সান নারায়ণগঞ্জ টুয়েন্টিফোর ডটকম:
নারায়ণগঞ্জ জেলা বিএনপির রাজনীতিতে একসময় ছিলেন অপরিহার্য শিল্পপতি মোঃ শাহ আলম। বিএনপির রাজনীতিতে লজিস্টিক সাপোর্টও দিতেন তিনি। যার ফলে নারায়ণগঞ্জের ফতুল্লা থানা বিএনপি’র পুরো নেতৃত্ব ছিল তার হাতে মুঠোবন্দী। একইসঙ্গে জেলা বিএনপির রাজনীতিতেও তাঁর ছিল কর্তৃত্ব। যদিও তিনি তার নির্বাচনী আসন এলাকার বাইরের রাজনীতি নিয়ে তেমন একটা মাথা ঘামাননি। সেই শিল্পপতি শাহ আলমের ফতুল্লা থানা বিএনপির রাজনীতির অধ্যায়ের সমাপ্তি ঘটলো।
২০ জানুয়ারি ফতুল্লা থানা বিএনপি’র আহবায়ক কমিটি গঠিত হয়। এই কমিটিতে শাহ আলমের একনিষ্ঠ কর্মীদের বাদ দেওয়া হয়েছে। ফলে এখানে নতুন করে রাজনীতি অধ্যায়ের শুরু হল। সান নারায়ণগঞ্জকে স্থানীয় নেতাকর্মীরা জানিয়েছেন ২০০৮ সালে বছর দেড়েক পূর্বে কল্যাণ পার্টির কেন্দ্রীয় কোষাধ্যক্ষ পদ থেকে পদত্যাগ করে বিএনপির রাজনীতিতে আসেন শিল্পপতি শাহ আলম। বিএনপির রাজনীতিতে পা দিয়েই ২০০৮ সালের জাতীয় সংসদ নির্বাচনে নারায়ণগঞ্জ-৪(ওই সময় শুধুমাত্র ফতুল্লা এলাকা নিয়ে গঠিত) আসন থেকে ধানের শীষ প্রতীক নিয়ে নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন। ওই নির্বাচনে তাঁর প্রতিদ্বন্দ্বী নৌকা প্রতীকের প্রার্থী চলচ্চিত্র অভিনেত্রী সারাহ বেগম কবরী নির্বাচিত হলেও বিএনপি নেতা শাহ আলম দাবি করেছিলেন জোর করে কবরীকে পাস করানো হয়েছে।
এরপর থেকে ফতুল্লা থানা বিএনপির নিয়ন্ত্রণে নেন শাহআলম। ২০০৯ সালে নারায়ণগঞ্জ জেলা বিএনপি’র কমিটি গঠিত হয়। ওই কমিটিতে সভাপতি ছিলেন অ্যাডভোকেট তৈমুর আলম খন্দকার ও সাধারণ সম্পাদক ছিলেন কাজী মনিরুজ্জামান মনির। শিল্পপতি শাহ আলমের চাহিদার প্রেক্ষিতে তৈমুর আলম খন্দকার ফতুল্লা থানা বিএনপির কমিটি ঘোষণা দেন। এই কমিটিতে শাহ আলমকে সভাপতি ও আবুল কালাম আজাদ বিশ্বাসকে সাধারণ সম্পাদক করা হয়। এই কমিটির বিরোধিতা করেছিলেন খন্দকার মনিরুল ইসলাম ও মনিরুল আলম সেন্টু।
এর আগে জেলা বিএনপির সিনিয়র সহ-সভাপতি পদে শিল্পপতি শাহ আলমকে রাখা হয় এবং শাহ আলমের ঘনিষ্ঠ আজাদ বিশ্বাসকে জেলা বিএনপি’র সাংগঠনিক সম্পাদক করা হয়। সাংগঠনিক সম্পাদক পদে সকলে জান্নাতুল ফেরদৌসকে সমর্থন করলেও আজাদ বিশ্বাসকে পদে বসান তৈমুর। ওই সময়ে ফতুল্লা বিএনপি’র নেতৃত্বে ছিলেন থানা বিএনপির সাবেক সভাপতি খন্দকার মনিরুল ইসলাম ও সাধারণ সম্পাদক বর্তমানে আওয়ামী লীগে যোগদানকারী মনিরুল আলম সেন্টু।
২০১৬ সালে কাজী মনিরুজ্জামানকে সভাপতি ও অধ্যাপক মামুন মাহমুদ সাধারণ সম্পাদক করে নারায়ণগঞ্জ জেলা বিএনপি কমিটি গঠিত হয়। এই কমিটিতেও শিল্পপতি শাহ আলমকে সহ-সভাপতি পদে রাখা হয়। একইসঙ্গে আবুল কলাম আজাদ বিশ্বাসকেও রাখা হয় সহ-সভাপতি পদে। ২০১৮ সালে জাতীয় সংসদ নির্বাচনে নারায়ণগঞ্জ-৪ (ফতুল্লা-সিদ্ধিরগঞ্জ) আসন থেকে মনোনয়ন পাননি শিল্পপতি শাহ আলম। মনঃক্ষুণ্ণ হয়ে নির্বাচনের পর ফতুল্লা থানা বিএনপির সভাপতি ও জেলা বিএনপির সহ সভাপতি পদ থেকে অব্যাহতি নেন শাহআলম।
মূলত নেতৃত্ব থেকে সরে দাঁড়ালেও শাহআলমের একনিষ্ঠকর্মী আবুল কলাম আজাদ বিশ্বাসকে আহবায়ক ও নজরুল ইসলাম পান্না মোল্লাকে সদস্য সচিব করে এক রাতের মধ্যেই ফতুল্লা থানা বিএনপি’র আহবায়ক কমিটির ঘোষণা দেন কাজী মনিরুজ্জামান ও মামুন মাহমুদ। যদিও শিল্পপতি শাহ আলম কেন্দ্রীয় বিএনপির সদস্য পদে বহাল ছিলেন। সম্প্রতি তিনি বিএনপি’র প্রাথমিক সদস্যপদ সহ সকল পদ থেকে পদত্যাগ করেছেন। এমন অবস্থায় ২০শে জানুয়ারি ফতুল্লা থানা বিএনপির আহ্বায়ক কমিটির ঘোষণা দেয় জেলা বিএনপি। এই কমিটিতে শিল্পপতি শাহ আলমের কোন লোকজনের ঠাঁই হয়নি। ফতুল্লা থানায় বিএনপির আহ্বায়ক হয়েছেন জাহিদ হাসান রোজেল ও সদস্য সচিব শহিদুল ইসলাম টিটু।