সান নারায়ণগঞ্জ টুয়েন্টিফোর ডটকম:
নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জের উপজেলা ছাত্রদলের কমিটি থেকে ১৩ জন নেতা পদত্যাগ করেছেন যারা কেন্দ্রীয় বিএনপির সদস্য মোস্তাফিজুর রহমান দিপু ভুঁইয়র অনুগামী। অন্যদিকে তাদের বিরুদ্ধে রূপগঞ্জ প্রেস ক্লাবে সংবাদ সম্মেলন করেছেন বিএনপির চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা তৈমূর আলম খন্দকার অনুগামী। সংবাদ সম্মেলনের শেষ পর্যায়ে সেখানে দিপু ভুঁইয়ার অনুগামীরা হামলা চালিয়েছে বলে অভিযোগ তোলা হয়েছে। তবে এর আগে দিপু ভুঁইয়া অনুগামী নেতাকর্মীরা কাফনের কাপড় পরিধান করে গাউছিয়া এলাকায় জেলা ছাত্রদলের সভাপতি রনি ও সেক্রেটারি সজীবের বিরুদ্ধে ঝাড়ু মিছিল করেছেন।
জানাগেছে, নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জ থানা ছাত্রদলের আহ্বায়ক সুলতান মাহমুদ ও সদস্য সচিব মাসুদুর রহমানের বিরুদ্ধে অপপ্রচারের প্রতিবাদে সংবাদ সম্মেলন করে প্রতিবাদ করেছে রূপগঞ্জ উপজেলা ছাত্রদল। ৪ এপ্রিল রবিবার দুপুরে উপজেলার মঠেরঘাট এলাকার রূপগঞ্জ প্রেসক্লাব কার্যালয়ে এ সংবাদ সম্মেলন করে ছাত্রদল নেতারা।
সম্মেলনে রূপগঞ্জ থানা ছাত্রদলের আহ্বায়ক সুলতান মাহমুদ ও সদস্য সচিব মাসুদুর রহমান অভিযোগ করেন, তারা দীর্ঘদিন ধরে বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার হাতকে শক্তিশালী করার লক্ষ্যে রূপগঞ্জে ছাত্রদলের সকল কার্যক্রম চালিয়ে আসছেন। ক্ষমতাসীন দলের হাতে মামলা-হামলার শিকার হয়েছেন। মিথ্যা ও রাজনৈতিক মামলায় জেলও খেটেছেন। আর দলের ত্যাগী নেতা হিসেবেই সুলতান মাহমুদকে আহ্বায়ক ও মাসুদুর রহমান মাসুদকে সদস্য সচিব করে ২১ সদস্য বিশিষ্ট রূপগঞ্জ উপজেলা ছাত্রদলের কমিটি ঘোষণা করেন নারায়ণগঞ্জ জেলা ছাত্রদলের সভাপতি মশিউর রহমান রনি ও সাধারণ সম্পাদক খাইরুল ইসলাম সজীব।
কমিটি ঘোষণা দেওয়ার পর গত ২৭ মার্চ কমিটিতে থাকা ছাত্রদল নেতা নাহিদ হাসান ভুঁইয়া, মাছুম বিল্লাহসহ কয়েকজন সুলতান মাহমুদ ও মাসুদুর রহমানের বিরুদ্ধে নানা অভিযোগ এনে রূপগঞ্জ কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলন করেন। সম্মেলনে সুলতান মাহমুদ ও মাসুদুর রহমানের বিরুদ্ধে মিথ্যা অপপ্রচার করা হয়, যা কেন্দ্রীয় ছাত্রদল কমিটির নেতৃবৃন্দকে জানানো হয়েছে বলে জানান তারা।
সম্মেলনে তারা আরও বলেন, নাহিদ হাসান ভুঁইয়া সহ তার অনুসারীরা একজন ভাইয়ের নির্দেশনায় কাজ করেন। বিএনপি ও ছাত্রদলের নির্দেশনায় তারা চলেন না। সুলতান মাহমুদ ও মাসুদুর রহমানের নেতৃত্বে ছাত্রদলের আন্দোলন সংগ্রাম চলবে।
