সান নারায়ণগঞ্জ টুয়েন্টিফোর ডটকম:
নারায়ণগঞ্জ জেলা ছাত্রদলের সভাপতি মশিউর রহমান রনি। তিনি কেন্দ্রীয় ছাত্রদলের গত সম্মেলনে সাধারণ সম্পাদক পদে প্রার্থী হয়ে ভোটে লড়াই করেছিলেন। তবে জয়ী না হতে পারলেও তাকে কেন্দ্রীয় ছাত্রদলের ঢাকা বিভাগীয় সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক পদে রাখা হয়। বর্তমানে তিনি সেই দায়িত্ব পালন করছেন। জেলা ছাত্রদলের সেক্রেটারি খায়রুল ইসলাম সজীবের সঙ্গে তার রাজনৈতিক মতভেদ ও অন্যান্য ছাত্রদল নেতাদের সঙ্গে দূরুত্ব থাকলেও একাই জেলা ছাত্রদলের রাজনীতিকে টেনে নিয়ে যাচ্ছেন রনি।
এ নিয়ে বিতর্ক ও সমালোচনাও রয়েছে বেশ। যেখানে ব্যাপক আলোচনা সমালোচনার মাঝেও জেলা ছাত্রদলের আওতাধীন বেশক’টি কমিটি গঠনও করেছেন তিনি। যদিও রনি বেশক’টি গুরুত্বপূর্ণ থানা এলাকার কমিটি এখনও গঠন করতে পারেননি। ছাত্রদলের এসব কমিটি গঠন নিয়ে তার বিরুদ্ধে নানা অভিযোগও ওঠেছে। চলছে আন্দোলনও। যেসব কর্মকান্ডের পেছনে বিএনপির মুুলদলের বেশক’জন নেতা উস্কানী দিচ্ছেন বলেও তার অভিযোগ। তবে এর পেছনে কি কারন?
যে কারনে নেতাকর্মীরা প্রশ্ন তুলেছেন, এত সমালোচনার পরেও মশিউর রহমান রনি ছাত্রদলের রাজনীতিতে যেটুকু তার অবদান রয়েছে সেটা জেলা ছাত্রদলের অন্যান্য আর কোন কোন ছাত্রদল নেতার রয়েছে? একই সঙ্গে মশিউর রহমান রনিই কেবল বিগত জেলা কমিটির যুগ্ম আহ্বায়ক পদে দায়িত্বে ছিলেন। বর্তমানে জেলা ছাত্রদলের ১২ সদস্যের কমিটির মধ্যে রনিই কেবল দীর্ঘদিন রাজনীতি করেছেন এবং রাজপথে যার সক্রিয় ভুমিকা ছিল, যা সেই আহ্বায়ক কমিটির আহ্বায়ক মাসুকুল ইসলাম রাজীবের আমল থেকেই। এরও আগে ক্ষুদ্র কর্মী হিসেবে ছাত্রদলের পদ পদবী ছাড়াই ফতুল্লার ছাত্রদলের নেতৃত্ব দিয়েছিলেন মশিউর রহমান রনি।
নেতাকর্মীদের দাবি- মুলত বিএনপির অনেক নেতাদের আবদার দাবি তদবির রক্ষা করতে পারছেন না রনি। একই সঙ্গে অনেকের মনগড়া কমিটিও তিনি দিতে পারছেন না। কোনো কোনো থানা এলাকায় কমিটি গঠনের ক্ষেত্রে বিএনপির শীর্ষ নেতাদের টানাহেছড়ার মধ্যে পড়েছেন তিনি। যে কারনে অনেক কমিটিতে তিনি হাত লাগাতেও পারছেন না। উদাহরণ দিয়ে নেতাকর্মীরা বলছেন, সোনারগাঁও থানার কমিটি এককভাবে চান সেক্রেটারি সজীবের কব্জায় নিতে। আবার আড়াইহাজারে কেন্দ্রীয় বিএনপির নেতা নজরুল ইসলাম আজাদ ও মাহমুদুর রহমান সুমনের টানাহেছড়ার মধ্যে পড়েছেন তিনি। একইভাবে রূপগঞ্জের কমিটি গঠনেও একই দশা। ফলে বিশাল অংশের দাপটশালী নেতারা রনির উপর ক্ষেপেছেন বেশ। যার ফলে পদ থেকে না সরাতে পারলেও রনিকে বিতর্কিত করেই ছাড়ছেন তারা। একই পরিস্থিতি অন্যান্য এলাকার ইউনিট কমিটিগুলো গঠন নিয়েও।
নেতাকর্মীরা আরও বলছেন, ১২ জনের কমিটির মধ্যে ক’জনকে রাজপথে আন্দোলন সংগ্রামে স্বশরীরে পাওয়া যায়? সেক্রেটারি সজীবের রাজপথে সক্রিয়তা কি? মুুলত সোনারগাঁয়ে তার পিতা কেন্দ্রীয় বিএনপি নেতা আজহারুল ইসলাম মান্নানের রাজনৈতিক পারপাস সার্ভ করার জন্যই পদে বসেছেন সজীব। ১২জনের কমিটির মধ্যে অর্ধেকের মধ্যে ক’জন সক্রিয় থাকলেও তাদের মধ্যেই বিরোধ। বাকি ৬ জনের ছায়াও দেখা যাচ্ছেনা বিএনপির আন্দোলনে। যারা ফেসবুকে রনির বিরুদ্ধে জোরালো প্রতিবাদে বেশ সোচ্চার! অথচ নাই রাজপথে।
নেতাকর্মীরা আরও বলছেন, ২০১৮ সালে মশিউর রহমান রনি ও তার পরিবার যে ত্যাগ স্বীকার করেছে সেটা ভুলে যাওয়ার নয়। দীর্ঘ ১৪১ দিন কারাভোগ শেষে জামিনে মুক্তি পেয়েছিলেন রনি। অস্ত্র ও গুলি উদ্ধার মামলার হিরিক পড়েছিল তার বিরুদ্ধে। তার আগে রনি হয় নিখোঁজ। ওই নিখোঁজের সময় তার পিতা ও মাতা ছিলেন ওমরাহ পালনে। কঠিন পরিস্থিতির মুখোমুখী হয় রনির পরিবার।
২০১৮ সালের ১৫ সেপ্টেম্বর ঢাকা থেকে রনিকে তুলে নেয়ার অভিযোগ তোলে তার পরিবার। এর একদিন পর অপহরণের অভিযোগ তুলে সংবাদ সম্মেলন করে রনির পরিবার। ১৭ সেপ্টেম্বর ফতুল্লার দাপা ইদ্রাকপুর এলাকা থেকে মশিউর রহমান রনিকে একটি বিদেশী পিস্তল ও ৩ রাউন্ড গুলি সহ গ্রেপ্তার করা হয়েছে বলে জানায় পুুলিশ।
গ্রেপ্তার করার পর ফতুল্লা থানার তৎকালীন ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) শাহ মোহাম্মদ মঞ্জুর কাদের জানিয়েছিলেন, ‘রনির বিরুদ্ধে ১৩টি মামলা রয়েছে। এর মধ্যে কিছু মামলায় জামিন রয়েছে এবং বাকী মামলাগুলোতে সে ওয়ারেন্টভুক্ত আসামী।’ এরপর থেকেই কারাগারে ছিলেন রনি।
তবে গ্রেপ্তারের আগে ওই বছরের ১০ সেপ্টেম্বর সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে নারায়ণগঞ্জ-৪ আসনের প্রভাবশালী এমপি শামীম ওসমানকে পুলিশ বাদে রাজপথে লড়াইয়ের চ্যালেঞ্জ ছুড়ে স্ট্যাটাস দিয়েছিলেন ছাত্রদল নেতা রনি।
ফতুল্লা মডেল থানার একটি নাশকতার মামলায় ওই বছরের ৭ অক্টোবর রবিবার সকালে নারায়ণগঞ্জ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে রনিকে হাজির করে পুলিশ। রনি ও ফতুল্লার বিএনপি নেতা হুমায়ুন খন্দকারের বিরুদ্ধে ৭ দিনের রিমান্ডের আবেদন করলে আদালত রনিকে তিন দিন ও হুমায়ুন খন্দকারকে এক দিনের রিমান্ড আবেদন মঞ্জুর করেন। এর আগে পৃথক তিনটি মামলায় রনিকে সাত দিনের রিমান্ডে নিয়েছিল পুলিশ।
এর আগে সকাল সাড়ে ৯টায় মশিউর রহমান রনিকে ডান্ডা বেড়ি পড়িয়ে কোর্টের গারদে নিয়ে আসে পুলিশ। গারদ থেকে সকাল সোয়া দশটার দিকে ডান্ডা বেড়ি পড়িয়ে আদালতে হাজির করা হয়।
