সান নারায়ণগঞ্জ টুয়েন্টিফোর ডটকম:
জাতীয়পার্টির কেন্দ্রীয় নেতা নারায়ণগঞ্জের জয়নাল আবেদনী ওরফে আল জয়নালের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে যাচ্ছে নারায়ণগঞ্জ জেলা প্রশাসন। ১৫ এপ্রিল সোমবার দুপুরে নারায়ণগঞ্জ জেলা আইন শৃঙ্খলা কমিটির সভায় বেশকজন সদস্য জয়নাল আবেদীনের বিরুদ্ধে ভূমিদস্যূতার অভিযোগ তুললে এ বিষয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের কথা জানান নারায়ণগঞ্জ জেলা প্রশাসক রাব্বী মিয়া। আইন শৃঙ্খলা কমিটির সভা সূত্রে এমনটা জানাগেছে।
জানাগেছে, নারায়ণগঞ্জ প্রেস ক্লাবের সভাপতি অ্যাডভোকেট মাহাবুবুর রহমান মাসুম সভায় বলেন, নারায়ণগঞ্জ সরকারি মহিলা কলেজের অধ্যক্ষের বিরুদ্ধে জয়নাল মামলা দায়ের করেছে। এখানে অধ্যক্ষের বিরুদ্ধে মামলা কেন হবে? তিনি তো আমাদের মেয়েদের জন্যই এখানে কাজ করছেন। এই মামলাটি প্রত্যাহার করার দাবি জানাই।’
এ ছাড়াও সভায় নারায়ণগঞ্জ জেলা আইনজীবী সমিতির সভাপতি অ্যাডভোকেট হাসান ফেরদৌস জুয়েল বলেন, নারায়ণগঞ্জের পুলিশ সুপার বলেছেন কোন ভূমিদস্যূদের নারায়ণগঞ্জে ঠাঁই হবে না। অথচ আল জয়নাল একজন ভূমিদস্যূ। একজন বৃদ্ধার জমি জোরপূর্বক দখল করেছে।
তিনি আরও বলেন, আমি একজন আইনজীবী। অথচ আমার জায়গাই জয়নাল জোরপূর্বক দখলে নেয়ার চেষ্টা করছে। তাহলে নারায়ণগঞ্জে ভূমিদস্যূ মুক্ত হচ্ছে কিভাবে?
তিনি বলেন, কদিন আগেই পত্রিকায় দেখলাম সদর থানার ভিতরে জয়নাল তার পিস্তল দিয়ে একজন পুলিশ সদস্যকে গুলি করেছে। কিন্তু রাতে আটক করলেও সকালেই তাকে ছেড়ে দেয়া হয়?
এসব বিষয়ে জেলা প্রশাসক রাব্বী মিয়া বলেন, এসব বিষয়ে তদন্ত করে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। একই কথা জানান অতিরিক্ত পুলিশ সুপার সুবাস চন্দ্র ঘোষও।
সোমবার দুপুরে অনুষ্ঠিত জেলা আইনশৃঙ্খলা কমিটির সভায় নারায়ণগঞ্জ জেলা প্রশাসক রাব্বী মিয়ার সভাপতিত্বে বক্তব্য রাখেন- অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (ডিবি) সুবাস চন্দ্র ঘোষ, অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট যুথিকা সরকার, র্যাার-১১’ র প্রতিনিধি মোস্তাফিজুর রহমান, বিজিবি ৬২ ব্যাটলিয়নের উপ-অধিনায়ক এসএম হাব্বি ইবনে জাহান, নারায়ণগঞ্জ ৩’শ শয্যা বিশিষ্ট হাসপাতালের সুপার ডা. মো. আবু জাহের, জেলা সিভিল সার্জন ডা. মো.আসাদুজ্জামন, সদর উপজেলা পরিষদের নির্বাহী অফিসার নাহিদা বারিক, বন্দর উপজেলা নির্বাহী অফিসার পিন্টু বেপারী, রূপগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী অফিসার মমতাজ বেগম, সোনারগাঁও উপজেলা নির্বাহী অফিসার অঞ্জন কুমার সরকার, আড়াইহাজার উপজেলা নির্বাহী অফিসার সোহাগ হোসেন ও সদর উপজেলা চেয়ারম্যান আবুল কালাম আজাদ বিশ্বাস প্রমূখ।
অন্যদিকে উল্লেখ্যযে, গত ১১ এপ্রিল বৃহস্পতিবার জাতীয়পার্টির কেন্দ্রীয় নেতা জয়নাল আবেদীনের বিরুদ্ধে নারায়ণগঞ্জ জেলা আইনজীবী সমিতির সভাপতি অ্যাডভোকেট হাসান ফেরদৌস জুয়েলের বাড়ির প্রধান ফটকের দেয়াল ভেঙ্গে দেয়ার অভিযোগ ওঠেছিল। জয়নাল আবেদীন তার লোকজন দিয়ে দেয়াল ভেঙ্গে দেয়। শুধু তাতেই তিনি খ্যান্ত হননি সেই দেয়াল মেরামত করতে গেলে দেয়ালের কাজে বাধা দেয় জয়নাল আবেদীন। বৃহস্পতিবার সকালে নারায়ণগঞ্জ ফতুল্লার দক্ষিণ সস্তাপুর