অন্যদিকে জানাগেছে, নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জ থানা ছাত্রদলের সদ্য ঘোষিত ২১ সদস্য বিশিষ্ট কমিটির যুগ্ম আহবায়ক সহ ১৩ জন সদস্য পদত্যাগ করেছেন। তারা সবাই কেন্দ্রীয় বিএনপির সদস্য মোস্তাফিজুর রহমান দিপু ভুঁইয়া অনুগামী হিসেবে পরিচিত।
৩ এপ্রিল শনিবার বিকেলে ছাত্রদলের ঢাকা বিভাগীর সাংগঠনিক টিমের হাতে পদত্যাগপত্র তুলে দেন নেতারা। মুলত বিএনপির চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার উপদেষ্টা ও জেলা বিএনপির আহ্বায়ক অ্যাডভোকেট তৈমূর আলম খন্দকারের অনুগামী সুলতান মাহামুদকে আহ্বায়ক ও মাসুদুর রহমানকে সদস্য সচিব করে কমিটি গঠন করা হয়। এর আগে দিপু ভুঁইয়া অনুগামী নাহিদ হাসান ভুঁইয়াকে টাকার বিনিময়ে আহ্বায়ক করা হচ্ছে এমন দাবিতে কমিটি গঠনের আগেই মানববন্ধন করেছিলেন সুলতান ও মাসুদুুর অনুগামীরা। কিন্তু শেষ পর্যন্ত নাহিদ হাসান ভুঁইয়াকে কমিটিতে আহ্বায়ক পদে রাখা হয়নি।
পদত্যাগ করা নেতারা হলো কমিটির যুগ্ম আহবায়ক নাহিদ হাসান ভুঁইয়া, মাসুম বিল্লাহ, মেহেদী হাসান মিঠু, আলমগীর হোসাইন নয়ন, হাবিবুর রহমান হাবিব, জাইদুল ইসলাম, আশরাফুল ইসলাম হৃদয়, কামরুল হাসান, শরীফ হোসাইন, সদস্য ইসহাক, হুমায়ুন কবির টিটু, পাভেল মোল্লা, জোবায়ের মোল্লা।
পদত্যাগ পত্রে নেতারা অভিযোগ করেন, বিবাহিত, ছাত্রলীগ, অছাত্র, মাদকাসক্ত দিয়ে রূপগঞ্জ থানা ছাত্রদলের আহবায়ক কমিটি করায় তারা পদত্যাগ করেছেন।
তারা কেন্দ্রীয় নেতাদের জানান, ঘোষিত কমিটিতে ছাত্রদলের আহবায়ক সুলতান মাহমুদ বিবাহিত ও যুগ্ম আহবায়ক আরিফ বিল্লাহ ছাত্রলীগের পদে আছেন সেটির নানা প্রমাণ সহ এর আগে কেন্দ্রীয় ছাত্রদলের দপ্তরে লিখিত আকারেও অভিযোগ দেয়া হয়েছে। এসব অভিযোগ কেন্দ্রীয় দপ্তরে গ্রহণ করা হয়েছে।
কমিটির আহবায়ক বিবাহিত সুলতান মাহমুদ দাউদপুর ইউনিয়ন যুবদলের সাবেক সভাপতি জামান মিয়ার মেয়ে জান্নাতুল ফেরদৌসি জেরিনকে ২০১৮ সালে বিয়ে করেন। বিয়ে পড়ান কাজী আবু তাহের। বিয়েতে উকিল বাবা হয়েছিলেন কালিগঞ্জের বাদার্তী গ্রামের আব্দুস সাত্তার। মেয়ের বোনের জামাই সৌদি প্রবাসি ইসমাইল হোসেন বিয়ের প্রধান স্বাক্ষী ছিলেন। ছাত্রদলের নিয়মানুসারে বর্তমানে বিবাহিত, অছাত্র কেউ এভাবে আহবায়ক হতে পারবেনা।
রূপগঞ্জ থানা ছাত্রদলের ২১ জনের আহবায়ক কমিটির ১৩ জনের অভিযোগ, এ কমিটিতে যাকে আহবায়ক করা হয়েছে তার বিরুদ্ধে নানা অভিযোগ রয়েছে এবং সে বিবাহিত। বিবাহিতদের যদি পদ দেয়াই হয় তাহলে অনেক ত্যাগীই বাদ পড়েছেন তাদেরকে পদায়ন করতে হবে অন্যথায় সুলতানকে আহবায়ক পদ থেকে অব্যহতি দিতে হবে। এ ছাড়া ছাত্রলীগের নেতাকে পদ দেয়ার বিষয়টি মেনে নেয়ার মত নয়। এ বিষয়ে আমরা সর্বোচ্চ হস্তক্ষেপ চাই।