৪ কিলোমিটারে শতাধিক গর্তে অচল রূপগঞ্জে মুশুরী-কাঞ্চন ব্রীজ রাস্তা!

সান নারায়ণগঞ্জ টুয়েন্টিফোর ডটকম:

নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জ উপজেলার এলজিইডি‘র অধীনের প্রায় সবকয়টি সড়কেই বেহাল চিত্র।  বর্ষা এলে কাঁদাপানি, খানাখন্দ আর গর্তের ভোগান্তি বাকিসময়ে ধুলোবালি আর ভাঙ্গাচোরা সড়কে হয়রানী।  শীতলক্ষ্যার পূর্বপাড়ের রূপসী কাঞ্চন সড়কের মেরামত কাজ চলমান থাকলেও পশ্চিমপাড়ের ডেমড়া কালীগঞ্জ সড়ক সড়কের অধীনে মুশুরী থেকে কাঞ্চন ব্রিজ পর্যন্ত ৪ কিলোমিটার সড়কে রয়েছে শতাধিক ঝুঁকিপূর্ণ গর্ত।

এদিকে কর্তৃপক্ষ স্থানীয় দায় চাপাচ্ছেন স্থানীয় বালু মহাল ও কলকারখানার পন্যবাহী ভারী যান চলাচলকে।  আর স্থানীয় বাসিন্দাদের দাবী পাথরবাহী ভারী লড়ি ও ট্রাক চলাচল করে এ সড়ককে অচল করে দিলেও নেই কোন মেরামতের উদ্যোগ।

সরেজমিন ঘুরে দেখা যায়, শীতলক্ষ্যার পশ্চিমপার দিয়ে রাজধানী ডেমরা হতে রূপগঞ্জ উপজেলার কায়েতপাড়া, রূপগঞ্জ সদর ও দাউদপুর ইউনিয়নের উপর দিয়ে গড়া গাজীপুরের কালীগঞ্জ পর্যন্ত প্রায় ২৬ কিলোমিটার দৈর্ঘ্য একটি সড়ক রয়েছে।

স্থানীয়দের উপজেলা সদর, থানা পুলিশের সেবা, একমাত্র সরকারী হাসপাতালে চিকিৎসা সেবাসহ সরকারী বেসরকারী নানাসেবা নিতে একমাত্র সড়ক এটি। অথচ সড়কটি দীর্ঘ বছর যাবৎ খানাখন্দে ও স্থানে স্থানে ধ্বসে পড়লেও সংস্কারের উদ্যোগ নেয়নি কর্তৃপক্ষ।  রাতের আঁধারে মালবাহী ভারী যান চলাচল করায় সড়কটির মুশুরী থেকে কাঞ্চন ব্রিজ পর্যন্ত ৪ কিলোমিটারে শতাধিক গর্তের সৃষ্টি হয়েছে।  এসব গর্তে সামান্য বৃষ্টি হলেই জমে থাকে পানি আর কাঁদামাটি।  তাই যানবাহন চলাচল অনুপযোগী হয়ে পড়ায় চরম ভোগান্তি পোহাচ্ছেন এখানকার বাসিন্দারা।

তাদের দাবী কোন যানবাহন এ সড়কে যেতে রাজি হয়না। আর যাওয়ার মতো উপযোগী সড়কও নয় এটি।  এতে চরম ভোগান্তিতে পড়েছেন এ পথে চলাচলরত যানবাহন ও সাধারণ লোকজন।  তাই ভোগান্তির শেষ নেই রূপগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি হতে আসা রোগীদেরও।

সরেজমিন ঘুরে দেখা যায়, গর্তের সৃষ্টি হয়েছে।  এতে এ সড়কের পাশ্ববর্তি কলকারখা ও বালু মহালের মালামাল বহনের কাজে ব্যবহৃত ভারী যান ও সাধারণ যাত্রীবাহী যান চলাচলে বিঘ্ন ঘটছে।  গাড়ীর চাকা আটকে গিয়ে ও ইঞ্জিন বিকল হয়ে সৃষ্টি করছে যানজট।  তাছাড়া স্থানে স্থানে খানাখন্দের গর্তে পানি জমে থাকায় ছোট যানবাহনের ইঞ্জিনে পানি প্রবেশ করায় ক্ষতিগ্রস্থ হচ্ছে গাড়ীর মালিকরা।  এছাড়াও উভয় রাস্তার স্থানে স্থানে রাস্তার পাড় ধ্বসে পড়ায় ফাটল ধরায় দৃশ্যও দেখা গেছে।

