সোনারগাঁ থানা যুবলীগ সভাপতির বক্তব্য জনপ্রতিনিধিদের জন্য অপমানজনক: কাজী লিটু

সান নারায়ণগঞ্জ টুয়েন্টিফোর ডটকম:

নারায়ণগঞ্জের সোনারগাঁও উপজেলার ১০টি ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যানদের নিয়ে তুচ্ছতাচ্ছিল্য অবজ্ঞা ও হুমকি ধমকি দিয়ে থানা যুবলীগ সভাপতি রফিকুল ইসলাম নান্নুর দেয়া বক্তব্যের তীব্র সমালোচনা করেছেন জেলা জাতীয় যুব সংহতির যুগ্ম আহ্বায়ক ও মোগরাপাড়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান প্রার্থী কাজী নাজমুল ইসলাম লিটু। কাজী লিটু গণমাধ্যমে পাঠানো এক বক্তব্যে বলেন, যুবলীগের সভাপতির এমন বক্তব্য শিষ্টাচার বহির্ভূত, জনপ্রতিনিধিদের জন্য অপমানজনক, রাজনৈতিক প্রাঙ্গণে বিদ্বেষপূর্ণ যা অত্যন্ত নিন্দনীয় ও দুঃখজনক।

কাজী লিটু আরো বলেন, ইতিপূর্বেও তিনি বিভিন্ন সময় এধরণের কুরুচিপূর্ণ, হুমকি ধমকিসুলভ বক্তব্য রেখে সোনারগাঁওয়ের রাজনীতিকে কুলশিত করেছেন, যা সাধারণ মানুষের কাছে বিরুপ প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করেছেন। সদ্য সমাপ্ত ইউপি নির্বাচনেও তিনি আমাদের দলীয় সমর্থিত সম্ভুপুরা ইউপি চেয়ারম্যান প্রার্থীর বিরুদ্ধে বিষোদগার করেছেন। জেল খাটানোর হুমকি দিয়েছেন। কিন্তুু তার হুমকি ধমকিকে জনগণ ব্যালটের মাধ্যমে আব্দুর রউফকে নির্বাচিত করে বৃদ্ধাঙ্গুলী প্রদর্শন করেছেন।

তিনি বলেন, আমিও একজন যুব-রাজনৈতিক কর্মী হয়ে দেশ ও সমাজ সেবার ব্রত নিয়ে নিজেকে তৈরি করছি। কিন্তু যুবলীগ সভাপতির এহেন আচরণ ও বক্তব্য আগামী প্রজন্মকে রাজনীতিবিমুখ করে দিতে পারে বলে আশংকা করছি। আমি আশা করছি তিনি অচিরেই তার ভুল বুঝতে পেরে সোনারগাঁওবাসীর কাছে ক্ষমা চেয়ে সুষ্ঠ ধারা ও সহবস্থানের রাজনীতি গ্রহণ করবেন।

অন্যদিকে জানাগেছে, নারায়ণগঞ্জ জেলার সোনারগাঁও উপজেলায় ১০টি ইউনিয়ন পরিষদের নির্বাচিত চেয়ারম্যানদের অবজ্ঞা ও তুচ্ছতাচ্ছিল্য করে বক্তব্য রেখেছেন সোনারগাঁ উপজেলা যুবলীগের সভাপতি রফিকুল ইসলাম নান্নু। একই সঙ্গে তিনি চেয়ারম্যানদের ইঙ্গিত করে হুমকি ধমকি দেন। তিনি দাবি করেছেন সোনারগাঁও উপজেলার দশটি ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যানকে এক পাল্লায় রাখলে আর সোনারগাঁও থানা যুবলীগের সভাপতিকে আরেক পাল্লায় রাখলেও সমান হবে না, সেখানে ১০টি ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যানদের চেয়ে থানা যুবলীগের সভাপতির ওজন অনেক বেশি হবে।

এছাড়াও তিনি আকার-ইঙ্গিতে ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যানদের হুমকি-ধমকি দিয়ে বলেন, আপনারা সাবধান হয়ে যান। গত শনিবার সোনারগাঁও উপজেলার বারদী ইউনিয়ন যুবলীগের এক কর্মীসভায় রফিকুল ইসলাম নান্নুর দেওয়া এমন বক্তব্যের ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়লে সোনারগাঁ উপজেলা আওয়ামী লীগের রাজনীতিতে বিরূপ প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি হয়েছে।

