সান নারায়ণগঞ্জ টুয়েন্টিফোর ডটকম:
নারায়ণগঞ্জের রাজনীতিতে প্রকাশ্যে নৌকা ও লাঙ্গলের পক্ষে কাজ বিএনপির নামদারী নেতা আতাউর রহমান মুকুল সহ তার অনুগামী কজন ব্যক্তি বন্দর ও বন্দর উপজেলায় বিএনপির কমিটি দিয়েছে বলে যে, খবর প্রচারিত হচ্ছে সেই সম্পর্কে কেন্দ্রীয় বিএনপির জাতীয় নির্বাহী কমিটির ঢাকা বিভাগীয় সাংগঠনিক সম্পাদক আব্দুস সালাম আজাদ নারায়ণগঞ্জের স্থানীয় গণমাধ্যম কর্মীদের কাছে বলেছেন, যাদের নিজেদেরই পদ নেই, তারা কিভাবে বিএনপির কমিটি দিবে?
তিনি বলেছেন, তারা বিএনপি’র গঠনতন্ত্র বোঝেন না এবং মানেন না। তারা প্রকৃত রাজনীতিবিদ হলে যে দলের রাজনীতি করেন সে দলের গঠনতন্ত্র মেনে চলতেন। যারা এসব করেন তারা সাংগঠনিক লোক না, তাই সাংগঠনিক কর্মকাণ্ডও বোঝেন না। তিনি যদি সাংগঠনিক লোক হতেন তাহলে তার জানা থাকা উচিত ছিলো কোনো ইউনিট কমিটি গঠন করতে হলে আহ্বায়ক এবং সদস্য সচিবের স্বাক্ষর প্রয়োজন হয়। তাদের দুজনের বাইরে কমিটির গঠনে কেউ স্বাক্ষর করার ক্ষমতা রাখেন না। কমিটি গঠনে আহবায়ক, সদস্য সচিব ছাড়া অন্য কারো স্বাক্ষর করার এখতিয়ার নেই- এই সহজ বিষয়টা যে বোঝে না বা মানে না তাকে রাজনীতিবিদের পর্যায়ে ফেলা যায় না।
নারায়ণগঞ্জের বন্দর থানা ও বন্দর উপজেলায় বিএনপির কথিত ভূয়া কমিটি গঠনের বৈধতার বিষয়ে জানতে চাইলে এভাবেই কথাগুলো বলেন বিএনপির জাতীয় নির্বাহী কমিটির ঢাকা বিভাগীয় সাংগঠনিক সম্পাদক আব্দুস সালাম আজাদ। মঙ্গলবার (৭ মার্চ) মুঠোফোনে জানতে চাইলে স্থানীয় গণমাধ্যম কর্মীদের কাছে নিজ প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেন আব্দুস সালাম।
আব্দুস সালাম আজাদ আরো বলেন, আতাউর রহমান মুকুল সহ যারা মহানগর বিএনপি থেকে পদত্যাগ করেছেন। তাই এখন তাদের কোনো পদে নেই। যিনি নিজেই পদহীন, যার নিজেরই কোনো পদ নেই তিনি কি করে আরেকজনকে পদ দিতে পারবেন? তিনি কি করে নতুন কমিটি গঠন করতে পারবেন? আতাউর রহমান মুকুল কমিটি গঠনের ক্ষমতা রাখেন না, তাই তার গঠিত কমিটি সম্পুর্ন অবৈধ। এটা তার পারিবারিক কমিটি হতে পারে, সামাজিক কমিটি হতে পারে কিন্তু এটা দলের কোনো কমিটি না, বিএনপি’র কোনো কমিটি না। বিএনপির কমিটি হবে বিএনপি’র গঠনতন্ত্র মেনে, কোনো ব্যক্তির ইচ্ছায় নয়।
