সান নারায়ণগঞ্জ টুয়েন্টিফোর ডটকম:
নারায়ণগঞ্জের সোনারগাঁও উপজেলা বিএনপির রাজনীতি দীর্ঘদিন যাবত দুইভাবে বিভক্ত হয়ে রাজনীতি চলে আসছে। একদিকে উপজেলা বিএনপির সভাপতি খন্দকার আবু জাফর অন্যদিকে সাধারণ সম্পাদক আজহারুল ইসলাম মান্নান। জেলা বিএনপির কমিটি গঠনের পর বেশ জোরালো আলোচনায় চলে আসে সোনারগাঁও উপজেলা বিএনপির কমিটি গঠনের বিষয়টি।
একদিকে জাফর ও মোশারফ হোসেনের নেতৃত্বে একটি বলয় অন্যদিকে মান্নানের একক নেতৃত্বে আরেকটি বলয়। যেখানে মান্নানের অনুগামীদের মাঝে সেক্রেটারি পদ নিয়ে বিভক্তি শুরু হয়। তবে এবার সেই বিরোধ আরো জটিল আকার ধারণ করেছে যখন আবু জাফর অনুগামী মোশারফ হোসেনের সঙ্গে মান্নানের সখ্যতা বেড়েছে।
পবিত্র ঈদ ফিতর ঈদের পর মোশারফ হোসেনকে নিমন্ত্রন জানিয়েছেন মান্নান। মোশারফের নেতৃত্বে বেশকজন জাফর অনুগামী নেতা মান্নানের সঙ্গে শুভেচ্ছা বিনিময় করেন। ফলে সোনারগাঁয়ে বিএনপির রাজনীতিতে নতুন মেরুকরনের সৃষ্টি হয়। এতে মান্নানের নেতৃত্বে সেক্রেটারি পদে মোশারফ হোসেনকে রেখেই সোনারগাঁয়ে বিএনপির কমিটি গঠনের চেষ্টা হতে পারে এমন আভাস পাওয়া গেল।
এক্ষেত্রে মান্নান অনুগামী সেলিম হক রুমী, আল মুজাহিদ মল্লিক, কামরুজ্জামান মাসুম ও কাজী নজরুল ইসলাম টিটুর সঙ্গে মান্নানের দূরত্ব বেড়ে যেতে পারে। উল্টো দিকে তারা মান্নান বলয় ছেড়ে আবু জাফর বলয়ে ভীড়তে পারেন নতুবা নিজেরাই একটি বলয় তৈরি করতে পারেন বলেও নেতাকর্মীরা ধারণা করছেন। কারন জেলা বিএনপির কমিটি গঠনের পর জেলা বিএনপির বেশকটি কর্মসূচিতে সোনারগাঁও বিএনপির ব্যানারে এককভাবে সেলিম হক রুমী ও কাজী নজরুল ইসলাম টিটুকে মিছিল নিয়ে যোগদান করতে দেখা গিয়েছিল।
অন্যদিকে জেলা বিএনপির সদস্য শাহআলম মুকুল, অধ্যাপক ওয়াহিদ বিন ইমতিয়াজ বকুলও রয়েছেন নীরব ভুমিকায় নিজেদের মত। তারাও যার যার অবস্থান থেকে পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করছেন। যদিও আবু জাফরের সঙ্গেই শাহআলম মুকুলের পূর্বে ঘনিষ্ঠতা দেখা গিয়েছিল।
নেতাকর্মীরা জানিয়েছেন, সোনারগাঁও উপজেলা বিএনপির সভাপতি খন্দকার আবু জাফর ও সাধারণ সম্পাদক আজহারুল ইসলাম মান্নান একসাথে সর্বশেষ কবে নাগাদ কর্মসূচি পালন করেছেন তার হিসেব নেই। গত জাতীয় নির্বাচনে মনোনয়ন পান মান্নান। ওই নির্বাচনে আবু জাফরও প্রাথমিকভাবে মনোনয়ন পান। দুজনকেই মনোনয়ন দাখিল করতে বলা হয়। কিন্তু জাফর দাখিল করেননি। তিনি মিডিয়াতে মন্তব্য করেছিলেন, যে ব্যক্তি নমিনেশন উচ্চারণ করতে জানেনা সেই ব্যক্তির ড্যামী প্রার্থী হয়ে নমিনেশন দাখিল করতে চাইনি। এ ছাড়াও আবু জাফর প্রায় সময়ই মান্নানের শিক্ষাগত যোগ্যতা নিয়ে মন্তব্য করেন।
জেলা বিএনপির কমিটি গঠনের সংবর্ধনার আয়োজন করেন মান্নান। যেখানে আবু জাফর ও তার ঘনিষ্ট মোশারফ হোসেন সহ বেশকজন উপস্থিত হননি যারা জেলা কমিটিতে পদে আছেন। ওইদিন মান্নানের বাড়িতে আয়োজিত অনুষ্ঠানে তাদের নিয়ে সমালোচনা করেন মান্নান। এমনকি মান্নানের এই অনুুষ্ঠান বন্ধ করার চেষ্টার অভিযোগও তুলেছিলেন। তারা উপস্থিত না হওয়ার কারনেই মান্নান সমালোচনা করেছিলেন।
মুলত সোনারগাঁও উপজেলা বিএনপির সেক্রেটারি পদটি ভাগিয়ে নিতে আগের কমিটির মাধ্যমেও চেষ্টা করেছিলেন মোশারফ হোসেন। বর্তমান কমিটি গঠনের পরেও তার সেই চেষ্টা অব্যাহত রয়েছে। আলোচনা ছিল জাফরকে সভাপতি পদে রেখে মোশারফ হোসেনকে সেক্রেটারি পদে রেখে চেষ্টা চলছে। অন্যদিকে মান্নানকে সভাপতি পদে রেখে তার অনুগামী যে কোনো একজনকে সেক্রেটারি করাতে। যেখানে জোরালোভাবে দাবি তুলেছিলেন সেলিন হক রুমী। কিন্তু মান্নানের সমর্থন চলে যায় শিল্পপতি আল মুজাহিদ মল্লিকের দিকে। জেলা বিএনপির কর্মসূচিতে মান্নানের পক্ষে আল মুজাহিদ মল্লিক শোডাউন দিতে থাকেন।
অন্যদিকে মান্নানের প্রতি সরে গিয়ে সেলিম হক রুমী ও কাজী নজরুল ইসলাম টিটু আলাদাভাবে জেলা বিএনপির কর্মসূচিতে যোগদান করেন। এমন পরিস্থিতিতে জাফর ও মোশারফ হোসেনের নেতৃত্বেও আলাদাভাবে জেলা বিএনপির কর্মসূচিতে শোডাউন করে নেতাকর্মীরা যোগদান করেন। ওই সময় মোশারফ হোসেনের দাবি ছিল সেক্রেটারি পদে বসাতে মান্নান নিশ্চিত করলেই মান্নানের সঙ্গে রাজনীতি করবেন মোশারফ। অবশেষে মান্নানের নিমন্ত্রণে শুভেচ্ছা বিনিময়ে যান মোশারফ। ফলে সোনারগাঁও বিএনপির কমিটি গঠন নিয়ে সোনারগাঁয়ে বিএনপির রাজনীতিতে বিস্ফোরণ ঘটতে যাচ্ছে কিনা সেটা দেখার অপেক্ষায় নেতাকর্মীরা।