সান নারায়ণগঞ্জ টুয়েন্টিফোর ডটকম:
নারায়ণগঞ্জ জেলার সোনারগাঁয়ে মহাজোটের এমপির পক্ষে কাজ করতে গিয়ে আগামীতে মহাসংকটে পড়তে যাচ্ছেন নৌকা প্রতীকে ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে নির্বাচিত ৪ চেয়ারম্যান। ৩১ মার্চ অনুষ্ঠিত উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে নৌকা প্রতীকের প্রার্থী মোশারফ হোসেনের বিরোধীতা করেছিলেন বারদী, পিরোজপুর, কাচপুর ও জামপুর ইউনিয়ন পরিষদের চার চেয়ারম্যান।
এদের মধ্যে দুজনই আওয়ামীলীগের শীর্ষ পদেও রয়েছেন। একজন কেন্দ্রীয় কমিটিতে আরেকজন জেলা কমিটিতে। কিন্তু তারা নৌকা প্রতীকের প্রার্থীর বিরোধীতা করেছেন ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে। ফলে আগামীতে ইউনিয়ন পরিষদের নানা কাজের জন্য মোশারফ হোসেনের কাছে ধর্না দিতে হবে এদের। একই সঙ্গে ভবিষৎে ইউনিয়ন পরিষদে নৌকা প্রতীক পাওয়া এবং চেয়ারম্যান নির্বাচিত হওয়ার সম্ভাবনা এদের একেবারেই কম।
জানাগেছে, ৩১ মার্চ সোনারগাঁও উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে নৌকা প্রতীকে মনোনয়ন পেয়ে নির্বাচিত হন মোশারফ হোসেন। এখানে নৌকা প্রতীকের বিরোধীতা করে বিদ্রোহী হয়েছিলেন উপজেলা আওয়ামীলীগের ভারপ্রাপ্ত সেক্রেটারি মাহফুজুর রহমান কালাম। তিনি ঘোড়া প্রতীকে নির্বাচন করে ২৭ হাজার ভোটের ব্যবধানে পরাজিত হয়েছেন। তার পক্ষে ছিলেন স্থানীয় এমপি লিয়াকত হোসেন খোকা। নির্বাচনের আগে ঘোড়া প্রতীকের পক্ষে কাজ করার অভিযোগে নির্বাচন কমিশন নির্বাচনী এলাকা ছাড়তে খোকাকে নির্দেশ দিয়েছিলেন।
অন্যদিকে নৌকা প্রতীকের প্রার্থী মোশারফ হোসেনের পক্ষে মাঠে কাজ করেছিলেন সাবেক এমপি আব্দুল্লাহ আল কায়সার হাসনাত, জেলা আওয়ামীলীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আবু জাফর চৌধুরী বিরু, কেন্দ্রীয় আওয়ামীলীগের উপ-কমিটির সাবেক সহ-সম্পাদক এএইচএম মাসুদ দুলাল, উপজেলা আওয়ামীলীগের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি অ্যাডভোকেট সামসুল ইসলাম ভূঁইয়া।
যদিও উপজেলা আওয়ামীলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক সুলতান আহমেদ মোল্লা বাদশা কাজ করেছিলেন বিদ্রোহী প্রার্থী কালামের পক্ষে। কালামের পক্ষে কাজ করেছিলেন উপজেলার সাতটি ইউনিয়ন পরিষদে নির্বাচিত চেয়ারম্যান জহিরুল হক, ইউসুফ দেওয়ান, আব্দুর রউফ মোল্লা, আব্দুর রব, হা-মীম শিকদার শিপলু, মোশারফ ওমর, ইঞ্জিনিয়ার মাসুদুর রহমান মাসুম, সোনারগাঁও পৌর মেয়র সাদেকুর রহমান ভূঁইয়া এবং পৌরসভায় নির্বাচিত কাউন্সিলর ও ইউনিয়ন পরিষদের ওয়ার্ডে নির্বাচিত অন্তত ৯০ জন মেম্বারগণ।