এদিকে বিএনপির মূল স্রোত থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে দলের মাঝে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করায় ওইসব বিতর্কিত ব্যক্তিদের প্রতি ক্ষুব্ধ হয়ে উঠেছে বিএনপির নেতাকর্মীরা দলের এই চরম গুরুত্বপূর্ণ সময় যখন সকলকে ঐক্যবদ্ধভাবে আন্দোলন সংগ্রাম করার ডাক দিচ্ছে দলের হাই কমান্ড, তখন অদৃশ্য ইশারায় নারায়ণগঞ্জ মহানগর বিএনপিতে বিভক্তি সৃষ্টির চেষ্টা করছেন নৌকা লাঙ্গলের মঞ্চে ওঠা ব্যক্তিরা। নিরীহ বিএনপি’র নেতা কর্মীদেরকে ভুল বুঝিয়ে তারা বিএনপির ঐক্য নষ্ট করে প্রতিপক্ষকে সুবিধা করে দিচ্ছেন বলেই মনে করে তৃণমূল। তাই অবিলম্বে এসব বিতর্কিতদের বিএনপির সকল পদ থেকে বহিষ্কারের দাবি জানিয়েছেন তারা ।
বিএনপির রাজপথের নেতাকর্মীরা জানান, ২০১৮ সালে জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আওয়ামীলীগের নেতৃত্বাধীন মহাজোটের শরীক দল জাতীয় পার্টির লাঙ্গল প্রতীকের প্রার্থী একেএম সেলিম ওসমানের পক্ষে প্রকাশ্যে নির্বাচনী সভা সমাবেশ করেছেন বিএনপির নেতা পরিচয়দানকারী আতাউর রহমান মুকুল সহ তার অনুগামীরা। ওই নির্বাচনে মুকুল লাঙ্গলের পক্ষ নিয়ে বিএনপির ধানের শীষ প্রতীকের প্রার্থীর লোকজনদের কেন্দ্র থেকে মারধর করে বের করে দিয়েছিলো। ভোটের দিন সেইসব ঘটনা ১ মার্চ বন্দর থানা বিএনপির কর্মীসভায় বিএনপির এক কর্মী ফাঁস করে দিয়েছেন।
বিএনপির ওই কর্মী জানান, গত জাতীয় নির্বাচনে ভোটের দিন ভোট থেকে বিএনপির নেতাকর্মীদের মারধর করে গালিগালাজ করে হুমকি ধমকি ভয়ভীত দেখিয়ে বের করে দেন আতাউর রহমান মুকুল। যদিও নির্বাচনের দিন গণমাধ্যমের কাছে এমন অভিযোগও করেছিলেন ধানের শীষ প্রতীকের প্রার্থী এসএম আকরাম। মুকুল ও সুলতান গংদের বাধার কারনে সিরাজদৌলা মাঠে বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর নির্বাচনী জনসভা করতেও পারেননি। পরে অন্যত্র সমাবেশ করতে হয় বিএনপিকে। ফখরুল আসার পথে রাস্তায় টায়ারে আগুন জ্বালিয়ে বাধাও দেয়া হয়। এর আগে সেলিম ওসমানের কারখানায় আওয়ামীলীগ ও জাতীয় পার্টির নেতাদের সঙ্গে গিয়ে সেলিম ওসমানকে নির্বাচন করার অনুরোধ জানান মুকুল- যা মিডিয়াতে ছবিও প্রকাশিত হয়।
দীর্ঘদিন যাবত বন্দরে আওয়ামীলীগ ও জাতীয় পার্টির নেতাদের সঙ্গে একমঞ্চে রাজনীতি করেছেন আতাউর রহমান মুকুল। এমনকি জাতীয় পার্টির প্রয়াত চেয়ারম্যান হুসেইন মুহাম্মদ এরশাদ বন্দরে আসলে সেই সমাবেশে বক্তব্যও রাখেন মুকুল। কিন্তু গত বছরের সেপ্টেম্বর মাসে নারায়ণগঞ্জ মহানগর বিএনপির কমিটি গঠনের কয়েক মাস পূর্বে বিএনপির রাজনীতিতে ফেরার চেষ্টা করেন মুকুল। কমিটির লোভে বিএনপিতে আসলেও সেই আশা পূরণ হয়নি তার। তবে কমিটিতে তাকে সহ বেশকজনকে যুগ্ম আহ্বায়ক করা হলেও ১৪জন নেতা বিদ্রোহী করে পদত্যাগ করেন।
