সান নারায়ণগঞ্জ টুয়েন্টিফোর ডটকম:
নারায়ণগঞ্জ মহানগর বিএনপির সহ-সভাপতি আতাউর রহমান মুকুলকে মুখে লাগাম টেনে কথা বলতে বলেছেন মহানগর বিএনপির আরেক সহ-সভাপতি মনির হোসেন খান। নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশন নির্বাচনে স্বতন্ত্র মেয়র প্রার্থী অ্যাডভোকেট তৈমুর আলম খন্দকারের পক্ষে কাজ না করলে বিএনপি নেতা কর্মীদেরকে নারায়ণগঞ্জ শহর থেকে বের করে দেয়া হবে- মহানগর বিএনপি নেতা আতাউর রহমান মুকুলের এই হুমকির জবাবে মনির হোসেন খান আতাউর রহমান মুকুলকে উদ্দেশ্য করে মিডিয়া কর্মীদের মাধ্যমে বলেন, মুখে লাগাম টেনে কথা বলুন। নারায়ণগঞ্জ আপনার বাপ-দাদার পৈত্রিক সম্পত্তি না। এ ধরনের কথা বললে আপনি নিজেই নারায়ণগঞ্জে থাকতে পারবেন কিনা সেটার চিন্তা করুন।
গত সোমবার (২০ ডিসেম্বর) সন্ধ্যায় শহরের মিশনপাড়ায় মহানগর বিএনপির সাধারণ সম্পাদক এটি এম কামালের বাড়িতে আয়োজিত মতবিনিময় সভায় মুকুল এই হুমকি দেন।
এদিকে মুকুলের বক্তব্যের এই ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল হয়ে যাওয়ার পরে ক্ষোভে ফেটে পড়েছেন স্থানীয় নেতাকর্মীরা। একেতো মুকুল নিজেই বিএনপির সাইনবোর্ডে আওয়ামী লীগের এজেন্ট। বিএনপি’র কোনো আন্দোলন কর্মসূচিতে উপস্থিত থাকেন না বরং সরকারি দলের সাথে আঁতাতের রাজনীতিতে সিদ্ধহস্ত এই রাজনীতিবিদের মুখে এ ধরনের বক্তব্য শুনে নির্যাতিত-নিপীড়িত নারায়ণগঞ্জ বিএনপির তৃণমূল কর্মী-সমর্থকরা দায়ী করছেন দলীয় সিদ্ধান্ত অমান্য করে মেয়র পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতাকারী বিএনপি নেতা অ্যাডভোকেট তৈমুর আলম খন্দকারকে। মেয়র হওয়ার লোভে অন্ধ হয়ে গেছেন তৈমুর আর তাই আতাউর রহমান মুকুলের মতো আওয়ামী লীগের দালালকে নির্বাচনের সঙ্গী হিসেবে বেছে নিয়েছেন তিনি- এমনটাই বলছে বিএনপির তৃণমূল নেতাকর্মীরা।
ওই সভায় আতাউর রহমান মুকুল বলেন, ‘যারা এখনও আমাদের সাথে আসে নাই, তারা আমাদের চাইতেও বড় বিএনপি। তারা বলতেছে, কেন্দ্র তো বলে নাই, আমরা কেন নির্বাচন করবো, বাহানা দেখায়। এইগুলা হচ্ছে তাগো দালাল। এইগুলি যদি না আসে তৈমুর ভাইয়ের নির্বাচন না করে, এইগুলিকে নারায়ণগঞ্জ শহর থেকে বের করে দিব। এক দম সোজা কথা।’
কয়েক বছর আগে একটি অনুষ্ঠানে জিয়াউর রহমানকে ‘কুকুর’ গালি দিয়েছিলেন আওয়ামী লীগের একজন নেতা, যে অনুষ্ঠানে স্ব-শরীরে উপস্থিত হয় সে গালি হজমের পাশাপাশি মুচকি হাসিও দিয়েছিলেন বিএনপি নেতা আতাউর রহমান মুকুল। ২০১৫ সালের ১৬ জুন দুপুরে নারায়ণগঞ্জ জেলা পরিষদের উদ্যোগে আয়োজিত জেলা পরিষদ মিলনায়তনে মুক্তিযোদ্ধাদের সংবর্ধনা ও সম্মাননা প্রদান অনুষ্ঠানে জিয়াউর রহমানকে ‘কুকুর’ বলে গালাগাল করেন যুদ্ধকালীন কমান্ডার আওয়ামীলীগ নেতা গোপীনাথ দাস। সে অনুষ্ঠানের মঞ্চে অতিথি হিসেবে বসে ছিলেন বিএনপি নেতা আতাউর রহমান মুকুল। তিনি হাসিমুখে সে গালি হজম করেন কোনো প্রতিবাদ করেননি।
এছাড়াও গত ১৫ বছর যাবত নারায়ণগঞ্জ বিএনপির নেতাকর্মীরা সরকারবিরোধী আন্দোলন সংগ্রাম করেছে। সরকারি দলের হামলা-মামলার শিকার হয়েছে জেল জুলুম হুলিয়া মাথায় নিয়ে দিনের পর দিন আত্মগোপনে পালিয়ে থেকেছে কিন্তু এসব কিছুই পোহাতে হয়নি আতাউর রহমান মুকুলকে। তিনি দিব্যি শহরে বুক ফুলিয়ে ঘুরে বেরিয়েছেন। তাকে দেখা গেছে সরকারি দলের বড় বড় নেতাদের সাথে সভা-সমাবেশে অথচ দেখা মিলেনি বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার মুক্তির আন্দোলনে। এমনকি গত একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বিএনপির দলীয় প্রতীক ধানের শীষের বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়েছিলেন মুকুল। বন্দরের কেন্দ্রগুলো থেকে ধানের শীষের এজেন্টদের মেরে তাড়িয়ে দেওয়ার অভিযোগ আছে মুকুলের বিরুদ্ধে। প্রকাশ্যে ধানের শীষের প্রার্থীর বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়ে সরকারি দলের প্রার্থীকে বিজয়ী করতে সহায়তা করেছেন মুকুল- এমন অভিযোগ বিএনপি নেতাকর্মীদের। এ ধরনের গুরুতর অভিযোগে অভিযুক্ত নেতাকে সিটি নির্বাচনের সঙ্গী হিসেবে বেছে নিয়েছেন অ্যাডভোকেট তৈমুর আলম খন্দকার, যা বিএনপি নেতাকর্মীদের হৃদয়ে রক্তক্ষরণ সৃষ্টি করেছে।