সান নারায়ণগঞ্জ টুয়েন্টিফোর ডটকম:
জাতীয় ও আন্তর্জাতিকভাবে বাংলাদেশের যুবাদের অনন্য মানবিক অবদানের স্বীকৃতি দিতে ‘ঢাকা ওআইসি ইয়্যুথ ক্যাপিটাল ২০২০’-এর অধীনে প্রথমবারের মতো প্রধানমন্ত্রীর নামে ‘শেখ হাসিনা ইয়্যুথ ভলান্টিয়ার অ্যাওয়ার্ড ২০২০’ অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। সার্ভিস এক্সচ্যালেঞ্জ ক্যাটাগরিতে জাতীয় পর্যায়ে দ্বিতীয় স্থানে এই অ্যাওয়ার্ড পেলেন করোনাকালে মানবতার অনন্য দৃষ্টান্ত স্থাপন করা নারায়ণগঞ্জ সদর উপজেলার সাবেক নির্বাহী কর্মকর্তা নাহিদা বারিক।
৩০ ডিসেম্বর বৃহস্পতিবার রাজধানীর ওসমানী স্মৃতি মিলনায়তন আয়োজিত অনুষ্ঠানে ভার্চুয়ালি প্রধান অতিথির বক্তব্য দেন রাষ্ট্রপতি আব্দুল হামিদ। অনুষ্ঠানের শুভ কামনা জানিয়ে ভিডিও বার্তা দেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ভিডিও বার্তায় প্রধানমন্ত্রী সবাইকে ধন্যবাদ জানান। গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয় কর্তৃক তাঁদের একক ও দলীয়ভাবে বিভিন্ন পুরস্কার ও সম্মাননা প্রদান করা হয়।
এদিকে মহামারি করোনায় গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বিচক্ষণ ও দৃঢ় নেতৃত্বে এ বৈশ্বিক মহামারি কোভিড-১৯ সংকট থেকে সফলভাবে উত্তরণ করতে পেরেছে। যা প্রধানমন্ত্রীকে বিশ্বব্যাপী একজন আদর্শ পথিকৃৎ হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করেছে।
অপরদিকে, কোভিড-১৯ মহামারি প্রতিরোধে প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশে ও আহ্বানে বাংলাদেশের যুবারাও অদম্য মানসিকতাকে তুলে ধরে স্বেচ্ছাসেবী হিসেবে কাজ করেছে। জাতীয় ও আন্তর্জাতিকভাবে এ অনন্য মানবিক অবদানের স্বীকৃতি দিতে ‘ঢাকা ওআইসি ইয়্যুথ ক্যাপিটাল ২০২০’-এর অধীনে প্রথমবারের মতো প্রধানমন্ত্রীর নামে ‘শেখ হাসিনা ইয়্যুথ ভলান্টিয়ার অ্যাওয়ার্ড ২০২০’ অনুষ্ঠানের পরিকল্পনা করা হয়েছে।
অ্যাওয়ার্ড প্রদান অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি ছিলেন অর্গানাইজেশন অব ইসলামিক কো-অপারেশন (ওআইসি) সেক্রেটারি জেনারেল, অ্যাম্বাসেডর হিসেইন ইব্রাহিম তাহা। পররাষ্ট্র মন্ত্রী ড. একে আব্দুল মোমেন, রাশিয়ার যুব বিষয়ক ফেডারেল এজেন্সির প্রধান (মন্ত্রী) সেনিয়া রাজুভায়েভা, মালদ্বীপের যুব, ক্রীড়া এবং সামাজিক ক্ষমতায়ন মন্ত্রণালয়ের আহমেদ মাহলুফ, তাতারস্তান প্রজাতন্ত্র যুব মন্ত্রী তিমুর সুলেমানভ, ইসলামিক কো-অপারেশন ইয়্যুথ ফোরাম (আইসিওয়াইএফ) প্রেসিডেন্ট তাহা আয়হান, যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয় প্রতিমন্ত্রী মো জাহিদ আহসান রাসেল প্রমুখ।
এদিকে ২০২০সালে সারাবিশ্ব যখন মহামারী করোনা ভাইরাসের ছোবলে লন্ডভন্ড তখন এ মাতৃভূমিকে নিরাপদ রাখতে যারা নিরলস সেবা দিয়ে গিয়েছেন তাদের মধ্যে অন্যতম নাহিদা বারিক। ২৯তম বিসিএস (প্রশাসন) ক্যাডারের এ তরুণ কর্মকর্তা নারায়ণগঞ্জ সদর উপজেলার উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা হিসেবে ছুটে গেছেন এক ঘর থেকে আরেকঘরে, এক গ্রাম থেকে অন্য গ্রামে। লক্ষ্য ছিলো একটাই, এ জনবহুল এলাকা যেনো মহামারীর ছোবল থেকে নিরাপদ থাকে।
