সান নারায়ণগঞ্জ টুয়েন্টিফোর ডটকম:
নারায়ণগঞ্জ সদর উপজেলার আলীরটেক ইউনিয়ন পরিষদের গত নির্বাচনেও চেয়ারম্যান পদে শক্ত প্রার্থী ছিলেন ব্যবসায়ী ও আওয়ামীলীগ নেতা মোঃ সায়েম আহমেদ। ওই নির্বাচনের অনেক আগেই নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়ান এবারের নির্বাচনে নৌকা প্রতীকের প্রার্থী সাবেক চেয়ারম্যান জাকির হোসেন। গত নির্বাচনে নৌকা প্রতীক নিয়ে বিনা ভোটে চেয়ারম্যান নির্বাচিত হোন বর্তমান চেয়ারম্যান মতিউর রহমান মতি।
জেলার প্রভাবশালী ব্যক্তিদের দিয়ে অনুরোধ করিয়ে সায়েম আহমেদকে নির্বাচন থেকে সরিয়ে নেয় মতিউর রহমান। ওই সময় মতিউর রহমান বর্তমানের চেয়ারম্যান প্রার্থী সায়েম আহমেদকে কথা দিয়েছিলেন এবারের নির্বাচনে তিনি সায়েম আহমেদকে সমর্থন দিবেন। কিন্তু সেটা তিনি এবার করেননি। উল্টো নির্বাচনে নৌকার দৌড়ে এসে নৌকা প্রতীক পেয়ে নির্বাচনে টিকতে পারেননি।
গত নির্বাচনে যেমন আলীরটেক ইউনিয়নবাসীর ভোটের অধিকার কেড়ে নিয়ে প্রভাবশালীদের দিয়ে সায়েম আহমেদকে বসিয়ে বিনা ভোটে চেয়ারম্যান হয়েছিলেন মতিউর রহমান মতি, ঠিক একইভাবে এবার আলীরটেক ইউনিয়নবাসীর ভোটের অধিকার কেড়ে নিয়ে বিনা ভোটে চেয়ারম্যান হওয়ার চেষ্টা করছেন জাকির হোসেন। জেলার প্রভাবশালী ব্যক্তিদের দিয়ে চাপ সৃষ্টি করে সায়েম আহমেদকে নির্বাচন থেকে সরিয়ে নিয়ে জাকির হোসেন বিনা ভোটে চেয়ারম্যান হতে জোর চেষ্টা চালাচ্ছেন।
কিন্তু এবার সায়েম আহমেদ নাছোরবান্ধা, তিনি নির্বাচন থেকে কোনোক্রমেই সরবেন না। তিনি দৃঢ় চিত্তে বলেছেন, ‘আমি জাতির জনক বঙ্গবন্ধুর আদর্শের সৈনিক, কারো রক্তচক্ষুকে ভয় পাইনা, নির্বাচনের ফলাফল ঘোষণা পর্যন্ত নির্বাচনের মাঠে থাকবো ইনশাহআল্লাহ। এবার আলীরটেক ইউনিয়নবাসীর ভোটের অধিকারের প্রতিফলন ঘটাবোই। আলীরটেকবাসীর ভোটের অধিকার নিয়েই নির্বাচনী মাঠে থাকবো।’
নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার আলীরটেক ইউনিয়নে নৌকা প্রতীক চেয়ে আওয়ামীলীগের কাছে আবেদন করেছিলেন বর্তমান চেয়ারম্যান মতিউর রহমান মতি, সাবেক চেয়ারম্যান জাকির হোসেন ও শক্ত প্রার্থী মোঃ সায়েম আহমেদ। নির্বাচনে মতি্উর রহমানকে নৌকা প্রতীকে মনোনিত করে আওয়ামীলীগ। নৌকা প্রতীক পেলেও মতিউর রহমান লোকজনদের ডেকেও তার কাছে আনতে পারেনি। নৌকা প্রতীক পাওয়ার পর এলাকায় হাতে গোনা ১০/১২জন লোকজন নিয়ে ঘুরেছেন একদিন।
এরপর আলীরটেক ইউনিয়নবাসীর চাপে ও অনুরোধে নির্বাচনে লড়াই করার ঘোষণা দেন সায়েম আহমেদ। এলাকায় মতির লোকজন প্রচার করতে থাকে সায়েম মনোনয়নপত্রই কিনতে পারবে না, সায়েম মনোনয়নপত্র সংগহের পর মতির লোকজন এলাকায় আবার প্রচার করতে থাকে যে, সায়েম মনোনয়নপত্র দাখিল করতে পারবে না। সায়েম মনোনয়নপত্র দাখিলও করেছেন। সায়েম আহমেদের কাছে মতির নিশ্চিত পরাজয় অনুধাবন করতে পেরে জেলার প্রভাবশালীরা মতিকে বসিয়ে জাকির হোসেনের হাতে নৌকা প্রতীক তুলে দেয়ার ব্যবস্থা করে দেন।
