সান নারায়ণগঞ্জ টুয়েন্টিফোর ডটকম:
বিএনপির কেন্দ্রীয় সহ-আন্তর্জাতিক বিষয়ক সম্পাদক নজরুল ইসলাম আজাদের পিতা মোস্তাফিজুর রহমানের মৃত্যুর দিন হাসপাতালে লাশ দেখতে গিয়েও বিএনপি নেতাকর্মীদের হাসিমুখে ফটোসেশনের ছবি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রকাশিত হলে ব্যাপক সমালোচনার সৃষ্টি হয়। এবার সেই প্রয়াত ব্যক্তির কুলখানীর অনুষ্ঠানে এসেছিলেন দলটির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। তার আগমনে নেতাকর্মীদের সেলফি সমাহার ছিল চোখে পড়ার মত। বারবার বাধা দিয়েও নেতাকর্মীদের সেলফি তোলা থেকে বিরত রাখতে পারেনি শীর্ষ নেতারা।
ঘটনা সূত্রে জানাগেছে, ১ অক্টোবর শুক্রবার দুপুরে আড়াইহাজার উপজেলার পাচরুখী এলাকায় বিএনপি নেতা নজরুল ইসলাম আজাদের নিজ বাসভবনে তার পিতার কুলখানী উপলক্ষ্যে দোয়ার আয়োজন করা হয়।
এসময়ে প্রয়াত মোস্তাফিজুর রহমানের বিদেহী আত্মার মাগফেরাত ও বিএনপি’র চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়া এবং ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের সু-স্বাস্থ্য ও দীর্ঘায়ু কামনা করে দোয়া পরিচালনা করা হয়। কুলখানীতে প্রায় বিশ হাজার মানুষের মধ্যাহ্নভোজের আয়োজন করা হয় বলে জানানো হয়। রীতিমত সেটা তখন শোকের ছায়া দেখা যায়নি। আজাদের বাড়িতে রাজনৈতিক অবস্থানে পরিনত হয়।
দোয়ায় এসেছিলেন বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, স্থানীয় কমিটির সদস্য ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকু, চেয়ারপার্সনের উপদেষ্টা আমান উল্লাহ আমান, যুগ্ম মহাসচিব মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল, সাংগঠনিক সম্পাদক রুহুল কুদ্দুস তালুকদার দুলু, শামা ওবায়েদ, সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক অ্যাডভোকেট আব্দুস সালাম আজাদ, শহীদুল ইসলাম বাবুল, সহ- ধর্ম বিষয়ক সম্পাদক এটিএম আব্দুল বারী ডেনি, সহ- প্রচার সম্পাদক আমীরুল ইসলাম খান আলীম, সদস্য জিয়া উদ্দিন জিয়া, আব্দুল মতিন, যুবদল কেন্দ্রীয় কমিটির সভাপতি সাইফুল ইসলাম নিরব, সিনিয়র সহ-সভাপতি মোক্তাদির করিম বাদরু, সাধারণ সম্পাদক সুলতান সালাউদ্দিন টুকু, যুগ্ম নুরুল ইসলাম নয়ন, সাংগঠনিক সম্পাদক মামুন হাসান, স্বেচ্ছাসেবক দল কেন্দ্রীয় কমিটির সাধারণ সম্পাদক আব্দুল কাদের ভূঁইয়া জুয়েল, তিতুমীর কলেজ ছাত্রদলের সাবেক সভাপতি ইসমাইল খান শাহিনুর, কেন্দ্রীয় ছাত্রদলের সাবেক যুগ্ম সম্পাদক গোলাম মোস্তফা, সাংগঠনিক সম্পাদক ইসহাক সরকার, নারায়ণগঞ্জ জেলা বিএনপির সদস্য সচিব অধ্যাপক মামুন মাহমুদ, যুগ্ম আহ্বায়ক লুৎফর রহমান আব্দু, জাহিদ হাসান রোজেল সহ অনেক নেতাকর্মীরা।
বিএনপির কেন্দ্রীয় নেতা মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর সহ কেন্দ্রীয় শীর্ষ নেতাদের সঙ্গে মোবাইল ফোনে সেলফি তুলতেও হুমরি খেয়ে পড়েন বিএনপি নেতাকর্মীরা। তখন শীর্ষ কজন নেতা বারবার বাধা দিয়েও তাদের সেলফি তোলা বন্ধ করতে পারেনি। মির্জা ফখরুল ইসলাম সহ অন্যান্য নেতাদের আগমনে সেখানে ফটোসেশন আরও সেলফিতেই যেনো বিয়ে বাড়ির অনুষ্ঠানে পরিনত হয়ে যায়। শোকের কোনো ছায়াও দেখা যায়নি কারো চোখে মুখে। বিএনপি ও এর অঙ্গ সংগঠনের কেন্দ্রীয় শীর্ষ নেতাদের সঙ্গেও নারায়ণগঞ্জের নেতাকর্মীদের দফায় দফায় সেলফি তোলার প্রতিযোগীতা শুরু হয়।
