সান নারায়ণগঞ্জ টুয়েন্টিফোর ডটকম:
‘কারাগারে থাকা ইয়াবা ব্যবসায়ীকে বারডেম হাসপাতালে নিয়ে চিকিৎসা করানো হয় কিন্তু বেগম খালেদা জিয়ার চিকিৎসা করানো হয়না বলে অভিযোগ করেছেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য নজরুল ইসলাম খান। একই সঙ্গে তিনি মন্তব্য করেছেন একটা নিষ্ঠুর অত্যাচারী সরকারের অধীনে আমরা।
নজরুল ইসলাম খান বলেছেন, বেগম খালেদা জিয়ার চিকিৎসার ব্যবস্থা নেয়না। আদালতে যেয়ে হাইকোর্টের অর্ডার নিয়ে মেডিকেল বোর্ড করে পাঠানো হয় সেটাও পাঠাতে বিলম্ব হয়। এবং সেটার যে রিপোর্ট সেটাও কার্যকর করতে বিলম্ব হয়। আমরা বলেছি চিকিৎসার খরচ আমরা বহন করবো তবুও বেগম খালেদা জিয়ার চিকিৎসা করানো হোক। অথচ ইয়াবা ব্যবসায়ীকেও বারডেম হাসপাতালে নিয়ে চিকিৎসা হয় কিন্তু বেগম খালেদা জিয়ার চিকিৎসা হয়না। আজকের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ১/১১ এর সময় চিকিৎসার জন্য বিদেশে গিয়েছেন। এ রকম অনেক উদাহরণ আছে জেলখানায় আবদ্ধ তাদের চিকিৎসা করানো হয়েছিল। এত দৃষ্ঠান্ত থাকার পরেও বেগম খালেদা জিয়ার ৭৩ বছর পরেও এত জটিল রোগে আক্রান্ত তার চিকিৎসা করানো হচ্ছেনা।
এর আগে তিনি বলেন, ৯টা বছর স্বৈরাচারের বিরুদ্ধে আমাদের লড়াই করতে হয়েছে। গত ১২ বছর ধরে আমরা সরকারের বাহিরে এবং একটা নিষ্ঠুর অত্যাচারী সরকারের অধীনে আমরা। এই সরকার তিন বারের প্রধানমন্ত্রী, দুই বারের বিরোধী দলীয় নেতা, এ দেশের সবচেয়ে জনপ্রিয় মানুষ বেগম খালেদা জিয়া যিনি জীবনে কোন নির্বাচনে হারেননি। ৫টা জাতীয় নির্বাচনে ২৩টা আসনে প্রতিদ্বন্ধিতা করা সম্ভব ছিল, উনি ২৩টা আসনে প্রতিদ্বন্ধিতা করে বিজয়ী হয়েছেন। এই রেকর্ড বাংলাদেশে কারো নাই। মহান স্বাধীনতার ঘোষক এবং এই দেশের নির্বাচিত প্রথম রাষ্ট্রপতি জনগণের ভোটে নির্বাচিত সেই শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানের স্ত্রী তাকে আজ কারাগারে আবদ্ধ করে রাখা হয়েছে গত এক বছর ধরে।
৭ মার্চ বৃহস্পতিবার সন্ধায় নারায়ণগঞ্জ প্রেসক্লাব মিলনায়তনে প্রয়াত জেলা শ্রমিকদলের সাবেক সভাপতি নজরুল ইসলাম ও প্রয়াত সিদ্ধিরগঞ্জ মৎস্যজীবী দলের সভাপতি ইব্রাহীম সর্দারের স্মরণে অনুষ্ঠিত স্মরণ সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে এসব কথা বলেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য নজরুল ইসলাম খান।
স্থায়ী কমিটির এই সদস্য আরও বলেন, আমাদের দলের মহাসচিবের বিরুদ্ধে ৮০টার বেশি মামলা। বেগম খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে ৩৪টির বেশি মামলা। ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানের বিরুদ্ধে অসংখ্য মামলা। স্থায়ী কমিটির সদস্যদের বিরুদ্ধেও মামলা। হলুদ সাংবাদিকতা করে যারা লেখে নমিনেশন বিক্রি হয়েছে সেট যদি বিএনপি নেতারাও বলেন তাহলে কেমন হয়। আপনিও কি সেটা বলবেন? কর্মীদের ত্যাগ অবদান আছে। কর্মীদের ক্ষোভের মুল্যায়ন করি। অনেক তরুণ নেতা অল্প বয়সে জেল খেটেছেন। বছর বছর বাড়িতে থাকতে পারেননি।
তিনি বলেন, আমরা চাই একটা শক্তিশালী গণআন্দোলন গড়ে ওঠুক। তার মুখেই অমার নেত্রীর মুক্তি হোক। আমার মায়ের মুক্তি হোক। আজকে সিদ্ধান্ত হোক এইযে, হয় আমাদের মাকে আমরা ফিরিয়ে আনবো না হয় আমরা সবাই মায়ের কাছে চলে যাবো। এ রকম একটা সিদ্ধান্ত নিতে মিটিং এ বলেছিলাম। নিজেদের মধ্যে ঐক্য গড়ে তুলতে হবে।
