সান নারায়ণগঞ্জ টুয়েন্টিফোর ডটকম:
আগামী ৩১ মার্চ অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে নারায়ণগঞ্জ জেলার তিনটি উপজেলা পরিষদ নির্বাচন। এ নির্বাচনে তিনটি উপজেলাতেই আওয়ামীলীগের বিদ্রোহী প্রার্থী হয়েছেন। যারা বিদ্রোহী প্রার্থী হয়েছেন তাদের পক্ষেই কাজ করছেন আওয়ামীলীগের কমিটির নেতারা। রূপগঞ্জ উপজেলায় বিদ্রোহী প্রার্থীরা তেমন একটি শক্তিশালী না হলেও আড়াইহাজার ও সোনারগাঁয়ে বেশ আলোড়ন সৃষ্টি করেছেন বিদ্রোহী প্রার্থীরা। আড়াইহাজারে বিদ্রোহী প্রার্থীর ভয়ে এখন পর্যন্ত আড়াইহাজারে প্রবেশ করতে পারেননি নৌকা প্রতীকের প্রার্থী মুজাহিদুর রহমা হেলো সরকার। সোনারগাঁয়ে মনোনয়ন দাখিল করতে গিয়ে নৌকা প্রতীকের প্রার্থী মোশারফ হোসেনের লোকজন পিটুনি খেয়েছেন বিদ্রোহী প্রার্থী মাহফুজুর রহমান কালামের লোকজনের হাতে।
জানাগেছে, গত শুক্রবার রাতে তিনটি উপজেলায় নৌকা প্রতীকের প্রার্থী ঘোষণা করেন বাংলাদেশ আওয়ামীলীগের সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। রূপগঞ্জ উপজেলায় চেয়ারম্যান পদে মনোনয়ন পান উপজেলা পরিষদের বর্তমান চেয়ারম্যান শাহজাহান ভূইয়া। ৪ মার্চ তিনি নৌকা প্রতীকে মনোনয়ন দাখিল করেছেন। তবে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে ছাত্রলীগের সাবেক নেতা তাবিবুল কাদির তমাল, মোখলেছুুর রহমান ও এস আলম মনোনয়ন পত্র দাখিল করেছেন। তবে এদের মধ্যে আলোচনায় কেবল তমাল। তবে রূপগঞ্জে অনেকটা প্রভাব দেখিয়ে মনোনয়ন পত্র দাখিল করেছেন নৌকা প্রতীেেকর প্রার্থী শাহজাহান ভূঁইয়া। তিনি টানা দুুই মেয়াদে চেয়ারম্যান পদে দায়িত্ব পালন করে আসছেন। তিনি উপজেলা আওয়ামীলীগের সেক্রেটারি পদেও রয়েছেন। তবে গত দুই মেয়াদেই স্থানীয় এমপি গাজী গোলাম দস্তগীর বীর প্রতীকের সঙ্গে বিরোধে জড়িয়েছিলেন। তাদের বিরোধের কারনে তিনটি হত্যাকান্ডের ঘঁটনাও ঘটে। এসব মামলায় দুই পক্ষের লোকজন আসামীও হন।
এদিকে আড়াইহাজার উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে নৌকা প্রতীকে মনোনয়ন পেয়েছেন জেলা আওয়ামীলীগের সদস্য মুজাহিদুর রহমান হেলো সরকার। তিনি এর আগে ভাইস চেয়ারম্যান পদে দায়িত্ব পালন করেছিলেন। তার সঙ্গে স্থানীয় এমপি নজরুল ইসলাম বাবুর সাপে নেউলে সম্পর্ক। গত জাতীয় সংসদ নির্বাচনে হেলো সরকার এমপি নজরুল ইসলাম বাবুর বিরোধীতা করে জেলা আওয়ামীলীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ইকবাল পারভেজের মনোনয়নের জন্য দাবি তুলেছিলেন এবং এমপি বাবুর বিরোধীতা করে নানা ধরনের বক্তব্যও রেখেছিলেন। এখানে বিদ্রোহী প্রার্থী হয়েছেন উপজেলা পরিষদের বর্তমান চেয়ারম্যান শাহজালাল মিয়া। এছাড়াও মনোনয়ন দাখিল করেছেন এমপি বাবুর ভাগিনা যুবলীগ নেতা ইকবাল হোসেন মোল্লা, আওয়ামীলীগ নেতা আজাদ খান, গোলাম মোহাম্মদ ও আবু হাসেম। ৪ মার্চ মনোনয়ন দাখিলের দিন আড়াইহাজারেই মনোনয়ন দাখিল করতে পারেননি হেলো সরকার। তিনি নারায়ণগঞ্জ জেলা প্রশাসনের কার্যালয়ে মনোনয়ন দাখিল করেন। মনোনয়ন দাখিলের পর মঙ্গলবারও হেলো সরকারকে আড়াইহাজার ছেড়ে নারায়ণগঞ্জে ঘুরাফেরা করতে দেখা যায়। তিনি আড়াইহাজারে প্রবেশ করতে জেলার নেতার দ্বারস্থ হচ্ছেন। তার সঙ্গে নেই উপজেলা আওয়ামীলীগের সেক্রেটারি আবদুর রশিদ ভূঁইয়াও।