এ ছাড়াও তিনটি অস্ত্র মামলায় টানা ৭ দিনের রিমান্ড শেষে নারায়ণগঞ্জ জেলা ছাত্রদলের সভাপতি মশিউর রহমান রনিকে ২৪ সেপ্টেম্বর কারাগারে পাঠান আদালত। ২৪ সেপ্টেম্বর দুপুরে নারায়ণগঞ্জ অতিরিক্ত চিফ জুুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে একটি কার্তুজ উদ্ধারের মামলায় দুই দিনের রিমান্ড শেষে রনিকে হাজির করে নারায়ণগঞ্জ জেলা গোয়েন্দা (ডিবি) পুলিশ। আদালত রনিকে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেন।
এর আগে নারায়ণগঞ্জ জেলা ছাত্রদলের সভাপতি মশিউর রহমান রনিকে দুইটি অস্ত্র মামলায় টানা দ্বিতীয় দফায় ৫দিন রিমান্ড শেষে ২২ সেপ্টেম্বর ৫টি কার্তুজ উদ্ধারের মামলায় তৃতীয় দফায় দুই দিনের রিমান্ডে নেয় নারায়ণগঞ্জ জেলা গোয়েন্দা (ডিবি) পুলিশ। ২২ সেপ্টেম্বর বিকেলে নারায়ণগঞ্জ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট মাহামুদুল মোহসীনের আদালতে ৭ দিনের রিমান্ডের আবেদন করে ডিবি পুলিশ। আদালত দুই দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন।
আরও জানাগেছে, ২০ সেপ্টেম্বর তিন দিনের রিমান্ড শেষে নারায়ণগঞ্জ জেলা ছাত্রদলের সভাপতি মশিউর রহমান রনিকে আরেকটি অস্ত্র উদ্ধার দেখিয়ে আরেকটি অস্ত্র মামলায় গ্রেপ্তার দেখিয়ে একটি মামলা দায়ের করে ফতুল্লা মডেল থানা পুলিশ। ওই মামলায় আদালতে সাত দিনের রিমান্ডের আবেদন করলে আদালত দুই দিনের রিমান্ডে নেয় ডিবি পুলিশ।
পুলিশ দাবি করে-রিমান্ডের আসামি মশিউর রহমান রনিকে নিয়ে ২০ সেপ্টেম্বর ভোরে ফতুল্লা দাপা ইদ্রাকপুর ওরিয়ন গ্রুপের মাঠে একটি পাইপ গান উদ্ধার করে। পরে এসআই কামরুল ইসলাম বাদী হয়ে আরেকটি অস্ত্র মামলা দায়ের করে রনিকে সাত দিনের রিমান্ডের আবেদন করা হয়। এ মামলায় দুইদিনের রিমান্ডে নেয় ডিবি পুলিশ।
এর আগে ওই বছরের ১৭ সেপ্টেম্বর বিকেলে নারায়ণগঞ্জ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট মাহামুদুল মোহসীনের আদালতে ফতুল্লা মডেল থানা পুলিশ একটি বিদেশী অস্ত্র ও ৩ রাউন্ড গুলি উদ্ধার মামলায় ৭ দিনের রিমান্ডে আবেদন করলে আদালত ৩ দিনের রিমান্ডে মঞ্জুর করেন। তার কাছ থেকে একটি অস্ত্র ও তিন রাউন্ড গুলি উদ্ধার করা হয় বলে জানায় ফতুল্লা মডেল থানা পুলিশ।
রনির পরিবারের দাবি ১৫ সেপ্টেম্বর দিবাগত রাতে নিখোঁজ হন রনি। তাকে ডিবি পুুলিশ পরিচয়ে তুলে নিয়ে যাওয়া হয় বলেও দাবি করা হয়। এরপর ১৭ সেপ্টেম্বর সোমবার ভোরে ফতুল্লা দাপা ইদ্রাকপুর এলাকা থেকে মশিউর রহমান রনিকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে বলে দাবি করে ফতুল্লা মডেল থানা পুলিশ। তার কাছ থেকে বিদেশী একটি অস্ত্র ও তিন রাউন্ড গুলি উদ্ধার করেছে পুলিশ। পরে ফতুল্লা মডেল থানা পুলিশের তৎকালীন এসআই আব্দুল শাফিউল আলম বাদী হয়ে একটি মামলা দায়ের করেন। ফতুল্লা মডেল থানা পুলিশ জানিয়েছে ১৭ সেপ্টেম্বর সোমবার ভোরে তাকে দাপা ইদ্রাকপুর এলাকা থেকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।