যুগান্তর পত্রিকা থেকে নেয়া-
রাজনীতির নানা কশাঘাত আর নেতাকর্মীদের দীর্ঘ মনোক্ষোভের পাহাড় ভেঙে আবারো মাঠে নেমেছেন আলোচিত আওয়ামী লীগ নেতা শামীম ওসমান এমপি। ‘ক্যারিশমেটিক নেতা’ হিসেবে পরিচিত এই নেতা নিজের নামের প্রতি আবারো সুবিচার করেছেন- এমনটাই মনে করছেন দলটির সাধারণ সমর্থকরা।
নারায়ণগঞ্জে গত কয়েক মাসে বিরোধী দল বিএনপির একের পর এক শোডাউন আর আওয়ামী লীগ ও সহযোগী সংগঠনগুলোর নীরবতা যেন রাজপথকে একপেশে করে তুলেছিল। সেই অবস্থা থেকে মাত্র এক সপ্তাহের সাংগঠনিক কার্যক্রমে জেলার ফতুল্লা, সিদ্ধিরগঞ্জ, নগর ও বন্দর এলাকায় আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের পুরোপুরি চাঙ্গা করে তুলেছেন শামীম ওসমান।
ইতোমধ্যেই পূর্বঘোষণা দিয়েছেন আগামী ২৭ আগস্ট জনসভা করার। সাধারণ মানুষ বলছেন, শামীম ওসমানের জনসভা মানেই লাখো মানুষের সমাগম আর নতুন কোনো বার্তার অপেক্ষা। তবে ইতোমধ্যেই শামীম ওসমান তার জনসভায় ‘ঘণ্টা বাজাবেন’ বলে ঘোষণা দিয়ে বলেছেন, ‘একাত্তরে ঘণ্টা নারায়ণগঞ্জ থেকে বেজেছে। ঊনসত্তরের ঘণ্টা বেজেছে। ছাত্রলীগ, বঙ্গবন্ধুর ঘণ্টাও নারায়ণগঞ্জ থেকে বেজেছে। প্রয়োজনে আবারো নারায়ণগঞ্জ থেকে ঘণ্টা বাজানো হবে’।
জানা গেছে, শুধু নারায়ণগঞ্জ নয় কেন্দ্রীয়ভাবে ঢাকাসহ সারা দেশেই রাজপথে নেমেছে বিএনপির নেতাকর্মীরা। দীর্ঘদিন ধরে নারায়ণগঞ্জে রাজনীতির মাঠে একেবারে নীরব রয়েছে আওয়ামী লীগ। দলের সেই নীরবতা ভেঙ্গে নেতাকর্মীদের চাঙ্গা করতে আবারো অতীতের মতো মাঠে নেমেছেন সংসদ সদস্য একেএম শামীম ওসমান।
ইতোমধ্যেই ১৫ আগস্ট জাতীয় শোক দিবসকে কেন্দ্র করে চলতি সপ্তাহেই শামীম ওসমান নারায়ণগঞ্জ মহানগরের প্রায় ২৭টি ওয়ার্ডেই শোক দিবসের কমপক্ষে আড়াইশ স্পটে অংশ নিয়েছেন। সেখানে প্রতিটি অনুষ্ঠানই শেষতক পরিণত হয়েছিল কর্মিসভায়। এসব অনুষ্ঠানে শামীম ওসমানের বক্তব্যে ঝিমিয়ে পরা আর মনকষ্টে থাকা নেতাকর্মীরা এখন পুরোপুরি চাঙ্গা। তারা প্রস্তুতি নিচ্ছেন আগামী ২৭ আগস্টের শামীম ওসমানের জনসভার।
নগরীর বিভিন্ন ওয়ার্ডে আওয়ামী লীগ ও সহযোগী সংযোগী সংগঠনের তৃণমূলের কর্মী সমর্থকদের সঙ্গে কথা বললে তারা জানান, যখনই নারায়ণগঞ্জ আওয়ামী লীগ ঝিমিয়ে পরে তখনই আমাদের চাঙ্গা করতে শামীম ওসমান মাঠে নামেন। গত সিটি করপোরেশনের নির্বাচনে যেভাবে একের পর এক সহযোগী সংগঠনের কমিটি ভেঙে দেওয়া হয়েছিল তাতে নেতাকর্মীরা শুধু ক্ষুব্ধই