সায়েম আহমেদের জনপ্রিয়তার কাছে যখন নৌকা পেযেও ভোটের আগেই মতির পতন ঘটেছে তখন পরবর্তীতে পাওয়া নৌকার প্রার্থী জাকির হোসেনও ভীতু হযে ওঠেছেন। এখন জাকির হোসেন আলীরটেক ইউনিয়নের ভোটারদের প্রতি আস্থা রাখতে পারছেন না। জেলার প্রভাবশালীদের দিয়ে সায়েমকে নির্বাচন থেকে সরানোর জোর চেষ্টা করছেন জাকির। এলাকায় প্রচার করা হচ্ছে সায়েম আহমেদের মনোনয়নপত্র বাতিলের ব্যবস্থা করেছেন জাকির হোসেন। আবার এলাকায় কেউ কেউ প্রচার করছেন সায়েমকে জোর করে মনোনয়নপত্র প্রত্যাহার করানো হবে।
এলাকাবাসী বলছেন- জাকির হোসেনের লোকজন এলাকায় প্রচার করছেন যে, জেলার প্রভাবশালী ব্যক্তিদের দ্বারে দ্বারে যাচ্ছেন জাকির হোসেন। প্রভাবশালীদের দিয়ে সায়েম আহমেদকে বসিয়ে দিয়ে জাকির হোসেন বিনা ভোটে চেয়ারম্যান নির্বাচিত হবেন। ফলে মতির মতই জাকির হোসেনও আলীরটেক ইউনিয়নবাসীর ভোটের অধিকার হরণ করার চেষ্টা করছেন। কিন্তু সায়েম আহমেদের লোকজন বলছেন- আলীরটেক ইউনিয়নবাসী এখন সায়েমের দিকে তাকিয়ে আছেন। সায়েম আহমেদ নির্বাচনে তার মার্কা নিয়ে আলীরটেক ইউনিয়নবাসীর মাঝে নির্বাচনে ভোটের অধিকার নিয়ে ফিরে আসবেন। জনগণ ভোট দিয়ে তাদের পছন্দের প্রার্থীকে চেয়ারম্যান নির্বাচিত করবেন।
আলীরটেকবাসী আরও দাবি- সায়েম আহমেদ আলীরটেকবাসীর ভোটের অধিকার রক্ষায় আন্দোলন করে আসছেন, আর জাকির হোসেন আলীরটেকবাসীর ভোটের অধিকার ছিনিয়ে নিয়ে জোর করে বিনা ভোটে চেয়ারম্যান নির্বাচিত হতে চান। যেভাবে গত নির্বাচনে মতিউর রহমান মতি আলীরটেকবাসীর ভোটের অধিকার কেড়ে নিয়ে বিনা ভোটে চেয়ারম্যান হয়েছিলেন। এতে প্রমাণিত হয় মতি ও জাকিরের মধ্যে কোনো প্রার্থনা নাই। তারা জনগণের উপর আস্থা রাখতে পারে না। তারা ক্ষমতা ব্যবহার করে জোর করে জনগণের ভোটের অধিকার কেড়ে নিয়ে বিনা ভোটে চেয়ারম্যান হতে চান।
স্থানীয়রা আরো জানান- গত বছর আলীরটেক ইউনিয়নে নারায়ণগঞ্জ-৫ আসনের এমপি একেএম সেলিম ওসমান এক মতবিনিময় সভায় বর্তমান চেয়ারম্যান মতিউর রহমান মতিকে আবারো সমর্থন ঘোষণা করেন। সেলিম ওসমানের ওই ঘোষণার পর মতি ও তার লোকজন এলাকায় প্রচার করতে থাকেন এবারের নির্বাচনেও মতি বিনা ভোটে চেয়ারম্যান নির্বাচিত হয়ে যাচ্ছেন। এমন প্রচারণার পর আলীরটেক ইউনিয়নের হাজার হাজার মানুষ চেয়ারম্যান প্রার্থী সায়েম আহমেদের আহ্বানে নির্বাচন ও সুষ্ঠু ভোটের দাবিতে আন্দোলনে নামেন।
একইভাবে তারপর থেকে আলীরটেকের সাধারণ মানুষ, গণ্যমাণ্য ব্যক্তিবর্গ ও স্থানীয় আওয়ামীলীগের নেতাকর্মীরা সায়েম আহমেদকে চেয়ারম্যান পদে দেখতে চেয়ে পুরোদমে তার প্রচারণায় মাঠে নামেন। কিন্তু ওই সময় আলীরটেকবাসীর পাশে দাঁড়ানো তো দুরের কথা জাকির হোসেন চেয়ারম্যান নির্বাচন করবেন এমন কথাটা বলারও সাহস দেখাননি। কিন্তু সায়েম আহমেদ নিজের ঝুঁকি নিয়ে নির্বাচন ও সুষ্ঠু ভোটের দাবিতে ইউনিয়নবাসীকে নিয়ে আন্দোলন করেছেন। এখনও তিনি ইউনিয়নবাসীর ভোটের অধিকার রক্ষায় নির্বাচনী মাঠে রয়েছেন।