সান নারায়ণগঞ্জ টুয়েন্টিফোর ডটকম:
দীর্ঘদিন যাবত বিএনপির সক্রিয় রাজনীতিতে জড়িত শাহাদুল্লাহ মুকুল। ছাত্রদলের রাজনীতি করতে করতে যখন ছাত্রদলের বুড়ো খ্যাতদের তালিকায় ওঠে যায় তার নাম তখন তাকে বন্দর থানা ছাত্রদলের সেক্রেটারি পদে অধিষ্ট করা হয়। কিন্তু তৎকালীন মহানগর ছাত্রদলের আহ্বায়ক মনিরুল ইসলাম সজল তার একক সিদ্ধান্তে কমিটি গঠন করলেও কেন্দ্রীয় ছাত্রদলের নির্দেশে ২৪ ঘন্টার মধ্যে সেই কমিটি বাতিল করেন তিনি।
এবার একই কায়দায় পড়েছে বন্দর উপজেলা যুবদলের কমিটি গঠনেও। এখানেও তাকে যুবদলের সেক্রেটারি করা হয়। তবে এবার ২৪ ঘন্টাও পেরুতে পারেনি তার সেক্রেটারি পদটি। বাতিল না করলেও এবার ১২ঘন্টার মধ্যেই কমিটির সকল কার্যক্রম স্থগিত করে দেয় কেন্দ্রীয় যুবদল। ফলে ছাত্রদলের কমিটিতে ছিলেন ২৪ ঘন্টা সেক্রেটারি এবার যুবদলের কমিটিতে সেক্রেটারি তিনি ১২ ঘন্টার!
জানাগেছে, ৫ জানুয়ারির নির্বাচনের আগে নারায়ণগঞ্জ মহানগর ছাত্রদলের তৎকালীন আহ্বায়ক মনিরুল ইসলাম সজল একক সিদ্ধান্তে সদর ও বন্দর থানা সহ ৬টি ইউনিয়নের কমিটি ঘোষণা করেন। যেখানে অন্যান্য ৬ যুগ্ম আহ্বায়ক ছিলেন না। ওই যুগ্ম আহ্বায়কদের কেন্দ্রীয়ভাবে জোড়ালো তদবিরের কারনে ২৪ ঘন্টার মধ্যেই সকল কমিটি বাতিল করে দেন মনিরুল ইসলাম সজল।
মুলত ওইসব কমিটিগুলো বর্তমান চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার উপদেষ্টা ও তৎকালীন জেলা বিএনপির সভাপতি অ্যাডভোকেট তৈমূর আলম খন্দকারের বাসায় বসে কমিটির খসড়া তৈরি করা হয়। যা জেলা বিএনপির কার্যালয়ে কমিটি ঘোষণা করা হয়। ওই সময় বন্দরে ছাত্রদলের কমিটিতে শাহাদুল্লাহ মুকুলকে সভাপতি করতে চেয়েছিলেন তৈমূর আলম খন্দকার। মুকুল হলেন বন্দর থানা বিএনপির সভাপতি নূরউদ্দীন আহমেদের ভাতিজা। নূরউদ্দীন আহমেদ ওই সময় তৈমূর আলম খন্দকারের সঙ্গে রাজনীতি করতেন।
পরবর্তীতে বন্দর উপজেলা ছাত্রদলের নেতা হারুন অর রশিদ লিটনকে সভাপতি ও শাহাদুল্লাহ মুকুলকে সাধারণ সম্পাদক করে সাত সদস্য বিশিষ্ট কমিটি গঠন করা হয়। এ কমিটিতে ছিলেন সিনিয়র সহ-সভাপতি পদে এসএম নুরুজ্জামান, ১ম যুগ্ম সম্পাদক আব্দুস সাত্তার, যুগ্ম সম্পাদক মিজানুর রহমান, সাংগঠনিক সম্পাদক আল-আমিন ভূঁইয়া জনি ও দপ্তর সম্পাদক করা হয় বিজয় হোসেন পনির।
