সান নারায়ণগঞ্জ টুয়েন্টিফোর ডটকম:
৩১ মার্চ রবিবার নারায়ণগঞ্জ জেলার সোনারগাঁও উপজেলা পরিষদ নির্বাচনের ভোট গ্রহণকে ঘিরে অস্তিত্বের লড়াইয়ে নামতে যাচ্ছেন নারায়ণগঞ্জ-৩(সোনারগাঁও) আসনের মহাজোটের এমপি লিয়াকত হোসেন খোকা ও সোনারগাঁয়ের আওয়ামীলীগের পরিবার হিসেবে পরিচিত পাওয়া হাসনাত পরিবার। নির্বাচনে আওয়ামীলীগের নৌকা প্রতীক পেয়েছেন হাসনাত পরিবারের সদস্য মোশারফ হোসেন। তার একমাত্র প্রতিদ্বন্ধি আওয়ামীলীগের বিদ্রোহী প্রার্থী ঘোড়া প্রতীকে লড়বেন উপজেলা আওয়ামীলীগের ভারপ্রাপ্ত সেক্রেটারি মাহফুজুর রহমান কালাম। এখানে মুলত মুল লড়াইটাই হবে বর্তমান এমপি লিয়াকত হোসেন খোকা ও আওয়ামীলীগের সাবেক এমপি আব্দুল্লাহ আল কায়সার হাসনাতের মধ্যে। খোকা রয়েছেন কালামের পক্ষে আর মোশারফের পক্ষে কায়সার।
স্থানীয়রা বলছেন, এখানে নির্বাচনে মাহফুজুর রহমান কালাম চেয়ারম্যান নির্বাচিত হলে আওয়ামীলীগের রাজনীতিতে হুমকির মুখে পড়বে হাসনাত পরিবার এবং হাসনাত পরিবারের দুই সদস্য কায়সার হাসনাত ও মোশারফ হোসেন। আবার মোশারফ হোসেন নির্বাচিত হলে সোনারগাঁয়ে আওয়ামীলীগের রাজনীতিতে হুমকির মুখে পড়বেন কালাম। সেই সঙ্গে চরম বিপাকে থাকবেন মহাজোটের এমপি লিয়াকত হোসেন খোকা।
এর কারন হিসেবে তারা বলছেন, উপজেলা পরিষদের যাবতীয় কাজ ও নিয়ন্ত্রণ চলে যাবে হাসনাত পরিবারের হাতে। স্থানীয় এমপি লিয়াকত হোসেন খোকার তখন জাতীয় সংসদে আইন প্রণয়ণ ছাড়া আর কিছুই থাকবে না সোনারগাঁয়ে। এমপি খোকা ও মোশারফ হোসেনের লোকজনদের সঙ্গে হানাহানি মারামারি কিংবা টেহুারবাজি নিয়ে হতাহতের ঘটনা ঘটতে পারে বলেও সেটা অনুমেয়। এক্ষেত্রে সোনারগাঁয়ে এমপি খোকার প্রভাব একেবারেই শূণ্যের কোঠায় চলে যাবে। সেই সঙ্গে সোনারগাঁয়ে আওয়ামীলীগের রাজনীতিতে বর্তমানের প্রভাব হারাবেন কালাম। তখন আবারো তাকে হাসনাত পরিবারের ছায়াতলে আসতে হবে। ভবিষৎে জাতীয় নির্বাচন কিংবা উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে দাড়ানোর স্বপ্ন দেখাটাই তখন কালামের জন্য দুঃস্বপ্ন হয়ে ওঠবে। সঙ্গে সোনারগাঁয়ে আবারো প্রভাব ফিরে পাবে হাসনাত পরিবার। সোনারগাঁও থেকে নারায়ণগঞ্জে ফিরে আসতে হবে এমপি খোকাকে।
আবার অনেকেই বলছেন, যদি কালাম ঘোড়া প্রতীকে চেয়ারম্যান নির্বাচিত হয়ে যান তাহলে সোনারগাঁয়ে আওয়ামীলীগের ঐতিহ্যবাহী হাসনাত পরিবারের রাজনীতি শেষের দিকে চলে যাবে। তখন সোনারগাঁয়ে আওয়ামীলীগের রাজনীতির একক কর্তৃত্ব ও নিয়ন্ত্রন চলে যাবে কালামের হাতে। কালামের হাত ধরে সোনারগাঁয়ে টিকে থাকবেন এমপি খোকাও। সেই লড়াইয়েই এমপি খোকা ওঠে পড়ে লেগেছেন কালামের পক্ষে বিজয়ের মালা ছিনিয়ে আনতে। কালামের পক্ষেই অবস্থান নিয়ে প্রতিশোধের সুুযোগ নিতে চাচ্ছেন গোয়ালদির সেই সাবেক এমপি আনম বাহাউল হকও। কারন ২০০১ সালে হাসনাত পরিবারের বিরোধীতার কারনেই পরাজিত হয়েছিলেন বাহাউল। যে কারনে বাহাউলের ভাই সোনারগাঁয়ের পৌর মেয়র সাদেকুর রহমান, শিল্পপতি ফেরদৌস ভূঁইয়া মামুন ও জেলা পরিষদের সদস্য ফারুক ভূঁইয়া কাজ করছেন কালামের পক্ষে। তবে অস্তিতের লড়াইয়ে হাল ছাড়ছেনা হাসনাত পরিবার। এখন দেখার বিষয় রবিবার ভোট গ্রহণ শেষে কে বিজয়ের মালা পড়েন।
