সান নারায়ণগঞ্জ টুয়েন্টিফোর ডটকম:
আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে যেসব সম্ভাব্য মনোনয়ন প্রত্যাশি বিএনপি নেতা রয়েছেন তাদেরকে তাদের শক্ত অবস্থান থেকে সরাতে নতুন করে বিএনপিতে অটোমেটিক্যালি একটি সিন্ডিকেট সৃষ্টি হয়েছে। যাদের প্রথম টার্গেট নারায়ণগঞ্জ জেলা বিএনপির কমিটি ভেঙ্গে নতুন কমিটি সিন্ডিকেটের মেম্বারদের মাধ্যমে নিয়ে আসা। সিন্ডিকেটের টার্গেট বিএনপির সাবেক এমপি মুহাম্মদ গিয়াসউদ্দীনকে জেলা বিএনপির আহ্বায়ক বানানো। গিয়াসউদ্দীন আহ্বায়ক হলেই জেলা বিএনপির আওতাধীন ৪টি সংসদীয় আসনে বর্তমান শক্ত অবস্থানে থাকাদের সরানো সহজ হবে। সেই লক্ষ্যেই মুলত নতুন করে জেলা বিএনপির কমিটি ভাগিয়ে আনার চেষ্টা করছে সিন্ডিকেটের নেতারা। আন্ডার গ্রাউন্ডে জেলার শীর্ষ বেশকজন নেতা এই সিন্ডিকেটে একজোট হয়েছেন।
নেতাকর্মীদের সূত্রে জানাগেছে, যেহেতু জেলা বিএনপির ভারপ্রাপ্ত আহ্বায়ক দিয়ে চলছে জেলা বিএনপির কার্যক্রম। মনিরুল ইসলাম রবি এই দায়িত্ব দুই মেয়াদে পালন করছেন। মাঝে নাসির উদ্দীনও পালন করেছিলেন। কার্যত জেলা বিএনপির ভারপ্রাপ্ত আহ্বায়ক মনিরুল ইসলাম রবি সাংগঠনিকভাবে নেতৃত্বের দিতে কম শক্তিশালী নেতা। আর এই সুযোগটাই কাজে লাগিয়ে জেলা বিএনপিতে গিয়াসউদ্দীনকে বসানোর চেষ্টা চলছে। সান নারায়ণগঞ্জকে নেতাকর্মীরা বলছেন এক্ষেত্রে বর্তমান সদস্য সচিব মামুন মাহামুদকে সরানোর চেষ্টাও হবে। সরাতে না পারলে সদস্য সচিব মামুন বহাল থাকলে কোণঠাসা হয়ে যাবে। তবে সিন্ডিকেটের টার্গেট মামুন মাহামুদকে সরিয়ে জেলা যুবদলের আহ্বায়ক গোলাম ফারুক খোকনকে সদস্য সচিব পদে অধিষ্ট করানো।
এদিকে জেলা বিএনপির শীর্ষ দুই পদে আসার আলোচনায় জেলা বিএনপির বর্তমান সদস্য সচিব মামুন মাহামুদ, সাবেক এমপি মুহাম্মদ গিয়াসউদ্দীন, সোনারগাঁও উপজেলা বিএনপির সভাপতি আজহারুল ইসলাম মান্নান, জেলা বিএনপির সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক মাসুকুল ইসলাম রাজীব, সাবেক যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক লুৎফর রহমান খোকা, জেলা বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক জাহিদ হাসান রোজেল, ফতুল্লা থানা বিএনপির সদস্য সচিব শহিদুল ইসলাম টিটু ও জেলা যুবদলের আহ্বায়ক গোলাম ফারুক খোকন।
নেতাকর্মীরা বলছেন- নারায়ণগঞ্জ-৪(ফতুল্লা-সিদ্ধিরগঞ্জ) আসনে আগামী নমিনেশন লড়াইয়ে থাকবেন কেন্দ্রীয় বিএনপির সদস্য মুহাম্মদ শাহআলম ও সাবেক এমপি মুহাম্মদ গিয়াসউদ্দীন। একই সঙ্গে বড় বাধা হতে পারে অধ্যাপক মামুন মাহামুদও। ফতুল্লা থানা বিএনপি ইতিমধ্যে শাহআলম ও গিয়াস বলয়ে ভাগ হয়ে গেছেন রোজেল ও টিটু। সিদ্ধিরগঞ্জের কমিটি মামুন মাহামুদের বলয়ে গঠন করায় গিয়াস বাধ সাধে। সেখানে বর্তমান কমিটি বাতিল হলেও বিএনপির সিংহভাগ নেতাকর্মী মামুন মাহামুদের নিয়ন্ত্রণে। এখানে ব্যাকফুটে গিয়াস।