বন্দর থানা ছাত্রদলের নেতা মোহাম্মদ রাসেলকে আহ্বায়ক করে ১৩ সদস্য বিশিষ্ট আহ্বায়ক কমিটি গঠন করা হয়। এতে যুগ্ম সম্পাদক হিসেবে করা হয় আশিকুর রহমান আলী, কামরুল হাসান রনি, রাহিদ ইসতিয়াক, জনি মোল্লা, শিপলু, মহসিন, অহিদুর রহমান, অহিদুজ্জামান শাহজাদা, বাপ্পী দেওয়ান, জাহিদ হাসান দিপু, মুনজুর হোসেন ও শামীম মিয়া।
সিদ্ধিরগঞ্জ থানা ছাত্রদলের কমিটিতে সভাপতি মমিনুর রহমান বাবু ও রিপন সরকারকে সাধারণ সম্পাদক করে ৯ সদস্য বিশিষ্ট কমিটি গঠন করা হয়। এতে সাংগঠনিক সম্পাদক করা হয় এরশাদ আলী, সিনিয়র সহ-সভাপতি আহসান খলিল শ্যামল, সহ-সভাপতি আলী নূর হোসেন, সহ-সভাপতি রফিকুল ইসলাম সাগর, যুগ্ম সম্পাদক রিয়াজুল আলম ইমন, শাহরিয়ার খান তুষার ও সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক করা হয় নাইম সিদ্দিক তুষারকে।
এ ছাড়াও সরকারী তোলারাম কলেজ শাখা ছাত্রদলের কমিটিতে সভাপতি করা হয় কাউসার আহম্মেদ নামে একজনকে এবং সাধারণ সম্পাদক করা হয় সাইদুর রহমানকে। সিনিয়র সহ-সভাপতি আশিকুর রহমান অনি, সহ-সভাপতি মাসুদ রানা, যুগ্ম সম্পাদক শাহজালাল, সাংগঠনিক সম্পাদক করা হয় বাইজিদ আল কাউসার ও রফিকুল ইসলামকে সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক করা হয়।
একইভাবে নারায়ণগঞ্জ কলেজ শাখা ছাত্রদলের সভাপতি করা হয় জোবায়ের হোসেন ঝলক, সাধারণ সম্পাদক শান্ত জামাল, সিনিয়র সহ-সভাপতি সাইফুল ইসলাম ইরাম, যুগ্ম সম্পাদক রিকসন ও মাসুম বিল্লাহকে সহ-সাধারণ সম্পাদক করে কমিটি গঠন করা হয়।
অন্যদিকে নারায়ণগঞ্জ সদর থানা ছাত্রদলের সাত সদস্য বিশিষ্ট কমিটিতে সভাপতি রাফিউদ্দীন আহম্মেদ রিয়াদ ও সাধারণ সম্পাদক শেখ মাগফুর ইসলাম পাপন, সাংগঠনিক সম্পাদক সাইফুল ইসলাম আপন, সিনিয়র সহ-সভাপতি এমএএম সাগর, সহ-সভাপতি আব্দুর সাত্তার, যুগ্ম সম্পাদক জাহিদ হোসেন খন্দকার ও ফারহান আহম্মেদ নাঈমকে যুগ্ম সম্পাদক করা হয়। এসব কমিটিগুলো ২৪ ঘন্টার মধ্যে বাতিল করা হয়। ছাত্রদলের এসব নেতাদের অনেকেই এখন স্বেচ্ছাসেবক দল ও যুবদলের রাজনীতিতে পদ পেয়েছেন। আবার অনেকেই রাজনীতি থেকে সরে গেছেন। অনেকের ছিটেফুটাও অস্তিত্ব দেখা যায়না।
