সান নারায়ণগঞ্জ টুয়েন্টিফোর ডটকম:
নারায়ণগঞ্জ জেলার মধ্যে ৫টি সংসদীয় আসনের মধ্যে বেশ গুরুত্বপূর্ণ এলাকা নারায়ণগঞ্জ-৩(সোনারগাঁ) সংসদীয় আসনটি। ২০১৪ সাল থেকে এই আসনে সংসদ সদস্য হিসেবে রয়েছেন আওয়ামীলীগের নেতৃত্বাধীন মহাজোটের শরীক দল জাতীয়পার্টি থেকে এমপি লিয়াকত হোসেন খোকা। তিনি জাতীয় পার্টির প্রেসিডিয়াম সদস্য ও ঢাকা বিভাগীয় অতিরিক্ত মহাসচিব, একই সঙ্গে তিনি কেন্দ্রীয় জাতীয় স্বেচ্ছাসেবক পার্টির আহ্বায়ক পদেও দায়িত্ব পালন করছেন। মুলত সরকারের উচ্চ পর্য়ায়ের সঙ্গে লিয়াকত হোসেন খোকার সুসম্পর্ক ও জাতীয় পার্টির নীতিনির্ধারকদের মধ্যে অন্যতম হওয়ায় জাতীয় রাজনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ হওয়ায় এই আসনে তিনি মহাজোটের প্রার্থী হিসেবে এমপি নির্বাচিত হোন।
এমন পরিস্থিতিতে সোনারগাঁও উপজেলায় আওয়ামীলীগের রাজনীতিতে এক দৈনদশা যে বিরাজ করছে সেটা তাদের কর্মকান্ডেই স্পষ্ট। বারবার ঐক্যবদ্ধ আওয়ামীলীগ গঠনে চেষ্টা করে তারা নিজেরাই বিরোধে জড়িয়ে যাচ্ছেন। যার ফলে আওয়ামীলীগ থেকে এই আসনটি জাতীয়পার্টির কাছে যাওয়ার অন্যতম আরেকটি কারন। গত জাতীয় সংসদ নির্বাচনে এই আসন থেকে ১৬ জন ব্যক্তি আওয়ামীলীগের নৌকা প্রতীক চেয়ে মনোনয়নপত্র সংগ্রহ করেছিলেন। কিন্তু আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে এবার সেই সংখ্যা ছাড়িয়ে দুই ডজনে নামতে পারে বলে স্থানীয়রা ধারণা করছেন। ইতিমধ্যে বেশকজন নিজেদের মনোনয়ন প্রত্যাশি হিসেবে জাহির করতেও শুরু করেছেন।
স্থানীয় নেতাকর্মীরা বলছেন, এই আসনে এমন সব ব্যক্তিরাও জাতীয় সংসদ নির্বাচনে নৌকা প্রত্যাশি দাবি করেন যা দলের ত্যাগী নিবেদিতপ্রাণ শীর্ষ পর্যায়ের নেতাদের জন্য লজ্জাজনক। আওয়ামীলীগের রাজনীতিতে যাদের কিঞ্চিত পরিমান ভুমিকা নেই তারাও নৌকা প্রত্যাশি দাবি করেন। আবার আওয়ামীলীগের রাজনীতিতে জড়িত থাকলেও যারা ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে চেয়ারম্যান কিংবা মেম্বার পদে জয়ী হওয়াটাও দূরহ হবে তারাও এমপি নির্বাচনের প্রত্যাশা করেন। আবার যারা সোনারগাঁয়ের রাজনীতিতেই ছিলেন না, তারা এখান থেকে নৌকা প্রতীক চান।