নারায়ণগঞ্জ-৩(সোনারগাঁ) আসনে বেশ শক্ত অবস্থানে রয়েছেন সোনারগাঁও উপজেলা বিএনপির সভাপতি আজহারুল ইসলাম মান্নান। গত নির্বাচনে প্রাথমিকভাবে দলের মনোনয়ন পান তৎকালীন সভাপতি খন্দকার আবু জাফর ও আজহারুল ইসলাম মান্নান। জাফর মনোনয়নপত্রই জমা দেননি। চূড়ান্ত মনোনয়ন পান মান্নান। সিদ্দিরগঞ্জ ও সোনারগাঁও নিয়ে এখন যখন এই আসনটি ছিলো তখন ২০১৪ সালের নির্বাচনের পূর্বে জাফর সোনারগাঁয়ে গিয়াসউদ্দীনকে নিয়ে শোডাউন করেন এবং সেখানে গিয়াস নির্বাচনী প্রচার প্রচারণা চালান। বিষয়টি মান্নান সহজভাবে নেননি। ওই সময় থেকে সোনারগাঁয়ে গিয়াসের কিছু লোকজন সৃষ্টি হয়েছে যাদের আহ্বানে গিয়াস সোনারগাঁয়ে এখনো যাতায়াত করেন। সোনারগাঁয়ের কিছু নেতা চাচ্ছেন গিয়াসকে সেখানে পদচারণা রাখতে। নারায়ণগঞ্জ-৪ আসনে যখন গিয়াসের জন্য জটিল হিসেব নিকেষ সেজন্য গিয়াসও সোনারগাঁয়ে উকি দিয়ে রেখেছেন।
নারায়ণগঞ্জ-২(আড়াইহাজার) আসনে গত নির্বাচনে প্রাথমিকভাবে ধানের শীষ প্রতীকে মনোনয়ন পান কেন্দ্রীয় বিএনপির সহ-আন্তর্জাতিক বিষয়ক সম্পাদক নজরুল ইসলাম আজাদ, সাবেক এমপি আতাউর রহমান আঙ্গুর ও জেলা বিএনপির সাবেক সহ-সভাপতি মাহামুদুর রহমান সুমন। চূড়ান্তভাবে মনোনয়ন পান আজাদ। বর্তমানে আড়াইহাজারে বিএনপির একচ্ছত্র নিয়ন্ত্রক আজাদ। আঙ্গুর ও তার ভাতিজা বেশ ব্যাকফুটে রয়েছেন। সামনে আজাদের কাছ থেকে মনোনয়ন ছিনিয়ে আনাটাও তাদের জন্য দূরহ হয়ে দাঁড়িয়েছে। উপজেলা বিএনপির সভাপতি ইউসুফ আলী ভুঁইয়া ও সাধারণ সম্পাদক জুয়েল হোসেন আজাদের হয়ে কাজ করছেন।
নারায়ণগঞ্জ-১(রূপগঞ্জ) আসনে জেলা বিএনপির সাবেক সভাপতি কাজী মনিরুজ্জামান মনিরের শক্ত অবস্থান রয়েছে। কারন অনেকের ধারণা উপজেলা বিএনপির আহ্বায়ক মাহফুজুর রহমান হুমায়ুন ও বাছির উদ্দীন বাচ্চু কাজী মনিরের ঘনিষ্ঠজন। নির্বাচন নাগাদ তারা কাজী মনিরের পক্ষ নিতে পারে। এক্ষেত্রে কেন্দ্রীয় বিএনপির সদস্য মোস্তাফিজুর রহমান দিপু ভুঁইয়ার জন্য অনিশ্চিয়তার সৃষ্টি হয়। জেলা বিএনপির সাবেক আহ্বায়ক তৈমূর আলম বহিস্কার হওয়ায় এখানে কাজী মনির ও দিপু ভুঁইয়ার মাঝেই মনোনয়ন লড়াইটা হবে।
রাজনৈতিক বোদ্দারা মনে করছেন- গিয়াসকে আহ্বায়ক করা হলে কেবল সদস্য সচিব পদে গোলাম ফারুক খোকনকেই করা হতে পারে। মান্নানের সঙ্গে বিরোধ সৃষ্টি হবে শুরুতেই। মামুনের সঙ্গে পূর্ববিরোধ। রোজেল ও খোকা শাহআলমের লোক। এক্ষেত্রেও গিয়াসের সঙ্গে তাদেরকে রাখা হবে না। আবার কমিটি পড়ে যাবে একসাইডে। রাজীব ও টিটু গিয়াসের লোক হিসেবে পরিচিত হলেও একসাইডের কমিটি না হওয়ার সম্ভাবনা বেশি। ফলে গিয়াসের সঙ্গে খোকনকেই পারফেক্ট মনে করে সিন্ডিকেটের মুল টার্গেট গিয়াস ও খোকনকে নিয়ে। এক্ষেত্রে রূপগঞ্জে যেমন একচ্ছত্র হবে দিপু ভুঁইয়ার, আড়াইহাজারে সুমনের, ফতুল্লা-সিদ্ধিরগঞ্জে গিয়াসের প্রভাব ও নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠিত হবে। একই সঙ্গে সোনারগাঁয়ে জাফরসহ গিয়াসের লোকজনকে দাঁড় করাতে পারবে। গিয়াসও তখন সোনারগাঁয়ে এক পা দিয়ে রাখতে পারবেন। সিন্ডিকেটের এই চেষ্টা কতুটুকু সফল হবে সেটা নির্ভর করছে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের সিদ্ধান্তের উপর।