সান নারায়ণগঞ্জ টুয়েন্টিফোর ডটকম:
স্বাস্থ্যবিধি মেনে গণপরিবহন ও পণ্যপরিবহন চালুসহ তিন দফা দাবীতে নারায়ণগঞ্জ জেলা প্রশাসক মোস্তাইন বিল্লাহ’র মাধ্যমে প্রধানমন্ত্রী বরাবর স্মারকলিপি প্রদান করেছে নারায়ণগঞ্জ জেলা ট্রাক, ট্যাংকলরী ও কাভার্ডভ্যান শ্রমিক ইউনিয়ন।
৪ মে মঙ্গলবার বেলা দুপুর বারোটার দিকে নারায়ণগঞ্জ জেলা প্রশাসক মোস্তাইন বিল্লাহ’র কাছে এই স্মারকলিপি দেন সংগঠটির নেতৃবৃন্দ।
স্মারকলিপি প্রদান কালে উপস্থিত ছিলেন, নারায়ণগঞ্জ জেলা ট্রাক, ট্যাংকলরী ও কাভার্ডভ্যান শ্রমিক ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক হাজ্বী বজলুর রহমান রিপন, সহ- সভাপতি মজিবুর রহমান, যুগ্ম সাধারন সম্পাদক আনোয়ার হোসেন আনু, কোষাধক্ষ্য সাইফুল ইসলাম পলাশ।
তিন দফা দাবী সমূহ হলো, স্বাস্থ্যবিধি মেনে মোট আসনের অর্ধেক যাত্রী নিয়ে গণপরিবহন ও পণ্য পরিবহন চলাচলের ব্যবস্থা করতে হবে, সড়ক পরিবহণ শ্রমিকদের আর্থিক অনুদান ও খাদ্য সহায়তা প্রদান করতে হবে। সারা দেশে বাস ও ট্রাক টার্মিনালগুলোতে পরিবহন শ্রমিকদের জন্য ১০ টাকায় ও.এম.এস এর চাউল বিক্রির ব্যবস্থা করতে হবে।
স্মরাকলিপিতে উল্লেখ্য করেন, দেশের সড়ক পরিবহন গুরুত্বপূর্ণ খাত। বাংলাদেশের প্রায় ৭৫ ভাগ যাত্রী ও ৬৫ ভাগ পণ্য সড়ক পথে সড়ক পরিবহন হয়ে থাকে। কাজেই নির্দ্বিধায় বলা যায় জাতীয় অর্থনীতিকে গতিশীল রাখতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে এই পরিবহন খাত। কোন দেশের অর্থনীতির গতি প্রবাহ, সড়ক পথে নিরাপদ ভ্রমন ও পণ্য পরিবহন এক সুত্রে গাঁথা। পরিবহন তেমনি পরিবহন ব্যবস্থা অচল হলে দেশের কৃষি, শিল্প, সেবাসহ সব খাত অচল হয়ে যেতে বাধ্য। এক কথায় জাতীয় অর্থনীতিতে মানবদেহের প্রধান ধমনীর রক্ত প্রবাহের মতোই গুরুত্বপূর্ণ হলো সড়ক পরিবহণ খাত। যদিও পরিবহণ খাত বলতে নৌ, রেল, সড়ক, বিমান সব খাতকেই বুঝায় কিন্তু বর্তমানে আমাদের বক্তব্যের প্রধান কেন্দ্রবিন্দু সড়ক পরিবহণ খাতা।
