সান নারায়ণগঞ্জ টুয়েন্টিফোর ডটকম
আগামী ৩১ মার্চ অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে নারায়ণগঞ্জ জেলার তিনটি উপজেলা পরিষদ নির্বাচনের ভোট গ্রহণ। এই নির্বাচনে বিএনপি ও জাতীয়পার্টি অংশগ্রহণ করেনি। ফলে দুটি দলের কোন প্রার্থীও নেই। তিনটি উপজেলায় রয়েছে আওয়ামীলীগের বিদ্রোহী প্রার্থী। কিন্তু জেলার আড়াইহাজার ও রূপগঞ্জে ইতিমধ্যে কোণঠাসা অবস্থায় আছেন বিদ্রোহী প্রার্থী ইকবাল হোসেন মোল্লা ও তাবিবুল কাদির তমাল। যেখানে সোনারগাঁয়ে অনেকটা পুরোদমে বুক ফুলিয়েই নির্বাচনী প্রচারণায় রয়েছেন বিদ্রোহী প্রার্থী মাহফুজুর রহমান কালাম। দুটি উপজেলায় নৌকা প্রার্থীদের পক্ষে রয়েছেন স্থানীয় দুই এমপি। কিন্তু সোনারগাঁয়ে মহাজোটের এমপি রয়েছেন বিদ্রোহী প্রার্থীর পক্ষে। ফলে বেশ ভিন্নতা সৃষ্টি হয়েছে সোনারগাঁও উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে।
জানাগেছে, নারায়ণগঞ্জ জেলার রূপগঞ্জ উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে নৌকা প্রতীকে মনোনয়ন পেয়েছেন পরিষদের টানা দুইবারের নির্বাচিত চেয়ারম্যান শাহজাহান ভূঁইয়া। তিনি উপজেলা আওয়ামীলীগের সাধারণ সম্পাদক। এক সময় তার সঙ্গে বর্তমান এমপি এবং পাট ও বস্ত্র গোলাম দস্তগীর গাজীর সঙ্গে সাপে নেউলে সম্পর্ক থাকলেও সেই বিরোধ চুকিয়ে এখন তারা একজোট হয়েছেন। গত ৩০ ডিসেম্বর জাতীয় সংসদ নির্বাচনেও গাজীর মনোনয়ন ঠেকাতে ৩০ জনের বেশি মনোনয়ন ক্রয় করেছিলেন।
এখানে নৌকা প্রতীকের বিরুদ্ধে গিয়ে সাবেক ছাত্রলীগ নেতা তাবিবুল কাদির তমাল আনারস প্রতীকে নির্বাচনে প্রতিদ্বন্ধিতা করছেন। কিন্তু তিনি নির্বাচনী প্রচারণায় মাঠে নামতেই পারছেন না। প্রচারণা চালানোর মত নেতাকর্মীও তিনি পাচ্ছেন না। ফলে বেশ বেকায়দায় পরে গত ২৩ মার্চ নারায়ণগঞ্জ প্রেস ক্লাবে এসে সাংবাদিক সম্মেলন করে মন্ত্রী গাজীর বিরুদ্ধে প্রচারণায় বাধা ও প্রভাব বিস্তারের অভিযোগ তুলেন তমাল। তারপর তিনি নারায়ণগঞ্জ প্রেস ক্লাবে পাল্টা সংবাদ সম্মেলন করে শাহজাহান ভূঁইয়া বলেছেন, প্রতিদ্বন্ধি প্রার্থীর প্রতিটি কেন্দ্রে ও বুথে এজেন্ট দেয়ার সামর্থ্য আছে কিনা সন্দেহ হয়।
এদিকে আড়াইহাজার উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে নৌকা প্রতীক পেয়েছেন মুজাহিদুর রহমান হেলো সরকার। তিনি উপজেলা পরিষদের সাবেক ভাইস চেয়ারম্যান। এখানে টানা দুইবার চেয়ারম্যান হিসেবে দায়িত্ব পালন করে আসছেন উপজেলা আওয়ামীলীগের সভাপতি শাহজালাল মিয়া। তিনি বিদ্রোহী প্রার্থী হিসেবে মনোনয়ন দাখিল করলেও পরবর্তীতে তিনি কেন্দ্রীয় চাপে তার মনোনয়ন পত্র প্রত্যাহার করে নেন। এখানে মনোনয়ন চেয়েছিলেন শাহজালাল মিয়া ও উপজেলা আওয়ামীলীগের সেক্রেটারি অ্যাডভোকেট আবদুর রশিদ ভূঁইয়াও। তবে নৌকা প্রতীকের বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়ে আনারস প্রতীকে নির্বাচনে দাড়িয়েছেন উপজেলা যুবলীগের সহ-সভাপতি ইকবাল হোসেন মোল্লা। তিনি স্থানীয় এমপি নজরুল ইসলাম বাবুর ভাগিনা। এখানে বিনা প্রতিদ্বন্ধিতায় দুই ভাইস চেয়ারম্যান নির্বাচিত হয়েছেন। আড়াইহাজারে নির্বাচনী কোন আমেজই নেই। আনারস প্রতীকে নির্বাচনে বিদ্রোহী প্রার্থী ইকবাল হোসেন মোল্লা নির্বাচনী প্রচারণায়ই চালাতে পারছেন না। নৌকা প্রতীকের প্রার্থীও তেমন একটা প্রচারণায় নেই। নির্বাচনের আগেই মনে হচ্ছে এখানে নৌকার বিজয় নিশ্চিত।
