সান নারায়ণগঞ্জ টুয়েন্টিফোর ডটকম:
অনুষ্ঠিত হয়ে গেল নারায়ণগঞ্জের তিনটি উপজেলা পরিষদ নির্বাচনের ভোট গ্রহণ। তিনটি উপজেলায় আওয়ামীলীগের দলীয় নৌকা প্রতীকের তিন প্রার্থী বিজয়ী হয়েছেন। তিনটি উপজেলা পরিষদেই ছিলেন আওয়ামীলীগের তিন বিদ্রোহী প্রার্থী। যারা ভোটের হিসেবে রীতিমত ধরাশয়ী হয়েছেন নৌকা প্রার্থীদের কাছে। নির্বাচনের শুরুতেই স্থানীয় তিন এমপির বিরোধীদের হাতে আওয়ামীলীগ তুলে দেয় নৌকা প্রতীক। নির্বাচন নাগাদ তিন জনের মধ্যে দুই এমপি নৌকার পক্ষে কাজ করলেও সোনারগাঁয়ে মহাজোটের এমপি ছিলেন আওয়ামীলীগের বিদ্রোহী প্রার্থীর সঙ্গেই। রবিবার রাতে তিনটি উপজেলার রিটার্নিং কর্মকর্তাগণ উপজেলা পরিষদ কার্যালয়ে বেসরকারিভাবে ফলাফল ঘোষণা করেন।
৩১ মার্চ রবিবার সকাল ৯টা থেকে শুরু হয় ভোট গ্রহণ যা চলে বিকেল ৪টা পর্যন্ত। যাচ্ছে নারায়ণগঞ্জ জেলার তিনটি উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে ভোটের লড়াই। নারায়ণগঞ্জ জেলার আড়াইহাজার উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে চেয়ারম্যান পদে লড়েছেন আওয়ামীলীগের নৌকা প্রতীকের প্রার্থী মুজাহিদুর রহমান হেলো সরকার। তার একমাত্র প্রতিদ্বন্ধি আওয়ামীলীগের বিদ্রোহী প্রার্থী উপজেলা যুবলীগের সহ-সভাপতি ইকবাল হোসেন মোল্লা লড়েছেন। নির্বাচনে নৌকা প্রতীকের প্রার্থী হেলো সরকার পেয়েছেন ৮০ হাজার ৫৮ ভোট এবং তার প্রতিদ্বন্ধি ইকবাল হোসেন মোল্লা আনারস প্রতীকে পেয়েছেন মাত্র ৭ হাজার ৮শ ৮৯ ভোট।
এখানে পরাজিত প্রার্থী ইকবাল হোসেন মোল্লা হলেন স্থানীয় এমপি নজরুল ইসলাম বাবুর ভাগনে। এর আগে আওয়ামীলীগের সঙ্গে বিদ্রোহ করে মনোনয়ন দাখিল করলেও বর্তমান উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ও উপজেলা আওয়ামীলীগের সভাপতি শাহজালাল মিয়া তার মনোনয়ন প্রত্যাহার করে নেন। কিন্তু অনড় থাকেন ইকবাল হোসেন মোল্লা। এখানে নৌকার প্রার্থী হেলো সরকারের চেয়ে বেশি প্রচারণায় ছিলেন ইকবাল হোসেন মোল্লা। যদিও দুজনেই ঢিমেতালে নির্বাচনী প্রচার প্রচারণা চালান।
এখানে ভাইস চেয়ারম্যান ও মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান পদে কোন প্রতিদ্বন্ধি না থাকায় বিনা প্রতিদ্বন্ধিতায় অনেক আগেই নির্বাচিত হয়েছেন রফিকুল ইসলাম ও ঝর্না রহমান। মুলত এখানে চেয়ারম্যান পদে ভোটের লড়াই হলেও নির্বাচনী আমেজ ছিল অনেকটা একতরফাই। স্থানীয় এমপি নজরুল ইসলাম বাবু সহ আওয়ামীলীগের নেতারা ছিলেন নৌকার পক্ষেই।
