সান নারায়ণগঞ্জ টুয়েন্টিফোর ডটকম:
নারায়ণগঞ্জের আওয়ামীলীগের প্রভাবশালী এমপি একেএম শামীম ওসমানকে একটি লেখা লিখেছেন জেলা আওয়ামীলীগের সদস্য ও ফতুল্লা থানা আওয়ামীলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক মোহা¥দ শহিদ উল্লাহ। যিনি গত বছরের ১৬ জানুয়ারি নারায়ণগঞ্জ সিটি কর্পোরেশনের মেয়র ডা. সেলিনা হায়াত আইভীর সঙ্গে ফুটপাত দিয়ে হাটার সময় এমপি শামীম ওসমানের লোকজনের হামলার শিকার হয়েছিলেন। ওইদিন রক্তাক্ত জখম হয়েছিলেন শহিদ উল্লাহ। ১৯ এপ্রিল শুক্রবার শহিদ উল্লাহ তার ফেসবুকে একটি লেখায় শামীম ওসমানের জন্য মায়া হয় বলে মন্তব্য করেছেন। লেখায় তিনি আক্ষেপও প্রকাশ করেন। নারায়ণগঞ্জের বর্তমান পরিস্থিতি নিয়ে শামীম ওসমানের দূর্বলতাগুলোও তিনি তুলে ধরেছেন তার লেখায়।
আওয়ামীলীগ নেতা প্রয়াত ভাষা সৈনিক সামসুজ্জোহাকে উদ্দেশ্য করে মোহাম্মদ শহিদ উল্লাহ লিখেছেন, লেখাটিকে অনেকেই অন্য অর্থে নিতে পারেন। সামসুজ্জোহা সাহেব আমার রাজনৈক গুরু। স্বাধীনতার মাসে গর্ব করে বলতে পারি, কারো করুণা ছাড়াই এই অধমের অক্লান্ত কঠিন প্রচেষ্টায় এবং কেবলমাত্র আমারই প্রস্তাবনায় সহনীয় প্রশাসনের নেতিবাচক বেড়াজালকে ছিন্ন করে তিনি স্বাধীনতা পুরস্কার লাভ করেন।
তিনি লিখেন, সেই গুরুর সন্তান সংগ্রামী শামীম ওসমান সাহেবের প্রতি আমার দরদ ছিল কল্পনাকে হার মানানোর মতো। যৌক্তিক কারনে আমি তাকে বার বার বুঝিয়ে শুনিয়ে ফতুল্লার দিকে নিয়ে আসতে শপথ নিয়ে সফল হয়েছিলাম। প্রতিক্রিয়ায় বহুবার শরীরের রক্ত ঝড়েছিল। কারন এতে অনেকের বিপরীতমুখী স্বার্থ জড়িত ছিল।’
‘৯৬-এ কে নমিনেশন পেয়েছিলেন? তারপর কি কি হয়েছিল? কেমন করে প্রার্থী বদল হয়ে তিনি নমিনেশন পেলেন? অনেকে জেনে না বললেও তাঁর শানিত বিবেক ঠিকই বলবে। নির্বাচনটি পরিচালন সহ সমস্ত অর্থ ও ব্যয়িত হয়েছিল এই হতভাগা মানুষটির হাতেই। অর্থাৎ আমারই হাতেই।’
‘সংসার ছেড়ে সংসদ ভবনে তার জন্য বরাদ্ধকৃত স্যূটে দিন রাত অবস্থান করে প্রায় সব লেখাপড়ির কাজ করতে হয়েছিল আমার মাধ্যমেই। শহর আওয়ামীলীগের সভাপতির পদ ছেড়ে নারায়ণগঞ্জ জেলা আওয়ামীলীগের সাধারণ সম্পাদক হতে তাকে উদ্ভুদ্ধ করে সফলও হয়েছিলাম। আমি তাকে সরাসরিই বলতাম, আমার আকাংখা হল, আমি তাকে জাতীয় নেতার আসনে দেখতে চাই। আমার বড় দোষ ছিল তার কোন ভূল দেখলে তা আমি সরাসরি তাকে বলতাম। হয়তো এটাই তিনি সহ্য করতে পারেননি।’
