সান নারায়ণগঞ্জ টুয়েন্টিফোর ডটকম:
নারায়ণগঞ্জের সোনারগাঁও উপজেলা আওয়ামীলীগের নবগঠিত আহ্বায়ক কমিটি গঠনের পর নানা বিতর্কের সৃষ্টি হয়। কমিটি গঠনের পর কারো নাম বাদ দিয়ে সেখানে নতুন নাম সংযোজন এবং কমিটি অনুমোদনের পর একজনকে সম্পৃক্তও করা হয়। নানা বিতর্কের মাঝেও চরম ক্ষোভ সৃষ্টি হয়েছে নারী নেত্রীদের মাঝে। কমিটিতে যুবলীগ, স্বেচ্ছাসেবকলীগের নেতারাও উপজেলা আওয়ামীলীগের কমিটিতে ঠাই পেয়েছেন কিন্তু চরম অবজ্ঞার শিকার হয়েছে মহিলা লীগের নেত্রীরা।
জানাগেছে, গত ২২ মার্চ উপজেলা আওয়ামীলীগের ২১ সদস্য বিশিষ্ট একটি কমিটির অনুমোদন দেন জেলা আওয়ামীলীগের সভাপতি আব্দুল হাই ও সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট আবু হাসনাত মোহাম্মদ শহীদ বাদল। মুলত পূর্বের আহ্বায়ক কমিটিকে পূণর্বিন্যাস করে এই কমিটি গঠন করা হয়।
কমিটিতে আওয়ামীলীগের সাবেক এমপি আব্দুল্লাহ আল কায়সার হাসনাত ও উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান মোশাররফ হোসেন সহ বেশকজনকে অন্তর্ভূক্ত করা হয়।
নতুন কমিটিতে আহ্বায়ক অ্যাডভোকেট সামসুল ইসলাম ভুঁইয়ার পর সিনিয়র যুগ্ম আহ্বায়ক হিসেবে কায়সার হাসনাত এবং পরবর্তী যুগ্ম আহ্বায়ক হিসেবে ইঞ্জিনিয়ার মাসুদুর রহমান মাসুমের নাম রাখা হয়। বাকি সবাইকে সদস্য পদে রাখা হয়।
বাকি সদস্যরা হলেন- ডাঃ আবু জাফর চৌধুরী বিরু, বীর মুক্তিযোদ্ধা মোশাররফ হোসেন, এস এম জাহাঙ্গীর আলম, শামসুদ্দীন খাঁন আবু, বাবুল ওমর, আরিফ মাসুদ বাবু, মাহমুদা আক্তার ফেন্সি, আশরাফুজ্জামান, রফিকুল ইসলাম নান্নু, মোহাম্মদ আলী হায়দার, মোস্তাফিজুর রহমান মাসুম, মোঃ জহিরুল হক, মাহবুব হোসেন সরকার, অ্যাডভোকেট আবু তাহের ফজলে রাব্বী, অ্যাডভোকেট ইকবাল হোসেন, লায়ন মোঃ মাহাবুর রহমান বাবুল, মোঃ মাহাবুর রহমান লিটন ও গাজী মজিবুর রহমান।
এই কমিটি ঘোষণার পর ওইদিনই জেলা আওয়ামীলীগের সভাপতি আব্দুল হাই মিডিয়াতে জানান, মাহাবু্ব হোসেন সরকার নামটি আপাতত স্থগিত। কারন বৈদ্যেরবাজার ইউনিয়নে মাহাবুব হোসেন সরকার নামে যিনি রয়েছেন তিনি নৌকার বিদ্রোহী। তাকে রাখা যাবে না। যদি আর কোনো কেউ মাহাবুব হোসেন সরকার থেকে থাকে তাহলে যাচাই বাচাই হবে এই নামটি। নতুবা এখানে অন্য একজনকে বসানো হবে।
এদিকে শম্ভপুরা ইউনিয়নে ইটালি প্রবাসী মাহাবুব হোসেন সরকার ফেসবুকে কেন্দ্রীয় আওয়ামীলীগের ঢাকা বিভাগীয় সাংগঠনিক সম্পাদক মীর্জা আজমকে শুভেচ্ছা জানিয়েছেন তাকেই সদস্য পদে রাখা হয়েছে দাবি করে। সবশেষ সেই নামের স্থলে উপজেলা স্বেচ্ছাসেবক লীগের সভাপতি মাসুদ রানা মানিককে বসানো হয়। একই সঙ্গে কমিটির ২২তম নামে কেন্দ্রীয় যুব মহিলা লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক নাসরিন সুলতানা ঝরাকে অন্তর্ভুক্ত করা হয়।
নাসরিন সুলতানা ঝরা বাদে এই কমিটিতে নারী নেত্রীদের মধ্যে উপজেলা পরিষদের ভাইস চেয়ারম্যান মাহামুদা আক্তার ফেন্সিকেই রাখা হয়। ঝরাকে রাখা হলেও কমিটি অনুমোদনের পর মুলত সমালোচনা ঠেকাতে যোগ করা হয়।
