সান নারায়ণগঞ্জ টুয়েন্টিফোর ডটকম:
নারায়ণগঞ্জের সোনারগাঁ উপজেলার নোয়াগাঁও ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে স্বতন্ত্র পদে নির্বাচিত চেয়ারম্যান শামসুল আলম সামসু সোনারগাঁ উপজেলা আওয়ামী লীগ ও উপজেলা আওয়ামী লীগের শীর্ষ নেতাদের নিয়ে কঠোর সমালোচনা করে বেফাঁস বক্তব্য দিয়েছিলেন। অথচ সেই চেয়ারম্যান সামসুল আলমকে সংবর্ধনা দিলেন আওয়ামী লীগের সাবেক সংসদ সদস্য ও উপজেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম আহবায়ক আব্দুল্লাহ আল কায়সার হাসনাত। এ নিয়ে সোনারগাঁ উপজেলা আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের মাঝে বিরূপ প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি হয়েছে।
কারন এর আগে সামসুল আলম বিএনপি থেকে জাতীয় পার্টিতে এবং জাতীয় পার্টির উপজেলার সহ-সভাপতি পদে থেকে আওয়ামী লীগের নৌকা প্রতীকের প্রার্থীকে পরাজিত করে চেয়ারম্যান নির্বাচিত হন। চেয়ারম্যান নির্বাচিত হয়ে ৪দিনের মাথায় আওয়ামী লীগে যোগদান করেন এবং এর দুদিনের পরে আড়াইহাজার উপজেলার একটি ধর্মীয় অনুষ্ঠানে গিয়ে উপজেলা আওয়ামী লীগ ও উপজেলা আওয়ামী লীগের শীর্ষ বেশ কয়েকজন নেতাকে নিয়ে কটাক্ষ করে বেফাঁস বক্তব্য রাখেন। যা নিয়ে সেই সময় কঠোর সমালোচনার সৃষ্টি হয়েছিল। অবশেষে সেই বিএনপি থেকে আসা জাতীয় পার্টির নেতা, জাতীয় পার্টি থেকে আওয়ামী লীগে আসা সামসুই পেলেন আওয়ামীলীগ নেতাদের সংবর্ধনা। যেখানে নৌকা প্রতীক নিয়ে পরাজিত প্রার্থী আব্দুল বাতেন ফেসবুক লাইভে কান্নাকাটি করেছিলেন। সামসুর সংবর্ধনায় ইউনিয়ন আওয়ামীলীগ নেতাদের হৃদয়ে রক্তক্ষরণ হচ্ছে।
জানাগেছে, সোনারগাঁয়ে নোয়াগাঁও ইউনিয়নে নোয়াগাঁও হাই স্কুল কমিটিতে নোয়াগাঁও ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান সামসুল আলম সামসুকে সভাপতি নির্বাচিত হওয়ার সংর্বধনা দেওয়া হয়। ১২ মার্চ শনিবার দুপুরে নোয়াগাঁও হাই স্কুল মাঠে এ সংবর্ধনার আয়োজন করেন নোয়াগাঁও ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ও প্রতিষ্ঠানটির সভাপতি সামসুল আলম সামসু।
সংবর্ধনা অনুষ্টানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন, সোনারগাঁ উপজেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম আহবায়ক ও নারায়ণগঞ্জ ৩ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য আবদুল্লাহ আল কায়সার হাসনাত। বিশেষ অতিথি- আড়াইহাজার উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান মুজাহিদুর রহমান হেলো সরকার, সোনারগাঁ উপজেলা যুবলীগের সভাপতি মোঃ রফিকুল ইসলাম নান্নু, বৈদ্যের বাজার ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আল আমিন সরকার, হাইজাদী ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আলী হোসাইন, উচিৎপুরা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ইসমাইল হোসেনসহ নোয়াগাঁও ইউপি সদস্যরা ও স্কুলের শিক্ষকরা সহ অন্যান গণ্যমান ব্যক্তিবর্গরা উপস্থিত ছিলেন।
স্থানীয়দের সুত্রে, গত বছরের ২৮ নভেম্বর নারায়ণগঞ্জের সোনারগাঁও উপজেলার নোয়াগাঁও ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে বিএনপিতে ভর দিয়ে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে চেয়ারম্যান নির্বাচিত হয়েছেন সামসুল আলম সামসু। অথচ জাতীয়পার্টির শীর্ষ পদে থেকে তিনি বিএনপিকে ম্যানেজ করে সরকারবিরোধী ও সরকার পতনের ষড়যন্ত্রের আন্দোলনে নাশকতার ডজন ডজন মামলার আসামিদের নিয়ে নির্বাচনে নেমে জয়ী হোন। নির্বাচনকালে বিএনপি জামাত হেফাজতের সঙ্গে গোপন সম্পর্ক থাকলেও নির্বাচনের পর তিনি বিএনপি জামাত ও হেফাজতের উপর সম্পূর্ণ ভর করে চেয়ারম্যানশীপ চালিয়ে যাচ্ছেন বলে স্থানীয়দের দাবি। স্থানীয়রা জানান- এমন চিত্রও পাওয়া গেলো এবার।