এদিকে, নারায়ণগঞ্জ সিটি কর্পোরেশনের বাহিরে বন্দরের ৫টি ইউনিয়ন এলাকা নিয়ে মহানগর যুবদলের ঘোষণা করা বন্দর উপজেলা যুবদলের আহ্বায়ক কমিটি গঠনের ১২ ঘন্টার মধ্যে তা স্থগিত করেছে কেন্দ্রীয় যুবদল। ৬ এপ্রিল শনিবার বন্দরে ১৯ সদস্য বিশিষ্ট আহ্বায়ক কমিটির অনুমোদন করেন নারায়ণগঞ্জ মহানগর যুবদলের সভাপতি মাকসুদুল আলম খন্দকার খোরশেদ ও সেক্রেটারি মমতাজ উদ্দীন মন্তু। কমিটি গঠনের ১২ ঘন্টার মধ্যেই এই কমিটির সকল কার্যক্রম স্থগিত রাখার নির্দেশ দিয়েছে কেন্দ্রীয় যুবদলের কমিটি।
আরও জানাগেছে, ২০১২ সালে নারায়ণগঞ্জ মহানগর যুবদলের আহ্বায়ক কমিটি গঠনের পর থেকে বন্দরের ৫টি ইউনিয়ন তৎকালীন জেলা যুবদল দাবি করে আসছিল। ওই সময় কেন্দ্রীয় যুবদলের নেতারা ৫টি ইউনিয়ন জেলার আওতাধীন থাকবে বলে একটি চিঠিও দিয়েছিলেন। কিন্তু জেলা যুবদলের তৎকালীন সভাপতি ও সেক্রেটারি বিরোধ থেকে সরে দাড়িয়ে ৫টি ইউনিয়ন পরিচালনার জন্য মহানগর কমিটিকে সুযোগ করে দেয়। যার ফলে সেখানে বন্দর উপজেলা যুবদলের কমিটি গঠন করেছিল মহানগর যুবদল। সেই সঙ্গে সিটি কর্পোরেশনের ভিতরের এলাকা নিয়ে বন্দর থানা যুবদলের কমিটিও গঠন করে মহানগর যুবদল।
এর আগে জেলা যুবদলের আওতাধীন দাবি করে বন্দর উপজেলা যুবদলের ব্যানার নিয়ে ঢাকায় এক কর্মসূচিতে যোগদান করতে গেলে মহানগর যুবদলের নেতাকর্মীদের দ্বারা মারধরের শিকার হন বন্দর উপজেলা ছাত্রদলের সাবেক সভাপতি মহিউদ্দীন শিশির।
ওই ঘটনায় প্রতিবাদ জানিয়ে বন্দরে তৎকালীন জেলা বিএনপির সভাপতি বর্তমান চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা তৈমূর আলম খন্দকার ও মহানগর যুবদলের সভাপতি মাকসুদুল আলম খন্দকার খোরশেদের বিরুদ্ধে জুড়া ঝাড়– মিছিল করেছিলেন কেন্দ্রীয় ওলামাদলের সহ-সভাপতি মুন্সী সামসুর রহমান খান বেনু ও বন্দর উপজেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক মাজহারুল ইসলাম হিরন। পরবর্তীতে তৎকালীন জেলা যুবদলের সভাপতি ও সেক্রেটারি বিরোধ এড়াতে মহানগর যুবদলের উপর ছেড়ে দেয় ওই ৫টি ইউনিয়ন। কিন্তু বর্তমান জেলা যুবদল সেই ৫টি ইউনিয়ন নিজেদের দাবি করায় আবারো মহানগর ও জেলা যুবদলের মধ্যে বিরোধের সৃষ্টি হয়েছে। ওই এলাকা থেকে জেলা ও মহানগর যুবদলের দুটি কমিটিতেই নেতাদের পদে রাখা হয়েছে।
