সান নারায়ণগঞ্জ টুয়েন্টিফোর ডটকম:
গত বছরের ২৫ মার্চ থেকে বিশ্বব্যাপী মহামারি করোনা ভাইরাস বাংলাদেশে দেখা দেয়। তারপর থেকে টানা কয়েক মাস লকডাউন। এমন পরিস্থিতিতে দিনমজুর খেটে খাওয়া মানুষগুলো বিপাকে পড়ে যায়। গরীব অসহায় দিনমজুর খেটে খাওয়া পরিবারগুলোর মাঝে খাদ্যসামগ্রী বিতরণে কাজ করেছিল ‘আমরা স্বেচ্ছাসেবী করোনাযোদ্ধা’ সংগঠনটি।
মুলত করোনা পরিস্থিতিতে করোনার উপসর্গ নিয়ে কিংবা করোনায় আক্রান্ত হয়ে যখন কেউ মারা যায় তখন তার পরিবার আত্মীয়স্বজনও লাশ দাফনে এগিয়ে আসছিল না। ঠিক সেই সময় এসব করোনায় আক্রান্ত্র ও করোনার উপসর্গ নিয়ে মৃত লাশগুলোর দাফনে এগিয়ে আসে ‘আমরা স্বেচ্ছাসেবী করোনাযোদ্ধা’। ইতিমধ্যে ৩৭টি লাশ দাফন করেছে এই টিম।
নারায়ণগঞ্জ-৩ আসনের সংসদ সদস্য ও করোনার সম্মুুখযোদ্ধা, মানবতার ফেরিওয়ালা খ্যাত লিয়াকত হোসেন খোকা। করোনার কঠিন পরিস্থিতিতেও মানবতার সেবায় কাজ করেছিল স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনটি। যে সংগঠনের টিম লিডার ছিলেন সানাউল্লাহ বেপারী। মুলত রাজনৈতিক প্রতিহংসা পরায়ণ হয়ে তাকে হেফাজতের তান্ডবের ঘটনায় দায়েরকৃত একটি মামলায় আসামি করা হয়েছে বলে দাবি করেছেন স্থানীয়রা। স্থানীয়দের দাবি হেফাজত ইসলামের তান্ডবের সঙ্গে তার কোনো সম্পৃক্ততা নাই। কিন্তু রাজনৈতিক প্রতিহিংসার কারনে তাকে আসামি করা হয়েছে।
ঘটনা সূত্রে, নারায়ণগঞ্জের সোনারগাঁও উপজেলা আওয়ামীলীগ কার্যালয়, উপজেলা যুবলীগ সভাপতি ও জেলা ছাত্রলীগের সাবেক সহ-সভাপতির বাড়িঘর, কার্যালয়, ব্যবসা প্র্রতিষ্ঠানে তান্ডবলীলা চালিয়েছে হেফাজত ইসলাম বাংলাদেশের নেতাকর্মীরা। একই সঙ্গে সোনারগাঁও রয়েল রিসোর্টে হামলা ভাংচুরের তান্ডব সহ ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কে সড়ক অবরোধ করে অগ্নিসংযোগ ভাংচুরের তান্ডবের ঘটনাও ছিল। এ ছাড়াও স্থানীয় এক সংবাদকর্মীর বাড়িঘরে হামলা ভাংচুর ও লাঞ্ছিত করেছে হেফাজত কর্মীরা। এসব ঘটনায় পৃথক ৬টি মামলা দায়ের করা হয়েছে। যার মধ্যে দুটি পুুলিশ বাদী ও বাকি ৪টি মামলার বাদী পাবলিক।
উপজেলা যুবলীগের সভাপতি রফিকুল ইসলাম নান্নু বাদী হয়ে তার বাড়ি ও ব্যবসা প্র্রতিষ্ঠানে হামলা ভাংচুরের ঘটনায় মামলা দায়ের করেছেন, যেখানে হেফাজত নেতাকর্মীদের চেয়ে বেশির ভাগ আসামি বিএনপি সহ বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতাকর্মীরা। একইভাবে উপজেলা যুবলীগের প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক নাসির উদ্দীন আহাম্মেদ বাদী হয়ে আরেকটি মামলা দায়ের করেন।
ঘটনা সূত্রে আরও জানাগেল- গত ৩ এপ্রিল শনিবার সোনারগাঁও রয়েল রিসোর্টে আসেন কেন্দ্রীয় হেফাজত ইসলামের যুগ্ম মহাসচিন মাওলানা মামুনুল হক। ওই সময় তার সঙ্গে এক নারী ছিলেন যাকে তিনি তার দ্বিতীয় স্ত্রী দাবি করেছিলেন। ওইদিন উপজেলা যুবলীগের সভাপতি রফিকুল ইসলাম নান্নু ও জেলা ছাত্রলীগের সাবেক সহ-সভাপতি সোহাগ রনি সহ স্থানীয়রা মামুনুল হককে নারী সহ আটক করেছে বলে খবর ছড়িয়ে পড়লে পুলিশ ও সংবাদকর্মীরা ঘটনাস্থলে যান। ঘটনাটি সংবাদকর্মীরা ভিডিও ধারণ করেন। ওই খবরটি প্রচারিত হলে হেফাজতের নেতাকর্মীরা লাঠিসোটা নিয়ে রয়েল রিসোর্টে হামলা ভাংচুর চালিয়ে মামুনুল হককে ছিনিয়ে নেয়। এরি মাঝে নান্নু ও সোহাগ রনির বাড়িঘর, ব্যবসা প্র্রতিষ্ঠানে হামলা ভাংচুর চালায় হেফাজতের নেতাকর্মীরা। ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়ক অবরোধ করে অগ্নিসংযোগ ভাংচুর ও উপজেলা আওয়ামীলীগের কার্যালয় ভাংচুর চালায়। পরবর্তীতে ৫ এপ্র্রিল স্থানীয় সাংবাদিক হাবিবুর রহমানের বাড়িতেও হামলা ভাংচুর চালায়।
৯ এপ্রিল সোনারগাঁও উপজেলা যুবলীগের সভাপতি রফিকুল ইসলাম নান্নু বাদী হয়ে ১২৩ জনের নাম উল্লেখ করে আরো অজ্ঞাতনামা ১৫০/২০০ জনকে আসামি করে একটি মামলা দায়ের করা হয়। এই মামলায় প্রধান আসামি করা হয়েছে হেফাজত নেতা মাওলানা ইকবাল হোসেনকে।
উপজেলা যুবলীগের প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক নাসির উদ্দীন বাদী হয়ে ১১১জনের নাম উল্লেখ করে আরো অজ্ঞাতনামা ২০০/২৫০জনকে আসামি করে আরেকটি মামলা দায়ের করেন। এই মামলায় মাওলানা মামুনুল হককে প্রধান আসামি করা হয়।
এই মামলায় ছাড় পাননি করোনাযোদ্ধা সানাউল্লাহ বেপারীও। বিশ্বব্যাপী মহামারি করোনা ভাইরাস মোকাবেলায় স্থানীয় এমপি লিয়াকত হোসেন খোকা ত্রাণ সামগ্রী বিতরণ কার্যক্রম পরিচালনায় এবং করোনায় আক্রান্ত ও করোনার উপসর্গ নিয়ে মৃত লাশ দাফনের জন্য ’আমরা স্বেচ্ছাসেবী করোনাযোদ্ধা’ স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনের টিম লিডার ছিলেন সানাউল্লাহ বেপারী। ইতিমধ্যে প্রায় অর্ধশত লাশ দাফনও করেছে এই টিম। টিম লিডার সানাউল্লাহ বেপারীকেও আসামি করা হয়েছে।
একইভাবে জেলা ছাত্রলীগের সাবেক সহ-সভাপতি শাহ মোহাম্মদ সোহাগ রনির বাড়িঘর ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে হামলা ভাংচুরের ঘটনায় সোহাগ রনির পিতা সাবেক মেম্বার শাহ জামাল তোতা বাদী হয়ে একটি মামলা দায়ের করেন। এই মামলায় মাওলানা ইকবাল হোসেনকে প্রধান আসামি করে ৭ জনের নাম উল্লেখ সহ অজ্ঞাতনামা আরও ২০০/৩০০জনকে আসামি করা হয়।
স্থানীয় সাংবাদিক হাবিবুর রহমানের বাড়িঘর ভাংচুুর হামলার ঘটনায় তিনি বাদী হয়ে আরেকটি মামলা দায়ের করেন। তিনি মোজ্জামেল হক আরিফকে প্রধান আসামি করে ১৭ জনের নাম উল্লেখ করে অজ্ঞাতনামা ৭০/৮০ জনের নামে মামলা দায়ের করেন।
তবে এর আগে ঘটনার একটি দিন সোনারগাঁও থানা পুলিশ বাদী হয়ে পৃথক দুটি মামলা দায়ের করেন। এসআই ইয়াউর রহমান বাদী হয়ে মাওলানা মামুনুল হককে প্রধান আসামি করে এবং ৪১ জনের নাম উল্লেখ করে অজ্ঞাতনামা আরও ২৫০/৩০০জনকে আসামি করা মামলা দায়ের করেন। মুলত রয়েল রিসোর্টের ঘটনায় তিনি এই মামলাটি দায়ের করেন।
ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কে তান্ডবের ঘটনায় এসআই আরিফ হাওলাদার বাদী হয়ে আরেকটি মামলা দায়ের করেন। এই মামলায় মাওলানা ইকবাল হোসেনকে প্রধান আসামি করে এবং ৪২ জনের নাম উল্লেখ করে অজ্ঞাতনামা আরো ২৫০/৩০০ জনকে আসামি করা হয়।