‘বিষয়াদির অবতারনা করলাম এ কারনে যে, যারা আমার ১০০ নাম্বার তালিকাভূক্ত নেতাকর্মী ছিল তারাই আজ তার নেতা। নেতা হতে তাদের শরীরের রক্ত ঝড়েনি। অথচ রাজনীতির নামে তারাই আজ কোটি কোটি টাকার মালিক। তারা দল নয়, প্রভূভক্ত শুধু।’
শামীম ওসমানকে উদ্দেশ্য করে আরও লিখেন ‘আজ প্রশাসন, বিশেষ করে পুলিশ প্রশাসনের সাথে তার মতের ফারাক। ১২দিনের আল্টিমেটাম, এসপি সাহেবের সেই চ্যালেঞ্জ গ্রহণ তার জন্য সহনীয়ভাবেই নয়, হাইকমান্ডের কাছেও তিনি অনেকটা খাঁটো হয়ে গেছেন। এটা মুখে স্বীকার না করলেও অন্তরে স্বীকার করবেন তিনি সহ তার খোদ তার অনুসারীরাও।’
‘তার জন্য মায়া হয় অনেক। কারন আমার দেখা স্বপ্নেতে কোন চাটুকারিতা ছিলনা, ছিল প্রবল বিশ্বাস।’
‘তিনি তার বলয়কে ভেঙ্গে মানুষ, দল তথা মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর আস্থা ফেরৎ পান, সবার সাথে মিলে নারায়ণগঞ্জকে শান্তির জনপদে পরিণত করার পদক্ষেপ নেন, এমনতর প্রতিদানই আমাদের কাম্য।’
‘পরিশেষে নিবেদন রাখবো, আপনার মহান পিতা কোন দিনও অঙ্গ সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মীদেরকে মূল দলের নেতাদের ন্যূনতম সমালোচনা করতেও দেননি, বেয়াদবী হয় বিধায়। আপনার মাধ্যমেও তা দেখেছিলাম প্রথম স্তরে। গাড়ি হতে নেমে কাশিপুরের এক সন্ত্রাসীকে কিভাবে শায়েস্তা করেছিলেন, ফতুল্লা থানা আওয়ামীলীগের তৎকালীন সাংগঠনিক সম্পাদকের সাথে বন্দরের জয়নাল খাঁন কমিশনারের বাসায় জেলা ছাত্রলীগের সভাপতি বেয়াদবী করলে সবার সামনে ঐ ছাত্রলীগ নেতাকে কত কঠিনভাবে সাঁজা দিয়েছিলেন, তা কিন্তু এখনো চোখের সামনে জ্বল জ্বল করে ভেসে বেড়ায়। আল্লাহ আপনাকে সহ সবার মঙ্গল করুন। আমিন।
(শহিদ উল্লাহ, সাবেক সাধারণ সম্পাদক, ফতুল্লা থানা আওয়ামীলীগ)।
অন্যদিকে এখানে উল্লেখ্যযে, ১৮ এপ্রিল বৃহস্পতিবার নারায়ণগঞ্জ শহরের পাইকপাড়া এলাকা থেকে নারায়ণগঞ্জ সিটি কর্পোরেশনের ১৭নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর আবদুল করিম বাবু ওরফে ডিস বাবুকে গ্রেপ্তার করেছে জেলা গোয়েন্দা পুলিশ। বন্দর থানায় দায়ের করা একটি চাঁদাবাজি মামলায় তাকে গ্রেপ্তার করা হয়। ৭ দিনের রিমান্ড চেয়ে আদালতে বাবুকে পাঠালে আদালত তাকে কারাগারে পাঠান। এর আগে বাবুকে গ্রেপ্তারের পরপরই এমপি শামীম ওসমানকে জেলা পুলিশ সুপারের কার্যালয়ের সামনে দেখা যায়।