সারাদেশে লকডাউন চলাকালে নাহিদা বারিকের বিশেষ নজর ছিল নারায়ণগঞ্জ সদরের বিদেশ ফেরত মানুষদের প্রতি। কারন তাদের মধ্যদিয়ে প্রকোপ বাড়ার প্রবণতা ছিল সর্বাধিক। প্রতিটি প্রবাসীর পরিবারকে আনা হয়েছিল তীক্ষ্ণ নজরদারিতে।
নারায়ণগঞ্জ সদর একটি শিল্পায়িত জনবহুল এলাকা। সে সময়ে এ এলাকাটি ছিলো করোনার হটস্পট। উপজেলায় সামাজিক দূরত্ব নিশ্চিত করাই ছিলো প্রধান চ্যালেঞ্জ। লোকজন যেন কোন অবস্থায় জমায়েত হতে না পারে, সেজন্য সভা সমাবেশ, ওয়াজ মাহফিল, তীর্থযাত্র সবকিছু বন্ধ করেছেন তিনি নির্দেশিত বিধির আলোকে। জনসাধারণকে সচেতন করা, মাস্ক বিতরণ, কোচিং সেন্টার ও কমিউনিটি সেন্টার বন্ধ, সামাজিক দুরুত্ব বজায় রেখে স্বাস্থ্যবিধি মেনে ঈদ মার্কেটগুলো পরিচালনায় সহায়তা করে গেছেন দ্বিধাহীন চিত্তে।
২৯ এপ্রিল ২০২০, নারায়ণগঞ্জ সদরে করোনার সম্মুখ যোদ্ধা ডা. শিল্পী আক্তারের পরিবারকে যখন এলাকা ছাড়া করার পায়তারা করেছিলো কিছু উশৃঙ্খল জনতা, তখনই সকল নিরাপত্তার বর্ম হয়ে দাঁড়িয়েছিলেন নাহিদা বারিক। এ যাত্রায় রক্ষা পান ডা. শিল্পী, আর মনোবল চাঙ্গা হয় করোনা যোদ্ধাদের।
করোনা যখন আত্মীয়তা সম্পর্ককে প্রশ্নবিদ্ধ করছিলো, ঠিক তখনই করোনা রোগীদের ঘরে ঘরে পৌছে দিয়েছেন ঔষধ। কিছু মানবিক স্বেচ্ছাসেবীদের সহায়তায় করোনায় আক্রান্ত মৃতদের লাশ দাফন কার্যক্রম সম্পন্ন করেছেন নাহিদা বারিক।
যখন সাধারণ ছুটি ঘোষিত হয়েছিল নারায়ণগঞ্জসহ সারদেশে, তখন উপযুক্ত ব্যক্তি যেন সরকার প্রেরিত খাদ্য সহায়তা পায় সেজন্য নাহিদা বারিক উদ্ভাবন করেন “খাদ্য সহায়তা অ্যাপস”। সামাজিক দুরুত্ব নিশ্চিতের স্বার্থে বাজারগুলোকে খোলা স্থানে স্থানান্তর করে স্থানীয় পর্যায়ে উৎপাদিত সবজি যেন নষ্ট না হয়, সেজন্য নায্য দামে বিক্রির ব্যবস্থা করেন। প্রযুক্তি আর নজরদারির কল্যাণে সদর উপজেলায় তখন খাদ্যের কোন কৃত্রিম সংকট তৈরি হয়নি।
চারপাশে যখন করোনা আতঙ্কের হুংকার, তখন মরার উপর খড়ার ঘা হয়ে হাজির মৌসুমী বন্যা। এ যেন বাঁচা মরার লড়াই। এক্ষেত্রেও নাহিদা বারিকের সময় উপযোগী পদক্ষেপে রক্ষা পায় নারায়ণগঞ্জ সদর।
এত এত জরা, হাহাকারের মধ্যেও মানব সৃষ্ট জঞ্জাল এসেছিলো প্রতিনিয়ত। মসজিদ, শিল্পকারখানা, বাসাবাড়িতে ভয়াবহ আগুন, লঞ্চডুবির মতো স্পর্শকাতর ঘটনা, মূল সমস্যা থেকে চোখ ফিরিয়েছে বারংবার। এভাবেই কেটেছে সংকটকাল ।
“আপনারা বাঁচলে, আমরা বাঁচবো- দয়া করে ঘরে থাকুন”, এই সচেতন বাক্যই নাহিদা বারিক গেঁথে দিয়েছেন উপজেলার প্রতিটি নাগরিকের মানসপটে। তিনি করেছেন, জনতা মেনেছেন। এতে করেই করোনা থেকে রক্ষা পেয়েছে প্রিয় নারায়ণগঞ্জ সদর উপজেলা।
করোনা যোদ্ধাসহ সকল শ্রেণী পেশার মানুষের প্রতি বিনম্র শ্রদ্ধা। জয় হোক মানবতার, জয় হোক সততার, ভালো থাকুক প্রিয় বাংলাদেশ- বলেছেন তিনি।