যদিও এ বিষয়ে অনেক নেতাকর্মীদের অভিমত- দলের কাছে যে কেউ মনোনয়ন চাইতে পারে, এটা তার রাজনৈতিক ও গণতান্ত্রিক অধিকার। দল কাকে মনোনিত করবে সেটা দলের বিষয়। কিন্তু দলের মধ্যে ভারসাম্য বজায় রাখতে হলে সোনারগাঁও উপজেলা আওয়ামীলীগকে সাংগঠনিকভাবে একপ্লাটফর্মে আসতে হবে। নতুবা আগামী নির্বাচনে দুইডজন কিংবা অর্ধশত নৌকা প্রতীকে মনোনয়ন প্রত্যাশি হলেও অবাক হওয়ার কিছু থাকবে না। কারন এখানে আওয়ামীলীগে যতগুলো গ্রুপ আছে, একেকটা গ্রুপ থেকে দুইজন করে মনোনয়নপত্র সংগ্রহ করলেও দুইডজন হয়ে যাবে। গত নির্বাচনে যারা মনোনয়ন প্রত্যাশা নিয়ে মনোনয়নপত্র সংগ্রহ করেছিলেন তাদের মধ্যে অনেককেই বিগত সাড়ে ৩ বছর ধরে সোনারগাঁয়ে দেখা যায়নি। লন্ডন থেকেও এখানকার নৌকা প্রত্যাশি জাহির করা যায়, কেউ ঢাকায় থেকে সোনারগাঁয়ের এমপি হওয়ার স্বপ্ন দেখেন।
যদিও স্থানীয় আওয়ামীলীগের শীর্ষ ভাগ নেতাকর্মীরা মনে করেন- এই আসনে আওয়ামীলীগের মনোনয়ন প্রত্যাশিদের মধ্যে শীর্ষ পর্যায়ে থাকবেন সাবেক এমপি আব্দুল্লাহ আল কায়সার হাসনাত, জেলা আওয়ামীলীগের সদস্য মাহফুজুর রহমান কালাম, জেলা আওয়ামীলীগ নেতা আবু জাফর চৌধুরী বিরু।আওয়ামীলীগের একটি উপ-কমিটির সদস্য দীপক কুমার বনিক নিজেকে মনেনোয়ন প্রত্যাশি হিসেবে দাবি করেছেন গণমাধ্যমে।
এদিকে ভিন্নমাত্র যোগ করেছেন মহানগর আওয়ামীলীগের সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট খোকন সাহা। যিনি গত নির্বাচনে এই আসন থেকে নৌকা প্রতীক চেয়ে মনোনয়নপত্র সংগ্রহ করেছিলেন। সান নারায়ণগঞ্জকে অনেকে জানান, সম্প্রতি জাতীয় দিবসের একটি অনুষ্ঠানে সোনারগাঁয়ে দেখা গেলো খোকন সাহাকে। আগামী নির্বাচনেও তিনি আবারো যে মনোনয়ন চাইতে পারেন সেই আভাস দিয়ে রাখছেন। লন্ডন প্রবাসী শফিকুল ইসলাম ও অর্থনীতিবিদ দাবিদার হুমায়ুন কবির ভুঁইয়াকে এবার দেখা না গেলেও নির্বাচন নাগাদ উকিঝুঁকি দিতে পারেন। এখন দেখার বিষয় চলতি বছরের শেষের দিকে নির্বাচনী মাঠে কে কে নামেন। সর্বশেষ নির্বাচন নাগাদ সময়ে মনোনয়ন প্রত্যাশির সংখ্যা কততে ঠেকে।
উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান ও উপজেলা আওয়ামীলীগের আহ্বায়ক অ্যাডভোকেট সামসুল ইসলাম ভুঁইয়া গত নির্বাচনে দলের নৌকা প্রতীক প্রত্যাশি ছিলেন। সামনের নির্বাচনে চাইলেও অবাক করার মত নয়। গত নির্বাচনে তার সহধর্মিনী জেলা মহিলা লীগের সভাপতি প্রফেসর শিরিন বেগম, কেন্দ্রীয় যুব মহিলা লীগ নেত্রী ড. সেলিনা আক্তার সহ মোট ১৬ জন মনোনয়নপত্র সংগ্রহ করেছিলেন।