হননি, তাদের বুকে রক্তক্ষরণ হয়েছে। জেলা ও মহানগর ছাত্রলীগের কোনো বদনাম আজ অবধি কেউ করতে পারেনি, শুধু মহানগর ছাত্রলীগের ২৭টি ওয়ার্ডে কমপক্ষে ২০ হাজার লিস্টেট কর্মী ছিল। অথচ নির্বাচন চলাকালে সে কমিটি ভেঙে দেয়া হলো, মহানগর ছাত্রলীগের সভাপতি ও সরকারি তোলারাম কলেজের ভিপি রিয়াদসহ ছাত্রলীগ নেতাদের বাড়িতে বাড়িতে পুলিশ হানা দিয়েছিল।
মহানগর স্বেচ্ছাসেবক লীগের সাধারণ সম্পাদক সাইফুদ্দিন দুলাল একাধিকবারের কাউন্সিলর, মহানগর শ্রমিক লীগের সাধারণ সম্পাদক শহীদ বাপ্পীর ভাই কামরুল হাসান মুন্না একাধিকবারের নির্বাচিত কাউন্সিলর ছিলেন, অথচ এসব কমিটিও ভেঙে দেওয়া হয়েছিল। ১৭ বছর ধরে মহানগর আওয়ামী লীগের দুইবারের সাধারণ সম্পাদক খোকন সাহার নামে দলীয় নেতার মামলা তুলে নেওয়ার ওয়াদা করেও পালন করা হয়নি। এমন নানা ঘটনায় ত্যাগী আর সক্রিয় কর্মীরা মনের কষ্টে রাজপথ থেকে দূরে ছিলেন। কিন্তু শামীম ওসমানের ডাকে সব ভুলে আবারো তারা মাঠে নামবেন।
এদিকে আগামী ২৭ আগস্টের জনসভা সম্পর্কে মহানগর আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক শাহ নিজাম যুগান্তরকে জানান, দীর্ঘদিন ধরে নীরব থাকায় অনেকে সুযোগ নিতে চাচ্ছে। আর এজন্য এবার রাজপথে সবার দলের স্বাধীনতার স্বপক্ষের শক্তিকে এক করে মাঠে শক্তি প্রদর্শন করাটা অত্যাবশ্যক। আর দলের ক্রান্তি লগ্নে এই কাজটি শামীম ওসমানই করেন। দল আর শেখ হাসিনার প্রশ্নে তার কোন চাওয়া পাওয়ার হিসেব ছিল না, নেই। আমরাও তার সেই নীতিই অবলম্বন করি। ২৭ তারিখের সমাবেশে তিনি কোনো বার্তা দেবেন, রাজপথ আমাদের দখলেই থাকবে।
অপরদিকে শামীম ওসমান এমপি যুগান্তরকে জানিয়েছেন, কার লোক কে, আমার বেশি তোমার কম এটা দেখাবেন না। সামনে লড়াই করতে হবে। আর বিভেদ করার সময় নেই, এক হয়ে লড়তে হবে। ২০২৪ সালের জানুয়ারিতে যে নির্বাচনে হবে সেই নির্বাচনে শেখ হাসিনা প্রধানমন্ত্রী হবেন ইনশাল্লাহ। কিন্তু এর আগে কিছু আঘাত আসবে, দেশ বিরোধী ষড়যন্ত্র হচ্ছে, সেটা মোকাবেলা করতে হবে। নারায়ণগঞ্জের সব স্বাধীনতার স্বপক্ষের লোকদের এক মঞ্চে চাই। মঞ্চে উনারা বক্তব্য দেন আমি নিচে দাঁড়িয়ে কর্মীদের মতো স্লোগান দিব। আমি কর্মী হয়ে স্লোগান দিতে চাই নেতা হয়ে মঞ্চে বক্তব্য দিতে চাই না। আমি বাংলাদেশকে শকুনদের হাত থেকে রক্ষা করতে চাই। আমি শেখ হাসিনাকে বলতে চাই- আপনার ওপর আঘাত আসলে এ নারায়ণগঞ্জের নেতাকর্মীরা বসে থাকবে না।