যদিও নির্বাচনের পরপরই উপজেলা আওয়ামীলীগের আহŸায়ক ও উপজেলা চেয়ারম্যান অ্যাডভোকেট সামসুল ইসলাম ভুঁইয়ার হাত ধরে আওয়ামীলীগে যোগদান করেন চেয়ারম্যান সামসু। আর আওয়ামীলীগে যোগদান করেই আড়াইহাজার উপজেলার একটি ধর্মীয় অনুষ্ঠানে গিয়ে আওয়ামীলীগ ও জাতীয়পার্টি এবং আওয়ামীলীগ ও জাতীয়পার্টির শীর্ষ নেতাদের নিয়ে কটাক্ষ করে বেফাঁস কথাবার্তা বলেন তিনি। এক পর্যায়ে নোয়াগাঁও ইউনিয়নে তিনি নির্বাচিত হলেও নিজেকে তিনি আড়াইহাজারের সন্তান বলেও দাবি করেছেন এবং নোয়াগাঁও ইউনিয়ন এখন আড়াইহাজার মানুষেরই হয়ে গেছে বলেও দাবি করেন। ওই ঘটনার তীব্র সমালোচনার পরে বৈদ্যেরবাজার ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনেও নৌকা প্রতীকের প্রার্থী আল আমিন সরকারের বিরোধীতা করে স্বতন্ত্র চেয়ারম্যান প্রার্থী মাহবুব সরকারের পক্ষে প্রকাশে ভোট প্রার্থনায় যান সামসুল আলম।
এদিকে স্থানীয়রা জানিয়েছেন- চেয়ারম্যান নির্বাচিত হওয়ার পরে আওয়ামীলীগে যোগদান করলেও সামসুল আলমের সাথে সার্বক্ষনিক সখ্যতায় দেখা যাচ্ছে বিএনপির লোকজনকে। এক সময় বিএনপির রাজনীতি করতেন সামসুল আলম। পরবর্তীতে তিনি জাতীয়পার্টিতে যোগদান করেন। উপজেলা জাতীয়পার্টির সহ-সভাপতির পদেও ছিলেন নির্বাচনকালে। জাতীয়পার্টির পদে থেকেই তিনি আওয়ামীলীগে যোগদান করেন। এসব কারনে স্থানীয়রা বলছেন- বিএনপি জামাত ক্ষমতায় আসলে আবারো যাতে বিএনপিতে প্রবেশ করতে পারে সেই রাস্তাও পরিস্কার করে রাখছেন সামসুল আলম। যে কারনে বিএনপি জামাতের নেতাকর্মীদের সঙ্গে তার উঠাবসাও দেখা যাচ্ছে।
ইউনিয়ন বিএনপির শীর্ষ পর্যায়ের নেতাকর্মীদের সঙ্গে নিয়ে সামসুল আলম চেয়ারম্যানি করছেন। বিএনপির লোকজনের সঙ্গে তার সখ্যতার ছবি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়েছে। যার মধ্যে একটি ছবিতে ইউনিয়ন বিএনপির আহŸায়ক ড. মিজানুর রহমান, যুগ্ম অহা¦ায়ক গোলজার হোসেন, যুবদল নেতা সিরাজ সহ অনেকের সঙ্গে সামসুল আলমের সখ্যতা। কেউ কেউ জানিয়েছেন- সম্প্রতি নোয়াগাঁও ইউনিয়ন বিএনপির আহŸায়ক কমিটি গঠন করেন উপজেলা বিএনপির আহ্বায়ক আজহারুল ইসলাম মান্নান। সে কারনেই বিএনপির নতুন কমিটির নেতাদের সঙ্গে সখ্যতা তৈরি করেছেন তিনি। কেউ কেউ বলছেন- হয়তো নিজের শিকর পুরোনো দলে ফিরে যাচ্ছেন সামসু। যে কারনে বিএনপির কমিটিকে স্বাগত জানিয়েছেন তিনি।
২৮ নভেম্বর চেয়ারম্যান নির্বাচিত হওয়ার পর সামসুল আলম জাতীয়পার্টির পদে বহাল থেকেই ৪ ডিসেম্বর শনিবার দুপুরে সোনারগাঁ উপজেলা অডিটোরিয়ামে উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ও উপজেলা আওয়ামীলীগের আহ্বায়ক অ্যাডভোকেট সামসুল ইসলাম ভুইয়ার হাত ধরে আওয়ামীলীগে যোগদান করেন। ফুলের তোড়া দিয়ে আওয়ামীলীগে যোগদান করানো হয়।
এর দুদিনের মাথায় আড়াইহাজারে গিয়ে একটি অনুষ্ঠানে সামসু আওয়ামীলীগের সাবেক এমপি আব্দুল্লাহ আল কায়সার হাসনাত, জেলা আওয়ামীলীগের যুগ্ম সম্পাদক আবু জাফর চৌধুরী ও বারদী ইউনিয়নের আওয়ামীলীগ নেতা দীপক কুমার বনিক সহ বেশকজনের নাম উল্লেখ্য করে আওয়ামীলীগকে নিয়ে কঠোর সমালোচনা করেন। ‘আওয়ামীলীগ একটা দল, ৭টা ৮টা খন্ড, কায়কার গুরু, বিরু গ্রুপ, বনিক গ্রুপ, এই গ্রুপ, সেই গ্রুপ’ এ ধরণের মন্তব্যও করেন সামসুল আলম।