এখানে আরও উল্লেখ্যযে, গত ২৯মার্চ শামীম ওসমানের ঘনিষ্ঠ কর্মী মহানগর আওয়ামীলীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক শাহনিজামের বিরুদ্ধে ফতুল্লা মডেল থানায় জিডি করেছিলেন ওই থানার ওসি শাহ মোহাম্মদ মঞ্জুর কাদের। জিডির একদিন পর ভারতে চলে যান শাহনিজাম। এছাড়াও এর দুইদিন পর ফতুল্লায় ভাসমান মেরী আন্ডারসন জাহাজের বার থেকে বিয়ার ও মদ উদ্ধার করে পুলিশ ও ৬৮ জনকে গ্রেপ্তার করে। এ ঘটনায় মামলায় শামীম ওসমানের শ্যালক তানভীর আহমেদ টিটুকে মাদক বিক্রয়ে সহযোগীতাকারী হিসেবে মামলায় অভিযুক্ত করা হয়। তিনিও ভারতে চলে গেছেন। এছাড়াও শিশু সাকি অপহরণের অভিযোগ করা হয় সিটি কর্পোরেশনের কাউন্সিলর নাজমুল আলম সজলের বিরুদ্ধে। তিনিও পরবর্তীতে ওমরাহ পালনে সৌদি আরবে চলে গেছেন। এর আগে শামীম ওসমানের আরেক কর্মী মীর হোসেন মীরুকে দুইবার মামলা ও গ্রেপ্তার করা হয়। শামীম ওসমানের ছেলে অয়ন ওসমানের শ্যালক বিকির বিরুদ্ধেও মামলা দায়ের করা হয়। নারায়ণগঞ্জ শহরের একটি জুয়ার আসন থেকে ৪২ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়। মহানগর শ্রমিকলীগের সেক্রেটারি কামরুল হাসান মুন্না ও বর্তমান সিটি কর্পোরেশনের কাউন্সিলর কবির হোসেন সহ ২২জনকে গ্রেপ্তার করে আদালতে পাঠানো হয়।
এসব ঘটনার মধ্যে তিনটি ঘটনায় ব্যবসায়ীরা গত ৩ এপ্রিল প্রতিবাদ সভা করেছেন। ওই দিন নারায়ণগঞ্জ শহরে জেলা পুলিশের শীর্ষ কর্মকর্তাদের নিয়ে মহড়া দিয়েছেন জেলা পুলিশ সুপার হারুন অর রশীদ। ওইদিন শহরের বিভিন্ন পয়েন্টে জলকামান, সাজোয়া যান, পুলিশ আর্ম কার দেখা যায়। এর আগে গত ২ মার্চ শামীম ওসমানের সমাবেশের সামনেও পুলিশের এমন প্রস্তুতি দেখা যায়। ৩ এপ্রিল ওইদিন বুধবার পুলিশ সুপার হারুন অর রশীদ বলেছেন, অপরাধী কাউকে ছাড় দিব না, সে যত বড় ক্ষমতাশালী লোক হোক।’
এদিকে গত ৬ এপ্রিল শনিবার ফতুল্লার বাংলা ভবনে জরুরী কর্মী সভা করেছেন শামীম ওসমান। যেখানে তিনি নারায়ণগঞ্জের সিটি কর্পোরেশনের মেয়র আইভী, এসপি হারুন অর রশীদ ও কেন্দ্রীয় শ্রমিকলীগ নেতা কাউসার আহমেদ পলাশকে ইঙ্গিত করে বেশ কিছু বক্তব্য রাখেন। ওই কর্মী সভায় পুলিশ সুপারের বিরুদ্ধে শ্লোগানও দিয়েছিল নেতাকর্মীরা। পুুলিশের কঠোর অবস্থান নিয়ে বক্তারা সেদিন কঠোর সমালোচনাও করেন। এর আগে ৩ এপ্রিল ব্যবসায়ীরা প্রতিবাদ করেন। গত ৭ এপ্রিল প্রধানমন্ত্রী বরাবর স্মারকলিপি দেয়ার সিদ্ধান্ত জানালেও পরবর্তীতে আর ব্যবসায়ীরা স্মারকলিপি দেননি।