নেতাকর্মীরা বলছেন, উপজেলা মহিলা লীগের সভাপতি ও জেলা মহিলা লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট নূর জাহানকে রাখা হয়নি এই কমিটিতে। যুবলীগ ও স্বেচ্ছাসেবক লীগ থেকে নেতারা ঠাই পেলেও বিএনপি জামাত জোট সরকার আমলে রাজপথে কঠোর ভুমিকা রাখা নূর জাহানকে বঞ্চিত করা হয়েছে। অথচ ফেন্সির রাজনৈতিক ইতিহাস বলতে কিছুই নেই। এই সরকার আমলে তার উত্থান। সেই মাহামুদা আক্তার ফেন্সিকে আগের কমিটিতেও রাখা হয় এবং এই কমিটিতেও গুরুত্বসহকারে রাখা হয়। অনেকটা সৌভাগ্যই বলতে হয় তা। কেউ কেউ বলেছেন ফেন্সি ঠিকমত আওয়ামীলীগের নামে শ্লোগান দিয়েছিল কিনা কোনোদিন সেই যোগ্যতা না থাকলেও তাকে কমিটিতে গুরুত্বসহকারে রাখা হলো। অথচ রাজপথের নূর জাহানরা কমিটিতে নাই। ত্যাগীর ভাগ্য এখন হাইব্রীডদের হাতে।
এ ছাড়াও কেন্দ্রীয় যুব মহিলা লীগের শিক্ষা বিষয়ক সম্পাদক ড. সেলিনা আক্তারকেও রাখা হয়নি। তার পিতা যুদ্ধাকালীন কমান্ডার সুলতানা আহাম্মেদ মোল্লা বাদশা ছিলেন উপজেলা আওয়ামীলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক।
নারায়ণগঞ্জ জেলা মহিলা লীগের সভাপতি প্রফেসর শিরিন বেগমকেও রাখা হয়নি এই কমিটিতে। যদিও তার স্বামী অ্যাডভোকেট সামসুল ইসলাম ভুঁইয়াকে আহ্বায়ক করা হয়েছে। কিন্তু নিজ যোগ্যতায় শিরিন বেগমের নামটিও আসেনি কমিটিতে। গত জাতীয় নির্বাচনে সেলিনা আক্তার, সামসুল ইসলাম ভুঁইয়া ও শিরিন বেগমও সোনারগাঁও আসন থেকে মনোনয়ন পত্র সংগ্রহ করেছিলেন। বর্তমানে সনমান্দি ইউনিয়নে নারী নেত্রীদের মধ্যে আলোচিত শ্যামলী চৌধুরীও ওঠতে পারেনি কমিটিতে। আওয়ামী পরিবারের এই পূত্রবধু ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে নৌকার লড়াইয়ে মাঠে।
এর আগে ২০১৯ সালের ১৫ জুলাই অ্যাডভোকেট সামসুল ইসলাম ভুঁইয়াকে আহ্বায়ক ও পিরোজপুুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ইঞ্জিনিয়ার মাসুদুর রহমান মাসুমকে যুগ্ম আহ্বায়ক করে একটি আহ্বায়ক কমিটি ঘোষণা করা হয়। ওই কমিটির বিরোধীতা করেছিলেন সাবেক এমপি আব্দুল্লাহ আল কায়সার হাসনাত, উপজেলা আওয়ামীলীগের সাবেক ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক মাহফুজুর রহমান কালাম ও উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান মোশাররফ হোসেন সহ বেশকজন নেতা। পরবর্তীতে কেন্দ্র থেকে এই কমিটিকেই চূড়ান্ত বলে সিদ্ধান্ত দেয়া হয়।
ওই কমিটিতে সদস্য পদে ছিলেন জেলা আওয়ামীলীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ডা. আবু জাফর চৌধুরী বিরু, জেলা আওয়ামীলীগের শিল্প ও বানিজ্য বিষয়ক সম্পাদক এস এম জাহাঙ্গীর হোসেন, মোগরাপাড়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আরিফ মাসুদ বাবু, সোনারগাঁ উপজেলা পরিষদের ভাইস চেয়ারম্যান বাবু ওমর, মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান মাহমুদা আক্তার ফেন্সী ও সামসুদ্দিন খান আবু।