অন্যদিকে মনোনয়ন পত্র দাখিল করতে গিয়ে হামলার শিকার হয়েছেন নৌকা প্রতীকের প্রার্থী মোশারফ হোসেনের লোকজন। সোমবার সোনারগাঁও উপজেলা নির্বাচন কমিশন অফিসের সামনেই হামলার শিকার হন। এতে অন্তত ২০ জনের মত নেতাকর্মী আহত হয়েছেন। ওই দিন রাতেই পাল্টাপাল্টি মামলা দায়ের করা হয়েছে সোনারগাঁও থানায়।
থানা সূত্রে জানাগেছে, সোমবার মনোনয়ন পত্র জমাকে কেন্দ্র করে নৌকার প্রতীকের প্রার্থী মোশারফ হোসেন ও স্বতন্ত্র প্রার্থী কালাম সমর্থকদের মধ্যে সংঘর্ষের ঘটনায় সোনারগাঁ থানায় পাল্টা পাল্টি দুটি মামলা দায়ের করেছে উভয় পক্ষের দুই নেতা। কালাম ও মোশারফ হোসেন দুজনেই ছাত্রলীগের উদীয়মান দুই ছাত্রলীগ নেতাকে ঢাল হিসেবে ব্যবহার করেছেন। যেখানে তাদের পাল্টাপাল্টি মামলায় বাদী করা হয়। মোশারফ হোসেনের সমর্থক ছাত্রলীগ নেতা এসকে সজীব বাদী হয়ে কালামের লোকজনদের আসামী করে মামলা করেন। অপর মামলাটি মোশারফ হোসেনের লোকজনদের আসামী করে কালামের সমর্থক ছাত্রলীগ নেতা নুবনুর রহমান সাবিক। সোমবার রাতে এ দুটি মামলা দায়ের করা হয়।
কালাম সমর্থকে সাবিকের মামলায় রফিকুল ইসলাম নান্নু ছাড়াও উপজেলা যুবলীগের সাবেক সভাপতি গাজী মজিবুর রহমান, মোস্তফা কামাল নিলু, কামাল হোসেন, সাইফুল ইসলাম বাবু, জামান, এসকে সজীব, রফিকুল হায়দার বাবু, মিন্টু ও মোস্তাফিজুর রহমান বাবুকে আসামী করা হয়। মোশারফ হোসেন সমর্থক এসকে সজীবের মামলায় মোস্তাফিজুর রহমান মাসুম ছাড়াও রনি, আলমগীর, নাঈম, সাজু ও সাবিক।
নারায়ণগঞ্জ-৩(সোনারগাঁও) আসনে বর্তমানে এমপি হিসেবে রয়েছেন মহাজোটের এমপি লিয়াকত হোসেন খোকা। সোনারগাঁও উপজেলা পরিষদে মনোনয়ন পেয়েছেন উপজেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান মোশারফ হোসেন। মোশারফ হোসেন হলেন আওয়ামীলীগের সাবেক এমপি আব্দুল্লাহ আল কায়সার হাসনাতের আপন চাচা। গত জাতীয় সংসদ নির্বাচনে কায়সার হাসনাত স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে সিংহ প্রতীকে নির্বাচনে লড়াইয়ে নেমেছিলেন। কিন্তু নির্বাচনের মাত্র একদিন আগে পুলিশ তার বাড়িতে হামলা দিয়ে নেতাকর্মীদের মারধর করলে কায়সার হাসনাত নির্বাচন থেকে সরে দাড়ান তিনি।
জাতীয় নির্বাচনের আগে মোশারফ হোসেন কায়সার হাসনাতের নির্বাচনী বেশকটি সভায় এমপি খোকার বিরুদ্ধে কঠোর বক্তব্য রেখেছিলেন। এমনকি বলেছিলেন, এমপি খোকা আপনি হাওয়ার মাঝে ২০১৪ সালে বিনা ভোটে এমপি হয়েছিলেন। সোনারগাঁয়ে আপনার কোন ভোট নাই। আপনি বাড়িতে গিয়ে ঘুমান।’ গত ২০১৪ সালের জাতীয় সংসদ নির্বাচনে এ আসনে মনোনয়ন পান মোশারফ হোসেন। ওই নির্বাচনে সোনারগাঁও আসনটি আওয়ামীলীগ জাতীয়পার্টিকে ছেড়ে দিলে এখানে বিনা প্রতিদ্বন্ধিতায় এমপি নির্বাচিত হন লিয়াকত হোসেন খোকা। গত নির্বাচনেও কায়সার হাসনাত নির্বাচন থেকে সরে গেলে এখানে এমপি নির্বাচিত হন খোকা। এ নির্বাচনে খোকার পক্ষে কাজ করেছিলেন সোনারগাঁও উপজেলা আওয়ামীলীগের ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক মাহফুজুর রহমান কালাম। কালাম উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে মনোনয়ন চেয়েছিলেন কিন্তু তিনি পাননি। এর আগে তিনি উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে দুইবার নির্বাচনে করে তিনি পরাজিত হয়েছেন।