একইসঙ্গে রফিকুল ইসলাম নান্নুর এমন বক্তব্যে ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান অনুগামী নেতাকর্মীদের মাঝে কঠোর সমালোচনা শুরু হয়েছে। তারা মনে করেন কোনক্রমেই ১০টি ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যানের সমকক্ষ হতে পারে না থানা যুবলীগের সভাপতি। চেয়ারম্যানরা হলেন জনপ্রতিনিধি আর থানা যুবলীগের সভাপতি হলেন সাংগঠনিকভাবে যুবলীগের নেতৃত্বে থাকা একজন নেতা মাত্র। সুতরাং নেতা এবং জনপ্রতিনিধি কখনো এক হতে পারেনা। রফিকুল ইসলাম নান্নুর এহেন বক্তব্য প্রত্যাহারের দাবি জানিয়েছেন স্থানীয় নেতাকর্মীরা।

ওই কর্মীসভায় সোনারগাঁও থানা যুবলীগের সভাপতি রফিকুল ইসলাম নান্নু নেতাকর্মীদের উদ্দেশ্যে বলেন, আপনারা ঐক্যবদ্ধ থাকবেন। আমাদের কেউ কিছু করতে পারবেনা ইনশাআল্লাহ। বারদী ইউনিয়ন যুবলীগের নেতাকর্মীদের বক্তব্য শুনেছি। আমি পরিস্কারভাবে বলতে চাই যুবলীগের নেতাকর্মী শক্ত ভাষায়, শক্ত অবস্থানে থাকবে। দশটি ইউনিয়নের চেয়ারম্যান আর সোনারগাঁও থানা যুবলীগের সভাপতিকে এক পাল্লায় দিলে এক সমান হবেনা, সভাপতির ওজন বাইড়া যাইবো বইলা দিলাম আপনাদেরকে। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী আমাকে চিনে। প্রত্যেকটা ইউনিয়ন যুবলীগের নেতৃবৃন্দ আমাকে সম্মান করে। আপনাদের ভালবাসা এটা। আমার যুবলীগের নেতাকর্মীদের হুমকি দিবো, একদম মুখ তালা দিয়া থমু বইলা দিলাম। বারদী থেকে ঘোষণা দিলাম, আমার যুবলীগের নেতাকর্মীদের কেউ যদি আঘাত করতে চান তাহলে সাবধান হয়ে যান।

১২ ফেব্রুয়ারি শনিবার বিকেলে সোনারগাঁও উপজেলার বারদী ইউনিয়ন যুবলীগের কার্যালয়ে ইউনিয়ন যুবলীগের কর্মীসভায় এ ধরনের বক্তব্য দেন রফিকুল ইসলাম নান্নু। ইউনিয়ন যুবলীগের সভাপতি রাশেদ উদ্দিন আহমেদের সভাপতিত্বে এসময় উপজেলা যুবলীগের উপজেলা যুবলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক কামাল হোসেন ও যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক লিটন চৌধুরীও বক্তব্য রাখেন। এছাড়া এসময় বারদী ইউনিয়ন যুবলীগসহ উপজেলা যুবলীগের আরো বেশ কয়েকজন নেতৃবৃন্দ সেখানে উপস্থিত ছিলেন।

জানা গেছে, সোনারগাঁ উপজেলার সাদিপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান হিসেবে রয়েছেন প্রবীণ আওয়ামী লীগ নেতা আব্দুর রশিদ মোল্লা, পিরোজপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান রয়েছেন সোনারগাঁ উপজেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম আহবায়ক ইঞ্জিনিয়ার মাসুদুর রহমান মাসুম, বৈদ্যেরবাজার ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান রয়েছেন আলামিন সরকার, বারদী ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান রয়েছেন উপজেলা আওয়ামী লীগের সদস্য মাহবুবুর রহমান বাবুল, জামপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান রয়েছেন আওয়ামী লীগ নেতা হুমায়ুন কবির ভূঁইয়া, সনমান্দি ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান রয়েছেন জাহিদ হাসান জিন্নাহ, কাঁচপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মোশাররফ ওমর, নোয়াগাঁও ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান হিসেবে রয়েছেন শামসুল আলম সামসু, শম্ভুপুরা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান হিসেবে রয়েছেন উপজেলা জাতীয় পার্টির সভাপতি আব্দুর রব ও মোগরাপাড়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান হিসেবে রয়েছেন আরিফ মাসুদ বাবু। এখানে আব্দুর রব জাতীয়পার্টির লাঙ্গল প্রতীকে চেয়ারম্যান হয়েছেন এবং নোয়াগাঁও ইউনিয়নে স্বতন্ত্র পদে চেয়ারম্যান নির্বাচিত হয়ে আওয়ামীলীগে যোগদান করেন সামসুল আলম সামসু। বাকি সবাই আওয়ামীলীগের নৌকা প্রতীকে চেয়ারম্যান নির্বাচিত হোন।