এছাড়াও জেলার রূপগঞ্জ উপজেলা পরিষদ নির্বাচনেও নৌকার প্রার্থী বিজয়ী হয়েছেন। এখানে নৌকা প্রতীকে নির্বাচনে অংশগ্রহণ করেছেন উপজেল আওয়ামীলীগের সেক্রেটারি ও উপজেলা পরিষদের বর্তমান চেয়ারম্যান শাহজাহান ভূঁইয়া। তিনি ৮২ হাজার ২৭ ভোট পেয়ে নির্বাচিত হয়েছেন। তার একমাত্র প্রতিদ্বন্ধি আওয়ামীলীগের বিদ্রোহী প্রার্থী হিসেবে আনারস প্রতীকে ছাত্রলীগের সাবেক নেতা তাবিবুল কাদির তমাল ৮ হাজার ৯’শ ৯৫ ভোট পেয়েছেন। তবে নির্বাচনে দুপুরেই চেয়ারম্যান প্রার্থী সহ একজন ভাইস চেয়ারম্যান ও একজন মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান বাদে বাকি সাত প্রার্থী নির্বাচন বর্জনের ঘোষণা দেন। এখানে ভাইস চেয়ারম্যান পদে মোহাম্মদ সোহেল ভূঁইয়া চশমা প্রতীকে ৭৭ হাজার ৪’শ ৫৯ ভোট পেয়ে নির্বাচিত হয়েছেন এবং মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান পদে বর্তমান মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান ফেরদৌসী আলম নীলা হাঁস প্রতীকে ৭৩ হাজার ৬৯ ভোট পেয়ে নির্বাচিত হয়েছেন।
যদি নির্বাচনের আগেই নির্বাচনী প্রচারণায় বাধার অভিযোগে সাংবাদিক সম্মেলনও করেছিলেন তাবিবুল কাদির তমাল সহ অন্যান্য প্রার্থীরা। নৌকার প্রার্থীর পক্ষে কাজ করেছিলেন স্থানীয় এমপি এবং পাট ও বস্ত্র গাজী গোলাম দস্তসীর বীর প্রতীক। তার বিরুদ্ধেই নির্বাচনে বাধার অভিযোগ তুলে সংবাদ সম্মেলন করেছিলেন চেয়ারম্যান প্রার্থী সহ ভাইস চেয়ারম্যান ও মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান পদের ৭ জন প্রার্থী। তাদের অভিযোগ মন্ত্রী নির্বাচনে প্রভাব বিস্তার করছেন এবং বাধা দিচ্ছেন। মুলত এই ঘটনার আগে থেকেই নির্বাচন থেকে ছিটকে যান তাবিবুল কাদির তমাল।
অন্যদিকে সোনারগাঁও উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে বিজয়ী হয়েছেন নৌকা প্রতীকের প্রার্থী মোশারফ হোসেন। আওয়ামীলীগের এই নেতা উপজেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান। সেই সঙ্গে আওয়ামীলীগের সাবেক এমপি আব্দুল্লাহ আল কায়সার হাসনাতের আপন চাচাও তিনি। নৌকাকে বিজয়ী করতে পুরোদমে মাঠে নেমেছিলেন চাচা ও ভাতিজা। ঘোড়া প্রতীকে লড়াই করেছেন আওয়ামীলীগের বিদ্রোহী প্রার্থী মাহফুজুর রহমান কালাম। তিনি ঘোড়া প্রতীকে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে নির্বাচনে ভোট পেয়েছেন ৪৫ হাজার ৬’শ ৫৯ ভোট পেয়েছেন। যেখানে ৭৩ হাজার ৩৮ ভোট বেসরকারিভাবে নির্বাচিত হয়েছেন নৌকা প্রতীকের প্রার্থী মোশারফ হোসেন। এখানে ভাইস চেয়ারম্যান পদে টিউবওয়েল প্রতীকে ৩৫ হাজার ৬’শ ৪০ ভোট পেয়ে নির্বাচিত হয়েছেন বাবু ওমর ও মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান পদে হাঁস প্রতীকে ২৪ হাজার ৩’শ ৭৮ ভোট পেয়ে নির্বাচিত হয়েছেন মাহমুদা ইসলাম ফেন্সী।
