সান নারায়ণগঞ্জ টুয়েন্টিফোর ডটকম:
নারায়ণগঞ্জের সোনারগাঁও উপজেলায় আওয়ামীলীগের গোরাপত্তন রাজনীতিতে যে পরিবারটির ভুমিকা রয়েছে সেই হাসনাত পরিবারের বেশকজন সদস্যের বিরুদ্ধেই অভিযোগ ওঠেছে তারাই নিজ দলের প্রতীক নৌকার প্রার্থীদের পরাজিত করতে মুখ্য ভুমিকা রাখেন। বর্তমান মোগরাপাড়া ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনকে ঘিরে এই পরিবারের অনেক সদস্যের অতীত ভুমিকা নিয়ে আলোচনায় সোনারগাঁয়ের রাজনীতির মাঠ গরম। হাসনাত পরিবারের কোনো সদস্য বিএনপি জামাত অথবা অন্যান্য দলের রাজনীতিতে কেউ না থাকলেও নিজ দলের সিদ্ধান্ত তারা অনেক সময় নারাজ হয়ে বিরোধীতা করেছেন চরমভাবে। যদিও এই পরিবারের অনেক সদস্যের বিরুদ্ধে এমন অভিযোগ ওঠলে এই পরিবারের পক্ষেই যুক্তি তুলে ধরছেন আবার অনেকেই।
মোগরাপাড়া ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনকে ঘিরে উপজেলা আওয়ামীলীগের আহ্বায়ক ও উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান অ্যাডভোকেট সামসুল ইসলাম ভুঁইয়ার একটি বক্তব্য সোনারগাঁও জুড়ে তোলপাড় সৃষ্টি করেছে। কারন এতদিন হাসনাত পরিবারের দিকে অন্যান্যরা অভিযোগের আঙ্গুল তুললেও এবার প্রকাশ্যেই সামসুল ইসলাম ভুঁইয়া বক্তব্যের বোমা ফাটিয়েছেন। তা্র বক্তব্যে তিনি স্পষ্ট করেছেন হাসনাত পরিবারের অনেক সদস্য দলীয় স্বার্থের চেয়ে ব্যক্তিগত স্বার্থকে বড় করে দেখেছেন।
ঘটনা সূত্রে, সোনারগাঁও উপজেলার ঐতিহ্যবাহী আওয়ামী রাজনৈতিক পরিবার হাসনাত পরিবারকে উদ্দেশ্য করে অ্যাডভোকেট সামসুল ইসলাম ভূঁইয়া বলেছেন, সোনারগাঁয়ের একটি পরিবার নিজেদের আওয়ামীলীগের প্রতিষ্ঠাতা দাবি করেন। আপনারা আওয়ামীলীগ প্রতিষ্ঠা করেছেন, ভাল কথা- সেজন্য আপনাদের ধন্যবাদ। কিন্তু আওয়ামীলীগের পরিবার দাবি করে নৌকার মনোনয়ন না পেলেই নৌকার বিরুদ্ধে গিয়ে বিদ্রোহী প্রার্থী হয়ে নৌকার বিরুদ্ধে যাবেন এটা কেমন আওয়ামীলীগ?