সূত্র জানায়, এ সড়কের পাশে ১৫টি বৃহৎ শিল্পকারখানা ও আরো ২০টি ক্ষ’দ্র কারখানাসহ ২টি বালু মহাল রয়েছে।  এছাড়াও মুড়াপাড়া ও কাঞ্চনের হাট নামে ব্যস্ততম দুটি হাটে পন্যবহন ও ক্রেতা বিক্রেতার আনোগোনায় গুরুত্বপূর্ণ এ সড়কটিতে মালবাহী ভারী যান চলাচল করে বেহাল দশায় পরিণত করেছে। ফলে দূর্ভোগ চরমে পৌঁছেছে।

সরেজমিন ঘুরে আরো জানা যায়, সম্প্রতি ডেমরা কালীগঞ্জ সড়কের কাঞ্চন ব্রিজ থেকে দাউদপুর ইউনিয়ন পরিষদ পর্যন্ত উভয় পাশে ৩ ফুট করে প্রশস্তকরণ কাজ চলছে।  কিন্তু একই সড়কের ভিংরাব এলাকার ১কিলোমিটার এলাকাজুরে এ রাস্তায় পার ধ্বসে পাশের পুকুরে ও ধানী জমিতে পড়েছে।

স্থানীয় বাসিন্দা আমিনুল হক ঝিনু ভুইয়া বলেন, সড়কগুলো মেরামত না করায় আমরা গতিহীন হয়ে পড়েছি।  বারবার সাংবাদিকরা ছবি তুলে পত্রিকায় প্রকাশ করলেও দীর্ঘদিন যাবৎ প্রশাসন কোন ব্যবস্থা নিচ্ছেন না।  অথচ এ সড়কটি এখন বন্ধ হয়ে গেলো প্রায়।  দুএকটা ভারী যান ছাড়া সাধারণ গাড়ী চলাচল কমে গেছে।

স্থানীয় সিএনজি চালক মধুখালী এলাকার বাসিন্দা জাকির হোসেন বলেন, এমনতিকেই করোনাকালে স্বাভাবিকভাবে গাড়ী চালিয়ে আয় উপার্জন করতে পারিনি।  তার উপর এ সড়কটি অচল প্রায়।  কবে কাজ শুরু হবে আর কবে ভোগান্তি দূর হবে তা জানা নেই।  ফলে আমার মতো শতাধিক গাড়ী চালক অসহায় দিন যাপন করতে বাধ্য হচ্ছি।

মুশুরী এলাকার বাসিন্দা তানভীর আহমেদ ফয়সাল বলেন, এ সড়কে ইটা, বালি ও পাথর বহন করায় এ সড়কটির স্থায়ীত্ব রক্ষা করা যাচ্ছে না।  সংস্কার করলেও ৬ মাস না যেতেই ভেঙ্গে যায় এ অঞ্চলের রাস্তাঘাট।  রূপগঞ্জ সদর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ছালাউদ্দিন বলেন, এই এলাকার রাস্তা ঘাট হালকা যান চলাচলের জন্য নির্মাণ করলেও স্থানীয় ইটভাটা মালিকদের ইছার মাথা ও ইটাবহনকারী ট্রাক চলাচল করে রাস্তা ঘাট ভেঙ্গে দেয়।  ফলে স্থায়ীভাবে বড় অংকের বরাদ্দ প্রয়োজন।

এসব বিষয়ে এলজিইডি বিভাগের রূপগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী প্রকৌশলী জামাল উদ্দিন বলেন, রূপসী-কাঞ্চন সড়কটি এশিয়ান ডেভেলবম্যান্ট সোসাইটির অর্থায়নে ৪ লেনে উন্নীতকরণের কাজ চলমান।  শীতলক্ষ্যার পশ্চিমপাড় এলাকার ডেমরা-কালীগঞ্জ সড়কের পূর্বাচল উপশহর ৪নং সেক্টর পর্যন্ত সড়কের উভয়পাশে ৩ ফুট করে প্রশস্তকরণ কাজ দ্রুত শুরু হবে।  যার দাপ্তরিক কাজ চলমান।