সান নারায়ণগঞ্জ টুয়েন্টিফোর ডটকম:
নারায়ণগঞ্জ জেলার আড়াইহাজার উপজেলায় র্যাব-১১ অভিযান চালিয়ে আন্তঃজেলা ডাকাত দল চক্রের ৯ সদস্যকে গ্রেপ্তার করেছে। এ সময় তাদের কাছ থেকে বিপুল পরিমান অস্ত্র ককটেল উদ্ধার করা হয়। ২১ সেপ্টেম্বর বুধবার বিকেলে এ তথ্য জানান র্যাব-১১ এর মিডিয়া অফিসার সহকারী পরিচালক এএসপি রিজওয়ান সাঈদ জিকু।
তিনি জানান, সম্প্রতি নারায়ণগঞ্জ জেলার আড়াইহাজার থানা এলাকায় বেশ কয়েকটি চাঞ্চল্যকর ডাকাতির ঘটনা ঘটে। সর্বশেষ ১৯ সেপ্টেম্বর গভীর রাত ১২ জনের একটি সশস্ত্র ডাকাত দল হাইজাদী ইউনিয়নের সরাবদী আতাদী চকের বাড়ি ও উদয়দী গ্রামের ৮টি বাড়িতে ডাকাতির ঘটনা ঘটায়। এ ঘটনায় ডাকাতদের মারপিটে ৫জন আহত হয়। ডাকাতদল স্বর্ণালংকার, নগদ টাকা এবং অন্যান্য মালামাল নিয়ে যায়।
উক্ত ডাকাতি সংক্রান্ত ঘটনাগুলোর প্রেক্ষিতে এলাকার সাধারণ জনগণের মধ্যে ব্যাপক আতঙ্কের সৃষ্টি হয়। ডাকাতির ঘটনাগুলো নারায়ণগঞ্জের স্থানীয় গণমাধ্যমসহ দেশের শীর্ষস্থানীয় বিভিন্ন গণমাধ্যমে প্রকাশিত হয়। ডাকাতির ঘটনা ঘটার দ্রুততম সময়ের মধ্যে র্যাব ঘটনা সংক্রান্তে প্রয়োজনীয় তথ্য, এজাহার ও এফআইআর সংগ্রহ করে সেগুলো পর্যালোচনা শুরু করে।
এছাড়াও ভুক্তভোগীদের নিকট থেকে প্রয়োজনীয় তথ্য এবং ডাকাতদের গ্রেপ্তারের জন্য আবেদন পাওয়া যায়। লক্ষ্য করে দেখা যায় যে, গত বেশ কিছুদিন ধরে ধারাবাহিকভাবে ডাকাতির ঘটনা ঘটছে এবং সবগুলি ডাকাতির ঘটনা প্রায় একই রকম। এতে ধারণা করা যায়, একটি বড় সংঘবদ্ধ ডাকাত দল অত্র এলাকাসমূহতে পরিকল্পিতভাবে ডাকাতি করে আসছে। ডাকাতদের বয়স, ডাকাতির কাজে ব্যবহৃত অস্ত্রের ধরন এবং লুণ্ঠিত দ্রব্যাদি সম্পর্কে তথ্য সংগ্রহ করে র্যাবের একটি চৌকস গোয়েন্দা দল গোপনে ডাকাত প্রবণ এলাকায় কঠোর গোয়েন্দা নজরদারি শুরু করে এলাকার কিছু সক্রিয় ডাকাত সদস্যকে সনাক্ত করে তাদের গতিবিধি লক্ষ্য করা হয় এবং একইসাথে তথ্য-প্রযুক্তির সহায়তা নেওয়া হয়।
র্যাব আরো জানায়, উক্ত ঘটনার পর থেকেই র্যাব-১১ এর একটি চৌকষ গোয়েন্দা দল র্যাব সদর দপ্তর ইন্টেলিজেন্স উইং এর সহায়তায় ছায়া তদন্ত শুরু করে। গোপন সূত্রে প্রাপ্ত তথ্যের ভিত্তিতে র্যাব-১১ এর একটি আভিযানিক দল কর্তৃক গত ২০ সেপ্টেম্বর গভীর রাতে অভিযান পরিচালনা করে নারায়ণগঞ্জ জেলার আড়াইহাজার থানাধীন সরাবদী এলাকায় ডাকাতির প্রস্তুতি গ্রহণকালে ধারালো অস্ত্র ও ককটেলসহ সংঘবদ্ধ আন্তঃ জেলা ডাকাত চক্র কাশেম বাহিনীর ৯ জন সক্রিয় সদস্যকে গ্রেপ্তার করা হয়।
গ্রেপ্তারকৃত আসামীরা হলো ডাকাত সর্দার মোঃ আবুল কাশেম, মোঃ বাবু, মোঃ ওমর ফারুক, মোঃ লিটন, মোঃ সবুজ, মোঃ দেলোয়ার হোসেন, রুমন ভূইয়া, মোঃ আশরাফুল ও মোঃ জুয়েল রানা। উক্ত অভিযানে গ্রেপ্তারকৃত আসামীদের হেফাজত হতে ককটেল-৭টি, ছোড়া-৩টি, কাটার-১টি, কোরাবারী-২টি, টেটা-৫টি, টর্চ লাইট-১৩টি, রূপার চেইন-১টি, নগদ ২৪ হাজার ৯০০ টাকা, মোবাইল-৯টি উদ্ধার করা হয়। গ্রেপ্তারকৃত ডাকাতদলের সদস্যদের স্বীকারোক্তিতে জানা যায় যে, তারা গত ১৯ সেপ্টেম্বর হাইজাদী ইউনিয়নের সরাবদী আতাদী চকের বাড়ি ও উদয়দী গ্রামের ৮টি বাড়িতে ডাকাতির ঘটনার সাথে জড়িত ছিল।
র্যাব জানায়, গ্রেপ্তারকৃত আসামীরা সংঘবদ্ধ ডাকাত চক্রের সক্রিয় সদস্য বলে প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে তারা স্বীকার করেছেন। এই সংঘবদ্ধ ডাকাত চক্রটি এর আগেও পরষ্পর যোগসাজশে পূর্ব-পরিকল্পনামাফিক দীর্ঘদিন যাবৎ আড়াইহাজার থানা এলাকায় বিভিন্ন বাড়িতে এবং আর্থিকভাবে সচ্ছল পরিবারগুলোকে টার্গেট করে পরিকল্পিতভাবে তাদের ডাকাতি কার্যক্রম চালিয়ে আসছিল। গভীর রাতে আড়াইহাজারের বিভিন্ন বাসা-বাড়িতে অতর্কিতভাবে হাজির হয়ে ধারালো অস্ত্র প্রদর্শন করে এবং ককটেল বিস্ফোরণের মাধ্যমে জনমনে ভয়ভীতি ও আতঙ্ক সৃষ্টি করে সাধারণ লোকজনদের জিম্মি করে ডাকাতি করে সিএনজি/ মোটরসাইকেল যোগে ঘটনাস্থল হতে পালিয়ে যায়। দুস্কৃতিকারী এই ডাকাত দলের সদস্যরা ডাকাতি করতে গিয়ে জনসাধারণকে মারধর ও ছুরিকাঘাতসহ গুরুত্বর জখম করে থাকে। দীর্ঘদিন ধরে তারা নারায়ণগঞ্জ জেলার আড়াইহাজার থানা এলাকায় বিভিন্ন বাসা-বাড়িতে তাদের অন্যান্য সহযোগীদের নিয়ে ডাকাতি করে আসছিল।