দিনকাল নারায়ণগঞ্জ ডটকম:
বন্দরের মানুষের ভালবাসার টানে মৃত্যুর পর নিজের লাশটি বন্দরের মাটিতেই দাফন করার ঘোষণা বহু আগেই দিয়েছেন নারায়ণগঞ্জ-৫ আসনের সংসদ সদস্য সেলিম ওসমান। বন্দরবাসীর ভালবাসার সেই ধারাবাহিকতায় গত ২ নভেম্বর ময়মনসিংহপট্টি মাঠে সর্বস্তরের বন্দরবাসীর পক্ষ থেকে আয়োজিত একটি সমাবেশে পারিবারিক ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের দায়িত্ব ভার থেকে মুক্ত করে জনগণের সেবার জন্য স্বামী সেলিম ওসমানকে উৎসর্গ করেন তাঁর সহধর্মিনী মিসেস নাসরিন ওসমান। তার ঠিক এক মাসের মাথায় এসে অর্ধাঙ্গিনী হিসেবে জনম জনম পাশে থাকার কর্তব্য পরিপূর্ণ করলেন তিনি। যতদিন বাঁচবেন ততদিন স্বামী সেলিম ওসমানের পাশে তো থাকবেনই এমনকি মৃত্যুর পরেও বন্দরে স্বামী সেলিম ওসমানের শয্যা পাশেই নিজের শায়িত হওয়ার ইচ্ছা প্রকাশ করেছেন মিসেস নাসরিন ওসমান।
শনিবার ১ ডিসেম্বর বিকেল ৪টায় বন্দর খেয়াঘাট সংলগ্ন সুরুজ্জামান টাওয়ারের তৃতীয় তলায় রাত্রি কমিউনিটি সেন্টারে বন্দর থানার বিভিন্ন এলাকার নারী জনপ্রতিনিধি সহ সহস্রাধিক সাধারণ নারীদের সাথে মতবিনিময় সভায় তিনি এ ইচ্ছা প্রকাশ করেন।
তিনি বলেন, নারায়ণগঞ্জ এবং বন্দরের মাটি ও মানুষের হৃদয়ে স্থান করে নেওয়া নেতা নাসিম ওসমান ভাইয়ার মৃত্যুর পর আমার শ্বাশুড়ি সেলিম ওসমান সাহেবকে নারায়ণগঞ্জের মানুষের সেবা করার জন্য নির্বাচন করার নির্দেশ দেন। মানুষের সেবা করতে গিয়ে যদি উনার মৃত্যুও হয় তাতে তিনি একজন মা হিসেবে গর্বিত হবেন বলে আপনাদের সেবায় ছেলেকে উৎসর্গ করেন। কিছুদিন আগে উনার প্রতি আপনাদের ভালবাসা দেখে আমি আপনাদের কাছে উনাকে উৎসর্গ করেছি আপনাদের সেবা করতে আপনাদের ভালবাসা পেতে। আজকে এখানে আপনাদের এতো সমাগম দেখে আমি উপলদ্ধি করতে পারছি আমার শ্বাশুরি কতটা সঠিক সিদ্ধান্ত নিয়ে ছিলেন। উনার এই সিদ্ধান্তকে আমিও অনুসরন করেছি।
তিনি বলেন, একজন স্ত্রী হিসেবে সারাজীবন স্বামীর পাশে থেকে সহযোগীতা করা আমার কর্তব্য। সেই কর্তব্য থেকে আমি সারাজীবনে উনার পাশে থেকে আপনাদের সেবায় সহযোগীতা করে যাবো। মানুষের বাঁচা মরা সব আল্লাহ হাতে। আমাদের সবাইকেই একদিন মরতে তো হবেই। উনি অনেক আগে ঘোষণা দিয়েছেন উনার মৃত্যুর পর যেন লাশটি বন্দরের মাটিতে দাফন করা হয়। উনার সহধর্মিনী হিসেবে আমি মৃত্যুর পরেও উনার পাশেই থাকতে চাই। তাই আমার মৃত্যুর পরেও যেন এই বন্দরের মাটিতে উনার পাশেই আমার লাশটি দাফন করা হয়।
