সান নারায়ণগঞ্জ টুয়েন্টিফোর ডটকম:
নারায়ণগঞ্জে ছাত্রলীগের কয়েক যুগের রাজনীতিতে যে কমিটির রাজনীতি ভবিষৎ ছাত্রলীগ নেতাদের জন্য রীতিমত মডেল হিসেবে দেখা যেতে পারে, সেটা হলো শেখ সাফায়েত আলম সানি ও মিজানুর রহমান সুজনের নেতৃত্বাধীন জেলা ছাত্রলীগের কমিটি। তারা বিদায় নেয়ার কয়েক বছর পেড়িয়ে গেলেও তাদেরকে ঝুঁলিয়ে রাখা হয়েছে কোনো সংগঠনের পদ পদবীতে স্থলাভিষিক্ত না করে। নেতাকর্মীরা ধারণা করেছিলেন, জেলা ছাত্রলীগের তাদের ওই কমিটির পরবর্তীতে যুবলীগের কমিটিতে আসতে যাচ্ছেন সানি ও সুজনের নেতৃত্বাধীন ছাত্রলীগের সাবেক নেতারা।
নারায়ণগঞ্জ জেলা যুবলীগের সভাপতি আব্দুল কাদির এখন জেলা আওয়ামীলীগের সহ-সভাপতি এবং সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট আবু হাসনাত মোহাম্মদ শহীদ বাদল এখন জেলা আওয়ামীলীগের সাধারণ সম্পাদক পদে দায়িত্ব পালন করছেন। একইভাবে জেলা যুবলীগের সিনিয়র সহ-সভাপতি জাকিরুল আলম হেলাল মহানগর আওয়ামীলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক ও জেলা যুবলীগের যুগ্ম সম্পাদক শাহনিজাম এখন মহানগর আওয়ামীলীগের যুগ্ম সম্পাদক পদে দায়িত্ব পালন করছেন।
ফলে জেলা যুবলীগের রাজনীতিতে পুরোপুরি নেতৃত্বশূন্য বলা যায়। কিন্তু তবুও সানি সুজনদের মত ছাত্রলীগের সাবেক নেতাদের ঝুঁলিয়ে রাখা হয়েছে এখানে প্র্রতিষ্ঠিত না করে। যে কমিটির নেতাদের রীতিমত পুরস্কৃত করা উচিত ছিল সেই কমিটির নেতাদের নেতৃত্বকে অবহেলা করা হচ্ছে বলে মনে করছেন ছাত্রলীগের সাবেক কর্মীরা। সান নারায়ণগঞ্জকে কর্মীরা বলছেন, তাদেরকে পদবিহীন ঝুঁলিয়ে রেখে তাদের ভবিষৎ নেতৃত্বকে হুমকির মুখে ফেলে দেয়া হচ্ছে। কারন যখন তাদের মুলদলে নেতৃত্ব দেয়ার বয়স হবে তখন যদি তাদেরকে যুবলীগে রাখা হয় সেটা রীতিমত তাদের জন্য পিছিয়ে পড়া হবে।
নেতাকর্মীরা জানিয়েছেন, ২০১৪ সালের জাতীয় নির্বাচনের আগে দেশের রাজনীতিতে ছিল কঠিন পরিস্থিতি। কারন ওই সময় মানুষের ধারণা ছিল দেশের সরকার ৫ বছর পর পর বদলায়। ওই নির্বাচনের কয়েক বছর পূর্বে গঠিত হয় জেলা ছাত্রলীগের কমিটি। যে কমিটিতে সভাপতি ছিলেন সাফায়েত আলম সানি ও সাধারণ সম্পাদক মিজানুর রহমান সুজন। ওই সময়টার পুুরোপুরি রাজপথে সক্রিয় ভুমিকায় ছিলেন সানি সুজনের নেতৃত্বাধীন জেলা ছাত্রলীগ।
কখনো হরতাল ঠেকাতে রাজপথে, কখনো অবরোধ ঠেকাতে রাজপথে, কখনোওবা শিক্ষার্থীদের পরীক্ষায় নিরাপত্তার ব্যবস্থা করা সহ নানা কর্মকান্ডে সক্রিয় ভুমিকায় ছিল ছাত্রলীগ। রাষ্ট্রীয় ও দলীয় কর্মসূচিগুলোতেও ছাত্রলীগের ব্যাপক অংশগ্রহণ ছিল চোখে পড়ার মতই। আওয়ামীলীগ ও এর অন্যান্য অঙ্গ সহযোগী সংগঠনগুলোর কর্মসূচিতেও জেলা ছাত্রলীগের ব্যাপক অংশগ্রহণ ছিল। পুরো মেয়াদে একসাথে ঐক্যবদ্ধ হয়ে রাজনীতি করেছেন সানি ও সুজন। দেশের বিভিন্ন জেলায় যখন ছাত্রলীগের অনেক নেতাদের বিরুদ্ধে নানা অভিযোগ ওঠেছিল ঠিক সেই সময় নারায়ণগঞ্জ জেলা ছাত্রলীগ ছিল বিতর্কমুক্ত।
এখানকার দলীয় রাজনীতিতে গ্রুপিংয়ের কারনে অনেক সময় বিতর্কের চেষ্টা করা হলেও সেটাতেও ব্যর্থ হয়। ওই সময়কার ছাত্রলীগের শীর্ষ অনেক নেতার রিক্সা ভাড়া না থাকায় বাসা থেকে পাঁয়ে হেটেও ছাত্রলীগের মিছিল মিটিংয়ে যোগদান করতেন। পরিবারের কাছ থেকে হাতখরচ নিয়ে রাজনীতি করতেন। তবুও তারা বিতর্কিত কর্মকান্ডে যাননি। এত্তসব ত্যাগ স্বীকারের পরেও ছাত্রলীগের ওইসব নেতারা রয়েছেন পদ-পদবীবিহীন। যাদেরকে পুরস্কৃত করা উচিত ছিল তাদেরকে রাখা হয়েছে অবহেলায়।
জানাগেছে, ওই কমিটিতে সহ-সভাপতি মিনহাজুল ইসলাম রিয়াদ, সাংগঠনিক সম্পাদক আতাউর রহমান নান্নু, সহ-সভাপতি আলী আকবর, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক শেখ রায়হান, নূরে আলম রঞ্জু, সহ-সভাপতি জাহাঙ্গীর আলম, শাহ মোহাম্মদ সোহাগ রনি, প্রচার সম্পাদক মিজানুর রহমান সজীবের মত আরো অনেক নেতা রয়েছেন যারা পদবিহীন অর্থাৎ ভাল কোনো সংগঠনের ভাল কোনো পদে নেই। যদিও এদের মধ্যে আতাউর রহমান নান্নু সম্প্রতি ফতুল্লা থানা আওয়ামীলীগের কমিটিতে সদস্য পদে নির্বাচিত হয়েছেন। ওই সময়কার আন্দোলনে যার মনমুগ্ধকর শ্লোগানে নেতাকর্মীরা বলতেন ‘শ্লোগান মাস্টার’ সেই মিজানুর রহমান সজীবকে রাজপথে আগের মত দেখা যায়না প্রত্যাবর্তন না হওয়ায়। সান নারায়ণগঞ্জকে অনেকেই বলেছেন যদিও সজীব রাজপথে তার সেই শ্লোগান শোনা না গেলেও তিনি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম সাইবার জগতে দলের পক্ষে বেশ সক্রিয়।