার আত্মীয় আবুল কালাম আজাদ বিশ্বাসকে যিনি সদর উপজেলা পরিষদের বর্তমান চেয়ারম্যান। বর্তমানে আজাদ বিশ্বাস জেলা বিএনপির সহ-সভাপতি পদে রয়েছেন। এর আগের কমিটিতে সাংগঠনিক সম্পাদক ছিলেন আজাদ বিশ্বাস। ওই কমিটিতেও জেলা বিএনপির সিনিয়র সহ-সভাপতি ছিলেন শাহআলম।
রাজপথের আন্দোলন তো দুরের কথা শাহআলম কখনও বিএনপির মানববন্ধন কর্মসূচিতেও ছিলেন না। আজাদ বিশ্বাস ছিলেন সরকারি দলের কর্মকান্ডেই বেশি। গত ২০১৭ সালের ১৯ নভেম্বর ডিএনপি মেগা প্রকল্পের কাজ শুরুর আগে ফতুল্লার দেলপাড়া এলাকায় প্রধানমন্ত্রীকে ধন্যবাদ জানাতে আয়োজিত এমপি শামীম ওসমানের জনসভায় মন্ত্রী এমপিদের সঙ্গে মঞ্চে ওঠেন আজাদ বিশ্বাস। ওই মঞ্চে বক্তব্য রাখতে গিয়ে আজাদ বিশ্বাস বলেছিলেন, ‘আমার নেতা শামীম ওসমান। আমি বিএনপি নেতা হয়ে শামীম ওসমানকে স্যালুট জানাই।’ এর আগে আরেক অনুষ্ঠানে আজাদ বিশ্বাস বলেছিলেন, নারায়ণগঞ্জে শামীম ওসমানের মত সাংগঠনিক নেতা আর কেউ নাই।’ শামীম ওসমানকে আজাদ বিশ্বাস নিজের নেতা হিসেবে দাবি করার পর বিএনপি নেতাকর্মীরা সেই হিসেবে দাবি করে আসছেন আজাদ বিশ্বাস শামীম ওসমানের কর্মী। যা আজাদ বিশ্বাস নিজেই স্বীকার করেছেন।
এছাড়াও বন্দরের শিক্ষক শ্যামল কান্তিকে কান ধরে ওঠ বসের ঘটনায় মহাজোটের এমপি সেলিম ওসমানের পক্ষে মানববন্ধন করেছিলেন আজাদ বিশ্বাস। ফতুল্লা থানা আওয়ামীলীগের সহ-সভাপতি আসাদুজ্জামান আসাদের পক্ষেও মানববন্ধন করেছিলেন আজাদ বিশ্বাস। কিন্তু তার দলের প্রধান বেগম খালেদা জিয়ার মুক্তির দাবিতে তিনি জোড়ালোভাবে থাকেন না। জেলা পরিষদের এক অনুষ্ঠানে মহানগর আওয়ামীলীগের সহ-সভাপতি গোপীনাথ দাস বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা জিয়াউর রহমানকে কুকুর বলে গালি দিলেও মুচকি হেসেছিলেন আজাদ বিশ্বাস। ওই সময়কার জেলা পরিষদের প্রশাসক আবদুল হাই বিষয়টি মিডিয়াতে বিবৃতি দিয়ে দুঃখ প্রকাশ করলেও বিএনপি নেতা হয়ে প্রতিবাদ করেননি আজাদ বিশ্বাস।
নারায়ণগঞ্জ সদর উপজেলায় ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে বিএনপির প্রার্থীদের ভয় ভীতি দেখিয়ে বসিয়ে দেন আজাদ বিশ্বাস। যে কারনে তৈমূর আলম খন্দকারের বাসায় এক অনুষ্ঠানে মহিলা দলের নেত্রী রহিমা শরীফ মায়া আজাদ বিশ্বাসের সামনেই বলেছিলেন, এই আজাদ বিশ্বাস আওয়ামীলীগের দালাল, শামীম ওসমানের দালাল।’ তার পর থেকে নেতাকর্মীরা আজাদ বিশ্বাসকে আওয়ামীলীগের দালাল হিসেবে কটুক্তি করে আসছেন।
নেতাকর্মীদের ভাষ্যমতে, শামীম ওসমানের কর্মী আজাদ বিশ্বাসকে আহ্বায়ক করে ও ফতুল্লার আলোচিত অস্ত্রধারী সন্ত্রাসী নজরুল ইসলাম পানা মোল্লাকে সদস্য সচিব করে গঠিত কমিটিতে যুগ্ম আহ্বায়ক হিসেবে রয়েছেন মোঃ আব্বাস উদ্দিন বাবলু, এম এ আকবর, মোঃ সুমন আকবর, একরামুল কবির মামুন, রিয়াদ মোহাম্মদ চৌধুরী, আলাউদ্দিন বারী, আবু তাহের মোল্লা. অ্যাডভোকেট এসএম মাহমুদুল হক আলমগীর, নাদিম হাসান মিঠু, অ্যাডভোকেট আল আমিন সিদ্দিক, আবুল হোসেন, হাবিবুর রহমান রিপন, আমজাদ শিকদার, মন্টু মিয়া মেম্বার, বোরহান উদ্দিন বেপারী।
এছাড়াও কমিটিতে সদস্য পদে রয়েছেন খন্দকার হুমায়ুন কবির, মিলন মেহেদী, জাহিদ হাসান রোজেল, লুৎফর রহমান খোকা, মোসাম্মদ রহিমা শরীফ মায়া, শরিফুল ইসলাম মোল্লা, করিব প্রধান, মঈনুল হোসেন রতন, কাজী আমিন, তুষার আহমেদ মিঠু, মনজুর আলী, রুহুল আমিন শিকদার, হানিফ শেখ, শরিফ উদ্দিন সরদার খোকন, আনোয়ারুল ইসলাম খাঁন লিটন, ফিরুজুর রহমান খাঁন, আরাফাত আলম জিতু, আক্তার হোসেন, বশির আহমেদ তোতা, মনির হোসেন, মাসুদ মিয়া মেম্বার, সিদ্দিকুর রহমান, শাহিন খন্দকার, আলিম উদ্দিন খন্দকার, দ্বীন ইসলাম দিলু, হাফিজুল হক, সিরাজুল ইসলাম, আক্কাস আলী, সিরাজুল ইসলাম সিরাজ, হান্নানুর রফিক রঞ্জু, মিছির আলী, আলী আজগর, রুহুল আমিন, আবুল বাশার জামান, ডাঃ আলীম খান, নিজাম উদ্দিন, হানিফ, সালাউদ্দিন আহমেদ, ইকবাল হোসেন, হাবিবুর রহমান, কামাল বেপারী, মেজবাহ উদ্দিন দুলাল, গিয়াসউদ্দিন লাভলু, নাসির উদ্দিন জাহান সাগর, মাহমুদ হোসেন, রফিক, সরদার শামিম লুনা, সোহেল আবদুল্লাহ, আবুল কালাম পাটোয়ারী, জয়নাল মল্লিক, কামাল হোসেন, মোঃ ইদ্রিস আলী মিন্টু, গাজী ইব্রাহীম, আবু বখতিয়ার সোহাগ, কামাল হোসেন, আনোয়ার হোসেন ও ইকবাল হোসেন।