সান নারায়ণগঞ্জ টুয়েন্টিফোর ডটকম:
নারায়ণগঞ্জে এতদিন সন্ত্রাসী ও মাদক ব্যবসায়ীদের কাছে জিম্মিদশায় ছিলেন নারায়ণগঞ্জের মানুষ। জেলার সাতটি থানার বিভিন্ন এলাকার অলিগলিতে প্রকাশ্যেই ফেরী করে মাদক বিক্রি ছিল অহরহ। সমাজের সচেতন মানুষ বাধা দিতে গেলে হয়েছেন লাঞ্ছিত। উল্টো মাদক ব্যবসায়ীরা ক্ষমতার দাপট দেখিয়ে সাধারণ মানুষকে করেছিল হেনস্থা। জেলার সদর থানা, বন্দর থানা, সিদ্ধিরগঞ্জ থানা ও সোনারগাঁ থানার বিভিন্ন এলাকায় মাদকের বিস্তার সবচেয়ে বেশি।
বিভিন্ন সূত্র থেকে, সরকার দলের শীর্ষ নেতাদের নাম ভাঙ্গিয়ে প্রকাশ্যে মাদক বিক্রি করে আসছিল মাদক ব্যবসায়ীরা। ক্ষমতাশীন দলের কোন কোন শীর্ষ নেতার সভা সমাবেশে এলাকার ছিচকে সন্ত্রাসী মাদক বিক্রেতারা যোগদান করেই সেদিনই পুরোদমে চালিয়ে যায় মাদক বিক্রি। অনেক রাজনৈতিক দলের নেতার মিটিং মিছিলেও দেখা যায় এসব মাদক বিক্রিতাদের অংশগ্রহণ। যাদের পিছন থেকে শেল্টার দিয়ে থাকেন দাপটশালী নেতারাই। যার বিনিময়ে মাদক বিক্রেতাদের কাছ থেকে টু পাইস কামিয়েও নেয়। আবার অনেক নেতা আছেন যারা নিজেরাই মাদক গ্রহণ করেন। ফলে মাদক স্পট থেকে তাদের কাছে পৌছে যায় তাদের আপ্যায়ণে মাদক। এভাবেই চলে আসছিল নারায়ণগঞ্জ।
এই নারায়ণগঞ্জে র্যাব, ডিবি পুলিশ ও থানা পুলিশও একাধিকবার মাদক স্পটে অভিযান চালাতে গিয়ে হামলার শিকার হয়েছিলেন। মুলত সরকার দলের নেতাদের আস্কাড়ায় আইন শৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যদের উপর এমন হামলা চালাতে সাহস পেয়েছিল মাদক বিক্রেতা ও সন্ত্রাসীরা। এসব মাদক বিক্রেতা ও সন্ত্রাসীদের কাছ থেকে আবার দু’একজন অসৎ পুুলিশ সদস্যও মাসোহারা আদায় করতেন। সেই সঙ্গে কিছু বিশেষ শ্রেণির পেশার লোকজনও মাদক স্পট থেকে মাসোহারা আদায় করতেন। যার ফলে মাদক বিক্রেতা ও সন্ত্রাসীদের দৌড়াত্ব দিন দিন বেড়ে যায় এই নারায়ণগঞ্জে। অনেক গণমাধ্যম কর্মীরা এসব কারনে সন্ত্রাসী মাদক বিক্রেতাদের নিয়ে লেখালেখী করার সাহস পায়নি। লিখতে গেলেই উমুক বড় ভাই, উমুক নেতার লোক দাবি করে হুমকি ধমকি দিতো। লাঞ্ছিত করতো। কিন্তু বর্তমানে পুলিশ সুপারের কারনে মাদক বিক্রেতা সহ এসব কর্মকান্ডের শেল্টারদাতাদেরও ঘুম হারাম।