৩১ মার্চ রবিবার সোনারগাঁও উপজেলা পরিষদ নির্বাচনের ভোট গ্রহণ অনুষ্ঠিত হবে। নির্বাচনী প্রচারণার শেষ মুহুর্তে চেয়ারম্যান পদে দুই প্রার্থী নির্ঘুম প্রচারণা চালিয়েছিলেন। নৌকার প্রার্থী নৌকায় চড়ে ভেসে গিয়েছিলেন ভোটারদের কাছে নদীপথেও। আরেকজন স্থলপথে ঘোড়া প্রতীকে দৌগে গিয়েছেন ভোটারদের ঘরে ঘরে। তাদের এমন প্রতিযোগীতায় কে হবেন ফার্স্ট তা দেখার অপেক্ষায় সোনারগাঁয়ের মানুষ। তা দেখতে হলে ৩১ মার্চ রবিবার গভীর রাত পর্যন্ত ফলাফলের জন্য অপেক্ষা করতে হবে সোনারগাঁয়ের মানুষকে। এরি মধ্যে উভয় প্রার্থী ও তাদের সমর্থকরাই করছেন জয়ের আশা।
জানাগেছে, সোনারগাঁও উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে নৌকা প্রতীকে লড়ছেন মোশারফ হোসেন। আওয়ামীলীগের এই নেতা উপজেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান। সেই সঙ্গে আওয়ামীলীগের সাবেক এমপি আব্দুল্লাহ আল কায়সার হাসনাতের আপন চাচাও তিনি। নৌকাকে বিজয়ী করতে পুরোদমে মাঠে নেমেছেন চাচা ও ভাতিজা।
এদিকে ঘোড়া প্রতীকে লড়ছেন আওয়ামীলীগের বিদ্রোহী প্রার্থী মাহফুজুর রহমান কালাম। তিনি ঘোড়া প্রতীকে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে নির্বাচনে রয়েছেন। তার পক্ষে রয়েছেন স্থানীয় এমপি লিয়াকত হোসেন খোকা। ইতিমধ্যে ঘোড়া প্রতীকের পক্ষে কাজ করার অভিযোগে নির্বাচন কমিশন নির্বাচনী এলাকা ছাড়তে খোকাকে নির্দেশ দিয়েছেন।
নৌকা প্রতীকের প্রার্থী মোশারফ হোসেনের পক্ষে মাঠে কাজ করছেন সাবেক এমপি আব্দুল্লাহ আল কায়সার হাসনাত, জেলা আওয়ামীলীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আবু জাফর চৌধুরী বিরু, কেন্দ্রীয় আওয়ামীলীগের উপ-কমিটির সাবেক সহ-সম্পাদক এএইচএম মাসুদ দুলাল, উপজেলা আওয়ামীলীগের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি অ্যাডভোকেট সামসুল ইসলাম ভূঁইয়া।
যদিও উপজেলা আওয়ামীলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক সুলতান আহমেদ মোল্লা বাদশা কাজ করছেন বিদ্রোহী প্রার্থী কালামের পক্ষে। কালামের পক্ষে কাজ করছেন উপজেলার সাতটি ইউনিয়ন পরিষদে নির্বাচিত চেয়ারম্যান জহিরুল হক, ইউসুফ দেওয়ান, আব্দুর রউফ মোল্লা, আব্দুর রব, হা-মীম শিকদার শিপলু, মোশারফ ওমর, ইঞ্জিনিয়ার মাসুদুর রহমান মাসুম, সোনারগাঁও পৌর মেয়র সাদেকুর রহমান ভূঁইয়া এবং পৌরসভায় নির্বাচিত কাউন্সিলর ও ইউনিয়ন পরিষদের ওয়ার্ডে নির্বাচিত অন্তত ৯০ জন মেম্বারগণ। এসব চেয়ারম্যানদের অনেকেই নৌকা প্রতীকে চেয়ারম্যান নির্বাচিত হয়েছিলেন। কিন্তু তারা কাজ করছেন নৌকার বিরুদ্ধে গিয়ে ঘোড়া প্রতীকের পক্ষে।
এখানে উল্লেখ্যযে, গত ৩০ ডিসেম্বর অনুষ্ঠিত একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে নারায়ণগঞ্জ-৩(সোনারগাঁও) আসনে মহাজোটের শরীক দল জাতীয় পার্টির লাঙ্গল প্রতীকে মনোনয়ন পান বর্তমান এমপি লিয়াকত হোসেন খোকা। ওই নির্বাচনে আওয়ামীলীগের সঙ্গে বিদ্রোহী করে স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়েছিলেন আব্দুল্লাহ আল কায়সার হাসনাত ও মোশারফ হোসেন। মনোনয়ন বাছাইয়ে মোশারফ হোসেনের মনোনয়ন বাতিল হয়ে গেলে সিংহ প্রতীকে নির্বাচনে লড়াইয়ে নামেন কায়সার হাসনাত। কিন্তু নির্বাচনের ৭২ ঘন্টা পূর্বে কায়সার হাসনাতের বাড়িতে হানা দেয় পুলিশ। তারপর নির্বাচন থেকে সরে দাড়ান তিনি। ওই নির্বাচনে খোকার পক্ষে কাজ করেছিলেন কালাম এবং মোশারফ হোসেন কাজ করেছিলেন কায়সার হাসনাতের পক্ষে।