এখানে নির্বাচনে স্থানীয় এমপি ও জাতীয় পার্টির নেতা লিয়াকত হোসেন খোকা ছিলেন আওয়ামীলীগের বিদ্রোহী প্রার্থীর পক্ষেই। যে কারনে বিদ্রোহী প্রার্থীর ঘোড়া প্রতীকের পক্ষে কাজ করার অভিযোগে নির্বাচন কমিশন নির্বাচনী এলাকা ছাড়তে খোকাকে নির্দেশ দিয়েছিলেন।
নৌকা প্রতীকের প্রার্থী মোশারফ হোসেনের পক্ষে মাঠে কাজ করেছিলেন সাবেক এমপি আব্দুল্লাহ আল কায়সার হাসনাত, জেলা আওয়ামীলীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আবু জাফর চৌধুরী বিরু, কেন্দ্রীয় আওয়ামীলীগের উপ-কমিটির সাবেক সহ-সম্পাদক এএইচএম মাসুদ দুলাল ও উপজেলা আওয়ামীলীগের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি অ্যাডভোকেট সামসুল ইসলাম ভূঁইয়া।
যদিও উপজেলা আওয়ামীলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক সুলতান আহমেদ মোল্লা বাদশা কাজ করেছিলেন বিদ্রোহী প্রার্থী কালামের পক্ষে। কালামের পক্ষে কাজ করেছিলেন উপজেলার সাতটি ইউনিয়ন পরিষদে নির্বাচিত চেয়ারম্যান জহিরুল হক, ইউসুফ দেওয়ান, আব্দুর রউফ মোল্লা, আব্দুর রব, হা-মীম শিকদার শিপলু, মোশারফ ওমর, ইঞ্জিনিয়ার মাসুদুর রহমান মাসুম, সোনারগাঁও পৌর মেয়র সাদেকুর রহমান ভূঁইয়া এবং পৌরসভায় নির্বাচিত কাউন্সিলর ও ইউনিয়ন পরিষদের ওয়ার্ডে নির্বাচিত অন্তত ৯০ জন মেম্বারগণ। এসব চেয়ারম্যানদের অনেকেই নৌকা প্রতীকে চেয়ারম্যান নির্বাচিত হয়েছিলেন। কিন্তু তারা কাজ করেছিলেন নৌকার বিরুদ্ধে গিয়ে ঘোড়া প্রতীকের পক্ষে। কিন্তু তবুও ঘোড়া প্রতীকের প্রার্থীকে বিজয়ী করতে পারেননি তারা।
এখানে উল্লেখ্যযে, গত ৩০ ডিসেম্বর অনুষ্ঠিত একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে নারায়ণগঞ্জ-৩(সোনারগাঁও) আসনে মহাজোটের শরীক দল জাতীয় পার্টির লাঙ্গল প্রতীকে মনোনয়ন পান বর্তমান এমপি লিয়াকত হোসেন খোকা। ওই নির্বাচনে আওয়ামীলীগের সঙ্গে বিদ্রোহী করে স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়েছিলেন আব্দুল্লাহ আল কায়সার হাসনাত ও মোশারফ হোসেন। মনোনয়ন বাছাইয়ে মোশারফ হোসেনের মনোনয়ন বাতিল হয়ে গেলে সিংহ প্রতীকে নির্বাচনে লড়াইয়ে নামেন কায়সার হাসনাত। কিন্তু নির্বাচনের ৭২ ঘন্টা পূর্বে কায়সার হাসনাতের বাড়িতে হানা দেয় পুলিশ। তারপর নির্বাচন থেকে সরে দাড়ান তিনি। ওই নির্বাচনে খোকার পক্ষে কাজ করেছিলেন কালাম এবং মোশারফ হোসেন কাজ করেছিলেন কায়সার হাসনাতের পক্ষে।