সান নারায়ণগঞ্জ টুয়েন্টিফোর ডটকম:
গত ১২ মার্চ বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের সঙ্গে সাক্ষাত করেছিলেন নারায়ণগঞ্জ মহানগর বিএনপির বিদ্রোহী গ্রুপের কজন নেতাকর্মী। মুলত জাতীয় পার্টির লাঙ্গল মার্কার পক্ষে কাজ করে আসা বিএনপি নেতা পরিচয়দানকারী আতাউর রহমান মুকুলের নেতৃত্বে মহাসচিবের সঙ্গে সাক্ষাত করেন তারা। ওই সময় মুকুল গংদের নির্দেশ দেয়া হয় যে, দলের গঠনতন্ত্র মোতাবেক সাখাওয়াত ও টিপুর নেতৃত্ব মেনে দলীয় শৃঙ্খলা রক্ষা করে রাজনীতি করতে হবে। দলে কোনো ধরণের বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করা যাবে না। কঠোর ভাষায় তাদেরকে শাসিয়ে দেন মহাসচিব।
এদিকে ২২ মার্চ মহানগর বিএনপির আহ্বায়ক অ্যাডভোকেট সাখাওয়াত হোসেন খান ও সদস্য সচিব অ্যাডভোকেট আবু আল ইউসুফ খান টিপুর নেতৃত্বে মহাসচিবের সঙ্গে মহানগর বিএনপি বৈঠক করেন। ওই বৈঠকে সাখাওয়াত হোসেন খান ও আবু আল ইউসুফ খান টিপুর নেতৃত্বের উপরই কেন্দ্রীয় বিএনপির আস্থা রয়েছে বলে সাফ জানিয়ে দেন মহাসচিব। বৈঠকে বেশ হাস্যোজ্জল দেখা গেছে সাখাওয়াত ও টিপুকে।
কিন্তু এর আগে মুকুল গংদের নেতৃত্বে বিদ্রোহীদের মলিন মুখ নিয়ে নারায়ণগঞ্জে ফিরে আসতে হয়। যদিও নারায়ণগঞ্জে এসেই বিদ্রোহীরা মহাসচিবের বরাদ দিয়ে নানা ধরণের বিভ্রান্ত্রি ছড়াতে থাকেন। মহাসচিবের সঙ্গে সাখাওয়াত-টিপুর নেতৃত্বে বৈঠকে মহাসচিবের বক্তব্যের ভিডিও ফেসবুকে প্রচারিত হচ্ছে। কিন্তু মুকুল গংদের মহাসচিব কি বলেছেন সেই বিষয়ে মহাসচিবের কোনো ভিডিও তারা প্রকাশ করেননি। কারন মুকুল গং ব্যর্থ হয়ে ফিরে এসেছেন তাতে প্রমানিত হয়ে যেতো।
এদিকে জানাগেছে, বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের সঙ্গে বৈঠক করেছে নারায়ণগঞ্জ মহানগর বিএনপি’র আহ্বায়ক অ্যাডভোকেট সাখাওয়াত হোসেন খান ও সদস্য সচিব অ্যাডভোকেট আবু আল ইউসুফ খান টিপু’র নেতৃত্বে মহানগর বিএনপি ও অঙ্গসংগঠনের নেতৃবৃন্দ।
২২ মার্চ বুধবার রাতে বিএনপির চেয়ারপারসনের গুলশানের রাজনৈতিক কার্যালয়ে মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের সঙ্গে বৈঠক করেন। এসময়ে বিএনপির কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির সহ-আন্তর্জাতিক বিষয়ক সম্পাদক নজরুল ইসলাম আজাদ তাদের সঙ্গে উপস্থিত ছিলেন।
এ সময় বিএনপির মহাসচিব মীর্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর নারায়ণগঞ্জ মহানগর বিএনপির আহবায়ক অ্যাডভোকেট সাখাওয়াত হোসেন খান এবং সদস্য সচিব অ্যাডভোকেট আবু আল ইউসুফ খান টিপুসহ আগত নেতৃবৃন্দকে পবিত্র মাহে রমজানের শুভেচ্ছা জানান এবং আগামী দিনের আন্দোলন সংগ্রামে আরো দিগুন সক্রিয়ভাবে রাজপথে থাকার আহ্বান জানান।