এছাড়াও অনুষ্ঠানের প্রধান আলোচক হিসেবে বিএনপি চেয়ারম্যান বেগম খালেদা জিয়ার উপদেষ্টা অ্যাডভোকেট তৈমূর আলম খন্দকার বলেন, আমাদের আরও লোক মারা যাবে। এ কারনেই মারা যাবে কারন আমরা প্রতিটি মুহুর্ত টেনশনে থাকি। দরজায় কেউ নক করলে বুক কেঁপে ওঠে এই বুঝি পুলিশ ধরতে আসলো। একটা সময় ঘটনা ঘটিয়ে মামলা দেয়া হতো। এখন ঘটনা ঘঁটনাতে হয়না। এখন গায়েবী মামলা দেয়। সরকারি দলের নেতারা কল্পনা করে কাকে কাকে আসামী করবে সেই পরিকল্পনা অনুযায়ী এমপিরা বিএনপি নেতাদের লিস্ট ওসির কাছে দিবে সেটাই মামলা হবে।
তিনি আরও বলেন, এখন ম্যাজিস্ট্রেটও বলে এ মামলায় জামিন দেয়া যাবে না। ম্যাজিস্ট্রেটও মনে হয় সরকারি দলের ক্যাডারের চেয়েও বড় ক্যাডার। তারা জানে মামলাগুলো গায়েবী মামলা কিন্তু জেনে শুনেই রিমান্ডে দেয়। সে একটা দাড়িপাল্লা খুচিতে চেয়ার বসে গায়েবী মামলায় নেতাকর্মীদের রিমান্ডে দেয়। তার বুক কাপে না। তারপর জেল জজও জামিন দিবে না। তার চাকুরী রক্ষা করা দরকার। তার হাইকোর্টেও জজ হবে, তাকে বড় প্রমোশন পেতে হবে। এই পরিস্থিতিতে বিএনপিতে এগুতে হচ্ছে।
নারায়ণগঞ্জ মহানগর বিএনপির সেক্রেটারি ও স্মরণ সভা কমিটির আহ্বায়ক এটিএম কামালের সভাপতিত্বে এ স্মরণ সভায় বিশেষ অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন বিএনপির সাবেক এমপি নারায়ণগঞ্জ মহানগর বিএনপির সভাপতি অ্যাডভোকেট আবুল কালাম, কেন্দ্রীয় শ্রমিকদলের সভাপতি আনোয়ার হোসেন, সাধারণ সম্পাদক নুরুল ইসলাম নাসিম, কেন্দ্রীয় মৎস্যজীবী দলের সদস্য সচিব আব্দুর রহিম, যুগ্ম আহ্বায়ক নাদিম চৌধুরী প্রমুখ।
আরও বক্তব্য রাখেন- নারায়ণগঞ্জ জেলা বিএনপির সহ-সভাপতি জান্নাতুল ফেরদৌস, জেলা বিএনপির সাবেক যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আনোয়ার হোসেন খান, ফতুল্লা থানা বিএনপির সাবেক সভাপতি অধ্যাপক খন্দকার মনিরুল ইসলাম, বিএনপি নেতা সুলতান মাহামুদ, আইনজীবী ফোরাম নেতা অ্যাডভোকেট আবদুল হামিদ খান ভাষানী ভুইয়া, নারায়ণগঞ্জ মহানগর যুবদলের সভাপতি কাউন্সিলর মাকসুুদুল আলম খন্দকার খোরশেদ, জেলা ওলামা দলের সভাপতি মুন্সী সামসুুর রহমান খান বেনু, জেলা শ্রমিকদলের সভাপতি মন্টু মেম্বার, জেলা মহিলা দলের আহ্বায়ক নুরুন্নাহার বেগম, সিনিয়র যুগ্ম আহ্বায়ক রহিমা শরীফ মায়া, মহানগর শ্রমিকদলের আহ্বায়ক এসএম আসলাম, সদস্য সচিব আলী আজগর, মহানগর শ্রমিকদল নেতা ফারুক হোসেন, নাজির হোসেন, মনির মল্লিক, ঢাকা মহানগর মৎস্যজীবী দলের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক শাহরিয়ার খান ইমন, মহানগর স্বেচ্ছাসেবক দলের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক জিয়াউর রহমান জিয়া, জেলা মৎস্যজীবী দলের আহ্বায়ক গিয়াসউদ্দীন প্রধান, সোনারগাঁও মহিলা দলের সাংগঠনিক সম্পাদক সালমা আক্তার কাজল, আড়াইহাজার মহিলা দলের সভাপতি পারভীন আক্তার প্রমুখ।
অনুষ্ঠান পরিচালনা করেন নারায়ণগঞ্জ মহানগর বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক অ্যাডভোকেট আবু আল ইউসুফ খান টিপু। অনুষ্ঠানের শুরুতে পবিত্র কোরআন থেকে তেলোয়াত করেন মহানগর স্বেচ্ছাসেবক দল নেতা মাকিদ মোস্তাকিম শিপলু। স্মরণ সভায় আলোচনা শেষে প্রয়াত দুই নেতার রুহের আত্মার মাগফেরাত কামনা করে দেয়া মাহফিল করা হয়। স্মরণ সভায় প্রয়াত ইব্রাহীম সর্দারের ছেলে শাকিল ও প্রয়াত নজরুল ইসলামের ছেলে ফয়সাল সকলের কাছে দোয়া প্রার্থনা করেন।