সান নারায়ণগঞ্জ টুয়েন্টিফোর ডটকম:
ইটালি বসেও নারায়ণগঞ্জের সোনারগাঁও উপজেলা আওয়ামীলীগের কমিটিতে পদ পেয়েছেন মাহাবুব সরকার নামে এক ব্যক্তি। যিনি দীর্ঘদিন যাবত ইটালিতে বসবাস করছেন। সূত্র বলছে, কেন্দ্রীয় আওয়ামীলীগের একজন শীর্ষ নেতার পরিচিত হিসেবেই তাকে আহ্বায়ক কমিটিতে রাখা হয়েছে। অথচ এই কমিটিতে সর্বশেষ পদ ১৮ নম্বরে স্থান পেয়েছেন বিএনপি-জামাত জোট সরকার আমলে নির্যাতিত গাজী মজিবুর রহমান।
২১ সদস্য বিশিষ্ট কমিটিতে দু’তিনজন নেতা বাদে আওয়ামীলীগের রাজনীতিতে বাকি সবাই গাজী মজিবুর রহমানের জুনিয়র। সেই ইটালি প্রবাসীও গাজী মজিবুর রহমানের আগে। তবে কমিটি গঠনের দিন মাহাবুব সরকার নামটি নিশ্চিত করা না হলেও ইটালি প্রবাসী মাহাবুব সরকার তার ফেসবুকে জেলা আওয়ামীলীগের নেতা ও কেন্দ্রীয় নেতাদের ধন্যবাদ জানিয়ে বিভিন্ন পোস্টও করেছেন।
জানাগেছে, নারায়ণগঞ্জের সোনারগাঁও উপজেলা আওয়ামীলীগের আহ্বায়ক কমিটি পূণর্বিন্যাস করে ২১ সদস্য বিশিষ্ট আহ্বায়ক কমিটি ঘোষণা করেছে নারায়ণগঞ্জ জেলা আওয়ামীলীগ। ২২ মার্চ সোমবার জেলা আওয়ামীলীগের সভাপতি আব্দুল হাই ও সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট আবু হাসনাত মোহাম্মদ শহীদ বাদল স্বাক্ষরিত এক প্যাডে এই কমিটির অনুুমোদন দেন।
কমিটিতে আওয়ামীলীগের সাবেক এমপি আব্দুল্লাহ আল কায়সার হাসনাত ও উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান মোশাররফ হোসেন সহ বেশকজনকে অন্তর্ভূক্ত করা হয়েছে। বিষয়টি সান নারায়ণগঞ্জকে নিশ্চিত করেছেন জেলা আওয়ামীলীগের সভাপতি আব্দুল হাই।
কমিটির গঠনের বিষয়টি নিশ্চিত করে তিনি বলেছিলেন, ১৩ নম্বরে যে মাহাবুব হোসেন সরকার নামটি রয়েছে সে বিষয়টি আপাতত স্থগিত রেখেছি। কারন সোনারগাঁও বৈদ্যেরবাজার ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান ও নৌকার প্রার্থী মাহাবুব সরকার নামে একজন রয়েছেন। তাকে তো রাখাই যাবেনা কমিটিতে। এটা আমরা পরবর্তীতে নিশ্চিত করবো কাকে রাখা হয়েছে। বাকি পদগুলো ঠিক আছে।
তবে ২৩ মার্চ মঙ্গলবার আবারো মোবাইল ফোনে আব্দুল হাইয়ের সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলে তিনি ফোনটি রিসিব করেননি। তবে ইটালি প্রবাসী মাহাবুব সরকার ফেসবুকে দাবি করেছেন তাকেই কমিটিতে রাখা হয়েছে।
এদিকে গাজী মজিবুর রহমানকে সর্বশেষ রাখায় নেতাকর্মীরা ফেসবুকে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন। যার মধ্যে গাজী আলমগীর তার ফেসবুকে লিখেছেন, ‘কি সুন্দর মুল্যায়ন ত্যাগীদের? মানুষের প্রশ্ন এটা কি ত্যাগীদের মুল্যায়ন না মুল্যায়নের নামে দয়া করা? ত্যাগীদের মুল্যায়নের ধরণ যদি এরকম হয় তাহলে ভবিষ্যতে রাজনীতির জন্য কেউ ত্যাগ স্বীকার করবে না। এই ২১ সদস্য বিশিষ্ট সোনারগাঁ উপজেলা আওয়ামী লীগের আহবায়ক কমিটিতে ৫জনের মধ্যে গাজী মুজিবুর রহমানের নামটি থাকার কথা সেখানে সবার নিচে এমনভাবে তার নামটি লিখা হয়েছে দেখলে মনে হবে তার ওপর অসীম দয়া করা হয়েছে। গাজী মুজিবুর রহমান একজন দক্ষ সংগঠক,সৎ, জনপ্রিয় ও ত্যাগী নেতা। কিন্তু উনার একটাই দুর্বলতা আদর্শ বিসর্জন দিয়ে অবৈধভাবে অগাধ সম্পত্তির মালিক হননি। এমন না যে ওনার টাকা কামানোর সুযোগ ছিল না। উনি ২০০৪ থেকে ২০১৪ সাল পর্যন্ত আওয়ামী যুবলীগের সোনারগাঁ উপজেলার সভাপতির দায়িত্ব পালন করেছেন সেসময় তিনি চাইলে ক্ষমতার অপব্যবহার করে অবৈধ টাকা উপার্জন করতে পারতেন কিন্ত পারিবারিক ঐতিহ্য ও আদর্শের কথা চিন্তা করে নিজেকে বিতর্কমুক্ত রেখে নিরলসভাবে সংগঠনের জন্য কাজ করেছেন। আওয়ামী লীগের শক্তিশালী সহযোগী সংগঠন সোনারগাঁ উপজেলা যুবলীগের শীর্ষ পদে থেকেও নিজেকে বিতর্কমুক্ত রেখে সৎ ও নিষ্ঠার সাথে কাজ করেছেন বলেই আজ গাজী মুজিবুর রহমানের নামটি সৎ এবং ত্যাগী নেতা হিসেবে সবাই শ্রদ্ধার সহিত স্বরন করে। আহবায়ক কমিটিতে যেভাবেই হোক, নামটি যে অবস্থানেই থাকুক, যে নেতার আশীর্বাদেই হোক কমিটিতে নামটি রাখা হয়েছে রাজনীতিতে ত্যাগ ও সততার কারনেই। তাছাড়া কমিটিতে ১৮নং সদস্য করায় সোস্যাল মিডিয়া ও রাজনীতি অঙ্গনে যে সমালোচনার ঝড় উঠেছে এটাও গাজী মুজিবুর রহমানের রাজনৈতিক সার্থকতা বলে অনেকে মনে করেন। অবশেষে ভবিষ্যতে সোনারগাঁ উপজেলা আওয়ামী লীগের পুর্নাঙ্গ করার সময় গাজী মুজিবুর রহমানকে যোগ্যতম ও সম্মানজনক জায়গায় রাখবেন বলে আশা করি।’
এর আগে ২০১৯ সালের ১৫ জুলাই অ্যাডভোকেট সামসুল ইসলাম ভুঁইয়াকে আহ্বায়ক ও পিরোজপুুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ইঞ্জিনিয়ার মাসুদুর রহমান মাসুমকে যুগ্ম আহ্বায়ক করে একটি আহ্বায়ক কমিটি ঘোষণা করা হয়। ওই কমিটির বিরোধীতা করেছিলেন সাবেক এমপি আব্দুল্লাহ আল কায়সার হাসনাত, উপজেলা আওয়ামীলীগের সাবেক ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক মাহফুজুর রহমান কালাম ও উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান মোশাররফ হোসেন সহ বেশকজন নেতা। পরবর্তীতে কেন্দ্র থেকে এই কমিটিকেই চূড়ান্ত বলে সিদ্ধান্ত দেয়া হয়।
ওই কমিটিতে সদস্য পদে ছিলেন জেলা আওয়ামীলীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ডা. আবু জাফর চৌধুরী বিরু, জেলা আওয়ামীলীগের শিল্প ও বানিজ্য বিষয়ক সম্পাদক এস এম জাহাঙ্গীর হোসেন, মোগরাপাড়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আরিফ মাসুদ বাবু, সোনারগাঁ উপজেলা পরিষদের ভাইস চেয়ারম্যান বাবু ওমর, মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান মাহমুদা আক্তার ফেন্সী ও সামসুদ্দিন খান আবু।
এদিকে নতুন কমিটিতে আহ্বায়ক সামসুল ইসলাম ভুঁইয়ার পর সিনিয়র যুগ্ম আহ্বায়ক হিসেবে কায়সার হাসনাত এবং পরবর্তী যুগ্ম আহ্বায়ক হিসেবে ইঞ্জিনিয়ার মাসুদুর রহমান মাসুমের নাম রাখা হয়েছে। বাকিরা সবাই সদস্য।
বাকি সদস্যরা হলেন- ডাঃ আবু জাফর চৌধুরী বিরু, বীর মুক্তিযোদ্ধা মোশাররফ হোসেন, এস এম জাহাঙ্গীর আলম, শামসুদ্দীন খাঁন আবু, বাবুল ওমর, আরিফ মাসুদ বাবু, মাহমুদা আক্তার ফেন্সি, আশরাফুজ্জামান, রফিকুল ইসলাম নান্নু, মোহাম্মদ আলী হায়দার, মোস্তাফিজুর রহমান মাসুম, মোঃ জহিরুল হক, মাহবুব হোসেন সরকার, অ্যাডভোকেট আবু তাহের ফজলে রাব্বী, অ্যাডভোকেট ইকবাল হোসেন, লায়ন মোঃ মাহাবুর রহমান বাবুল, মোঃ মাহাবুর রহমান লিটন ও গাজী মজিবুর রহমান।