তিনি আরো বলেছেন, আমরা যারা আওয়ামীলীগ করি তারা শেখ হাসিনার সকল আদেশ নির্দেশ মেনে নৌকার পক্ষে কাজ করবো। শেখ হাসিনা বিগত দিনে সোনারগাঁয়ে যাদের নৌকা প্রতিক দিয়েছেন আমরা তাদের সাথে থেকে তাদের নির্বাচন করেছি। আগামীতেও করবো। আজ ঐতিহাসিক মোগরাপাড়া ইউনিয়নে সোহাগ রনিকে নৌকা প্রতিক দিয়েছেন, আমরা সকলে মিলে নৌকা প্রতিককে জয়ী করার জন্য কাজ করে যাবে।
গত ১৭ মে মঙ্গলবার দুপুরে মোগরাপাড়া ইউনিয়ন নির্বাচনের নৌকার প্রার্থী হাজী সোহাগ রনির মনোনয়ন জমা দেয়ার আগে সংক্ষিপ্ত বক্তব্যে এসব কথা বলে সামসুল ইসলাম ভুইয়া।
তিনি বলেছেন, সোহাগ রনিকে নৌকা প্রতিক দেয়ার পর কেন্দ্র থেকে আমাকে ডেকে সোহাগ রনির মনোনয়নপত্র আমার হাতে দিয়ে নেত্রী বলেছেন আপনি সোনারগাঁ আওয়ামীলীগের অভিভাবক। আপনার হাতে নৌকার মনোনয়নপত্র তুলে দিলাম, আপনি আওয়ামীলীগের সকল নেতাকর্মীদের সাথে নিয়ে ১৫ তারিখে নৌকাকে জয়ী করে আমাদের কাছে বিজয়ের মালা তুলে দিবেন।
একই দিন সামসুল ইসলাম ভুঁইয়ার পূর্বে বক্তব্য রাখেন জেলা আওয়ামীলীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ডা. আবু জাফর চৌধুরী বিরু।
এর দুইদিনের মাথায় সামসুল ইসলাম ভুঁইয়া ও আবু জাফর চৌধুরী বিরুর বক্তব্যের কঠোর প্রতিবাদ জানান আওয়ামীলীগের বিদ্রোহী প্রার্থী ও মোগরাপাড়া ইউনিয়নের বর্তমান চেয়ারম্যান আরিফ মাসুদ বাবু। ১৯ মে মনোনয়নপত্র যাচাই বাছাই শেষে আরিফ মাসুদ বাবু অভিযোগ তুলেছেন, মোগরাপাড়া ইউনিয়ন নির্বাচনকে ঘিরে ষড়যন্ত্রকারী ও দুস্কৃতকারী দুটি শব্দ আবু জাফর চৌধুরী গত ১৭ মে বক্তব্যে উল্ল্যেখ করেছেন। বিরুর কাছে এ ধরণের বক্তব্য আশা করেনা বলে দাবি করেছেন বাবু।
একই সঙ্গে সামসুল ইসলাম ভুঁইয়ার বক্তব্যের প্রসঙ্গে আরিফ মাসুদ বাবু দাবি করেন, আমি প্রার্থী হওয়ার আগেই আওয়ামীলীগের পদ থেকে অব্যাহতি নিয়েছি। এই নির্বাচনে আমার পরিবারের কোনো সদস্যও আমার সঙ্গে নাই। আমি এলাকাবাসীর অনুরোধে স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়েছি। সুতরাং এখানে আমার পরিবারকে টেনে আনা সঠিক হবে না। সামসুল ইসলাম ভুঁইয়া যে বক্তব্য রেখেছেন এবং আবু জাফর চৌধুরী বিরু যে মন্তব্য করেছেন আমি তাদের এমন বক্তব্য প্রত্যাহার করার অনুরোধ জানাই। নতুবা মোগরাপাড়া ইউনিয়নবাসী এর কঠোর জবাব দিবে।
তবে সামসুল ইসলাম ভুঁইয়ার বক্তব্যের রেস ধরে স্থানীয় আওয়ামীলীগ নেতাকর্মীদের সঙ্গে কথা হলে জানাগেছে, গত ২০১৮ সালের জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আওয়ামীলীগের নেতৃত্বাধীন মহাজোটের শরীক দল জাতীয় পার্টি থেকে নারায়ণগঞ্জ-৩(সোনারগাঁ) আসনে মনোনিত হোন লিয়াকত হোসেন খোকা। কিন্তু মহাজোটের সিদ্ধান্ত অমান্য করে স্বতন্ত্র প্রার্থী হোন সাবেক এমপি আব্দুল্লাহ আল কায়সার হাসনাত। এবার তারই চাচা আরিফ মাসুদ বাবু ইউপি নির্বাচনে নৌকার বিদ্রোহী প্রার্থী হয়েছেন। সামসুল ইসলাম ভুঁইয়ার বক্তব্যের রেস ধরে অতীতে হাসনাত পরিবারের কে কে নৌকার বিরোধীতা করেছিলেন কিনা, কে নৌকা পুড়িয়েছিলেন, এমন দায়ে কে বহিস্কার হয়েছিলেন সেইসব বিষয়গুলোও এখন মানুষের মাঝে আলোচনায় সোনারগাঁয়ের রাজনীতিতে।