আপনাদের কাছে আমার আর কি চাওয়ার থাকতে পারে। আপনাদের কাছে আর ভোটই বা কি চাইবো। আমাদের পরিবারের প্রতিটি সদস্যের প্রতি আপনাদের ভালবাসা সেই ভালবাসার ঋন কোন কিছু দিয়েই শোধ করা যাবে না। শুধু এইটুকুই বলবো আগামীতেও আপনাদের প্রতিনিধি হয়ে কাজ করে যাওয়ার সুযোগটুকু উনাকে আবারো দিবেন। আগামীতে উনি যদি এমপি নাও হতে পারেন তবুও আপনাদের পাশে থাকবেন। শরীরের শেষ বিন্দু রক্ত থাকা পর্যন্ত সেলিম ওসমান আমাদের পাশে থেকে কাজ করে যাবেন এটা আপনাদের কাছে আমি ওয়াদা দিয়ে গেলাম।
মতবিনিময় সভায় সংক্ষিপ্ত বক্তব্যে এমপি সেলিম ওসমান বলেন, আগামী নির্বাচনে কাকে ভোট দিবেন সেই সিদ্ধান্ত সম্পূর্ন আপনাদের উপর নির্ভর করে। আমি শুধু আপনাদের কাছে অনুরোধ রাখবো শুধু একটি বারের জন্য চিন্তা করে দেখবেন গত সাড়ে ৪ বছরে আমি আপনাদের উন্নয়নের চাহিদা পূরণ করতে পেরেছি কিনা। আগামী নির্বাচনে আমাকে দেন বা নাদেন সে ব্যাপারে আমার কোন কথা নাই। আপনাদের কাছে শুধু এইটুকু আহবান রাখবো আপনারা কোন বসন্তের কোকিলকে ভোট দিয়ে নির্বাচিত করবেন না। যাদেরকে সারা বছর এলাকায় দেখা যায় না। শুধু নির্বাচনের সময় বসন্তের কোকিল হয়ে আপনাদের সামনে আসে। নির্বাচন শেষে আবার নাই হয়ে যায় তেমন ব্যক্তিকে ভোট দিলে জনগন কতটুকু উপকৃত হবে সে বিষয়ে বিবেচনা করে নিজের ভোটটি প্রদান করবেন।
মত বিনিময় সভায় আরো বক্তব্য রাখেন আওয়ামী মহিলালীগ নারায়ণগঞ্জ মহানগরের সভানেত্রী ইসরাত জাহান স্মৃতি, সিটি কর্পোরেশনের নারী কাউন্সিলর শিউলি নওশাদ, ১৯নং ওয়ার্ড জাতীয় পার্টির সভাপতি পলি বেগম সহ অন্যান্য নারী নেত্রীরা। মত বিনিময় সভায় সহস্রাধিক নারী অংশ উপস্থিত হয়ে নির্বাচনে সেলিম ওসমানের পক্ষে কাজ করে তাঁকে বিজয়ী করার প্রত্যয় ব্যক্ত করেন।
অপরদিকে সুরুজ্জামান টাওয়ারের রাত্রি কমিউনিটি সেন্টারে সন্ধ্যা সাড়ে ৭টায় বন্দর উপজেলার ৫টি ইউনিয়নের চেয়ারম্যান ও মেম্বারদের সাথে নির্বাচনে করনীয় সম্পর্কে আরো একটি আলোচনা সভায় অংশ নিয়েছেন এমপি সেলিম ওসমান। এ সময় আরো উপস্থিত ছিলেন জেলা জাতীয় পার্টির আহবায়ক আবুল জাহের, মহানগর জাতীয় পার্টির আহবায়ক সানাউল্লাহ সানু, সদস্য সচিব আকরাম আলী শাহীন, কলাগাছিয়া ইউনিয়নের চেয়ারম্যান দেলোয়ার হোসেন প্রধান, বন্দর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান এহসান উদ্দিন, মুছাপুর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান মাকুসদ হোসেন, ধামগড় ইউনিয়নের চেয়ারম্যান মাসুম আহম্মেদ, মদনপুর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান এম.এ সালাম সহ প্রতিটি ওয়ার্ডের সদস্যবৃন্দ।