এলাকায় অ্যাডভোকেট হাসান ফেরদৌস জুয়েলের বাড়ির প্রধান ফটকের দেয়াল মেরামতের সময় লোকজন নিয়ে সেখানে বাধা দেয় জয়নাল আবেদীন। তবে বিষয়টি তিনি অস্বীকার করে বলেছেন, যেখানে দেয়ালে কাজ করা হচ্ছে সেই জায়গাটি আমার। এমনকি হাসান ফেরদৌস জুয়েল যে জায়গাটি ৪ শতাংশ নিজের দাবি করে দখলে রেখেছেন সেই জায়গাটিও আমার। জমিটি নিয়ে মামলা চলছে। আমি দেয়াল ভাঙ্গিনি। আমার জায়গায় দেয়াল তৈরি করা হলে আমি সেখানে বাধা দিয়েছি কিন্তু ভাংচুর করিনি।
জয়নাল আবেদীন দাবি করেন- ৪ শতাংশ জমিটি যদি জুয়েল মালিকানা পায় তাহলে আমি ছেড়ে দিব। যদি এ বিষয়ে আইনজীবীদের নিয়ে বসতে চায় তাহলে আমি বসতে রাজি আছি। এমনকি বসার আগে আমি প্রয়োজনে হলফনামা দিয়ে বসবো যে, যদি আমি কাগজ পত্রে না পাই তাহলে জায়গাটি ছেড়ে দিব। আর যদি সে পায় তাহলে সে ছেড়ে দিবে।’
ওই দিন এ বিষয়ে আদালতপাড়ায় আইন পেশায় কর্মরত অবস্থায় অ্যাডভোকেট হাসান ফেরদৌস জুয়েল বলেছিলেন, আমার ৪ শতাংশ জমিটি দখলে নেয়ার চেষ্টা করছে জয়নাল। প্রবেশের গেটের দেয়ালটি জয়নাল লোকজন দিয়ে ভেঙ্গে দিয়েছে। সেখানে আবারো মেরামত করতে গেলে বৃহস্পতিবার জয়নাল নিজে লোকজন নিয়ে গিয়ে কাজে বাধা দিয়েছে।’
ঘটনা সূত্রে জানা গেছে, কয়েক বছর আগে নারায়ণগঞ্জ সমিতির নির্বাচিত সভাপতি হাসান ফেরদৌস জুয়েলের বাবা তার জীবনের শেষ আয়ের টাকা দিয়ে ৪শতাংশ জমিটি কিনেন। কিন্তু আল জয়নাল সেই জমির চার দিকের জমিগুলো ক্রয় করে জুয়েলের এ জমি দখলের চেষ্টা করেন। প্রভাব খাটিয়ে জুয়েলের কাছ থেকে জমি ক্রয় করারও প্রস্তাব দেয় জয়নাল। জমিটি বিক্রি করতে সম্মত না হওয়ার কারণে জোর করে জয়নাল দেয়াল নির্মাণ করেন। ওই সময় জয়নালের লোকজন জুয়েলের আপন ভাইকে মারধর করে চোখ উপড়ে ফেলেছিলেন বলেও থানায় মামলা হয়।
এই জমিয়ে নিয়ে এর আগে জুয়েলের একটি মামলায় জয়নালের জামিন না মঞ্জুর করে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেন আদালত। পরে একই দিন জয়নাল মীমাংসার প্রস্তাবের শর্তে জুয়েলের জিম্মায় জয়নালকে জামিন দেন আদালত।
জানাগেছে, ২০১৫ সালের এপ্রিলে মামলায় জয়নালকে কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দেন আদালত। মামলার বাদী ছিলেন নারায়ণগঞ্জ জেলা আইনজীবী সমিতির সভাপতি অ্যাডভোকেট হাসান ফেরদৌস জুয়েল। নারায়ণগঞ্জ সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট এইচএম শফিকুল ইসলামের আদালতে স্বশরীরে জয়নাল আবেদীন হাজির হয়ে জামিন আবেদন করলে আদালত আবেদন নামঞ্জুর করে আসামিকে কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দেন।
তবে বিকালে সমঝোতায় তিনি ছাড়া পেয়েছেন। বেলা ১১টায় নারায়ণগঞ্জের আদালত জয়নালকে কারাগারে প্রেরণের নির্দেশ দিলেও কোর্ট পুলিশ তাকে কারাগারে না পাঠিয়ে সমঝোতার জন্য আদালতের গারদে রেখে দেয় বিকাল ৪টা পর্যন্ত। অবশেষে বিকালে বাদীর সঙ্গে আপস ও সমঝোতার ভিত্তিতে বাদী অ্যাডভোকেট হাসান ফেরদৌস জুয়েলের জিম্মায় জামিন পান জয়নাল আবেদীন।
জমিসংক্রান্ত মামলাটি ছাড়াও ফেরদৌসের ছোট ভাইয়ের ওপর হামলা ও চোখে উপরে ফেলে হত্যাচেষ্টার অভিযোগেও দায়ের করা মামলায় জয়নালকে সন্দেহভাজন হিসেবে অভিযুক্ত করা হয়েছিল। ওই মামলায় জয়নাল হাইকোর্ট থেকে আগাম জামিন নিয়েছেন।