প্রতিদিন কয়েক কোটি যাত্রী ও কয়েক কোটি পণ্য পরিবহনের কাজে ৫০ লক্ষ পরিবহন শ্রমিক দিনরাত কাজ করে থাকে। করোনাকালে যেহেতু পরিবহণ শ্রমিককদের সমস্ত সময় গণমানুষের সংস্পর্শে থাকতে হয় তাই পরিবহণ শ্রমিকরা যেমন সবচেয়ে ঝুঁকিতে থাকে তেমনি যাত্রীরাও ঝুঁকিতে থাকেন। সেই বিবেচনায় গণপরিবহন বন্ধ রাখা যুক্তি সংগত তবে সাথে সাথে পরিবহন শ্রমিকদের জীবিকার নিশ্চয়তা বিধানের কথাও ভাবা দরকার। জীবচন বাঁচানোর প্রয়োজনে জীবিকা প্রয়োজন। তাই মানুষ জীবন বাঁচানোর জন্য জীবিকার অনুসন্ধানে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে সাগর, রাজপথ, অতিক্রম করে দেশ বিদেশ পাড়ি জমাচ্ছে। এটা মানুষের সহজাত ধর্ম। বর্তমানে বিশ্বব্যাপী বৈশ্বিক মহামারী মরণব্যাধী করোনা ভাইরাসে ভীত না হয়ে জীবন বাঁচানোর তাগীদে জীবিকা অর্জনের জন্য বিদেশে পাড়ি জমাচ্ছে।
বৈশ্বিক মহামারী করোনা ভাইরাসে সীমাহীনভাবে সংক্রমন ও মৃত্যুর হারবৃদ্ধি পাওয়ায় জীবন বাঁচানোর জন্য বিশ্বের বিভিন্ন দেশে লকডাউন ঘোষনা করেছে। আমাদের দেশেও মানুষের জীবন বাঁচানোর জন্য সরকার লকডাউন ঘোষনা করেছে। আমরা লকডাউন বিরোধীতা করছি না। ক থা ছিল লকডাউনের সময় মানুষের চলাচল, শ্রম ঘন শিল্প, হাট-বাজার, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, কোর্ট-কাচারী ইত্যাদি সব বন্ধ থাকবে। সেই হিসাবে গণ পরিবহন বন্ধ থাকলে পরিবহন শ্রমিকের কোন আপত্তি ছিল না। কিন্তু দেখা যাচ্ছে বিভিন্ন শিল্প প্রতিষ্ঠান, শপিং মল, বাজার, অফিস-আদালত ইত্যাদি শর্ত সাপেক্ষ্যে স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার শর্তে লকডাউন শিথিল করায় গার্মেন্টস, শপিংমল, কাঁচা বাজার, অফিস আদালত ইত্যাদি চলছে। গণপরিবহন বন্ধ থাকার কথা থাকলেও লক্ষ্য করা যাচ্ছে যে, যাত্রী সাধারণ অটোরিক্সা, কার, মাইক্রোবাস, মিনি ট্রাক, মটর সাইকেলে তিনজন যাত্রী এবং রিক্সা ভ্যাস প্রভৃতি যানবাহনে এমকি নদী পথে স্প্রীড বোট, ইঞ্জিন চালিত নৌকায় ধারণ ক্ষমতা তিন চার গুন বেশি যাত্রী অতিরিক্ত ভাড়া দিযয়ে যাতায়াত করছে।
উল্লেখিত যানবাহনে যেভাবে যাত্রী নিয়ে চলাচল করছে তা মোটেই নিরাপদ নয়। এই সকল যানবাহনে যাত্রী সাধারণ দূর-দূরান্তে চলাচলের ফলে সাধারণ মানুষের মধ্যে একদিক করোনা ভাইরাসের সংক্রমনের ঝুঁকি বাড়ছে, অন্যদিকে তাদেরকে অতিরিক্ত অর্থ ব্যয় করে এবং নানা হয়রানির স্বীকার হতে হচ্ছে। লক্ষ্য করা যাচ্ছে বাস ও ট্রাক ব্যতিত সড়ক পথে সকল যানবাহন চলছে। এর ফলে সড়ক পরিবহনের অর্ধা-হারে অনাহারে থাকা শ্রমিকদের মধ্যে তীব্র অসস্তোষ দেখা দিয়েছে।
