সান নারায়ণগঞ্জ টুয়েন্টিফোর ডটকম:
কাচ নিয়ে সবচেয়ে প্রচলিত শব্দ ‘ভাঙবে কিন্তু মচকাবে না।’ এবার বিজ্ঞানীরা উদ্ভাবন করেছেন এ রকম এক কাচ, যা ‘মচকাবে কিন্তু ভাঙবে না’। কানাডার ম্যাকগিল বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষকরা এরকম এক কাঁচ উদ্ভাবন করেছেন যেটা ভাঙবে না, শুধু মচকে যেতে পারে। আর হাত থেকে পড়ে গেলে হয়তো আকৃতি কিছুটা পরিবর্তিত হতে পারে। মেকানিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের ফ্র্যাঙ্ক বার্থেলেট এ গবেষণা কাজের সাথে যুক্ত আছেন। ফলে সেই বহুল প্রচলিত শব্দটি বিভিন্ন সময় ব্যবহৃত হয়ে আসলেও এবার উল্টো দিকে মচকাবে কিন্তু ভাঙবে না। তেমনি নারায়ণগঞ্জের আওয়ামীলীগের দুই রাজনীতিক রাজনীতিতে মচকাবেন কিন্ত ভাঙবেন না। এদের একজন বাংলাদেশ আওয়ামীলীগের জাতীয় পরিষদ সদস্য অ্যাডভোকেট আনিসুর রহমান দিপু। অপরজন মহানগর আওয়ামীলীগের সেক্রেটারি অ্যাডভোকেট খোকন সাহা। গত জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে বেশ আলোচিত হয়ে ওঠেছিলেন এই দুই রাজনীতিক। নৌকা প্রতীকে মনোনয়ন দাবিতে বেশ জোড়ালোভাবে মাঠেও নেমেছিলেন। নারায়ণগঞ্জের আইনজীবী সমাজের মাঝেও রয়েছে তাদের সুুখ্যাতি।
নেতাকর্মীদের দাবি-নারায়ণগঞ্জের রাজনীতিতে বেশ উত্থান পতনের দিকেই চলছে আনিসুর রহমান দিপু ও খোকন সাহার রাজনীতি। তাদের দুজন হলেন আওয়ামীলীগের প্রভাবশালী এমপি একেএম শামীম ওসমান ঘনিষ্ঠ বন্ধু ও রাজনৈতিক সহযোদ্ধা। দীর্ঘদিন শামীম ওসমানের অন্যতম পরামর্শক হিসেবেও কাজ করেছেন। শামীম ওসমানের কঠিন পরিস্থিতিতেও পাশে ছিলেন দুই বন্ধু। গত জাতীয় সংসদ নির্বাচনের বছর খানিক আগেই সেই সম্পর্কে ছন্দপতন হয়। দুজনই শামীম ওসমানের পাশ থেকে অনেকটা দূরে সরে যান। আবার তারা দুজনই দাবি করেছিলেন- রাজনীতিতে মত পার্থক্য থাকতেই পারে। রাজনীতি এক জিনিস আর বন্ধুত্ব আরেক জিনিস। বন্ধুত্ব থাকবে সব সময়। এটা বিরোধ নয়।
গত ৩০ডিসেম্বর নারায়ণগঞ্জ-৫ আসন থেকে আনিসুুর রহমান দিপু নৌকা প্রতীকে মনোনয়ন পত্র ক্রয় করেছিলেন। একইভাবে অ্যাডভোকেট খোকন সাহাও নারায়ণগঞ্জ-৫ ও নারায়ণগঞ্জ-৩ আসন থেকেও মনোনয়ন পত্র ক্রয় করেছিলেন। কিন্তু দুটি আসনই আওয়ামীলীগের নেতৃত্বাধীন মহাজোটের শরীক দল জাতীয়পার্টিকে ছেড়ে দেয় আওয়ামীলীগ। সেই নির্বাচনের পর খোকন সাহা অনেকটা শামীম ওসমানের কাছেই চলে এসেছেন। এক্ষেত্রে আনিসুর