এ সময় মির্জা ফখরুল উপস্থিত নেতৃবৃন্দের উদ্দেশ্যে বলেন, বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান জননেতা তারেক রহমান সবদিক থেকে বিবেচনা করেই দলের আস্থা আপনাদের উপর ছিলো বলেই আপনাদেরকে কমিটির দায়িত্ব দেয়া হয়েছে। আপনাদের উপর কেন্দ্রীয় বিএনপির আস্থা রয়েছে। আপনারা রাজপথে আন্দোলন সংগ্রাম করে সেই আস্থার প্রতিদান দেবেন এবং নিজেদেরকে যোগ্য প্রমাণ করবেন। কে কি বলল সে কথায় কান দেবেন না। এই মুহূর্তে রাজপথ হচ্ছে আমাদের নিজেদের প্রমাণের একমাত্র অবলম্বন। তাই সকলে মিলে আরো দুর্বার আন্দোলন গড়ে তুলুন এবং এই স্বৈরাচারী হাসিনা সরকারকে পদত্যাগে বাধ্য করুন। একটি নিরপেক্ষ তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে নির্বাচনের পরিবেশ ফিরিয়ে আনার আগ পর্যন্ত আন্দোলন সংগ্রাম অব্যাহত রাখুন। দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানসহ আমরা সবাই আছি আপনাদের পাশে।
অন্যদিকে জানাগেছে, গত ১২ মার্চ নারায়ণগঞ্জ মহানগর বিএনপির বিদ্রোহী গ্রুপকে ধমকে দিয়েছিলেন দলের মহাসচিব মীর্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। সেই সাথে দলের মধ্যে গ্রুপিং বন্ধ করে সাখাওয়াত-টিপুর নেতৃত্বে ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করার নির্দেশনা দিয়েছেন তিনি। ওইদিন আতাউর রহমান মুকুলের নেতৃত্বে বিদ্রোহী গ্রুপের সদস্যরা মির্জা ফখরুলের সাথে তার বাসভবনে দেখা করতে গেলে তিনি এই নির্দেশনা দেন। ভবিষ্যতে দলের মধ্যে বিভক্তি সৃষ্টির চেষ্টা করলে কঠোর পরিণতির হুঁশিয়ারিও জানান তিনি।
সূত্র জানায়, নারায়ণগঞ্জ মহানগর বিএনপির আহ্বায়ক কমিটির বিপক্ষে অভিযোগ নিয়ে দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের কাছে গিয়েছিলেন আতাউর রহমান মুকুল ও আব্দুস সবুর খান সেন্টুসহ বিদ্রোহী গ্রুপের নেতারা। মহাসচিব এর বাসভবনে গিয়ে তারা আহবায়ক এডভোকেট সাখাওয়াত হোসেন খান এবং সদস্য সচিব অ্যাডভোকেট আবু আল ইউসুফ খান টিপুর বিরুদ্ধে নালিশ দেওয়ার চেষ্টা করেন কিন্তু এতে উত্তেজিত হয়ে পড়েন মহাসচিব মির্জা ফখরুল। তিনি মুকুলসহ সকলকে ধমকে দেন এবং কেন্দ্র ঘোষিত আহ্বায়ক কমিটির নেতৃত্বে ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করার নির্দেশ দেন।
মহাসচিব মির্জা ফখরুল মুকুলকে বলেন, তোমার বিরুদ্ধেই তো বিস্তর অভিযোগ জমা আছে বিএনপির কেন্দ্রীয় কমিটির কাছে। তুমি বিএনপি দলীয় পদ পদবী ব্যবহার করে সরকারি দলের সাথে লিয়াজো করে রাজনীতি করো। ইতিপূর্বে তোমার বিরুদ্ধে বিএনপির ধানের শীষের প্রার্থী বিপক্ষে অবস্থান নেওয়ার এবং বিএনপির এজেন্টের মেরে কেন্দ্র থেকে বের করে দেওয়ার অভিযোগ রয়েছে। তাছাড়া বিভিন্ন সময়ে সরকারি দলীয় নেতাদের সাথে মিলে বিএনপির বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করার অভিযোগও রয়েছে। তাই তোমাকে শেষবারের মতো সাবধান করে দিচ্ছি। দলের এই দুঃসময় বিভক্তি সৃষ্টির চেষ্টা করবে না। কেন্দ্র ঘোষিত কমিটির সাথে মিলে ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করবে অন্যথায় তোমার বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেয়া হবে।
মহাসচিব তাদেরকে আরো বলেন, নারায়ণগঞ্জ মহানগর বিএনপির যে কমিটি দেয়া হয়েছে তা দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের কাছ থেকে এসেছে। এই কমিটির বিরুদ্ধে অবস্থান নেয়া মানে তারেক রহমানের বিপক্ষে অবস্থান নেয়া, বিএনপি’র হাই কমান্ডের বিরুদ্ধে অবস্থান নেয়া। তাই এখনো সময় আছে তোমরা সবাই বিভেদ বিভক্তি সৃষ্টির চেষ্টা না করে ঐক্যবদ্ধভাবে দলকে সুসংগঠিত করার কাজে আত্মনিয়োগ করো।