অন্যদিকে ভিন্ন চিত্র নারায়ণগঞ্জ জেলার সোনারগাঁও উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে। এখানে নৌকা প্রতীক পেয়েছেন পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান মোশারফ হোসেন। তিনি আওয়ামীলীগের সাবেক এমপি আব্দুল্লাহ আল কায়সার হাসনাতের আপন চাচা। চাচা ভাতিজা এবার একজোট হয়ে নৌকার পক্ষে মাঠে নেমেছেন। তবে এখানে বিদ্রোহী প্রার্থী হিসেবে ঘোড়া প্রতীকে মাঠে রয়েছেন উপজেলা আওয়ামীলীগের ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক মাহফুজুর রহমান কালাম।
আরও জানাগেছে, গত ৩০ ডিসেম্বর একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে নারায়ণগঞ্জ-৩(সোনারগাঁও) আসনে আওয়ামীলীগের নেতৃত্বাধীন মহাজোটের শরীক দল জাতীয়পার্টি থেকে লাঙ্গল প্রতীকে মনোনয়ন পান বর্তমান এমপি লিয়াকত হোসেন খোকা। ওই নির্বাচনে এখানে নৌকা প্রতীকে মনোনয়ন চেয়েছিলেন আওয়ামীলীগের সাবেক এমপি আব্দুল্লাহ আল কায়সার হাসনাত, উপজেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান মোশারফ হোসেন ও উপজেলা আওয়ামীলীগের ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক মাহফুজুর রহমান কালাম সহ অন্তত ১৫ জন। কিন্তু এখানে মহাজোটের প্রার্থী দেয় আওয়ামীলীগ।
ওই নির্বাচনে আওয়ামীলীগের সঙ্গে বিদ্রোহী করে স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়েছিলেন আব্দুল্লাহ আল কায়সার হাসনাত ও মোশারফ হোসেন। নির্বাচনে মনোনয়ন পত্র বাছাইয়ে বাদ পড়ে যান মোশারফ হোসেন। নির্বাচনে সিংহ প্রতীকে লড়াইয়ে নামেন কায়সার হাসনাত। ওই নির্বাচনে মহাজোটের প্রার্থীর পক্ষে কাজ করেছিলেন মাহফুজুর রহমান কালাম। কায়সার হাসনাতের পক্ষে কাজ করেছিলেন মোশারফ হোসেন।
ওই নির্বাচনের মাত্র ৭২ ঘন্টা পূর্বে কায়সার হাসনাতের বাসায় পুলিশ হানা দেয়। বেশকজন নেতাকর্মীকে আটকও করেছিল পুলিশ। নির্বাচন আচরণবিধি লঙ্ঘনের অভিযোগে সেখানে পুলিশ হানা দেয়। সেদিন রাতেই নির্বাচন থেকে সরে দাড়ান কায়সার হাসনাত। তারপর থেকে কায়সার হাসনাতের হুদিস পাওয়া যায়নি সোনারগাঁয়ে। আগামী ৩১ মার্চ সোনারগাঁও উপজেলা পরিষদের নির্বাচনের ভোট গ্রহণ অনুষ্ঠিত হবে। এই নির্বাচনে বিদ্রোহী প্রার্থী হয়ে স্বতন্ত্র ঘোড়া প্রতীকে নির্বাচনে লড়াই করছেন মাহফুজুর রহমান কালাম। তার পক্ষে কাজ করছেন স্থানীয় এমপি লিয়াকত হোসেন খোকা সহ উপজেলার সাতজন ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান, পৌরসভার মেয়র ও আরও ৯০ জন জনপ্রতিনিধি।