রহমান দিপু চলছেন নিজের একক আপন গতিতে। তবে প্রকাশ্যে দুজন কখনই শামীম ওসমানের বিরুদ্ধে কোন ধরনের কঠোর বক্তব্য রাখেননি। একেবারেই তৃনমূল থেকে ওঠে আসা আওয়ামীলীগের এই দুই রাজনীতিক। যাদের বিভিন্ন সময় রাজনীতিক উত্থান পতন থাকলেও আবারো ঘুরে দাড়িয়েছেন। অনেকেই বলছেন, শামীম ওসমানের সঙ্গে তাদের মান অভিমান থাকতে পারে। তবে সেটা বিরোধ বা প্রতিদ্বন্ধিতা নয়। অতীতে এমন মান অভিমান ভেঙ্গে আবার বন্ধু শামীম ওসমানের পাশে দাড়াতে তাদের দেখা গেছে। হয়তো আবারো দেখা যাবে।
অ্যাডভোকেট আনিসুর রহমান দিপুর রাজনীতির সূত্র থেকে জানাগেছে, ১৯৭৮ সালে ছাত্রলীগের রাজনীতির মাধ্যমে রাজনীতিতে যাত্রা শুরু করেন আনিসুর রহমান দিপু। ১৯৮০ সালে তিনি বন্দর ধামগড় ইউনিয়ন ছাত্রলীগের সভাপতি নির্বাচিত হন। পরবর্তীতে ছাত্রলীগ বিভক্তি হয়ে গেলে তিনি জেলা ছাত্রলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক পদে দায়িত্ব পান। ওই সময় তিনি কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের সদস্য পদেও নির্বাচিত হন। ১৯৯৩ সালে তিনি নারায়ণগঞ্জ শহর আওয়ামীলীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক পদে দায়িত্ব পান। কিছুদিন তিনি শহর আওয়ামীলীগের ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক হিসেবেও দায়িত্ব পালন করেন।
পরবর্তীতে আনিসুর রহমান দিপু তরুণ বয়সে নারায়ণগঞ্জ জেলা আওয়ামীলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক পদেও নির্বাচিত হন। ১৯৯৬, ২০০১ ও ২০০৮ সালে তিনি জাতীয় নির্বাচনে নির্বাচন পরিচালনা কমিটির সদস্য সচিবের দায়িত্ব পালন করেন। ২০১৭ সালে নারায়ণগঞ্জ জেলা আওয়ামীলীগের কমিটি গঠন করা হয়। এ কমিটিতে তিনি সেক্রেটারি পদে প্রত্যাশি ছিলেন। কিন্তু তিনি সেই পদে আসিন হতে পারেননি। আনিসুর রহমান দিপু বর্তমানে বাংলাদেশ আওয়ামীলীগের জাতীয় পরিষদের সদস্য পদে রয়েছেন। নারায়ণগঞ্জ জেলা আইনজীবী সমিতিতে একাধিকবার তিনি সভাপতি ও সেক্রেটারি পদে নির্বাচিত হয়ে দায়িত্ব পালন করেন।
অন্যদিকে অ্যাডভোকেট খোকন সাহার রাজনীতির সূত্র থেকে জানাগেছে, ১৯৭৫ সালে জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শহীদ হওয়ার পরে রাজনীতিতে আসেন খোকন সাহা। ছাত্র রাজনীতি দিয়ে শুরু খোকন সাহার রাজনীতি। ১৯৭৭ সাল থেকে ১৯৮১ সাল পর্যন্ত দুই মেয়াদে নারায়ণগঞ্জ ইউনিয়ন ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক ছিলেন। এরি মধ্যে ১৯৮০ সালে সরকারি তোলারাম কলেজ বানিজ্য শাখা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক হন তিনি।