এমন পরিস্থিতিতে ওই সময় গঠিত মহানগর বিএনপির আহ্বায়ক অ্যাডভোকেট সাখাওয়াত হোসেন খান ও সদস্য সচিব অ্যাডভোকেট আবু আল ইউসুফ খান টিপুর নেতৃত্বে নারায়ণগঞ্জ মহানগর বিএনপি পুরোদমে চাঙ্গা হয়ে ওঠে। কেন্দ্র ঘোষিত কর্মসূচিগুলো বৃহত্তর আকালে পালন ছাড়াও কেন্দ্রীয় কর্মসূচিতেও তাদের অংশগ্রহণ ছিলো চোখে পরার মত। একই সঙ্গে মহানগরীর বিভিন্ন ইউনিয়ন, ওয়ার্ড ও থানা কমিটি গঠন প্রক্রিয়া শুরু করেন। যেখানে বন্দর ও সদর থানা কমিটি সহ বেশকটি ইউনিট কমিটি রাজপথের ত্যাগী নেতাকর্মীদের মাধ্যমে গঠিত হয়েছে।
নারায়ণগঞ্জ মহানগর বিএনপি যখন চাঙ্গা হয়ে ওঠেছে তখন মহানগর বিএনপির শীর্ষ নেতাদের মধ্য থেকে বেশকজনকে লোভনীয় টোপ দিচ্ছে নৌকা লাঙ্গল মার্কার অনুগামীরা। সাখাওয়াত ও টিপুর নেতৃত্বে যারা পুরোদমে রাজপথে রাজনীতিতে সক্রিয়া হওয়ার চেষ্টা করছেন কিংবা যারা সাখাওয়াত ও টিপুর নেতৃত্বের প্রতি আস্থাশীল এমন সব নেতাদের টার্গেট করে নৌকা লাঙ্গলের ছায়াতলে নেয়ার চেষ্টা চলছে। স্বচ্ছ নেতাদের বির্তকিত করার জন্য বিদ্রোহীদের দলে নেয়ার চেষ্টা চলছে। যার মধ্যে মহানগর বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক এমএইচ মামুন সেই নৌকা লাঙ্গল মার্কাদের পাতা ফাঁদে পা দিয়ে বিদ্রোহীদের দলে ভিরেছেন।
নেতাকর্মীরা আরো অভিযোগ করেন, আওয়ামীলীগ সরকার ক্ষমতায় আসার পর থেকে নারায়ণগঞ্জ বিএনপির নেতাকর্মীরা সরকারবিরোধী আন্দোলন সংগ্রাম করেছে। সরকারি দলের হামলা-মামলার শিকার হয়েছে জেল জুলুম হুলিয়া মাথায় নিয়ে দিনের পর দিন আত্মগোপনে পালিয়ে থেকেছে কিন্তু এসব কিছুই পোহাতে হয়নি আতাউর রহমান মুকুলকে। তিনি দিব্যি শহরে বুক ফুলিয়ে ঘুরে বেরিয়েছেন। তাকে দেখা গেছে সরকারি দলের বড় বড় নেতাদের সাথে সভা-সমাবেশে অথচ দেখা মিলেনি বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার মুক্তির আন্দোলনে।
এ ধরনের গুরুতর অভিযোগে অভিযুক্ত নেতাকে সিটি নির্বাচনের সঙ্গী হিসেবে বেছে নিয়েছেন অ্যাডভোকেট তৈমুর আলম খন্দকার, যা বিএনপি নেতাকর্মীদের হৃদয়ে রক্তক্ষরণ সৃষ্টি করেছে। তাছাড়া দলের সিদ্ধান্ত অমান্য করে নারায়ণগঞ্জ সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে অংশ নেয়ায় এডভোকেট তৈমূর আলম খন্দকারকে আর তৈমূরকে সহযোগিতা করায় এটিএম কামালকে দল থেকে বহিস্কার করা হয় অথচ এটিএম কামালের মতো মুকুলও সরাসরি তৈমূরকে নির্বাচনে সহযোগিতা করেছিলেন কিন্তু তাকে বাঁচিয়ে দেয়া হয়। তৈমূরের নির্বাচনী প্রচারনায় অংশ নিয়ে নারায়ণগঞ্জ বিএনপির নেতাকর্মীদের হুমকি দিয়ে মুকুল বলেছিলেন ‘তৈমূূরের পক্ষে কাজ না করলে নারায়ণগঞ্জ থেকে বের করে দেয়া হবে’। সেই মুকুল এখন বিএনপিরি বিরুদ্ধে গিয়ে বিএনপির বিরুদ্ধে কথিত কমিটি গঠন করছেন, যাতে আওয়ামীলীগ ও জাতীয় পার্টি লাভবান হয়।