সান নারায়ণগঞ্জ টুয়েন্টিফোর ডটকম:
নারায়ণগঞ্জের আড়াইহাজার উপজেলা বিএনপির বলয়ভিত্তিক রাজনীতিতে চলছে ভাঙ্গা গড়ার খেলা। এক সময় প্রয়াত বিএনপি নেতা এএম বদরুজ্জামান খান খসরু ও তার ভাই (আওয়ামীলীগ থেকে আসা) সংস্কারবাদী নেতা সাবেক এমপি এম আতাউর রহমান আঙ্গুরের মাঝে ছিল বলয়ভিত্তিক রাজনীতির লড়াই। দুই ভাইয়ের দুটি গ্রুপ হয়ে এখানে বিএনপির রাজনীতিতে। একদিকে খসরুর মৃত্যুর পর এ বলয় ভেঙ্গে তছনছ হয়ে যায়, সেই ভাঙ্গাচুড়া বলয়কে জোড়া লাগাতে গিয়ে ভেঙ্গে ভেঙ্গে কাচের গুড়ির মত গুড়ো করেছেন খসরুর ছেলে বিএনপি নেতা মাহমুদুর রহমান সুমন। অন্যদিকে আঙ্গুরের নিস্ক্রিয়তা সেই বলয়ের কর্তৃত্ব এখন বিএনপি নেতা নজরুল ইসলাম আজাদের হাতে। কিন্তু বিএনপির এই দুই নেতা তাদের কর্মীদের নিয়ন্ত্রণ করতে পারছেন না। ক্ষণে ক্ষণে বলয় পরিবর্তন করে বারবার পল্টি খাচ্ছেন। কেউ কেউ পল্টির উপর পল্টি দিয়েছেন।
তবে বিএনপির এসব নেতারা এপাড় ওপারের নেতা পরিবর্তন করলেও হাতে গোনা কয়েকজন বাদে বাকিরা রয়েছেন বিএনপির রাজনীতিতেই। যদিও এখানে দলের চেয়ে আজাদ ভাই, সুমন ভাইয়ের রাজনীতিটাই বড় হয়ে দেখা দিয়েছে। দলীয় কর্মসূচি কিংবা নেত্রীর মুক্তির আন্দোলন কর্মসূচি পালনের চেয়ে এখানকার নেতাকর্মীরা তাদের বড় ভাইদের চারপাশে ঘুরঘুরে করে নিজের পদ ঠিক রাখায় মহাপন্ডিত। এখানকার রাজনীতিতে ভাইদের কর্মী বাড়াতে গিয়ে বিএনপির বারোটা বাজিয়ে ছাড়ছেন আজাদ ও সুমন। একজন মনে করছেন জিয়া পরিবারের সঙ্গে তার সুসম্পর্ক, তাই তিনিই সর্বেসবা, আরেকজন মনে করছেন দল যার পিতার রেখে যাওয়া পৌত্রিক সম্পত্তি। এমন অভিযোগ মাঠ পর্যায়ের কর্মীদের অহরহ।
সম্প্রতি আলোচনায় জেলা যুবদলের সিনিয়র সহ-সভাপতি সালাউদ্দীন চৌধুরী সালামত। ৫ নভেম্বর শুক্রবার তিনি মাহমুদুর রহমান সুমনের বলয় ত্যাগ করে গা ভাসিয়েছেন আজাদ বলয়ে। যা নিয়ে আড়াইহাজারের নেতাকর্মীদের মাঝে বেশ আলোচনার সৃষ্টি হয়েছে। এর কারন হিসেবে স্থানীয় কর্মীরা জানান- সুমন তার কারখানার কর্মচারী জহিরুল ইসলামকে উপজেলা যুবদলের আহ্বায়ক বানানোর চেষ্টাটি মেনে নিতে পারেনি সালামত। যে কারনে সালামত পল্টি দিয়ে আজাদ বলয়ে গিয়েছেন। তবে সালামতকে জেলা কমিটিতে অন্তর্ভূক্ত করার পেছনে সুমনের ভুমিকা রয়েছে।
উপজেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক হাবিবুর রহমান হাবু বারবার পল্টি দিয়েছেন। গত জাতীয় সংসদ নির্বাচনের সময় আজাদের বিরুদ্ধে থানায় জিডিও করেছিলেন। যার কয়েকদিন পরেই আবার আজাদের সঙ্গে দেখা যায়। এর আগে তিনি সুমন বলয়েই ছিলেন। এবার নতুন করে আজাদকে পল্টি দিয়ে সুমন বলয়ে ভীড়েছেন। জেলা বিএনপির আহ্বায়ক কমিটি গঠনের শুরুতে থানা বিএনপির সাবেক সাধারণ সম্পাদক ইউসুফ ভুঁইয়াকে সুমন বলয়ে দেখা গেছে। কিন্তু হাবু যখন সুমন বলয়ে ইউসুফ তখন আজাদ বলয়ে। এর আগে হাবু যখন আজাদ বলয়ে তখন হাবুকে সাধারণ সম্পাদক না মেনে আবুল কাসেম ফকিরকে সাধারণ সম্পাদক দাবি করতেন সুমন। এখন আবার সুমনের কাছে হাবুই সাধারণ সম্পাদক। যেখানে নিজেই আড়াইহাজার বিএনপির ভারপ্রাপ্ত সভাপতি পরিচয় দেন। কিন্তু এ পদে সিনিয়র সহ-সভাপতি হিসেবে মীরজুল হাসান নয়ন মোল্লা দায়িত্বে থাকার কথা। সুমনের অপরাজনীতির কারনে নয়ন মোল্লা এখন রাজনীতিতেই নাই।
জেলা যুবদল নেতা শব্দর আলী ও জাকির হোসেন মেম্বারও ছিলেন সুমন বলয়ে। গত জাতীয় নির্বাচনে ধানের শীষের প্রার্থী আজাদের পক্ষে কাজ করায় সুমন বলয় থেকে তাদেরকে ছিটকে দেয়া হয়। তাদেরকে বাদ দিয়ে অপরিচিত খোরশেদ আলম ও সুমনের কারখানার কর্মচারীর হাতে উপজেলা যুবদলের নেতৃত্ব তুলে দেয়ার চেষ্টা করেন সুমন। রাজনীতির মাঠে কিংবা রাজপথে সক্রিয় থাকার চেয়ে কমিটি ও কর্মী নিয়ন্ত্রনের চেষ্টায় সুমন। যেখানে আজাদ রাজপথে সক্রিয় থাকলেও তিনিও কমিটি ও কমিটির পদবীতে তার তল্পিবাহক কর্মীদের বসিয়ে দিচ্ছেন। উপজেলা স্বেচ্ছাসেবক দল, ছাত্রদল ও যুবদলের সিংহভাগের নিয়ন্ত্রক এখন আজাদ। তাদের এমন ধাক্কাধাক্কিতে দুই বলয়েই রাজনীতি করে আসা কেন্দ্রীয় মহিলা দলের সাংগঠনিক সম্পাদক পারভীন আক্তার ও তার স্বামী বিএনপি নেতা আনোয়ার হোসেন অনু নিজেরাই আলাদা বলয় তৈরি করেছেন। যদিও সেই বলয়ে কর্মীর সংখ্যা নেহাত বেশি নয়। তাদের নিজেদের মাঝে এত্ত লড়াই যুদ্ধ থাকলেও ২০০৮ সালে আওয়ামীলীগ সরকার ক্ষমতায় আসার পর আড়াইহাজার উপজেলায় বিএনপির দুটি কার্যালয় থাকলেও কোনোটিতেই একটি কর্মসূচিও পালন করতে পারেনি তারা। বিএনপির দুটি কার্যালয় রীতিমত শেওলা ধরেছে, মরিচা পড়ছে। যেখানে সুমন তার বাড়ি ও আজাদ তার বাড়িকেই বিএনপির কার্যালয় বানিয়েছেন। কখনও কখনও কারো কারো মিল কারখানা আবার কারো কারো বিলাসি টাকায় ফাইভ স্টার হোটেলে বসে করছেন রাজনীতি।