পরবর্তীতে শহর ছাত্রলীগের সদস্য হন খোকন সাহা। ১৯৮৩ সালে বাংলাদেশ ছাত্রলীগের জাতীয় পরিষদের সদস্য নির্বাচিত হন তিনি। ১৯৮২ সালে এরশাদ বিরোধী ছাত্র আন্দোলন ছাত্র সংগ্রাম পরিষদের নারায়ণগঞ্জ জেলা শাখার প্রতিষ্ঠাতা সদস্য ছিলেন। ১৯৮২ সালে এরশাদ সরকার যখন মার্শাল ‘ল’ জারি করে তখন ওইদিন সকাল ১১টায় নারায়ণগঞ্জ থেকে এরশাদ বিরোধী সর্বপ্রথম যে ১২ জন মিলে মিছিল বের করেছিল সেই মিছিলে খোকন সাহাও ছিলেন। এরশাদ বিরোধী আন্দোলনে অংশগ্রহণ করার কারনে তৎকালীন এরশাদ সরকার খোকন সাহার বিরুদ্ধে তিনটি মামলা দায়ের করেছিল। যার মধ্যে একটি হত্যা মামলা ও একটি বিস্ফোরক মামলাও হয়।
অ্যাডভোকেট খোকন সাহা এরশাদের আমলে গ্রেপ্তার হয়ে কারাবরণ করেন। ১৯৯২ সালে নারায়ণগঞ্জ শহর আওয়ামীলীগের দপ্তর সম্পাদক নির্বাচিত হন এবং ১৯৯৬ থেকে ২০১৩ সাল পর্যন্ত তিন মেয়াদে ১৭ বছর তিনি নারায়ণগঞ্জ শহর আওয়ামীলীগের সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হয়ে দায়িত্ব পালন করেন। ২০১৩ সালের ১১ সেপ্টেম্বর গণভবনে সারাদেশের আওয়ামীলীগের নেতাদের নিয়ে সভা হয়। ওই সভাটি প্রধানমন্ত্রী ও বাংলাদেশ আওয়ামীলীগ সভাপতি শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত হয়। ওই সভায় আনোয়ার হোসেনকে সভাপতি ও খোকন সাহাকে সেক্রেটারি করে নারায়ণগঞ্জ মহানগর আওয়ামীলীগের কমিটি ঘোষণা দেন প্রধানমন্ত্রী। বর্তমান তিনি স্বপদে বহাল রয়েছেন।
আনিসুর রহমান দিপু ও খোকন সাহার অনুসারি নেতাকর্মীদের দাবি, দীর্ঘ রাজনৈতিক জীবনে তাদের বিরুদ্ধে টেন্ডারবাজি চাঁদাবাজির কোন অভিযোগ আসেনি। রাজনীতিতেও তেমন কোন গুরুত্বর অভিযোগ পাওয়া যায়নি। মুলত শামীম ওসমানের সঙ্গে রাজনীতি করলেও তারা আদালতপাড়ার রাজনীতিতেও সময় ব্যয় করতেন। তাদের আয়ের একমাত্র উৎসও আইন পেশাটিই। আইন পেশা থেকে যা কামিয়েছেন তার সিংহভাগ খরচ করেছেন নেতাকর্মী ও দলের কর্মকান্ডেই।
নেতাকর্মীদের আরও দাবি- একেবারেই তৃনমুল থেকে ওঠা আসা রাজনীতিবিদ খোকন সাহা ও আনিসুর রহমান দিপু। ৪০/৪৫ বছর রাজনীতি করে আসছেন তারা। এ দুজনই নারায়ণগঞ্জ জেলা আইনজীবী সমিতির নেতৃত্ব দিয়েছেন একাধিকবার। যে কারনে তারা রাজনীতিতে মচকাবেন কিন্তু ভাঙবেন না।