কমিটির কার্যক্রম স্থগিতের বিষয়ে কেন্দ্রীয় যুবদলের দপ্তর বিষয়ক সম্পাদক কামরুজ্জামান দুলাল ‘সান নারায়ণগঞ্জ টুয়েন্টিফোর ডটকম’কে বলেন, বন্দর উপজেলা যুবদলের কমিটি আপাতত স্থগিত করা হয়েছে। কেন্দ্রীয় যুবদলের সভাপতি ও সেক্রেটারির নির্দেশ এই কমিটির কার্যক্রম স্থগিত রাখা। এ বিষয়ে নারায়ণগঞ্জের যুবদলের নেতাদের জানানো হয়েছে।’
তিনি আরও বলেন, এখন কাগজের মাধ্যমে এভাবে কমিটি হবেনা। সকল কমিটি এখন সম্মেলনের মাধ্যমে গঠন করা হবে।’
বন্দর উপজেলার ৫টি ইউনিয়ন জেলা নাকি মহানগর কমিটির আওতাধীন থাকবে জানতে চাইলে তিনি বলেন, এ বিষয়ে আমরা পরে সিদ্ধান্ত জানাবো। আপাতত আমরা এ বিষয়ে কিছু বলছিনা। মহানগর যুবদল বন্দরে যে কমিটি গঠন করেছে সেটা আমরা স্থগিত করেছি।’
এদিকে জেলা যুবদলের সভাপতি শহিদুল ইসলাম টিটু দাবি করেছেন- বন্দরে সিটি কর্পোরেশনের বাহিরের ৫টি ইউনিয়ন জেলা যুবদলের আওতাধীন হিসেবেই রাখা হয়েছে। ওই ৫টি ইউনিয়ন থেকে অনেক নেতাদের জেলা যুবদলে রেখেই জেলা যুবদলের পূর্ণাঙ্গ কমিটি অনুমোদন করেছেন কেন্দ্রীয় যুবদলের সভাপতি ও সেক্রেটারি।
তবে এ বিষয়ে জানতে চাইলে নারায়ণগঞ্জ মহানগর যুবদলের সভাপতি মাকসুদুল আলম খন্দকার খোরশেদ বলেন, কেন্দ্রীয়ভাবে আমাদের জানানো হয়েছে আলোচনার মাধ্যমে কমিটি গঠন করতে। আমরা আলোচনার মাধ্যমেই গঠন করব। আর সীমানা নিয়ে কোন জটিলতা নাই। ৫টি ইউনিয়ন মহানগর যুবদলের আওতাধীন থাকবে।’
৬ এপ্রিল শনিবার নজরুল ইসলামকে আহ্বায়ক ও শাহাদুল্লাহ মুকুলকে সদস্য সচিব করে নারায়ণগঞ্জ মহানগর যুবদলের সভাপতি মাকসুদুল আলম খন্দকার খোরশেদ ও সেক্রেটারি মমতাজ উদ্দীন মন্তু ১৯ সদস্য বিশিষ্ট একটি আহ্বায়ক কমিটির অনুমোদন দেন। বন্দর উপজেলা যুবদলের বর্তমান কমিটি বিলুপ্ত ঘোষণা করে ৯০ দিনের জন্য এই ১৯ সদস্য বিশিষ্ট আহবায়ক কমিটি অনুমোদন করেছে নারায়ণগঞ্জ মহানগর যুবদল।
কমিটিতে যুগ্ম আহ্বায়ক হিসেবে পারভেজ খান ও সদস্য হিসেবে রয়েছেন মনিরুল ইসলাম মনু, মোঃ রুবেল মিয়া, বাবুল হোসেন মেম্বার, আবদুস সাত্তার, মোঃ মামুন ভূইয়া, মোঃ জাহিদ খন্দকার, আল-মামুন প্রধান, মোঃ নুর হোসেন, গোলজার হোসেন ভূইয়া, মোঃ আসাবুদ্দিন, মোঃ শিপন মাহমুদ, মোঃ বর জাহান, সেলিম খন্দকার, কামরুল ইসলাম, জাহিরুল খন্দকার জনি, সম্রাট হাসান সুজন।