সান নারায়ণগঞ্জ টুয়েন্টিফোর ডটকম:
২০০৫ সালে নারায়ণগঞ্জের ফতুল্লার লক্ষীনগর গ্রামের এক ক্ষেতে সংঘটিত চাঞ্চল্যকর ১১ বছরের শিশু গণধর্ষণের পর শ্বাসরোধ করে হত্যায় জড়িত থাকার অভিযোগে ফাঁসির কারাদন্ডে দন্ডিত আসামী রবিউল নারায়ণগঞ্জের আড়াইহাজার থেকে র্যাব-১১ কর্তৃক গ্রেপ্তার করা হয়েছে।
১১ নভেম্বর শুক্রবার বিকেলে এ তথ্য জানান র্যাব-১১ এর মিডিয়া অফিসার, সহকারী পরিচালক এএসপি রিজওয়ান সাঈদ জিকু।
তিনি জানান, গত ৩ নভেম্বর নারায়ণগঞ্জ জেলার ফতুল্লা থানা হতে একটি অধিযাচনপত্রে মৃত্যুদন্ডে দন্ডিত সাজাপ্রাপ্ত ওয়ারেন্টভুক্ত মোঃ রবিউল ইসলামকেকে গ্রেপ্তারের জন্য র্যাব-১১কে অনুরোধ করা হয়। এরই প্রেক্ষিতে বর্ণিত বিষয়ে র্যাব ছায়া তদন্ত শুরু করে। এক পর্যায়ে ঘটনার সত্যতা সম্পর্কে র্যাব নিশ্চিত হয়। ফলশ্রতিতে, র্যাব উক্ত আসামীকে গ্রেপ্তার উদ্দেশ্যে গোয়েন্দা নজরদারী বৃদ্ধি করে।
পরবর্তীতে র্যাব-১১ এর একটি গোয়েন্দা দল গোপন তথ্যের মাধ্যমে গ্রেপ্তারি পরোয়ানাভুক্ত আসামীর অবস্থান সনাক্ত করতে সক্ষম হয়। পরবর্তীতে র্যাব সদর দপ্তরের সহযোগিতায় তথ্য প্রযুক্তির মাধ্যমে আসামীর গতিবিধি পর্যবেক্ষণে রাখা হয়। তার গতিবিধি পর্যালোচনায় দেখা যায় যে, সে প্রতিনিয়ত অবস্থান পরিবর্তন করছে এবং গ্রেফতার এড়াতে বিদেশ গমনের পরিকল্পনা করছিল।
এরই ধারাবাহিকতায় র্যাব-১১ এর অভিযানে ১১ নভেম্বর দুটার দিকো নারায়ণগঞ্জ জেলার আড়াইহাজার থানা এলাকা হতে মোঃ রবিউল ইসলাম (৪২), পিতাঃ বাচ্চু মিয়াকে গ্রেপ্তার করা হয়। প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে গ্রেপ্তারকৃত আসামী তার অপরাধ সম্পর্কে তথ্য প্রদান করে।
উল্লেখ্য যে গত ৩ জুন ২০০৫ সালে নারায়ণগঞ্জ জেলার ফতুল্লা থানাধীন লক্ষ্মীনগর এলাকায় একটি ১১ বছরের শিশু গণধর্ষণপূর্বক হত্যাকান্ডের ঘটনা ঘটে। হত্যাকান্ডের দুইদিন পর শিশুটির লাশ গ্রামের ধইঞ্চা ক্ষেতে পড়ে থাকতে দেখে স্থানীয় জনগণ সংশ্লিষ্ট থানা পুলিশ ও শিশুটির পরিবারকে জানায়। পুলিশ ঘটনাস্থলে উপস্থিত হয়ে লাশটিকে উদ্ধার পূর্বক সুরতহাল তৈরী করে এবং লাশটি ফতুল্লা থানার চর রাজাপুর গ্রামের আকতার হোসেনের মেয়ে বলে সনাক্ত হয়।
এই ঘটনায় ভিকটিমের পিতা বাদী হয়ে নারায়ণগঞ্জ জেলার ফতুল্লা থানায় নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইন ২০০০-এ একটি মামলা দায়ের করেন, যার মামলা নং ০৭(০৬)০৫, ধারা ৯(২)/(৩)/৩০। পরবর্তীতে নিহতের ময়না তদন্তের রিপোর্টে ধর্ষণের পর শ্বাসরোধ করে হত্যা করা হয়েছিল মর্মে উল্লেখ করা হয়। উক্ত ঘটনাটি জাতীয় ও স্থানীয় পত্রিকা ও সংবাদমাধ্যমে চাঞ্চল্যকর সংবাদ হিসেবে বহুল প্রচারিত হয়।
নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনাল, নারায়ণগঞ্জ বিচার শেষে মামলার আসামীদের বিরুদ্ধে আনীত নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইন ২০০০ এর উল্লিখিত ধারা ও হত্যার অপরাধ সন্দেহাতীতভাবে প্রমানিত হওয়ায় গত ১৮ অক্টোবর ২০২২ তারিখে চারজনকে উক্ত আইনের উক্ত ধারার অপরাধে দোষী সাব্যস্ত পূর্বক মৃত্যুদন্ড ও একজনকে যাবজ্জীবন কারাদন্ডে দন্ডিত করার আদেশ দেন। বিজ্ঞ আদালত মহামান্য হাইকোর্ট বিভাগের অনুমোদন সাপেক্ষে ফৌজদারী কার্যবিধির ৩৬৮ ধারায় বর্ণিত বিধান মোতাবেক মৃত্যু না হওয়া পর্যন্ত মৃত্যুদন্ডপ্রাপ্ত উক্ত আসামীদের গলায় ফাঁস দিয়ে ঝুলিয়ে মৃত্যুদন্ড কার্যকর করার আদেশ প্রদান করেন।
গ্রেফতারকৃত আসামীর ভাষ্যমতে ঘটনার ৫ থেকে ৬ দিন পর আসামী গ্রেফতার হয় এবং ১৭ মাস জেলে থাকার পর জামিনে মুক্তি পায়। জামিনে বের হয়ে আনুমানিক ২০০৭ সালে আড়াইহাজার থানার হাইজাদি ইউনিয়নে ইলমদী খন্দকার কান্দি গ্রামে বিয়ে করে এবং আত্মগোপনে থাকার জন্য শ্বশুরবাড়ি এলাকায় স্থায়ীভাবে বসবাস শুরু করে। ২০০৮ সালের মাঝামাঝিতে কোর্টে হাজিরার তারিখে তার জামিন বাতিলপূর্বক তাকে পুনরায় জেলে পাঠানো হয় এবং প্রায় সাড়ে তিন মাস জেলে থাকার পর হাইকোর্ট থেকে জামিন নিয়ে বের হন। দ্বিতীয়বার জামিনে বের হওয়ার পর ২০০৯ সালের শেষের দিকে নারায়ণগঞ্জ জেলার রূপগঞ্জ থানাধীন দহর গাও এলাকায় একটা ফ্যাক্টরিতে কাটিংয়ের (সিজার ম্যান) হিসেবে চাকরি শুরু করে। মামলার রায় ঘোষণার পর আসামি চাকরি ছেড়ে দিয়ে তার চাচা শশুরের মৎস্য খামারে নতুন করে চাকরি শুরু করে আতœগোপন করে এবং বিদেশে পালিয়ে যাওয়ার পরিকল্পনা করছিলেন।