সান নারায়ণগঞ্জ টুয়েন্টিফোর ডটকম:
প্রয়াত বাবা মা ও বড় ভাইয়ের নামে নারায়ণগঞ্জের গুরুত্বপূর্ণ ৩টি স্থাপনার নাম করণ করায় আনন্দ আর বেদনার মিশ্রণে প্রতিটি মুহূর্ত কাটাচ্ছেন বলে জানিয়েছেন আওয়ামী লীগের প্রভাবশালী নেতা ও এমপি শামীম ওসমান।
একটি জাতীয় দৈনিকের কাছে নিজের প্রতিক্রিয়া জানাতে গিয়ে বারবারই রোমন্থন করছিলেন পরিবারের প্রয়াত ৩ সদস্যের স্মৃতি। আল্লাহর দরবারে শুকরিয়া জানানোর পাশাপাশি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কথা বলতে গিয়ে বেশ কয়েকবার আবেগাপ্লুত হয়ে পরেন আলোচিত এই নেতা।
শুক্রবার সন্ধ্যায় টেলিফোনে নেয়া এই প্রতিক্রিয়া জানাতে গিয়ে শামীম ওসমান বারবারই হয়ে পরছিলেন শব্দশূন্য।
শামীম ওসমান বলেন, আমরা যারা ৭৫পরবর্তী সময়ে রাজনীতিতে এসেছিলাম তাদের একটাই উদ্দেশ্য ছিল। সেটি হলো বঙ্গবন্ধু হত্যার বিচার। সেই থেকে বহু চড়াই উৎরাই দেখেছি, বারবার আঘাত খেয়েছি আবার ঘুরে দাঁড়িয়েছি। রাজনীতির শিক্ষা যেমন পরিবারের কাছে পেয়েছি ঠিক তেমনি রাজনীতি আর ব্যক্তি জীবনে ‘ধৈর্য’ নামের যে অর্জন, সেটির শিক্ষা দিয়েছেন মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
তিনি বলেন, বাবাকে হারিয়েছে, মাকে হারিয়েছি, এখন অভিভাবক বলতে যাকে বুঝি তিনি জাতির জনকের কন্যা। শেখ হাসিনার একজন নগণ্য কর্মী হয়ে যে স্নেহ, আদর, মমতা তার কাছে পেয়েছি এর চেয়ে বেশি কিছু চাওয়ারও ছিল না। কিন্তু তার চেয়েও হাজার হাজারগুণ বেশি দিয়েছেন তিনি।
আওয়ামী লীগের এ নেতা বলেন, দাদা ও বাবা এমপি ছিলেন। আমরা ৩ ভাই এমপি হয়েছি। তিন পুরুষ ধরে রাজনীতি করছি, মানুষ ভালোবেসে দয়া করে সেবা করার সুযোগ দিচ্ছেন। এর চেয়ে বেশি চাইবার কিছু থাকতেও পারে না।
এ সময় শামীম ওসমান আবেগাপ্লুত হয়ে বলেন, বাবাকে (প্রয়াত সামসুজ্জোহা) দেখেছি কোরবানি ঈদের আগের রাতে কোরবানির গরু বিক্রি করে কর্মীদের ঈদ করতে টাকা দিয়েছেন। বঙ্গবন্ধুর প্রতি কি অবিচল আস্থা, বিশ্বাস, ভালোবাসা দেখেছি। বঙ্গবন্ধুকে সপরিবারে হত্যার পর মাকে (প্রয়াত নাগিনা জোহা) দেখেছি খুনি মোশতাকের মন্ত্রী পরিষদে যোগ দিতে বাবাকে দেয়া প্রস্তাব ঘৃণা ভরে ফিরিয়ে দিতে। বড় ভাই নাসিম ওসমানকে দেখেছি বিয়ের ২৪ ঘণ্টা না পেরুতেই বঙ্গবন্ধু হত্যার প্রতিশোধ নিতে নববধূকে রেখে প্রতিরোধ যুদ্ধে চলে যেতে। দেশের অন্যতম ধনী পরিবারের হয়েও ৭৫ পরবর্তী সময়ে মেঝ ভাই সেলিম ওসমানকে দেখেছি ট্রাক চালিয়ে সংসার চালাতে। কিন্তু কখনও আমরা বঙ্গবন্ধুর আদর্শ থেকে বিচ্যুত হইনি, জননেত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বের প্রতি অবিচল আস্থা রেখেছি।
‘কিন্তু মাননীয় প্রধানমন্ত্রী এবার যা দিয়েছেন, যে ভালোবাসা উনি এই পরিবারের প্রতি দেখিয়েছেন …(বেশ কিছুক্ষণ নীরব ছিলেন শামীম ওসমান), এই পরিবারের ছেলে বা এলাকার এমপি হিসেবে নয়, নারায়ণগঞ্জের একজন সাধারণ বাসিন্দা হিসেবে বলতে চাই, জাতির জনকের কন্যা ৩ জন সম্মানিত মানুষকে সম্মান জানিয়ে প্রকারান্তরে নারায়ণগঞ্জবাসীকেই সম্মান দিয়েছেন। আল্লাহর দরবারে শুকরিয়া জানাই। নারায়ণগঞ্জবাসীর পক্ষ থেকে মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশের পাশাপাশি বঙ্গবন্ধু পরিবারের প্রতি দোয়া করা ছাড়া আর কিছু দেয়ার সামর্থ্যও আমার নেই।’ আবেগাপ্লুত হয়ে বলেন তিনি।
উল্লেখ্য, নারায়ণগঞ্জের ঐতিহ্যবাহী ওসমান পরিবারের ৩ প্রয়াত সদস্যের নামে শীতলক্ষ্যা সেতুসহ ২টি আঞ্চলিক মহাসড়কের নামকরণ করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার। গত ২৫ মে সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রণালয়ের একটি প্রজ্ঞাপনে এই ঘোষণা দেয়া হয়েছে।
প্রজ্ঞাপনে বলা হয়েছে, নারায়ণগঞ্জ সড়ক বিভাগের আওতাধীন মদনপুর-মদনগঞ্জ-সৈয়দপুর আঞ্চলিক মহাসড়কে নির্মাণাধীন ৩য় শীতলক্ষ্যা সেতুটির নাম ‘ বীর মুক্তিযোদ্ধা এ কে এম নাসিম ওসমান সেতু’, ঢাকা সাইনবোর্ড- নারায়ণগঞ্জ মহাসড়ক এর সাইনবোর্ড (লিংক রোড)থেকে চাষাড়া পর্যন্ত আঞ্চলিক মহাসড়কটি স্বাধীনতা পদক প্রাপ্ত(মরণোত্তর) ভাষা সৈনিক ‘ একেএম সামসুজ্জোহা সড়ক’ এবং নারায়ণগঞ্জের খানপুর থেকে হাজীগঞ্জ হয়ে সিদ্ধিরগঞ্জ ইপিজেড পর্যন্ত আঞ্চলিক মহা সড়কটি ভাষা সৈনিক ‘বেগম নাগিনা জোহা সড়ক’ নামকরণ করা হয়েছে।
সরকারের এই ঘোষণায় আনন্দের বন্যা বইছে নারায়ণগঞ্জের আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীদের মাঝে। বিশেষ করে নারায়ণগঞ্জের বিভিন্ন শ্রেণি পেশার প্রতিনিধিরা সরকারের এই সিদ্ধান্তকে স্বাগত জানিয়ে প্রধানমন্ত্রীর প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেছেন।
সূত্র; যুগান্তর