সান নারায়ণগঞ্জ টুয়েন্টিফোর ডটকম:
নারায়ণগঞ্জের দুটি সংসদীয় আসনের দুই সংসদ সদস্য একেএম শামীম ওসমান, সেলিম ওসমানের পরিবারের পূর্বপুরুষ, বিভিন্ন মুক্তিযোদ্ধা ও সাধারণ কবরে কবরস্থানের পাশের শ্মশান থেকে মরদেহ পোড়ানা মাটি এনে ঢেকে দেয়া হয়েছে। এছাড়া কবরের উপর দিয়ে কবরস্থানে চলাচলের রাস্তা তৈরি করেছে নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশন।
৯ আগস্ট সোমবার বাদ জোহর নারায়ণগঞ্জ সিটি কর্পোরেশনের মাসদাইর কবরস্থানে পূর্ব পুরুষদের কবর জিয়ারত করতে যান এমপি শামীম ওসমান। ওই সময় কবরগুলো এ অবস্থা দেখে শিশুদের মত কেঁদে উঠেন তিনি। শামীম ওসমান কবরস্থানে কেঁদে মুষড়ে পড়েছেন ওই খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে ছুটে যান গণমাধ্যম কর্মীরা।
সে সময় শামীম ওসমান কান্নাজড়িত কণ্ঠে গণমাধ্যম কর্মীদের বলেন, ‘আল্লাহর কসম লাগে ভাই আমার আর ধৈর্য পরীক্ষা নিয়েন না। আপনারা কি সহ্য করবেন যে আপনাদের মা-বাবা কবরে শ্মশানের মরদেহ পোড়া কয়লা মাটি দিয়ে কেউ ঢেকে দিলে আপনাদের কেমন লাগবে? ওই সময় শামীম ওসমান বলতে থাকেন আমি আমার বাবার ব্যর্থ সন্তান। বাবা-মা পূর্ব পুরুষদের কবর হেফাজত করতে সন্তান হিসাবে ব্যর্থ হয়েছি। না হলে এ দৃশ্য আমার দেখতে হত না।
এ ঘটনায় তীব্র নিন্দা ও ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, এ ঘটনা ঘটানোর মাধ্যমে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি বিনষ্টের চক্রান্ত করা হয়েছে। এ ছাড়া মুক্তিযোদ্ধাদের কবর এভাবে ঢেকে দেয়ার মাধ্যমে মুক্তিযোদ্ধাদেরও অবমাননা করা হয়েছে। ওই সময় তিনি কবরগুলো পূর্বের অবস্থায় ফিরিতে আনতে সেখানে দায়িত্বরতদের ৪৮ ঘণ্টা সময় দেন।
সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, শ্মশানের মরদেহ পোড়া মিশ্রিত মাটি দেয়া হয়েছে শামীম ওসমানের দাদা খান সাহেব এম. ওসমান আলী, দাদী জামিলা ওসমান, বাবা আবুল খায়ের মোহাম্মদ সামসুদ্দোহা, মা নাগিনা জোহা ও বড় ভাই একেএম নাসিম ওসমান, একাধিক মুক্তিযোদ্ধাসহ অনেকগুলো সাধারণ কবরে। অনেক কবরের অস্তিত্বই হারিয়ে গেছে এই পোড়া মাটিতে চাপা পড়ে। কিছু কবরের চিহ্ন রয়েছে।
শামীম ওসমান উপস্থিত সাংবাদিকদের আরও বলেন, আল্লাহর কাছে দোয়া করি আল্লাহ যেন আমাকে ও আমার পরিবারকে ধৈর্য ধরার শক্তি দেন। আমি গত ২৭ জুলাই মেয়র আইভীর মা ও আলী আহমদ চুনকা সাহেবের স্ত্রীর কবর জিয়ারত করতে এখানে আসি। তখন দেখেছিলম শ্মশানের সংস্কার কাজ চলছে এবং এখানে মাটি পড়ে আছে। তখনও আমার বাবা-মা, দাদা-দাদী ও মুক্তিযোদ্ধাদের কবর ঠিকঠাক ছিল। এখন এই জায়গা তিনফুট উচু। আজকে আমার মনে হচ্ছে আমি একজন ব্যর্থ সন্তান। আমি সিটি করপোরেশনকে দায়ী করবো না। আমি মনে করি এটা কোন মানুষের কাজ না, এটা ইবলিশের কাজ। ‘যারা এ কাজটা করেছেন বা করিয়েছেন তাদের কাছে আমার একটাই জিজ্ঞাসা, কী লাভ হল এটা করে। আমারা বাবা-মা, ভাই মারা যাওয়ার পর আমার যেমন কষ্ট হয়েছিল আজকে তার চেয়ে কোন অংশে কম কষ্ট হচ্ছে না।’
তিনি বলেন, এখানে আমার পূর্ব পুরুষের কবর। আমরা এর সংস্কার করি ঠিক করি। সবাই যার যার পরিবারেরটা করে। তাহলে কেন এই মাটিটা এত উঁচু করা হল। আমি ঠিকাদারকে জিজ্ঞেস করেছি এটা তার কার্যাদেশে ছিল কি না। সে বলেছে ছিল না। তাহলে এ কাজটা করল কে। একজন আরেকজনের দোষ দিচ্ছে।
ওই সময় শামীম ওসমান হঠাৎ নিজ গাড়িতে উঠে পড়েন। গণমাধ্যম কর্মী ও সাধারণ মানুষ তার পিছু নিলে তিনি সবাইকে থামিয়ে দিয়ে বলেন, ভাই আমাকে মন মতো কাঁদতে দিন। খুব কান্না পাচ্ছে। প্রায় ১০ মিনিট পর গাড়ি থেকে বের হয়ে শামীম ওসমান বলেন,. ‘আমি গাড়িতে একা একা বসেছিলাম। আমার নিশ্বাস নিতে কষ্ট হচ্ছে। আমি সরকারকে বলতে চাই, নারায়ণগঞ্জবাসীকে বলতে চাই, দয়া করে আমার ধৈর্যের পরীক্ষা নিবেন না। আমি জানি জনগণের সাথে আমার সম্পৃক্ততা কতটুকু। এই অমানবিক কাজের ফলেই আল্লাহ আযাব দিচ্ছেন। যারা এই কাজ করেছে কর্তৃপক্ষ তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিবেন এটাই আমার প্রত্যাশা।’
সূত্র: বাংলাদেশ প্রতিদিন