এদের মধ্যে গত পৌর নির্বাচনে আওয়ামীলীগের বিদ্রোহী প্রার্থী হিসেবে নির্বাচন করে মেয়র নির্বাচিত হন সাদেকুর রহমান। গত ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে নৌকা প্রতীকে কাচপুর ইউনিয়ন পরিষদে মোশারফ ওমর, পিরোজপুর ইউনিয়ন পরিষদে ইঞ্জিনিয়ার মাসুদুর রহমান মাসুম, জামপুর ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে হা-মীম শিকদার শিপলু ও বারদী ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে জহিরুল হক চেয়ারম্যান নির্বাচিত হন। মাসুদুর রহমান মাসুম নারায়ণগঞ্জ জেলা আওয়ামীলীগের সদস্য এবং হা-মীম শিকদার কেন্দ্রীয় আওয়ামীলীগের উপ-কমিটির সদস্য। কিন্তু তারা নৌকার বিরোধীতা করেছেন নির্বাচনে।
জাতীয় সংসদ সদস্যের আইন প্রনয়ণ করা ছাড়া উল্লেখযোগ্য বেশির ভাগ অবকাঠামোগত উন্নয়ন কাজগুলো এমপির হাতে থাকে না। যদিও এমপিরা এসব দেখাভাল করে থাকেন। বেশির ভাগ থাকে উপজেলা পরিষদে। যেখানে ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যানদের নিয়েই গঠিত। উপজেলা পরিষদ থেকে কাজ ভাগিয়ে নিতে হলে এখন মোশারফ হোসেনের কাছে ধর্না দিতে হবে চার চেয়ারম্যানকে। কারন রাজনৈতিক বিশ্লেষকেরা বলছেন- এখানে লিয়াকত হোসেন খোকার প্রভাব একেবারেই শূণ্যের দিকে যাওয়ার সম্ভাবনা প্রবল। সোনারগাঁয়ে এমপি থাকবেন কোণঠাসা অবস্থায়। তার সঙ্গে যারা ছিলেন তারাও হবেন নাজেহাল। আবার আগামীতে ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে নৌকা প্রতীকে মনোনয়ন পাওয়া এবং চেয়ারম্যান নির্বাচিত হতে হলে আবারো হাসনাত পরিবারের ছায়াতলে এদের ভীড়তে হবে। ফলে মহাজোটের এমপির পক্ষ নিয়ে মহাসংকটে চার চেয়ারম্যানের ভবিষৎ রাজনীতি।
এখানে উল্লেখ্যযে, গত ৩০ডিসেম্বর অনুষ্ঠিত একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে নারায়ণগঞ্জ-৩(সোনারগাঁও) আসনে মহাজোটের শরীক দল জাতীয় পার্টির লাঙ্গল প্রতীকে মনোনয়ন পান বর্তমান এমপি লিয়াকত হোসেন খোকা। ওই নির্বাচনে আওয়ামীলীগের সঙ্গে বিদ্রোহী করে স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়েছিলেন আব্দুল্লাহ আল কায়সার হাসনাত ও মোশারফ হোসেন। মনোনয়ন বাছাইয়ে মোশারফ হোসেনের মনোনয়ন বাতিল হয়ে গেলে সিংহ প্রতীকে নির্বাচনে লড়াইয়ে নামেন কায়সার হাসনাত। কিন্তু নির্বাচনের ৭২ ঘন্টা পূর্বে কায়সার হাসনাতের বাড়িতে হানা দেয় পুলিশ। তারপর নির্বাচন থেকে সরে দাড়ান তিনি। ওই নির্বাচনে খোকার পক্ষে কাজ করেছিলেন কালাম এবং মোশারফ হোসেন কাজ করেছিলেন কায়সার হাসনাতের পক্ষে। ওই নির্বাচনেও এসব চেয়ারম্যানেরা হাসনাত পরিবারের বিপক্ষে ছিলেন।