তবে এবার সেই পরিস্থিতির পুরোই পরিবর্তন নারায়ণগঞ্জে। নারায়ণগঞ্জ শহরের অলিগলিতে সবচেয়ে বেশি ছিনতাইয়ের কবলে পড়তো সাধারণ মানুষ। এমনকি এসব ছিনতাই থেকে রেহাই পায়নি সিভিলে থাকা পুলিশ সদস্য ও সংবাদকর্মীরাও। নারায়ণগঞ্জে পুুলিশ সুপার হিসেবে হারুন অর রশীদ যোগদানের পর কমেছে এসব অপকর্ম। কমেছে চুরি ছিনতাই পকেটমার, জুয়ার আসর। জেলায় মেলার নামে জুুয়ার আসর ছিল প্রতি মাসে। জেলার বিভিন্ন এলাকায় নানান অজুহাতে মেলা বসিয়ে চলতো জুয়ার আসর। বর্তমানে তা দেখা যাচ্ছেনা।নারায়ণগঞ্জের সন্ত্রাসী ও মাদক ব্যবসায়ীদের রীতিমত ঘুম হারাম হয়ে গেছে এখন।
নারায়ণগঞ্জে এসপি হারুন অর রশীদ যোগদানের পর পালিয়ে বেড়াচ্ছে মাদক বিক্রেতারা। তবে শহর কেন্দ্রীক সদর থানা, বন্দর থানা, ফতুল্লা ও সিদ্ধিরগঞ্জ থানার মাদক ব্যবসায়ীরা আড়ালে চলে গেলেও রূপগঞ্জ, আড়াইহাজার ও সোনারগাঁয়ের মাদক ব্যবসায়ীদের বিরুদ্ধে এখনও কঠোর অভিযান দেখা যাচ্ছেনা। যার ফলে সোনারগাঁয়ে এখনও চলছে মাদক বিকিকিনি। মাদকের চালান আসার প্রধান পয়েন্ট সোনারগাঁয়ের মেঘনা টোল প্লাজা। সেখানে কঠোর চেক পোস্টের প্রয়োজন। সেখান দিয়ে মাদক আসার কারনে খুব দ্রুত সোনারগাঁয়ের প্রতিটি এলাকার অলিগলি হয়ে ওঠেছে মাদকের স্পট। নারায়ণগঞ্জে এসপি হারুন যোগদানের পর কয়েকশ মাদক বিক্রেতাকে গ্রেপ্তার করেছেন। ২০ এপ্রিল শনিবার তিনটি থানায় বিশেষ অভিযান চালিয়ে ৩৯ জনকে গ্রেপ্তার করেছেন।
এখন সচেতন মহলের দাবি- শুধু ছিচকে মাদক বিক্রেতা ও সন্ত্রাসীদের গ্রেপ্তার করলেই হবেনা। যারা এসব সন্ত্রাসী ও মাদক বিক্রেতাদের লালন পালনকারী তাদেরকেও ধরতে হবে। নতুবা পুলিশ সুপার যতদিন নারায়ণগঞ্জে দায়িত্বে থাকবেন ততদিনই মাদক বিক্রেতারা আড়ালে থাকবেন। তিনি চলে গেলে আবারো সেই পুরনো নারায়ণগঞ্জে ফিরে যাবে বর্তমান নারায়ণগঞ্জ। বর্তমান পুলিশ সুপারের হাতেই মাদক ব্যবসায়ীদের সমূলে উদপাটন দেখতে চায় নারায়ণগঞ্জবাসী। পুলিশ সুপারের এসব প্রসংশীয় অভিযান যদি বিশেষ কোন কারনে হয় এবং বিশেষ কোন কারনে যদি আবার থমকে যায়, তাহলে ক্ষতিগ্রস্থ হবে নারায়ণগঞ্জবাসী। সেই সঙ্গে যারা এখন সন্ত্রাসী ও মাদক বিক্রেতাদের বিরুদ্ধে কথা বলছেন এবং যারা কলম দিয়ে সন্ত্রাসী মাদক বিক্রেতাদের বিরুদ্ধে লেখছেন তারাও ক্ষতিগ্রস্থ হতে পারে, যখন বর্তমান পুলিশ সুপার এখানে না থাকবেন। তাই তাকে নারায়ণগঞ্জে দৃষ্টান্ত স্থাপন করা উচিত যাতে ভবিষৎে নারায়ণগঞ্জে ছিচকে সন্ত্রাসী ও মাদক বিক্রেতারা মাথাচাড়া দিয়ে ওঠতে না পারে। যখন যে যেমন পুলিশ সুপারই থাকুক।