সান নারায়ণগঞ্জ টুয়েন্টিফোর ডটকম:
মুন্সীগঞ্জের গজারিয়ায় ট্রাক চাপায় কুমিল্লা সেনানিবাসে কর্মরত সেনা সদস্য নিহতের ঘটনায় লাইসেন্স বিহীন চালক আবুল কালাম শনাক্ত করে তাকে গ্রেপ্তার করেছে র্যাব-১১। জব্দ করা হয়েছে তার ট্রাকটি। ২৫ ফেব্রুয়ারি শনিবার দুপুরে এ তথ্য জানান র্যাব-১১ এর কোম্পানী অধিনায়ক, উপ-পরিচালক মেজর মোহাম্মদ সাকিব হোসেন।
তিনি জানান, গত ২১ ফেব্রুয়ারী তারিখে মুন্সিগঞ্জের গজারিয়া উপজেলার ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের বালুয়াকান্দি এলাকায় ট্রাকের ধাক্কায় ঘটনাস্থলেই মারা যায় মোটরসাইকেল চালক তুষার। আহত হন মোটরসাইকেলের পিছনের সীটে বসে থাকা আরোহী রিয়াজ নামে এক ব্যক্তি। সম্পর্কে তিনি নিহত তুষার এর দুলাভাই। পরবর্তীতে ঘাতক ট্রাকচালক ট্রাক নিয়ে দ্রুত ঐ স্থান থেকে পালিয়ে যায়।
র্যাব আরো জানায়, সে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর একজন সদস্য। তার পূর্ণ নাম মেহেদী হাসান তুষার (২৫)। সে চাঁদপুর জেলার মতলব উত্তর থানার নয়াকান্দি গ্রামের জসিম উদ্দিন এর ছেলে। তার পিতা জসিম উদ্দিন একজন অবসরপ্রাপ্ত সেনাসদস্য। সে গত ১৪ জানুয়ারি ২০১৮ ইং তারিখে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীতে যোগদান করে ৫ বছর ১ মাস চাকুরী সম্পন্ন করে এবং গত ১৭ জুন ২০২২ইং তারিখে বিবাহ করে। সর্বশেষ সে কুমিল্লা ক্যান্টনমেন্ট এ কর্মরত ছিল।
ঘটনার দিন গত ২১ ফেব্রুয়ারী ২০২৩ইং তারিখে নিহত তুষার তার দুলাভাইকে নিয়ে মোটরসাইকেলে করে গাজীপুর থেকে বাড়ির উদ্দেশ্যে রওনা করেছিলেন। পথিমধ্যে সন্ধ্যার দিকে তারা মুন্সিগঞ্জের গজারিয়া উপজেলার বালুয়াকান্দি এলাকায় পৌছালে পেছন দিক আসা একটি ট্রাক তাদের মোটরসাইকেলটিকে ধাক্কা দেয়। এ ঘটনায় হেলমেট পরিহিত অবস্থায় থাকা সত্ত্বেও মোটরসাইকেল চালক তুষার ঘটনাস্থলেই মারা যায় ও তার সাথে থাকা আরোহী রিয়াজ গুরুতর আঘাতপ্রাপ্ত হয়। আহত রিয়াজকে উদ্ধারপূর্বক স্থানীয় স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করা হয় এবং ১ দিন চিকিৎসাধীন থেকে পরবর্তী দিন সে নিজ বাড়ীতে প্রত্যাবর্তন করে।
উক্ত দূর্ঘটনায় নিহত মোটরসাইকেল চালক তুষারের বাবা বাদী হয়ে মুন্সীগঞ্জ জেলার গজারিয়া থানায় সড়ক পরিবহন আইন ২০১৮ এর ৯৮/১০৫ ধারায় অজ্ঞাতনামা চালক ও অজ্ঞাতনামা গাড়ির বিরুদ্ধে একটি মামলা দায়ের করেন, যার মামলা নং-১২ তারিখঃ ২২/০২/২০২৩ইং। বর্ণিত ঘটনায় ঘাতক ট্রাকচালককে গ্রেফতারের নিমিত্তে র্যাব-১১, সিপিসি-২, কুমিল্লার বেশ কয়েকটি গোয়েন্দা টিম মাঠ পর্যায়ে কাজ শুরু করে। ঘটনাটি অত্যন্ত স্পর্শকাতর হওয়ায় একাধিক টিম ছায়াতদন্ত শুরু করে এবং ঘটনার সাথে প্রত্যক্ষভাবে জড়িত চালককে আইনের আওতায় আনতে গোয়েন্দা নজরদারী বৃদ্ধি করা হয়। ছায়াতদন্ত, গোয়েন্দা টিম হতে প্রাপ্ত তথ্য ও ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কে ঘটনাস্থলের আগে ও পরে একাধিক সিসিটিভি ফুটেজ বিশ্লেষণ করে ঘাতক ট্রাকচালককে শনাক্ত করা হয়। পরবর্তীতে তথ্য-প্রযুক্তির সহায়তায় গত ২৪ ফেব্রুয়ারী ২০২২ইং তারিখ রাতে কুমিল্লা জেলার দাউদকান্দি থানাধীন গৌরিপুর এলাকা হতে ঘাতক ট্রাকচালক আবুল কালাম (৬২), পিতা-ছিদ্দিকুর রহমান, সাং-স্বল্প পেন্নাই, থানা-দাউদকান্দি, জেলা-কুমিল্লা’কে গ্রেফতার করা হয়। এসময় দূর্ঘটনায় জড়িত ট্রাকটিও জব্দ করা হয়।
ঘাতক ট্রাকচালককে ড্রাইভিং লাইসেন্স এর ব্যাপারে জিজ্ঞাসাবাদ করলে সে তার ড্রাইভিং লাইসেন্সটি হারিয়ে গিয়েছে মর্মে তথ্য প্রদান করেন। এছাড়াও তিনি আরো উল্লেখ করেন, সে ২৭/০৫/১৯৫৯ইং তারিখে জন্মগ্রহণ করে এবং বর্তমানে তার বয়স ৬২ বছর। গত ১৯৮২ সালে সে নিজের নামে একটি ড্রাইভিং লাইসেন্স (হালকা) তৈরী করে। ১৯৯৪ সালে তার লাইসেন্সের মেয়াদ উত্তীর্ণ হয়ে গেলেও অদ্যাবধি সে লাইসেন্সের মেয়াদ নবায়ন করেন নাই। পরবর্তীতে ২০১৪ সালে সে নিজে একটি ট্রাক ক্রয় করে এবং ২০২০ সাল থেকে পেশাদারভাবে হেল্পার ব্যতীত নিজেই ট্রাকটি চালনা করছিল। লাইসেন্স ব্যতীত গাড়ি চালনা, হেল্পার ব্যতীত মহাসড়কে দীর্ঘপথ অতিক্রম, অধিক বয়সের কারণে দৃষ্টিশক্তি ক্ষীণ লোপ পাওয়া, অল্প সময়ের মধ্যে মালামাল আনলোড করে অন্য একটি ট্রিপ ধরার নিমিত্তে নির্ধারিত গতির চেয়ে অধিক গতিতে গাড়ি চালনা উক্ত দূর্ঘটনা সংঘঠিত হওয়ার মূখ্য কারণ হিসেবে আসামীকে জিজ্ঞাসাবাদে প্রতীয়মান হয়।