ঘটনা সূত্রে জানাগেছে, গত ২১ সেপ্টেম্বর কেন্দ্রীয় বিএনপির সহ-আন্তর্জাতিক বিষয়ক সম্পাদক নজরুল ইসলাম আজাদের পিতা মুস্তাফিজুর রহমান মৃত্যুবরণ করেন। ওইদিন বিকেলে ঢাকার ইউনাইটেড হসপিটালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তিনি মৃত্যুবরণ করেন (ইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্নাইলাইহের রাজেউন)।
ওইদিন ওই হাসপাতালে মুস্তাফিজুর রহমানের লাশ দেখতে চান জেলা বিএনপির আহ্বায়ক অ্যাডভোকেট তৈমূর আলম খন্দকার সহ জেলা বিএনপি ও এর অঙ্গ সহযোগী সংগঠনের শত শত নেতাকর্মী। মুলত যেসব নেতাকর্মীরা আজাদের তল্পিবাহক হিসেবে বিএনপি ও এর অঙ্গ সহযোগী সংগঠনের পদ পদবী কিংবা কমিটি ভাগিয়ে নিতে চান তারাই সেখানে দৌড়ে গিয়েছেন। এর বাহিরেও অনেকে গিয়েছেন যারা শোক প্রকাশ করার লক্ষ্যে। কিন্তু সেখানে বিএনপির বেশকজন নেতাকর্মী তৈমূর আলম খন্দকারের সঙ্গে ফটোসেশন করেছেন। ওই ফটোসেশনের ছবিও তারা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রকাশ করেছেন। এ নিয়ে নেতাকর্মীদের মাঝে তুমুল সমালোচনার সৃষ্টি হয়েছে। কারন ওই ছবিতে দেখা যায় নেতাকর্মীরা হাস্যোজ্জল। তাদের ফটোসেশন দেখে মনে হয়েছে তারা কোনো বিয়ের অনুষ্ঠানে গিয়েছেন।
ফেসবুকে প্রকাশিত ওই বেশকটি ছবিতে দেখা যায় তৈমূর আলম খন্দকারের সঙ্গে জেলা বিএনপির সদস্য রুহুল আমিন সিকদার, জেলা যুবদলের সহ-সাধারণ সম্পাদক সেলিম হোসেন দিপু, সোনারগাঁও উপজেলা যুবদলের সদস্য সচিব আশরাফ ভুঁইয়া, যুগ্ম আহ্বায়ক আশরাফ প্রধান সহ বেশকজন। যারা বেশ হাসিমুখে ফটোসেশন করেছেন। এমন ছবি ফেসবুকে তারাই প্রচার করলে নেতাকর্মীদের মাঝে তুমুল সমালোচনার সৃষ্টি হয়।
অন্যদিকে নারায়ণগঞ্জে বিএনপির রাজনীতি অনেক আগেই রাজপথবিমুখ। রাজপথের আন্দোলন ছেড়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে একেকজন নেতাকর্মীদের গরম গরম বাক্য দেখা যায়। কেন্দ্র থেকে কর্মসূচি দিলেও সেটা মিডিয়া কর্মীদের সামনে নামেমাত্র ফটোসেশন করেই সমাপ্তি টানা হয়। হরতাল অবরোধ কর্মসূচিতেও এখানে বৃক্ষবাগানে বনজঙ্গলে কিংবা আড়ালে আবডালে বিলের জমিতেও ফটোসেশনের নজির রেখেছেন বিএনপি নেতাকর্মীরা। হরতাল অবরোধে ফটোসেশনই তাদের কর্মসূচি। এমনটা চলে আসছে সেই ২০১৪ সালের জাতীয় নির্বাচনের আগে পরে থেকেই। বর্তমানে সেই পরিস্থিতি আরো প্রকট হয়েছে।
এখন বিএনপি ও এর অঙ্গ সহযোগী সংগঠনের কোনো কমিটিই সম্মেলনের মাধ্যমে হয়না। পকেট কমিটিই ভরসা। বড়জোর কমিটির কাগজ হাতে নিয়ে ফটোসেশন। কমিটি পাওয়ার আগে কেন্দ্র ঘোষিত কর্মসূচিতেও ফটোসেশন। কমিটি পাওয়ার পর সেই রাস্তা ছেড়ে কারো অফিস কিংবা চেম্বারে ফটোসেশন। পুরোপুরি যখন ফটোসেশন নির্ভর বিএনপির রাজনীতি, তখন লাশ দেখতে গিয়েও হাসিমুখে ফটোশেসনের নজির রাখলেন বিএনপির নেতাকর্মীরা।