২০২০ সালের মার্চ মাসে করোনা দুর্যোগ মোকাবেলায় সততা আর নিষ্ঠার সাথে আপনি সকল শ্রেণী-পেশার মানুষকে ঐক্যবদ্ধ হওয়ার আহ্বান জানিয়ে করোনা ভাইরাস সংক্রমণ প্রতিরোধে প্রথম দফাযয় ২৬ মার্চ, ২০২০ থেকে ৩০ জুন ২০২০ পর্যন্ত লকডাউন ঘোষনা করে ছিলেন। সারা দেশে গণপরিবহন চলাচল বন্ধ ঘোষনা করায় সড়ক পরিবহন শ্রমিকরা কর্মহীন হয়ে পড়ার সত্তে¡ও বিনা শর্তে, দেশের কল্যানে ঐক্যবদ্ধভাবে সরকারের গৃহিত সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নে সহযোগিতা করে আসছে।
৫ এপ্রিল, ২০২১ করোনা সংক্রমন প্রতিরোধে পুনঃরায় সারা দেশে গণপরিবহন বন্ধ পরিবহণ শ্রমিক পরিবার পরিজন নিয়ে মানবেতন জীবনযাপন করছে। কিন্তু পরিবার-পরিজন নিয়ে অর্ধাহারে-অনাহারে থাকার যন্ত্রনা পরিবহন শ্রমিকদের কাছে করোনা সংক্রমনের ভয়ের চেয়ে বড় হয়ে উঠেছে। উপায়হীন হয়ে অনেক পরিবহন শ্রমিককরা রাস্তায় নামার চেষ্টা করছে। যা চলাচল নিয়ন্ত্রনের মাধ্যমে করোনা সংক্রমন দুর্যোগ মোকাবিলায় প্রচেষ্ঠা কে ক্ষতিগ্রস্থ করছে।
জাতীয় পর্যায়ের দুর্যোগ মোতাবেলার অর্থনৈতিক ক্ষমতা দেশের শিল্প খাতের শ্রমিক সংগঠনের থাকতে পারে না। কাজেই দেশের অর্থনীতির অন্যতম প্রধান খাত পরিবহন শ্রমিকদের এই দুঃসময়ে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী, আপনি ও আপনার সরকারকে আমাদের পাশে দাঁড়ানোর আহ্বান জানাই। আমরা উপায়হীন হয়ে পরিবহন সেক্টরের জন্য সরকারের থেকে বরাদ্দের দাবী জানাচ্ছি। আমরা মনে করি করোনা সংক্রমনকে বিশ্বব্যাপী সমস্যার অংশ হিসাবে দেখে পরিবহন শ্রমিকদের করোনা সংক্রমন প্রতিরোধের চলমান প্রচেষ্ঠাকে সফল করার পাশাপাশি দুর্যোগ পরবর্তী অর্থনীতিকে সচল করতে আর্থিক সুরক্ষা নিশ্চিত করা জরুরী।
এমতাবস্থায় আমরা মনে করি যে, গণ পরিবহন বিশেষ করে বাস মিনি বাস ইত্যাদি স্বাস্থ্য বিধি মেনে অর্ধেক যাত্রী নিয়ে চলাচল করার সুযোগ করে দিলে ছোট ছোট যানবাহনে যাত্রী সাধারণের দূর দূরান্তে কষ্ট করে, স্বাস্থ্য ঝুঁকি এবং অতিরিক্ত অর্থ ব্যয় করে চলাচল করতে হবে না।
রজমান মাস প্রায় শেষ দিকে সামনে ঈদুল ফিতর কর্মজীবি সড়ক পরিবহনে পায় ৫০ লক্ষ শ্রমিক কর্মহীন থাকায় তাদের জীবিকা নির্বাহ অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে। পরিবার পরিজন নিয়ে তারা দুর্বিসহ জীবন যাপন করছে। এ ব্যাপারে আপনার সহযোগীতা একান্তভাবে কামনা করছি।